বাংলা কাব্য কবিতার ধারা প্রশ্ন উত্তর / 5 Marks / Class 11 / 2nd Semester / Bangla Sahityer Itihas Class 11

বাংলা কাব্য কবিতার ধারা প্রশ্ন উত্তর / 5 Marks / Class 11 / 2nd Semester / Bangla Sahityer Itihas Class 11

বাংলা কাব্য কবিতার ধারা

5 মার্ক প্রশ্ন উত্তর

() বাংলা কাব্যে জীবনানন্দ দাশের অবদান সম্পর্কে লেখো। ( সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন )

উত্তর কাব্যপরিচয়: রবীন্দ্র-পরবর্তী কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাশের নাম বিতর্কহীনভাবে উচ্চারিত হয়। তাঁর কাব্যের মধ্যে ‘ঝরাপালক’ (১৯২৭), ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮) প্রভৃতি প্রধান। জীবনানন্দ দাশের এমন কয়েকশো কবিতা আছে, যা এখনও কাব্যাকারে প্রকাশিত হয়নি।

জীবনানন্দের কাব্যবৈশিষ্ট্য: জীবনানন্দের কবিতায় জীবনের প্রতি, মানুষের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি একইসঙ্গে প্রেম, ভীতি এবং অবহেলা সমানভাবে কাজ করেছে। তাঁর কবিতা বাইরে থেকে কোমল বলে মনে হলেও, ভিতরে ভিতরে কবি উত্তেজিত এবং ক্লান্ত। কবি অজস্র রঙের, সবকটি ইন্দ্রিয় উপভোগের, ইন্দ্রিয় বিপর্যয়ের চিত্র একাধিকবার অঙ্কন করেছেন। যেমন-“হয়তো বা হাঁস হব-কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।”

জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতিপ্রেমিক কবি। প্রকৃতির মাঝে তিনি জীবনকে ও জীবনের আনন্দকে খুঁজেছেন। প্রসঙ্গত, তাঁর ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের কবিতাগুলির কথা বলা যায়।

তাঁর কাব্যকবিতার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল মৃত্যুচেতনা। জীবন সম্পর্কে তাঁর গভীর উপলব্ধির কথা একাধিক কবিতায় ধরা পড়েছে। যেমন-‘রূপসী বাংলা,’ ‘আট বছর আগের একদিন’, ‘পাখিরা’ প্রভৃতি কবিতায় মৃত্যুচেতনার দিকটি বিশেষভাবে সক্রিয়। তাই জীবনানন্দ দাশ রবীন্দ্র-পরবর্তী আধুনিক কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি।

() মাইকেল মধুসূদন দত্তের কাব্যবৈশিষ্ট্য-সহ কবিকৃতি আলোচনা করো। ৫

উত্তর কার্যপ্রতিভা: বাংলা কাব্যের প্রথম মৌলিক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের-প্রথম কাব্য ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ প্রকাশিত হয় ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে। এ কাব্যের কাহিনি নির্মাণে পুরাণের (বা মহাভারতের) সুন্দ-উপসুন্দ ও তিলোত্তমাকে অবলম্বন করেছেন তিনি। তবে এ কাব্যে ছন্দ ছাড়া অন্য কোনো কিছুতেই মধুসূদনের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় না।

এরপরেই প্রকাশিত হয় মধুসূদনের যুগান্তকারী মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১)। এ কাব্যে দেশীয় ঐতিহ্য অনুসৃত হলেও গ্রিক বা পাশ্চাত্য প্রভাবও যথেষ্ট রয়েছে, আর তাই কাব্যটি হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ আধুনিক। এটি একটি আলংকারিক বা সাহিত্যিক মহাকাব্য (Epic of Art)। এর কাহিনি গৃহীত হয়েছে রামায়ণ থেকে।

এই সমসময়েই (১৮৬১) প্রকাশিত হয় একটি ভিন্নধর্মী কাব্য, যেখানে প্রকাশ পেয়েছে অপরূপ এক সাংগীতিক আবহ, ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’। এটি স্তোত্র (ode) জাতীয় কাব্য।

১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় কবির ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’। এখানে প্রকাশ পেয়েছে মহাকাব্যিক গাম্ভীর্য আর গীতিকবিতার ভাব। এখানে উনিশ শতকীয় নারীজাগরণের ইঙ্গিত বিশেষভাবে লক্ষণীয়। প্রকরণের দিক থেকে এটি পত্রকাব্য।

মধুসূদনের মন্ময়ধর্মী গীতিকাব্য ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে। এ কাব্যে মুখ্যত বাংলা তথা দেশের কাব্য-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকেই তুলে ধরেছেন তিনি।

মাইকেল মধুসূদন আধুনিক যুগের বাংলা কাব্যের সার্থক প্রতিষ্ঠাতা। কবিতার ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মেলবন্ধন তাঁর রচনাতেই প্রথম লক্ষ করা যায়। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য-প্রভাবিত বাঙালি কবি।

() রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থগুলির কলি অনুসারে বিভাগ করো। প্রতি বিভাগের একটি করে কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো ২+৩

উত্তর রবীন্দ্রনাথ মাত্র বারো বছর বয়স থেকে যে কাব্যরচনা শুরু করেছিলেন, তা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চলেছিল। এই সুদীর্ঘ সময়পর্বে তিনি যতগুলি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন, কাল অনুসারে সেগুলিকে সাতটি পর্বে ভাগ করা যায়। পর্বগুলি হল-(ক) সূচনা পর্ব, (খ) উন্মেষ পর্ব, (গ) ঐশ্বর্য পর্ব, (ঘ) অন্তর্বর্তী পর্ব, (ঙ) গীতাঞ্জলি পর্ব, (চ) বলাকা পর্ব (ছ) অন্ত্যপর্ব।

উদ্দিষ্ট প্রতিটি বিভাগের একটি করে কাব্যগ্রন্থ হল-

(ক) সূচনা পর্ব- ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী।

(খ) উন্মেষ পর্ব- প্রভাতসংগীত।

(গ) ঐশ্বর্য পর্ব- সোনার তরী।

(ঘ) অন্তর্বর্তী পর্ব- নৈবেদ্য।

(ঙ) গীতাঞ্জলি পর্ব- গীতাঞ্জলি।

(চ) বলাকা পর্ব- বলাকা।

(ছ) অন্ত্যপর্ব- অরোগ্য।

() গীতিকবিতা কাকে বলে ? এই ধারায় বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান আলোচনা করো । ২+৩

উত্তর সংজ্ঞা: বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট সম্পদ তার গীতিকবিতা। ‘লিরিক’-এই ইংরেজি শব্দটির বাংলা করা হয়েছে ‘গীতিকবিতা’।

বঙ্কিমচন্দ্র ‘গীতিকবিতা’র সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “বক্তার ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফুটনমাত্র যাহার উদ্দেশ্য, সেই কাব্যই গীতিকাব্য।” রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “যাহাকে আমরা গীতিকাব্য বলিয়া থাকি, অর্থাৎ একটুখানির মধ্যে একটিমাত্র ভাবের বিকাশ…”।

কাব্যপরিচয়: প্রথম সচেতন বাঙালি গীতিকবির নাম বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর রচনা পরবর্তী সময়ে বহু বাঙালি কবি বিশেষত তরুণ রবীন্দ্রনাথকে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর কবিতায় বিদেশি প্রভাব তেমন নেই। তিনি ছিলেন অনুভূতিপ্রবণ কবিচিত্তের অধিকারী। তাঁর কবিতা সংকলনের মধ্যে আছে ‘সংগীতশতক’ (১৮৬২), ‘বঙ্গসুন্দরী’ (১৮৭০) ‘নিসর্গসন্দর্শন’ (১৮৭০), ‘বন্ধুবিয়োগ’ (১৮৭০), ‘প্রেমপ্রবাহিনী’ (১৮৭১), ‘সারদামঙ্গল’ (১৮৭৯), ‘সাধের আসন’ (১৮৮৮-১৮৮৯), ‘বাউল বিংশতি’ (১৯২৪)।

‘নিসর্গসন্দর্শন’ (১৮৭০)-এ প্রকৃতিকে স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে কল্পনা করে তার সঙ্গে সচেতন কবিসত্তার সম্পর্ক কল্পিত হয়েছে। ‘বঙ্গসুন্দরী’ (১৮৭০)-তে কবি অন্তঃপুরবাসিনী নারীকে মাতা, পত্নী, কন্যা ও ভগ্নীরূপে দেখেছেন। নারীর গৃহরূপের সঙ্গে রোমান্টিক সৌন্দর্যের মিশ্রণ কাব্যটিকে করে তুলেছে অভিনব।

বিহারীলালের শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘সারদামঙ্গল’ (১৮৭৯), যা রবীন্দ্রনাথকেও আলোড়িত করেছিল এবং এই গ্রন্থটি বাংলা কবিতার দিকবদলের একটি বিভাময় চিহ্ন। ‘সারদামঙ্গল’-এ বিশুদ্ধ সৌন্দর্যের সঙ্গে কবির ভাবজগতের অনুভূতির মিশ্রণ ঘটেছে। যার ফলে এটি হয়ে উঠেছে রহস্যমিশ্রিত অপরূপ অনুভূতিবেদ্য কাব্য। সরস্বতীবিরহ, প্রীতিবিরহ এবং মৈত্রীবিরহ-এই তিন বিরহ-ই সারদামঙ্গাল-এর নেপথ্যচারিণী।

() রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও । ৫

উত্তর কবিপ্রতিভা: কবি রবীন্দ্রনাথ মাত্র বারো বছর বয়স থেকে সাহিত্যরচনা শুরু করে দীর্ঘ আশি বছর পর্যন্ত কাব্য-কবিতার যে-মণিহার আমাদের উপহার দিয়েছেন, তা কয়েকটি পর্বে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।

সূচনা পর্ব: এই পর্যায়ের রচনাগুলির মধ্যে ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী’ (১৮৮৪), ‘শৈশব সংগীত’ (১৮৮২) প্রভৃতি প্রধান। এই সময়ের কাব্যগুলিতে কবি পল্লিপ্রকৃতির রূপচিত্র ও রোমান্টিক মনের পরিচয় রেখেছেন।

উন্মেষ পর্ব: ১৮৮২-১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়সীমায় রচিত কাব্যগুলিতে মাটির পৃথিবীর কথা মুখ্য হয়ে উঠেছে। ‘সন্ধ্যা সংগীত’ (১৮৮২), ‘প্রভাত সংগীত’ (১৮৮৩), ‘ছবি ও গান’ (১৮৮৪) প্রভৃতি এই পর্বের কাব্য। এ কাব্যে কবি তাঁর ‘হৃদয় অরণ্য’ থেকে মুক্ত হয়ে উদাত্ত কণ্ঠে নতুন গান ধরেছেন।

ঐশ্বর্য পর্ব: এই পর্বে লেখা ‘মানসী’ (১৮৯০), ‘সোনার তরী’ (১৮৯৩), ‘চিত্রা’ (১৮৯৬) প্রভৃতি কাব্যতে কবি প্রেম ও প্রকৃতির ছবি এঁকেছেন। ‘সোনার তরী’-তে কবি তাঁর কাব্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবীকে ধরতে চেয়েছেন।

অন্তর্বর্তী পর্ব: এই পর্বের ‘কথা’ (১৯০০), ‘কাহিনি’ (১৯০১), ‘নৈবেদ্য (১৯০১)’, ‘স্মরণ’ প্রভৃতি কাব্যে রবীন্দ্রনাথ নিসর্গ প্রেম, সৌন্দর্য ও জীবনদেবতার ভাবনায় বিশেষভাবে ভাবিত হয়েছেন।

গীতাঞ্জলি পর্ব: ‘গীতাঞ্জলি’ (১৯১০), ‘গীতিমাল্য’ (১৯১৪), ‘গীতালি’ (১৯১৪)- এই তিনটি কাব্যগ্রন্থ নিয়ে গীতাঞ্জলি পর্ব। কবি এই পর্বে তাঁর ঈশ্বরস্বরূপকে প্রকাশ করেছেন।

বলাকা পর্ব: এই পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কাব্যগুলি হল-‘বলাকা’ (১৯১৬), ‘পূরবী’ (১৯২৫) এবং ‘মহুয়া’ (১৯২৯)। এ কাব্যগুলিতে রবীন্দ্রনাথের প্রৌঢ়জীবনের দার্শনিক প্রত্যয়ের দিকটি ধরা পড়েছে।

অন্ত্যপর্ব: ‘অন্ত্যপর্বে’র কাব্যের মধ্যে ‘প্রান্তিক’ (১৯৩৮), ‘রোগশয্যায়’ (১৯৪০), ‘আরোগ্য’ (১৯৪১), ‘জন্মদিনে’ (১৯৪১) প্রভৃতি প্রধান। এ পর্বে তাঁর প্রজ্ঞা ও বাস্তব সচেতনতার মধ্যে এক ঐক্যবোধ গড়ে উঠেছে। মৃত্যু সম্পর্কে কবি তাঁর বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি এখানে তুলে ধরেছেন।

() রবীন্দ্রোত্তর কবি হিসেবে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্যচর্চার পরিচয় দাও । ৫

উত্তর ভূমিকা: ছাত্রজীবন থেকে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে জীবনকে অন্যভাবে অনুভব করার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন যে-কবি, তিনি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কাব্যচর্চাকে তিন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা চলে-কাব্য, অনুবাদ কাব্য ও ছড়া।

তাঁর সৃষ্টিসম্ভারের মধ্যে উল্লেখ্য-

কাব্য: ‘পদাতিক’ (১৯৪০), ‘অগ্নিকোণ’ (১৯৪৮), ‘চিরকুট’ (১৯৫০), ‘ফুল ফুটুক’ (১৯৫৭), ‘যত দূরেই যাই’ (১৯৬২), ‘কাল মধুমাস’ (১৯৬৬), ‘এই ভাই’ (১৯৭১), ‘ছেলে গেছে বনে’ (১৯৭২), ‘একটু পা চালিয়ে ভাই’ (১৯৭৯) ইত্যাদি।

অনুবাদ কাব্য: ‘নাজিম হিকমতের কবিতা’ (১৯৫২), ‘দিন আসবে’ (১৯৬৯), ‘পাবলো নেরুদার কবিতা গুচ্ছ’ (১৯৭৩), ‘গুলঝাস সুলেমেনভ-এর রোগা ঈগল’ (১৯৭৪), ‘নাজিম হিকমতের আরো কবিতা’ (১৯৭৯) ইত্যাদি ।

ছড়া: ‘মিউ-এর জন্য ছড়ানো ছিটানো’ (১৯৮০)।

একুশ বছর বয়সে সুভাষের প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’ কাব্যটির সমালোচনায় বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন- “সুভাষ বোধ হয় প্রথম বাঙালি কবি, যিনি প্রেমের কবিতা লিখে কাব্যজীবন আরম্ভ করলেন না, এমনকি প্রকৃতি বিষয়ক কোনো কবিতাও লিখলেন না।“

পুরাণ-প্রতিমা, চিত্রকল্প, ভাষা, ছন্দ, স্তবকবিন্যাসের অভিনবত্ব তাঁর কবিতায় বৈচিত্র্য এনে দেয়। রূপকথা-লোককথা প্রসঙ্গত, লৌকিক বিশ্বাসের প্রতিফলন তাঁর কবিতাকে পাঠকের কাছে এক অন্যতর জগতের সন্ধান দেয়।

বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি চিরপদাতিক কবি। তাই তিনি বারবার নিজেকে নিত্যনতুন পথে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন।

() আধুনিক বাংলা কাব্যে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের গুরুত্ব বিচার করো । ৫

ত্তকাব্যভাবনা: বিত্ত ও বিদ্যার উত্তরাধিকার নিয়ে বাংলা কাব্যজগতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্ষণজন্মা কবিপুরুষ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। প্রবাসী পত্রিকায় সামান্য একটি ‘কুক্কুট’-কে বিষয় করে জীবনের প্রথম প্রকাশিত কবিতায় তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রশংসা ও স্নেহ অর্জন করেছিলেন। আধুনিক পৃথিবীর সমস্যা ও জীবনসত্যের সন্ধান, দর্শন ও বিজ্ঞানের বহুমুখী বিস্তার, প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের যথাযথ গুরুত্ব, মনোবিজ্ঞানের আবিষ্কার-পাশ্চাত্য চিন্তাপদ্ধতির সমস্তরকম প্রবণতাকে সাঙ্গীকৃত করে বাংলা কাব্যচর্চার জগতে প্রবেশ করেছিলেন সুধীন্দ্রনাথ।

পাশ্চাত্য প্রভাব: এলিয়ট, মালার্মে, ভ্যালোরি প্রমুখ কবির কাব্যনির্মাণকলার অনুভবী পাঠক এই কবি অধীত, অর্জিত অভিজ্ঞতাকে বাংলা কাব্যে বিস্তৃত করলেন। জীবনের দ্বিতীয় কাব্য ‘অর্কেস্ট্রা’ কাব্যের বাইশটি কবিতায় সাতটি সংগীতের সাতটি সংগীতধ্বনি নায়কের মনে যে-স্মৃতি বা অনুষঙ্গের জন্ম দিয়েছে, তার কথা বলেছেন।

পরবর্তী কাব্য ‘উত্তর ফাল্গুনী’-তেও আছে সুধীন্দ্রীয় ভাষারীতির কারুকার্য, ধ্রুপদি রীতির ঔজ্জ্বল্য, যেমন- “স্মৃতির মিশর বীজ মন্বন্তরে যথারীতি মজে”। আবার ‘সংবর্ত’ কাব্যে মত্ত ক্ষমতা, প্রবল দম্ভের বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর আমরা শুনতে পাই-“রুশের রহস্যে লুপ্ত লেনিনের মমি, হাতুড়ি নিষ্পিষ্ট, হিটলারের সুহৃদ স্তলিন, মৃত স্পেন, ম্রিয়মান চিন, কবন্ধ ফরাসি দেশ”।

রূপশৈলী: ধ্রুপদি গঠনরীতি, ব্যঞ্জনাধর্মী প্রতীকী কাব্যাদর্শ, শব্দের অর্থময়তা বিষয়ে সচেতনতা, জীবনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, দৈনন্দিন জীবনের বাগ্রীতি থেকে ভিন্নধর্মী বাগ্রীতির ব্যবহার তাঁর রচিত কাব্যদেহকে কঠিন কঠোর ভাস্কর্যের রূপদান করেছে। ভাব ও রূপকল্পের দিক থেকে সুধীন্দ্রনাথ বাংলা কাব্যজগতে এক স্বতন্ত্র আস্বাদনের প্রবর্তনা করেছেন।

() বাংলা কাব্যে কবি বিষ্ণু দে-র কৃতিত্ব আলোচনা করো । ৫

উত্তর ভূমিকা: বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকে যে-কবি আত্মমগ্ন রোমান্টিক সৌন্দর্যবিলাসিতা ত্যাগ করে, রাবীন্দ্রিক ভাববাদে বিশ্বাসী না-হয়ে, আধুনিক উত্তপ্ত সমাজ বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে প্রধানত মধ্যবিত্ত বাঙালি নাগরিক জীবনের অন্তঃসারশূন্যতার ছবি এঁকেছেন, তিনি হলেন বিষ্ণু দে। জ্বলন্ত নীহারিকা থেকে যেমন জন্ম নেয় দীপ্যমান তারা; তেমনি আধুনিক কাব্যের ক্লান্তি, জিজ্ঞাসা, সংশয়, বিতৃষ্ণা, নৈরাশ্য ও নির্বেদের বিশৃঙ্খল বাষ্পপুঞ্জ থেকে তিনি সৃষ্টি করেছেন বিশ্বাসের ধ্রুবলোক।

বিষ্ণু দে-র কাব্যসারনি: ক) ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ (১৯৩২), ‘চোরাবালি’ (১৯৩৮), গ ‘পূর্বলেখ’ (১৯৪০), ঘ ‘সন্দীপের চর’ (১৯৪৭), ও ‘নাম রেখেছি কোমল গান্ধার’ (১৯৫০), চ ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ (১৯৬৩) ইত্যাদি তাঁর অন্যতম গ্রন্থ।

বিষ্ণু দে-র কাব্যবিশিষ্টতার নানা মাত্রা:

() বিংশ শতকের তৃতীয় দশকের মধ্যবিত্ত শহুরে বাঙালিদের অন্তঃসারশূন্য বিকৃত জলছবি তিনি এঁকেছেন বলেই তাঁর হাতে প্রেমের কবিতা হয়ে উঠেছে শিখন্ডীর গান: “পঞ্চশরে দগ্ধ করে করেছো একি সন্ন্যাসী/বিশ্বময় চলেছে তার ভোজ/মরমিয়া সুগন্ধ তার বাতাসে উঠে নিঃশ্বাসী/সুরেশ শুধু খায় দেখি গ্লুকোজ।“ -শিখন্ডীর গান: চোরাবালি।

() তিনি বিশ্বাস করতেন যে, রোমান্টিক মন্ময়তার ঘোর কাটাতে হলে নৈর্ব্যক্তিক তন্ময়তাই একমাত্র উপায়।

() মনীষা ও পান্ডিত্যের সমবায়ে তাঁর কাব্যভাষা অন্য কবিদের চেয়ে আলাদা, যেমন- “দিনগুলি তুমি তুলে নিলে অঞ্চলে।/বালুচরচারী দৃষ্টিতে ঝরে সান্নিধ্যের ধারা।“ কিংবা, “প্রাণের পাতাল শহরে জীবন অচল অনড় অসহ,/তার মাঝে তুমি সংকল্পের প্রান্তর বিস্তার।“- ইত্যাদি।

() বর্তমান পৃথিবীর চিত্রকল্প ফোটাতে গিয়ে তিনি ঘটনা, চরিত্র, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্র, সংগীতকলা, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়কে অবলম্বন করেছেন।

() দুর্বোধ্যতা থাকা সত্ত্বেও গণসংগ্রামের সহায়ক শক্তি হিসেবে তাঁর কবিতা দ্বন্দ্বময় আধুনিক জীবনের বাক্স্পন্দনকে আজও চালিত করে।

আরও পড়ুন

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প প্রশ্ন উত্তর

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন উত্তর

নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

আড্ডা প্রশ্ন উত্তর

পঁচিশে বৈশাখ প্রশ্ন উত্তর

বাংলা গদ্য প্রবন্ধের ধারা প্রশ্ন উত্তর

YouTube – Samim Sir

Leave a Comment