আড্ডা প্রশ্ন উত্তর class 11 //একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার // Adda Question Answer Class 11 Bengali Semester 2

আড্ডা প্রশ্ন উত্তর class 11 //একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় সেমিস্টার // Adda Question Answer Class 11 Bengali Semester 2

আড্ডা প্রশ্ন উত্তর class 11

5 মার্ক প্রশ্ন উত্তর

() “তার গভীরতা পণ্ডিতদের নির্বাক করে দিয়েছে,”- কীসের গভীরতার কথা বলা হয়েছে ? এই প্রসঙ্গে সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্বন্ধে বক্তা আর কী কী গুণের কথা বলেছিলেন ? [ সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন ]  ২+৩=৫

উত্তর বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে উল্লিখিত হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শব্দতত্ত্ব সম্বন্ধে গবেষণার গভীরতা পণ্ডিতদের নির্বাক করে দিয়েছে। শব্দতত্ত্ব সম্বন্ধে তাঁর সুচিন্তিত মতামত সংবলিত গ্রন্থ ‘বাংলা শব্দতত্ত্ব’ বাংলা সাহিত্যের আকর-বিশেষ। বাংলা ভাষা-বিষয়ক এমন যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যাসহ লেখা বাংলা ভাষায় লেখা গ্রন্থগুলির মধ্যে উৎকৃষ্টতম বলা যায়।

এই প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক মুজতবা আলী আরও বলেছেন যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে উপন্যাস রচনা করেছেন তা অতি উত্তম। বাংলা সাহিত্যে তিনিই প্রথম ছোটোগল্পের জন্ম দেন ও প্রতিষ্ঠা করেন। এক্ষেত্রে তিনি মোঁপাসা বা চেখভকেও তিনি ছাড়িয়ে গিয়েছেন। নাটকে তিনি বিশ্বের যে-কোনো মিসটিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। বাংলা নাটকের ক্ষেত্রেও প্রথাগত নাটক ছাড়া রূপক ও সাংকেতিক নাটক এবং নৃত্যনাট্য শাখাকে তিনি প্রথম বাংলা ভাষায় উপহার দিয়েছেন। আর কবিরূপে তো বিশ্ববাসীর কাছে সপ্রশংস বন্দিত-নন্দিত। বিশ্বকবির তকমাটাও তাঁর ললাটে প্রোজ্জ্বল্যমান। এ ছাড়া এই প্রসঙ্গে লেখক আরও বলেছেন যে, তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি আর কত বছর ধরে যে ভারতবাসীকে নব নব শিক্ষা দেবে, তার ইয়ত্তা নেই। আর গুরুদেবরূপে তিনি শান্তিনিকেতন নামে যে গুরুগৃহ নির্মাণ করে গেছেন, তার স্নিগ্ধ ছায়ায় বিশ্বজন অবশ্যই সুখময় নীড় লাভ করবে।

() “তাঁর গান শুনে যদি কখনো মনে হয়ে থাকে এ গান আমাকে অতৃপ্ত রেখে গেল তবে তার কারণ কারণটি কী ? ৫

[অথবা], তাঁর গান অসম্পূর্ণ রূপে প্রতিভাত হয় না কেন ? [ সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন ]

উত্তর – বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ নামক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশে ‘তাঁর গান’ বলতে এখানে রবীন্দ্রসংগীতকে বোঝানো হয়েছে। এই গান শুনে যদি কারও মনে হয়, সেটি অতৃপ্ত রেখেই শেষ হয়ে গেল, তার কারণ কিন্তু সে-গানের অসম্পূর্ণতা নয়। তার প্রকৃত কারণ হল অতিশয় উচ্চাঙ্গের রসসৃষ্টিমাত্র ব্যঞ্জনাপ্রধান এবং ধ্বনিপ্রধান। তার ধর্ম হল সম্পূর্ণ অতৃপ্ত করে ও ব্যঞ্জনার অতৃপ্তি দিয়ে সব সময়ে মানুষের হৃদয়মন ভরে দেওয়া। তাই প্রথমবার বা একবার শুনে অতৃপ্তি থাকতেই পারে। কিন্তু তাতেও আক্ষেপ নেই। কারণ এই গান শুনলে মনের মাঝে একটি আলাদা ভুবন গড়ে ওঠে, যা পরে বারবার শুনলে নিতান্ত আপন হয়ে ওঠে শ্রোতার।

তাই প্রাবন্ধিক বলছেন, রবীন্দ্রসংগীত বা রবীন্দ্রনাথের গান, বলা ভালো প্রত্যেকটি গান কখনই নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে না। তার প্রমাণ মেলে-এই গান একবার শোনার পর মনে হবে আমার সব কিছু জানা হল না বটে, কিন্তু এর জন্য কোনো খেদ বা আক্ষেপ নেই। এই গান যখন পরে আবার শোনা হবে তখন তা হয়তো অন্য কোনো তাৎপর্য নিয়ে আলাদা ভুবন গড়ে তুলবে। তাই আপাত অতৃপ্তির কথা মনে হলেও তা কখনোই অসম্পূর্ণ নয়।

() ‘পঁচিশে বৈশাখ নামক প্রবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশ্বকর্মা মহাত্মা বলে উল্লেখ করেছেন কেন ? ৫

উত্তর বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘মহাত্মা বিশ্বকর্মা’-র সঙ্গে তুলনা করেছেন। পুরাণ মতে, বিশ্বকর্মা লঙ্কা নগরী থেকে শুরু করে অগস্ত্যভবন, কুবেরের অলকাপুরী, ব্রহ্মার পুষ্পক রথ, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, ইন্দ্রের বজ্র ইত্যাদি শ্রেষ্ঠ নিদর্শনের নির্মাতা। আর বিশ্বকর্মার মতোই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানের জাদুমায়া দিয়ে কখনও মানুষকে দেবতা বানান, আবার কখনও মানুষকে দেবতার চেয়েও মহত্তর করে গড়ে তোলেন কয়েকটি মাত্র শব্দ আর সুরের সোনার কাঠির পরশে। মানুষ তার মর্ত্যসীমা অতিক্রম করে যায়। এও এক আশ্চর্য নির্মাণ। তাই প্রাবন্ধিকের মতে তিনি যথার্থ মহান আত্মার অধিকারী ‘মহাত্মা বিশ্বকর্মা’। মহাত্মা বিশ্বকর্মা আপন সৃষ্টি নৈপুণ্যে পৃথিবীর নানা জায়গায় নানা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা চিরস্থায়ী। কবি ও গীতিকার, সুরসাধক ও সুরস্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাতের কলম দিয়ে কেবল কয়েকটি শব্দ আর হৃদয় নিঙড়ানো একটু সুরের জাদুমায়া দিয়ে সৃষ্টি করেছেন গানের অলৌকিক মায়াবিশ্ব। সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁর গানের আশ্চর্য সম্মোহনী মায়ায় বিমুগ্ধ। তাই তো তিনি আমাদের কাছে আরেক বিশ্বকর্মাদেব।

() “…রবীন্দ্রনাথ কত শতবার আমাদের নিয়ে গিয়েছেন… রবীন্দ্রনাথ কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গিয়েছেন এবং কীভাবে ?

উত্তর বিখ্যাত সাহিত্যক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত শতবার ‘মৃত্তিকার বন্ধন’ থেকে ‘নীলাম্বরের মর্মমাঝে’ আমাদের নিয়ে গিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানের মাধ্যমে, গানের সুরের মাধ্যমে, সুরের জাদুমায়ার মাধ্যমে আমাদের মৃত্তিকার বন্ধন তথা এই মর্ত্যের প্রাত্যহিকতায় থেকে, এই জাগতিক সংসার থেকে নীলাম্বরের মর্মমাঝে তথা স্বর্গীয়, অনুভবের প্রিয়তম স্থানে আমাদের নিয়ে যান। আবার তিনি তাঁর গানের শেষে যখন স্বর্গ থেকে আমাদের মাটির পৃথিবীতে ফেরত আনেন, তখন এই মর্ত্যের মাটিই স্বর্গের চেয়ে অধিকতর মধুময় হয়ে ওঠে। তখন এই জগৎসংসার আমাদের চোখে ওই গানের প্রভাবে আরও সুন্দর বলে মনে হয়। আর সুন্দর হওয়াটা স্বাভাবিক বলেই দৃঢ় প্রত্যয় জাগে প্রাবন্ধিকের। কারণ রবীন্দ্রগানই তো শ্রোতৃমণ্ডলীকে ‘তারায় তারায় দীপ্তিশিখার অগ্নিজ্বালা’ ‘নিদ্রাবিহীন গগনতলে’ যেমন নিয়ে গিয়ে ফেলে, তেমনি এই গানই যেন আবার ‘আলোক মাতাল স্বর্গসভার মহাঙ্গনে’ যুগে যুগে নিমন্ত্রণ পাঠায়। তাই পাঠকও গান শুনে ‘কালের সাগর পাড়ি দিয়ে’ ‘নিদ্রাবিহীন গগনতলে’ চলে আসে সুরের হাত ধরে।

() “আমার কিন্তু ব্যক্তিগত বিশ্বাস।” – কার, কোন বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে ? তিনি এই বিশ্বাসের প্রসঙ্গে কী কী বলেছিলেন ? ২+৩=৫

উত্তর বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃতাংশটি গৃহীত হয়েছে। এখানে স্বয়ং প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপন্যাস, কাব্য, নাটক, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি নানাবিধ সাহিত্যসৃষ্টি, শান্তিনিকেতন নামক সুখনীড় প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি মহৎ কর্মে সাফল্যের সঙ্গে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তবে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘অজরামর’ অর্থাৎ চিরজীবী হয়ে থাকবেন তাঁর অসাধারণ গানের জন্যই।

প্রাবন্ধিক এই প্রসঙ্গে আরও জানিয়েছেন যে, রবীন্দ্রগান তিনি সুরের দিক থেকে বিচার করতে চান না। কারণ সুহৃদ শান্তিদেব ঘোষ রবীন্দ্রগান-বিষয়ক কোনোরকম আলোচনাই বোধহয় বাদ দেননি তাঁর রচিত ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত’-এ। প্রাবন্ধিক কেবল বিচার করতে চান বা বলা ভালো মুগ্ধ হয়ে ভাবেন যে কতগুলো অপূর্ব গুণের সমন্বয় হলে তবে এরকম অসাধারণ গান সৃষ্টি করা যায়! প্রাবন্ধিক আরও জানাচ্ছেন যে তিনি যে দু-চারটে ভাষা জানেন (যদিও তিনি ১৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন) তার ভিতর যে রসের সন্ধান তিনি চিরদিন করে এসেছেন তা হল গীতিরস। শেলী, কীটস, হাইনে, হাফিজ, আত্তার, গালিব, জওক্, কালিদাস বা জয়দেবের গান বা কবিতা শুনে পড়ে এবং সবকিছুর রসাস্বাদন করে তাঁর জীবনকে ধন্য মনে করলেও বারবার এটা বলেছেন যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো আর এমনটি চোখে পড়ল নাল তাঁর।

() “তখন সর্ব-প্রকারের বিশ্লেষণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ লোপ পায়। কার, কখন সর্বপ্রকারের বিশ্লেষণ ক্ষমতা লোপ পায় এবং কেন ? ৫

উত্তর প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী সাহেব বলেছেন যে, তাঁর নিজের সর্বপ্রকার বিশ্লেষণ ক্ষমতা লোপ পায়। যখন রবীন্দ্রসংগীত এক অখণ্ড রূপ নিয়ে হৃদয়মন একেবারে অভিভূত করে ফেলে, তখনই সর্বপ্রকার বিশ্লেষণ-ক্ষমতা লোপ পায়। হিমালয়ের মধ্যে বসে যেমন হিমালয়ের উচ্চতা মাপা সম্ভব নয়, তেমনই রবীন্দ্রগানের মধ্যে ভাবের ঘোরে একেবারে নিমগ্ন থাকলে কখনই সেই গানের বিচার-বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। বিশ্লেষণ করার জন্য একটু দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। রবীন্দ্র-সংগীতের ভিতরে প্রবেশ করে অর্থাৎ ডুবে গিয়ে যদি অনুভব করা হয় তাহলে অখণ্ডরূপ ও বিশালভাব নিয়ে এমনভাবে হৃদয়-মন-চেতনাকে অভিভূত করে ফেলে যে বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতাটাই লোপ পেয়ে যায়। আমাদের চলমান জীবনের প্রতিটি অনুভব (সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না-আনন্দ-বেদনা ইত্যাদি) রবীন্দ্রগানে এমন গভীরভাবে ধরা থাকে যে, আমাদের মুগ্ধতা আমাদের বিচারে সত্তাটিকে আচ্ছন্ন করে রাখে।

() “একমাত্র সেগুলোর সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের গানের তুলনা করে ঈষৎ বিশ্লেষণ করা যায়।”- কাদের সঙ্গে তুলনা করার কথা বলা হয়েছে এবং কেন ? ৫

উত্তর প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে স্বয়ং প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রসংগীত তথা রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে জার্মানদের ‘লীডার’ গান এবং ইরানিদের ‘গজল’ গানের তুলনা করে তা ঈষৎ বিশ্লেষণ করা যায় বলে জানিয়েছেন। রবীন্দ্রসংগীতে যে গীতিরস বা ভাবের অখণ্ডতা প্রকাশ পায়-তা এই লীডার গানেও ব্যঞ্জিত হয়। গজলের যে অপূর্ব সুরঝংকার তার সঙ্গেও রবীন্দ্রগানের অসাধারণ মিল পেয়েছেন মুজতবা আলী।

রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে জার্মানদের লীডার এবং ইরানিদের গজল গানের ঈষৎ তুলনা করে বিশ্লেষণ করা যায়। কারণ-জার্মানি লোকসংগীত ‘লীডার’ হল মূলত কাজের গান, দেশত্যাগের গান, শিক্ষানবিশদের গান। এই গানের সুর কোথাও যেন রবীন্দ্র সংগীতের সঙ্গে মিলে যায়। আর ইরানি ‘গজল’ হল মূলত আহত হরিণের হাহাকার। বিশ্বের অতলান্ত বিরহকে সুগভীর ভাবে প্রকাশ করতে রবীন্দ্র সংগীত অদ্বিতীয়। গজল ও রবীন্দ্রসংগীত তাই কোথাও এক সুরের সহযাত্রী হয়ে মিলে গেলে আশ্চর্যের কিছু নেই।

() “নটরাজের মূর্তি দেখে মনে হয়।” – কী মনে হয় ?  প্রাবন্ধিকের এমন কেন মনে হয় ? ২+৩=৫

উত্তর প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে স্বয়ং প্রাবন্ধিকের নটরাজের মূর্তি দেখে মনে হয়-নটরাজ অন্য কোনো ভঙ্গিতে চোখের সামনে তাঁর নৃত্যকে রূপায়িত করতে পারতেন না। কারণ নৃত্যরত নটরাজের একটি নির্দিষ্ট ভঙ্গিমার মূর্তি আমাদের মনে চিরকালের মতো গাঁথা হয়ে আছে।

এখানে প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রসংগীতকে নটরাজের মূর্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। শব্দচয়ন, সেই শব্দগুলির বিশেষ স্থলে সংস্থাপন এবং হৃদয়মনকে অভাবিত কল্পনাতীত নূতন শব্দের ভিতর দিয়ে উন্মুখ রেখে ভাবে-অর্থে-মাধুর্যের পরিসমাপ্তিতে পৌঁছিয়ে দিয়ে কোনো রবীন্দ্রসংগীত যখন সাঙ্গ হয়, তখন লেখকের এর অনির্বচনীয় অনুভব ঘটে। তিনি প্রতিবারই হৃদয়ঙ্গম করেন, নটরাজের মূর্তির মতো রবীন্দ্র গানেরও অন্য কোনো রূপ কল্পনা করা সম্ভব নয়। আসলে রবীন্দ্রসংগীত আমাদের চলমান জীবনে বিভিন্ন স্তরে এতটা নিবিড় ও প্রাসঙ্গিক হয়ে বিরাজমান যে, সেখানে অন্য কোনো শব্দ বা অন্য কোনো সুরের প্রতিস্থাপন কল্পনার বাইরে। তাই যুগ যুগ ধরে যেমন নটরাজের ওই একটিমাত্র মূর্তি আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে আছে, তেমনি রবীন্দ্রসংগীত সার্বিকভাবে অবিকৃতরূপে বিরাজমান চিরটাকাল।

()  কোনো-কোনো গায়কের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত ফিকে পানসে লাগে কেন, এ বিষয়ে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর বক্তব্য কী ? ৫

উত্তর বিখ্যাত প্রাবন্ধিক বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পঞ্চতন্ত্র’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে কোনো-কোনো গায়কের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতকে ফিকে বা পানসে লাগার কারণ হিসেবে তাঁর মূল্যবান মতামত প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, ওই গায়কের হয়তো সুর-তাল-জ্ঞান দারুণ, হয়তো-বা তাঁদের মধুরতম কণ্ঠও আছে, তবু তাঁদের যদি যথেষ্ট শব্দসম্মানবোধ না থাকে তাহলে গান ফিকে, পানসে বা ফ্লাট লাগতেও পারে। প্রতিটি শব্দ যদি তার অর্থকে প্রকাশ করার মতো রসিয়ে রসিয়ে না গাওয়া হয় তাহলে তার ভিতরকার গীতরস উদ্‌ঘাটিত হবে না। আর তা না হলেই গান পানসে লাগতে বাধ্য।

আসলে রবীন্দ্রনাথের গানে যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করা হয় তার প্রত্যেকটির কোনো-না-কোনো বিশেষ অর্থ বর্তমান। গায়ক যদি সেই সমস্ত শব্দের প্রতি সম্মান না জানিয়ে গান করেন বা সেই সমস্ত শব্দের অর্থ অনুযায়ী বা ভাব অনুযায়ী রসিয়ে রসিয়ে না গান করেন, তা হলে তা পানসে বা ফিকে লাগতেই পারে। শব্দের অর্থ গানের মধ্যেও তখনই সুন্দরভাবে প্রকাশ পাবে, যখন ওই ভাব অনুযায়ী প্রকাশ ভঙ্গিমা ঠিক রেখে গায়ক গান গাইবেন এবং কণ্ঠের ওঠা পড়ায় সুর মাধুরীতে ভালো লাগার জগৎ গড়ে উঠবে।

আরও পড়ুন

পঁচিশে বৈশাখ প্রশ্ন উত্তর

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন উত্তর

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প প্রশ্ন উত্তর

YouTube – Samim Sir

Leave a Comment