প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2026 // Probondho Rachana Suggestion 2026

প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2026 // Probondho Rachana Suggestion 2026 . এই রচনাগুলি অষ্টম শ্রেণী, নবম শ্রেণী, দশম শ্রেণী বা মাধ্যমিক, একাদশ শ্রেণী, দ্বাদশ শ্রেণীর ক্ষেত্রে কার্যকারী হবে ।‌ আশা করি এই প্রশ্ন-উত্তর সাজেশন গুলির মধ্যেই তোমরা পরীক্ষায় হুবহু কমন পেয়েই যাবে ।

প্রবন্ধ রচনা সাজেশন 2026

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

ভূমিকা: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের সঙ্গে অন্যান্য ইতর প্রাণীর পার্থক্যের কারণই হল জীবনজিজ্ঞাসা ও যুক্তিবাদ। এই জীবনকেন্দ্রিক জিজ্ঞাসা এবং যুক্তিবাদকে অবলম্বন করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটেছে। একটা সময় ধর্মকে অবলম্বন করে নানা আচার এবং কুসংস্কার সমাজজীবনে লালিত হয়ে আসছে। এজন্য কুসংস্কারের শেকল ভেঙে বেরিয়ে না এলে মানবতার মুক্তি নেই। এর জন্যই প্রয়োজন বিজ্ঞানচেতনার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার।

বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানচেতনা: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন- “বিজ্ঞানই বর্তমান জগতের উন্নতির মাপকাঠি, বিজ্ঞানের অগ্রগতিই সভ্যতার অগ্রগতি।” এজন্য বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ উপযোগিতা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হল মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা। কারণ প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত নানান পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পর যে অধীত জ্ঞান, তা-ই হল বিজ্ঞান। আর বিজ্ঞানচেতনা হল-যুক্তিসংগত সত্যের উদ্‌ঘাটন এবং তার প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা অর্জন। ব্যাবহারিক জীবনে বিজ্ঞানচেতনার যথাযথ প্রসার ঘটলে ভিত্তিহীন অতিপ্রাকৃত কিংবা অবিশ্বাস্য অলৌকিক শক্তির খোলস উন্মোচিত হতে বাধ্য।

কুসংস্কার: সমাজে প্রচলিত অবৈজ্ঞানিক, ভিত্তিহীন অন্ধবিশ্বাস এবং গতানুগতিক অন্তঃসারশূন্য সংস্কারের বিকৃত রূপই হল কুসংস্কার। মানুষের অজ্ঞতা, অশিক্ষা, মানসিক দুর্বলতা এবং অন্ধবিশ্বাস কুসংস্কারকে লালন করে। একটা সময় সতীদাহ প্রথা, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন, নরবলি ইত্যাদি ভয়াবহ কুপ্রথা সমাজে প্রচলিত ছিল। আর আজ আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগেও জ্যোতিষীদের রোজগার অভাবনীয়! সব জেনেও পাঁজিপুথি দেখে সামাজিক অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা হয়। ঝাড়ফুঁক, তুক-তাক, জলপড়া, রাস্তায় বেড়াল পার হওয়া, হস্তরেখা ও কোষ্ঠীর ফলাফল বিচার আজও মান্যতা পায়। প্রচলিত প্রবচন- “গণক যদি গণে ঠিক/তবে কেন মাগে ভিখ।” অদ্ভুত কথা, এই বোধশক্তি থাকতেও আজও কুসংস্কার জনমানসে ব্যাধির মতো জাঁকিয়ে বসে রয়েছে।

মানবজীবনে কুসংস্কার: দুঃখের বিষয়, তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও মানুষ এখনও গভীরভাবে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। রোগ সারাতে ডাক্তারের পরিবর্ত পিরবাবা ও গুরুজির মন্ত্র ধার করা হয়। এখনও সাপে-কাটা রোগীকে হাসপাতালের পরিবর্তে ওঝার কাছে নিয়ে যায় মানুষ। যে জ্যোতিষী নিজেই দুর্ভাগ্যপীড়িত, তার কাছে ভাগ্যপরীক্ষার জন্য মানুষ ছুটে যায়! ভন্ড বাবাজির খপ্পরে পড়ে মানুষ। ডাইনি সন্দেহে মানুষকে পিটিয়ে মারা কিংবা যাত্রাকালে শুভ-অশুভ বিচার করা, যাত্রাকালে হাঁচি-টিকটিকির আতঙ্ক, এক শালিক দেখার ভয়, মাদুলি ধারণ এ-সবই কুসংস্কারের নমুনা।

কুসংস্কার দূরীকরণে বিজ্ঞানচেতনা : সমাজজীবনে দীর্ঘদিন লালিত হয়ে-আসা কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের অচলায়তন হঠাৎ একদিনে দূর হওয়ার নয়। ‘বিজ্ঞানজাঠা’-র মতো দেশব্যাপী বৈজ্ঞানিক প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা চলছে। সকল শ্রেণির মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী করে তুলতে হবে। প্রয়োজন দারিদ্র্যমোচনের। কারণ, কবি সুকান্তের ভাষায়- “ঘরেতে অভাব পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া।” বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি, প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তি ও ব্যাখ্যা প্রদান, পথনাটক ও মঞ্চ-অভিনয়ের মাধ্যমে কুসংস্কার সংক্রান্ত ভাঁওতাবাজি জনসমাজে প্রকাশ করা দরকার। এ ছাড়া স্কুলেও কুসংস্কাবিরোধী পাঠক্রমের চর্চা হওয়া প্রয়োজন।

উপসংহার: এ কথা সত্য যে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা ব্যতীত কুসংস্কার থেকে মুক্তির কোনো পথ নেই। তাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় মানুষের চেতনাকে আলোকিত করতে হবে। তুলে ধরতে হবে বিজ্ঞানের মানবিক দিক। সবশেষে ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলে-র ভাষায় বলা যায়- “The birth of science was the death of superstition.”

বাংলার উৎসব

ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ধর্ম’ প্রবন্ধে বলেছেন-“উৎসবের দিন সৌন্দর্যের দিন। এই দিনকে আমরা ফুলপাতার দ্বারা সাজাই, দীপমালার দ্বারা উজ্জ্বল করি, সংগীতের দ্বারা মধুর করিয়া তুলি।” উৎসব মানে একাকিত্ব ছাড়িয়ে সকলের মাঝে একাকার হওয়া। প্রাত্যহিক জীবনের ব্যস্ততার মাঝে উৎসব হল নতুন রঙে রঙিন হওয়ার বিশেষ আবেগ।

উৎসবের উদ্দেশ্য: প্রচলিত প্রবাদে বলা হয়-“বাঙালির বারোমাসে তেরো পার্বণ।” উৎসব-আনন্দ মানেই বাঙালির প্রাণখোলা জোয়ারের প্রাবল্য। প্রাত্যহিক জীবন যখন হয়ে ওঠে রীতিমতো ক্লান্ত, তখন কিছুটা স্বস্তি, কিছুটা শান্তি পাওয়ার জন্য বাঙালি উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

উৎসবের সেকাল-একাল: উৎসবের ধরন এবং গুরুত্ব বদলে যাচ্ছে, কিন্তু উৎসবের কোনো অভাব নেই বর্তমান যুগেও। অতীতে উৎসবের মধ্যে জড়িত ছিল কল্যাণময় ভাবনা। সেই উৎসব ছিল একে অপরকে নতুন করে পাওয়ার সর্বজনীন ক্ষেত্র। কিন্তু এখন উৎসবের আয়োজন বা আড়ম্বরের কোনো ত্রুটি নেই। যথেষ্ট জাঁকজমকপূর্ণ অথচ কোথাও যেন আন্তরিকতার অভাব চোখে পড়ে।

উৎসবের শ্রেণিবিভাগ: উৎসবমুখর বাঙালির বৈশাখ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত কোনো-না-কোনো উৎসবের আয়োজন দেখা যায়। সেদিক থেকে বিচার করলে চার প্রকার উৎসবের বৃত্তান্ত হল-

(ক) ধর্মীয় উৎসব: হিন্দু, মুসলিম, জৈন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পারসিক-সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উৎসবের জোয়ার দেখা যায়। শরৎকালে দেবী দুর্গার আরাধনাকে কেন্দ্র করে দুর্গোৎসব ছাড়াও কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, লক্ষ্মীপুজো, গণেশ পুজো, বিশ্বকর্মা পুজো, রথযাত্রা যেমন রয়েছে, তেমনি মুসলিমদের ইদুলফিতর, ইদুজ্জোহা, শবেবরাত, খ্রিস্টানদের গুড ফ্রাইডে, বড়োদিন, বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা, ফাল্গুনী পূর্ণিমা, জৈনদের শ্বেতাম্বর উপবাস, অলি, মহাবীর জন্মজয়ন্তী, পারসিকদের নওরোজ, শিখদের গুরু পরব, বৈশাখী পরব ইত্যাদি ধর্মীয় উৎসবে মানুষ দুঃখ-বেদনা-গ্লানি মোচন করে আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে।

(খ) সামাজিক-পারিবারিক উৎসব: বঙ্গজীবনে পারিবারিক ও সামাজিক উৎসবও রয়েছে। যেমন, হিন্দুদের-অন্নপ্রাশন, ভাইফোঁটা, ব্রতপালন, উপনয়ন, জামাইষষ্ঠী, বিবাহ, বিবাহবার্ষকী পালন, জন্মদিন পালন, মুসলিমদের-মুসলমানি বা খাতনা ও বৈবাহিক অনুষ্ঠান। এই সমস্ত উৎসব-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে সম্প্রীতির ভাবাবেগ।

(গ) জাতীয় উৎসব: রাষ্ট্রীয় উৎসবের মধ্যে বাঙালির জীবনে স্বদেশপ্রেম-সহ জাতীয় সংহতি স্থাপিত হয়। যেমন-পনেরোই আগস্টের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন, ছাব্বিশে জানুয়ারির সাধারণতন্ত্র দিবস উদ্যাপন, পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন, নেতাজি জন্মজয়ন্তী, জাতীয় শিক্ষকদিবস ইত্যাদি উপলক্ষ্যে বাঙালি বিশেষ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আনন্দ উদ্যাপন করেন।

(ঘ) ঋতু বিষয়ক উৎসব : ঋতুরঙ্গে মুখর বাঙালির ঘরে ঘরে বিভিন্ন প্রকার ঋতুকালীন উৎসবও দেখা যায়। যেমন- নবান্ন, নববর্ষ, বর্ষামঙ্গল, পৌষ-পার্বণ, মাঘোৎসব, ফাল্গুনে বসন্তোৎসব, হলকর্ষণ, চৈত্র মাসের গাজন, বনমহোৎসব ইত্যাদি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাঙালি মিলন মেলার সৃষ্টি করে।

(ঙ) অন্যান্য উৎসব : এ ছাড়াও বইমেলা, রক্তদান শিবির, খেলাধুলার আসর ইত্যাদিও বাঙালির কাছে উৎসবের চেহারা নিয়েছে। এর কারণ এই অনুষ্ঠানগুলিতে মানুষ নিজেকে ছাপিয়ে নিয়ে বৃহত্তর মানিবকতায় শরিক হয়ে ওঠে।

উৎসবের গুরুত্ব: উৎসবের নেপথ্যে যেসব কারণ রয়েছে, তা হল-পরস্পর মিলিত হওয়ার শুভ ইচ্ছা, ক্লান্তিকর জীবন থেকে মুক্তির পথ অনুসন্ধান, ঋতুর সঙ্গে সংগতিবিধান, অপরের মাঝে নিজেকে মেলে ধরা।

উপসংহার: উৎসবপ্রিয় বাঙালির কাছে বছরভর নানা রকম উৎসবের আয়োজন জনজীবনকে কানায় কানায় পূর্ণ করে তোলে। যাবতীয় সংকীর্ণতা মুছে ফেলে পরিচ্ছন্ন মূল্যবোধ নিয়ে বাঙালি নতুন করে বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে পায়। “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”-এই মন্ত্রে দীক্ষিত বাঙালি সম্প্রীতির আবহে সকল উৎসবকেই উৎকর্ষের সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যায়। সেটাই তাকে বাঁচার আনন্দ জোগায়।

ইন্টারনেট ও আধুনিক জীবন

ভূমিকা: ইন্টারনেট ব্যবস্থা সম্পর্কে বিল গেটসের মন্তব্য হল- “The internet is becoming the town square for the global village of tomorrow.” আসলে বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর আবিষ্কারকে অবলম্বন করে প্রতিমুহূর্তে মানবসভ্যতার বাঁকবদল ঘটছে। একসময়ের জনশিক্ষার প্রধান হাতিয়ার ছিল সংবাদপত্র, রেডিয়ো এবং তারপর দূরদর্শন। আর এখন আমাদের জীবনজুড়ে রয়েছে অত্যাধুনিক মাধ্যম ইনটারনেট।

ইনটারনেট ব্যবস্থার সূচনা: ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা Advanced Research Project Agency (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে। ১৯৮০ সালে National Science Foundation Network আরও একটি নেটওয়ার্ক শুরু করে। এরপর ১৯৮৯ সালে ISP দ্বারা চালু হয় World Wide Website বা WWW। এর মাধ্যমে Hypertext Transfer Protocol (htp) চালু হয়। অবশ্য ১৯৯০ সালের পর থেকে সর্বসাধারণের কাছে ইন্টারনেট জনপ্রিয়তার শিখর স্পর্শ করেই এর জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান।

আধুনিক জীবন ও ইনটারনেট: আধুনিক মানুষের কাছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা এক অবিচ্ছিন্ন মাধ্যম। এটি এমন এক মাধ্যম, যেখানে কম্পিউটার ল্যাপটপ কিংবা নিদেনপক্ষে একটা স্মার্টফোন কাছে থাকলে বিশ্ব যেন হাতের মুঠোয় চলে আসে। যাবতীয় খবর এক লহমায় এসে যায় মুঠোফোনে। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয়, ব্যাবসাবাণিজ্য, ব্যাংক লেনদেন, যে-কোনো ধরনের টিকিট বুকিং, হোটেল পরিসেবাও উপলব্ধ হয় এর মাধ্যমে। বিনোদনের গান, ডেস্কটপ নিউজ, টেলিভিশন শো, মাল্টিপ্লেক্স ও নেটফ্লিক্সের সিনেমা, ওয়েবসিরিজ, ভিডিয়ো কলিং, বহু ভাষা শিখন ছাড়াও ফেসবুক, হোয়াটস-অ্যাপ, টুইটার, এক্সহ্যান্ডল, ইনস্ট্রাগ্রাম ইত্যাদি আরও কত না পরিসেবা এখন হাতের নাগালে! এসবই ইন্টারনেটের দৌলতে।

ইনটারনেটের সুবিধা: ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে বিশ্বব্যাপী জনসংযোগ থেকে তথ্যসংগ্রহ, খবরাখবর আদান-প্রদান অতি দ্রুত সহজ হয়েছে। প্রত্যক্ষ সংযোগে দূরত্ব কমেছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অহরহ কর্মসংস্থান হচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে বেকার যুবকেরা স্বনির্ভর হচ্ছেন। কমেছে হয়রানি আর অর্থের অপচয়। বাড়ি থেকে অনলাইনেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা-পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে শপিং-সহ দ্রব্য বিক্রয়ও চলছে। কমেছে গ্রাম ও শহরের দূরত্ব।অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত মানুষ একটি মুঠোফোনেই ছবি আর ভিডিয়ো আপলোড করে সাবস্ক্রাইবার জুটিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা রোজগার করছে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই।

ইনটারনেটের অসুবিধা: তবে আন্তর্জালের ভালো দিকের পাশাপাশি মন্দ দিকও কম নেই। এখন ইনটারনেট ব্যবস্থাকে’ অবলম্বন করে প্রতিমুহূর্তে সাইবার ক্রাইম ও প্রতারণা বাড়ছে। ভুয়ো খবর প্রচার থেকে দাঙ্গার খবর দ্রুত ছড়াচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হচ্ছে। বাড়ছে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। এ ছাড়াও পর্নোগ্রাফিক ভিডিয়ো আদানপ্রদান, ব্ল্যাকমেল করা, অনলাইন লটারিতে নিঃস্ব হওয়ার ঘটনা নিত্য ঘটছে। অতি ব্যস্ততার যুগেও ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহারে মূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে। ‘ব্লু হোয়েল’- এর মতো প্রচুর অনলাইন গেমে আসক্ত শিশু-কিশোর মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।

উপসংহার: আন্তর্জালের ভালো দিকের পাশাপাশি মন্দ দিক থাকলেও শিশু-কিশোরদের জন্য Parental Controls, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে Privacy Protection ব্যবস্থা সব রকম ডিভাইসেই থাকে। আমরা অত্যাধুনিক যুগের মানুষ। এ যুগে ইনটারনেট ব্যবস্থা ছাড়া কিছুই ভাবা যায় না। যত মন্দ দিকই থাক না কেন, ব্যবহারবিধির উপর সংযম রাখা ও সচেতনতা থাকা আবশ্যক। নাহলে ইনটারনেট ব্যবস্থার উপযোগিতা লাভ করার ক্ষেত্রে আসবে নানান সমস্যা।

বিশ্ব উষ্ণায়ন

ভূমিকা: বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অহংকারের পরিণতি রূপে কংক্রিটের জঙ্গল, বাতানুকূল গাড়ি-বাড়ি, ভোগবিলাস সবকিছুই আজ হাতের মুঠোয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আমরা বিপদের মুখোমুখি। এই বিপদের নাম বিশ্ব উন্নায়ন বা Global Warming|

বিশ্ব উন্নায়ন: আসলে বিশ্ব উন্নায়ন হল পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রার ক্রমবৃদ্ধি। ১৯৭৯ সালে বিশ্বপরিবেশ সম্মেলনে বিশ্ব উন্নায়ন সম্পর্কে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। যেমন, ১৮৫০-১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে গড়ে তাপ বেড়েছে ০.৫° সেলসিয়াস। সেই আবহে ১৯০০-২০০০ সালের মধ্যে তা বৃদ্ধি পায় ১০ সেলসিয়াস। অর্থাৎ পৃথিবীপৃষ্ঠ যে ক্রমশ উয় হয়ে উঠছে, সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

বিশ্ব উন্নায়নের কারণ: গ্রিন হাউসের প্রভাবে উন্নতা বাড়ছে। এমন সব গ্যাস হল-কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ওজোন, কার্বন মনোক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি। এই ধরনের গ্যাসগুলির বৃদ্ধির কারণ হল-উন্নত জনজীবনের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বৃক্ষচ্ছেদনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। কৃষিক্ষেত্রে অত্যধিক নাইট্রোজেনের ব্যবহারের কারণেই নাইট্রাস অক্সাইডের বৃদ্ধি ঘটেছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের এই বৃদ্ধি। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ এবং জৈবমূল ও পচিত উদ্ভিদের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাতাসে মিথেন গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাব : বিশ্ব উন্নায়নের ফলে গলছে মেরুপ্রদেশের বরফ। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। . হয়তো পৃথিবী একদিন জলমগ্ন হবে। কৃষিক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়বে। খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব মারাত্মক রূপ নেবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘটবে অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি বা অসময়ে বৃষ্টি, ঋতুর বিপর্যয় দাবানল সৃষ্টি হয়ে গাছপালা ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। সূর্যের আলো পৃথিবীতে না পৌঁছালে নেমে আসবে চিরশৈত্য বা Nuclear winter। কাজেই বিশ্ব উন্নায়নের ভয়ানক পরিণতি নিয়ে পরিবেশবিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন।

বিশ্ব উন্নায়ন প্রতিরোধের উপায়: বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি, ভূ-তাপীয় শক্তি-সহ অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। দরকার বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের অতিরিক্ত জোগান কমানো, গ্রিন হাউসের গবেষণা অব্যাহত রাখা, বনসৃজনের সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবহার কমানো। কলকারখানার চিমনিতে কার্বনরোধক যন্ত্র বসানোও জরুরি। এ ছাড়াও বিশ্বব্যাপী জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্নত দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। পরিবেশবিজ্ঞানীরা উন্নত দেশগুলির সহযোগিতা নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী।

বিশ্ব উন্নায়ন প্রতিরোধে ভারতের ভূমিকা : বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ভারত দশম স্থানে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য হবে-২০৩০ সালের কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উদাপাদন কমিয়ে বিকল্প শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি রোধ করা। সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমিয়ে আনা। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়াও ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমাদের ব্যক্তিগত সচেতনতা একান্ত জরুরি। পোস্টার ব্যানারে, অনুষ্ঠানে ঘটাপটার পরিবর্তে সবুজায়নে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে।

উপসংহার: ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উন্নায়নের ধ্বংসাত্মক রূপের মুখোমুখি হওয়ার আগেই বিশ্ববাসীকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আরও ইতিবাচক হওয়া জরুরি। অবশ্য এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলির ভূমিকা অগ্রগণ্য। বিশ্বমানবের অসচেতনতার ফলে যেমন গ্লোবাল ওয়ার্মিং আজ বিশ্বসংকটে পরিণত, তেমনি মানুষই একদিন বিশ্ব উষ্ণায়নকে প্রতিরোধ করতে সমর্থ হবে।

মোবাইল ফোনের ভালোমন্দ

ভূমিকা: মোবাইল ফোন সম্পর্কে প্রখ্যাত মার্কিন ব্যবসায়ী মেরি ডিলন বলেছেন- “There’s no more important consumer product today than a cell phone.”  আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির নবতম আবিষ্কার হল চলভাষ বা মোবাইল ফোন। এতদিন টেলিফোন কোনো অফিস বা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে ব্যবহার করতে হত। কিন্তু এখন মোবাইল ফোন একেবারে হাতের মুঠোয় বা পকেটে। আর পাঁচটা জিনিসের চেয়ে মোবাইল ফোন হয়ে উঠেছে অপরিহার্য।

মোবাইল ফোনের ইতিবৃত্ত: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন বেল সিস্টেম মোবাইল টেলিফোন সার্ভিসের দ্বারা প্রথম মোবাইল ফোনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের মার্কিন ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার যে আধুনিক মোবাইল আবিষ্কার করেন, তার ওজন ছিল প্রায় ২ কেজি। এরপর ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে জাপানের টোকিওতে এর ব্যবহার শুরু হয়। তারপর ১৯৮০ সালে আমেরিকা-ইউরোপ-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত করার ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ১৯৮৩ সালে যে 1G টেলিব্যবস্থা ছিল, অতি দ্রুততার সঙ্গে আজ তা 4G থেকে 5G তে পৌঁছে গেছে। ১৪৪ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৫ কোটি ৮০ লাখ, এর মধ্যে ২৯ কোটি ৮০ লক্ষ গ্রামীণ গ্রাহক।

মোবাইল ফোনের গঠনগত ও ব্যাবহারিকদিক: যে-কোনো স্থানে সহজে বহন করা যায় এবং ব্যবহারযোগ্য বলে এর নাম মোবাইল ফোন। চলভাষ তিন প্রকার-Basic phone, Feature phone এবং Smart phone. স্মার্টফোনগুলি qwerty কি-প্যাড দিয়ে গঠিত। SIM-এর মাধ্যমে ইনটারনেটের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হয়। লেখা, ছবি, ভিডিয়ো পাঠানো-সহ কথা বলা, গান শোনা, গেম খেলা ইত্যাদি কাজে চলভাষ রীতিমতো জনপ্রিয়। বলা যায়, কম্পিউটার সিস্টেমের সমস্ত বিষয় হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে মোবাইল ফোন বা মুঠোফোন।

মোবাইল ফোনের উপযোগিতা: মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও লেখক রে কার্জউইন বলেছেন- “Mobile phones are misnamed. They should be called the gateway to human knowledge.” মুঠোফোনের জন্যই দূর হয়েছে নিকট। চলতি পথে, বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে, হাটেবাজারে যে যেখানেই থাকুক না কেন, মোবাইল ফোন দ্রুততার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। মহানগরের পথ হারিয়ে ফেললে পথ খুঁজে দেয় মোবাইল ফোন। ব্যাংকের লেনদেন থেকে জীবনের সামগ্রিক প্রক্রিয়া সবই সম্ভব একটি মুঠোফোনে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এই মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে অপরাধীদের ধরাও সম্ভব। অর্থাৎ ধরে নেওয়া যায়, একটি স্মার্টফোন আছে মানেই তার কাছে প্রায় সবকিছুই আছে।

মোবাইল ফোনের ক্ষতিকারক দিক: চলভাষ বা মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহৃত হলে ব্যক্তিজীবন ছাড়াও সমাজজীবনে এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। স্মার্টফোন ব্যবহার করতে গিয়ে মানুষ নিজের অজান্তে হয়ে ওঠে যান্ত্রিক। শিশু-কিশোরদের পড়াশোনার ক্ষতি থেকে, মানসিক বিকলনে এর ভূমিকা কম নয়। অত্যধিক মোবাইল ফোন নির্ভরতায় স্মৃতিশক্তির ব্যবহার কমছে। অনলাইন গেম বহু কিশোরদের সর্বনাশ করছে। চলভাষের জন্য পথদুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে, সাইবার ক্রাইম-সহ প্রতারণা সহজ হয়ে উঠেছে। এমনকি মোবাইল ফোনের কারণে Facebook, Whatsapp, Youtube ইত্যাদিতে মূল্যবান সময় অপচয়-সহ সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের-ও ক্ষতি হচ্ছে।

উপসংহার: আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোন ছাড়া আমাদের জীবন প্রায় অচল। তবে ভালো দিকের পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এজন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার ছেড়ে দেব, এটা প্রায় অসম্ভব। বরং এর ব্যবহারবিধির প্রতি যদি আমাদের সচেতন ও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই মুঠোফোন আমাদের জীবনে আরও বেশি – উপযোগী হয়ে উঠবে।

 বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ

ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। তাতে আছে গতির আনন্দ, নেই যতির আয়েস। বিজ্ঞান প্রকৃতি সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান। তবে বিজ্ঞান জানে না, পাপপুণ্য, ভালোমন্দের সংজ্ঞা। তাই প্রশ্ন ওঠে-বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ ?

বিজ্ঞানের স্বরূপ: বিজ্ঞান-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Science’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Scientia’ থেকে, যার অর্থ হল কিছু জানা। বিজ্ঞান আসলে পরীক্ষানিরীক্ষা ও প্রমাণের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অর্জিত বিশেষ জ্ঞান। অতীতে ‘বিজ্ঞান’ কথাটি জানা বা অধ্যয়ন সম্পর্কে ব্যবহৃত হত। প্রাকৃতিক বিশ্বে কী রয়েছে, সেখানে প্রকৃতি কীভাবে কাজ করে, তার রহস্য উদ্‌ঘাটন আর মানবকল্যাণের স্বার্থে তার প্রয়োগ। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে মানবসভ্যতার রথকে গতিশীল করার দায়িত্ব বহন করে চলেছে।

বিজ্ঞাননির্ভর সভ্যতা: সভ্যতার সূচনাপর্ব থেকে ধীরে ধীরে মানুষ হয়ে উঠেছে বিজ্ঞাননির্ভর। নানান কৌতূহল নিরসন করতে অজ্ঞানতার প্রাচীর ভেদ করে আধুনিক মানুষ বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে চলেছে। খুঁজে পেয়েছে নবজীবনের উচ্ছ্বাস আর দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা মন্ত্র। অতীতে গোষ্ঠীভুক্ত মানুষ ধর্মের ওপর ভরসা রেখেছিল। কিন্তু ধর্ম যখন চোখ রাঙিয়েছে, তখন মানুষ বিজ্ঞানের হাত ধরে সভ্যতার রথে অগ্রগামী হয়েছে। এখন তো বিজ্ঞাননির্ভরতা ব্যতীত আর কোনো পথ নেই। অমর সিংহের ‘অমরকোষ’-এর ভাষায়-“মোক্ষে ধীজ্ঞানমন্যত্র বিজ্ঞানং শিল্পশাস্ত্রয়োঃ”।

বিজ্ঞানের কল্যাণকর দিক : বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মানুষকে প্রাত্যহিক জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্যের পসরা সাজিয়ে দিয়েছে। যাতায়াতের জন্য যানবাহন রেলপথ, জাহাজ, স্টিমার, লঞ্চ, বিমান হেলিকপ্টার সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। যোগাযোগের মাধ্যমরূপে বিজ্ঞানের অবদান হল- টেলিফোন, চলভাষ, আন্তর্জালিক ব্যবস্থা ইত্যাদি। বিনোদনের ক্ষেত্রে বেতার, দূরদর্শন, সিনেমা, খেলার উপকরণ আর সম্প্রচার মাধ্যম। চিকিৎসাক্ষেত্রেও বিজ্ঞান বিপ্লব এনেছে। চিকিৎসা-সংক্রান্ত অন্যান্য সামগ্রী নতুন পথের দিশা দেখিয়েছে। জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কালিকলম, সংবাদপত্র, কম্পিউটার-ল্যাপটপ, প্রজেক্টার ইত্যাদি শিক্ষাসহায়ক সামগ্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। কৃষিক্ষেত্রেও বিজ্ঞান উপহার দিয়েছে ট্র্যাক্টর, জলসেচ যন্ত্র, বিভিন্ন প্রকার ফসল রোপণ থেকে ঝাড়াই-বাছাই করার মেশিন, কীটনাশক ও আগাছানাশক সামগ্রী। এমনকি সম্প্রতি আধুনিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) মানুষকে আরও সুবিধা এনে দিচ্ছে।

বিজ্ঞানের ক্ষতিকর দিক: বিজ্ঞানের অপব্যবহারে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে তৈরি বোমা, পিস্তল, গুলি, পারমাণবিক অস্ত্র, হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেন বোমা ইত্যাদি মানুষের কাছে অভিশাপের মতো। রাসায়নিক দূষণ নষ্ট করছে পরিবেশের ভারসাম্য। যানবাহন ও কল-কারখানার ধোঁয়া, বর্জ্যপদার্থ আকাশ, মাটি এবং জলদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। অতিরিক্ত বিজ্ঞাননির্ভরতা মানুষকে ক্রমশ শারিরীক ও মানসিকভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্বল করে তুলছে।

বিজ্ঞানের অভিশাপ ও দায়িত্ব: বিজ্ঞান মানুষের অর্জিত বিশেষ জ্ঞান। বিজ্ঞান কোনো জৈবিক সত্তা নয়। তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তি বা ক্ষমতা নেই। সুতরাং বিজ্ঞানের সদ্ব্যবহারে মানবকল্যাণ আর অপব্যবহারে অকল্যাণ। বিজ্ঞানকে নিয়ন্ত্রণ করছে তো সেই মানুষই। কাজেই মানুষের দ্বারা অপপ্রয়োগ ঘটলে বিজ্ঞান মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে উঠলে, তার দায় মানুষের, বিজ্ঞানের নয়।

উপসংহার: আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেছেন- “বিজ্ঞানই বর্তমান জগতের উন্নতির মাপকাঠি, বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেই সভ্যতার অগ্রগতি।” সুতরাং মানবকল্যাণের স্বার্থে, শুভবুদ্ধির দ্বারা বিজ্ঞান আমাদের কাছে অভিশাপ নয় বরং হয়ে উঠুক আশীর্বাদ।

শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা

ভূমিকা: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন- “বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি/দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী…।” সুতরাং অজ্ঞতা মোচন করে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার নামই হল শিক্ষা। যে মাধ্যম শিক্ষার বিস্তারে জনসমাজের বাহন হয়ে ওঠে, সেটিই গণমাধ্যম বা mass media। অতীত থেকে বর্তমানে গণচেতনার বিস্তার-সহ মানবকল্যাণের স্বার্থে Mass Media সমাজশিক্ষার মাধ্যমরূপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।

গণমাধ্যমের সেকাল-একাল : অতীতের শিলালিপি থেকে পরবর্তী সময়ে লোকশিক্ষার মাধ্যম ছিল আধ্যাত্মিক চেতনার মঞ্চ। এ ছাড়াও, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, ছড়া, ব্রতকথা, রূপকথা, লোককথা, কথকতার আসর, পুতুলনাচ, গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েছে। সম্প্রতি ইনটারনেট ব্যবস্থার যাবতীয় গণমাধ্যম আজ শিক্ষা ও জনচেতনামূলক বিভিন্ন বিষয়কে অতি সহজে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারছে।

গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা: শিক্ষাকে সর্বজনের করে তুলতে প্রয়োজন হয় তার বহুমাত্রিক ব্যবহার। শিক্ষার আঙিনায় না এসেও শিক্ষা যখন গণমাধ্যমের দ্বারা জনসমাজের দুয়ারে পৌঁছোয়, তখন শিক্ষার প্রসারে গণমাধ্যম সার্থকনামা হয়ে ওঠে। কেবল পঠনপাঠনই নয়, জনমত গঠন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নারীপুরুষের বৈষম্য দূর করতে গণমাধ্যম ইতিবাচক হয়ে ওঠে।

বেতার ব্যবস্থা: জনশিক্ষার প্রসারে রেডিয়ো বা বেতারের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। রেডিয়োর একটি সুবিধা হল, এটি বহনযোগ্য। এ জন্য ব্যাটারি থাকলেই যেখানে খুশি সেখানেই বিনোদন থেকে জ্ঞানার্জন, ভাষাশিখন-সবই বেতার যন্ত্রে উপলব্ধ হয়। নিরক্ষর মানুষেরাও রেডিয়োর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। সংবাদ থেকে চাষাবাদের খবর, আবহাওয়ার বার্তা পৌঁছে দেয় বেতার।

সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র: একটি সংবাদপত্র কয়েকজনের দ্বারা পঠিত হয়। তাতে শিক্ষা থেকে সরকারি প্রকল্পের প্রচার, ব্যাংকিং ব্যবস্থার নোটিশ, বিনোদন, জীবিকা-সংবাদ, কর্মক্ষেত্রের বিজ্ঞাপন, পুস্তক সমালোচনা, বইপত্রের সংবাদ, বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়ও মুদ্রিত রূপে জনতার দরবারে পৌছে যায়। আবার জার্নাল, সাময়িকপত্র, শারদীয়া সংখ্যা জনশিক্ষা ও গণচেতনার প্রসারে আজও ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে চলছে।

বায়োস্কোপ, চলচ্চিত্র ও নাটক: সময় বদলে গেলেও চলচ্চিত্র এবং নাটকের প্রতি মানুষের আগ্রহ এখনও কমেনি। চলচ্চিত্র সমাজে জনশিক্ষার অন্যতম মাধ্যম রূপে সাড়া ফেলেছে। যাত্রাপালা ও নাটকও দারুণ জনপ্রিয় গণমাধ্যম। এসব মাধ্যমে বিনোদন ছাড়াও নারীনিগ্রহ, কন্যাপণের ভয়াবহতা, নারীশিক্ষা, জনকল্যাণকর উদ্যোগ, স্বাস্থ্যসচেতনতা, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ বার্তা বহন করে।

দূরদর্শন: জনশিক্ষার বিস্তারে দূরদর্শন বরাবরই একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। এতদিন যা ছিল ভাবনা এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে, তা মুহূর্তের মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে টেলিভিশনের পরদায়। আজ ঘরে ঘরে টেলিভিশন থাকলেও এক সময় একটা গ্রামে হয়তো একটি মাত্র বাড়িতে টিভি কিনলে, তা দেখার জন্য সে বাড়িতে স্থানীয় মানুষের ভিড় জমে যেত। পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের খবরাখবর, কৃষি উন্নয়নের অনুষ্ঠান, মৎস্যচাষ, বৃক্ষরোপণের উপযোগিতা, চিকিৎসাক্ষেত্র ও বিজ্ঞানচর্চার নানান বিষয় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে রয়েছে আনন্দ-বিনোদন, ধারাবাহিক অনুষ্ঠান, রিয়েলিটি শো, হাস্যকৌতুকের আসর। কাজেই, শহর থেকে গ্রামীণ মানুষের জীবনে টেলিভিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গণমাধ্যমের কুফল ও আমাদের দায়িত্ব : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়-“অজ্ঞানের অন্ধকারে। আড়ালে ঢাকিছ যারে/তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান।” তাই সকলের কাছে জনশিক্ষা পৌঁছে দিতে গণমাধ্যম এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু দুঃখের বিষয় জনপ্রিয় গণমাধ্যমের একাংশ সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। এর ফলে সমাজের আরও বিপথগামী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য জাতির সচেতনতা বৃদ্ধিতে, শিক্ষার প্রসারে ও সামাজিক কল্যাণে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও ইতিবাচক ভূমিকা একান্ত কাম্য।

উপসংহার: পরিবর্তিত সময়ের ধারায় গণমাধ্যম আজ ইনটারনেট পরিসেবার সঙ্গে উপলব্ধ। কাজেই বৃহৎ ভারতবর্ষে জনশিক্ষার প্রসারে এই গণমাধ্যমগুলি ভবিষ্যতে আরও বেশি ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারবে। প্রয়োজন কেবল যথাযথভাবে পরিচালনা করা। তাহলেই গণমাধ্যমগুলি হয়ে উঠবে গণশিক্ষা প্রসারের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

সবুজায়ন বনাম নগরায়ন

ভূমিকা: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সভ্যতার প্রতি’ কবিতায় বলেছেন- “দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর। লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর। হে নবসভ্যতা।” সুতরাং সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণীজগতের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সবুজ ধ্বংস করে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, আবাসন। দুচোখ মেলে দেখা যায় শুধুই কংক্রিটের জঙ্গল। কিন্তু সবুজকে হারিয়ে নগর সভ্যতা যে আর এক বিপদ!

নগরায়ণ ও নগর বিলাসিতার কারণ: নগরায়ণ হল, একটি বিশেষ প্রক্রিয়া যেখানে গ্রামাঞ্চল শহর থেকে নগরে রূপান্তরিত হয়। সমাজবিজ্ঞানী Robert Bierstedt তার ‘Social order’ প্রবন্ধে নগরায়ণকে একটি ‘Process’-বা প্রক্রিয়া বলেছেন। কিন্তু এই নগর বিলাসিতার কারণও আছে। গ্রামীণ জীবনে সুযোগসুবিধা অভাব যেমন রয়েছে, রয়েছে বেকারত্ব। কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। কিন্তু শহরের মানুষ নিজের যোগ্যতা ও বিদ্যাবুদ্ধির মাধ্যমে পছন্দমতো কর্মসংস্থান করে নিতে পারে। এ ছাড়াও গ্রামীণ জীবনে স্কুলশিক্ষা সমাপ্তির পরেই কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ নিতে ছাত্রছাত্রীরা শহর অভিমুখী হয়। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, ইনটারনেট পরিসেবা থেকে দৈনন্দিন জীবনের আধুনিক উপকরণ গ্রামে সুলভ নয়। শহরেই বিনোদনের জগৎ, অফিস, আদালত সবই। তাই গ্রামের মানুষকে ছুটে যেতে হয় নিকটবর্তী নগরে।

বিপন্ন প্রাকৃতিক ভারসাম্য: বিশ্ব উন্নায়নের অন্যতম কারণ হল- নগর সভ্যতা। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাসস্থান, যোগাযোগের রাস্তাঘাট, খাদ্য সংস্থান ইত্যাদির কারণে আশপাশের সবুজ গাছপালা এবং বনভূমি ধ্বংস হতে থাকে। নগর বিলাসিতার ছোবলে ভৌত পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ থেকে জলবায়ুর পরিবর্তন, মাটির ক্ষয় মাটির দূষণ ত্বরান্বিত হচ্ছে। যেমন, কলকারখানা এবং যানবাহনের ধোঁয়াতে ঘটছে বায়ুদূষণ। সম্প্রতি মাত্রাতিরিক্ত জল দূষণে পানীয় জলের সংকটও তৈরি হয়েছে। সুতরাং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্টের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, সবুজ প্রকৃতিকে ধ্বংস করা।

সবুজ ধ্বংসের পরিণতি: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘পৃথিবীলোক’ কবিতায় বলেছেন- “বিচিত্র বৃক্ষের শব্দে স্নিগ্ধ এক দেশ। এ পৃথিবী, এই প্রেম, জ্ঞান আর। হৃদয়ের এই নির্দেশ।” কিন্তু সেই বিচিত্র বৃক্ষের শব্দে স্নিগ্ধ দেশ যেন আস্তে আস্তে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে কংক্রিটের জঙ্গল। হারিয়ে হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। আবার নিশ্চিহ্ন হচ্ছে বিরল প্রজাতির প্রাণী। চাতক, বাবুইয়ের মতো পাখি প্রায় নিরুদ্দেশ! সবুজ ধ্বংসের ফলে বিশ্বব্যাপী CO, এর ঘনত্ব বৃদ্ধিতে প্রতি বছর উষ্ণতা বাড়ছে। মরু অঞ্চলে বাড়ছে মরুর আগ্রাসন। কমছে জলাশয়, বিপন্ন হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র। তবে এ কথা সত্য সবুজকে ধ্বংস করে যে নগরায়ণ, তা এক অর্থে আত্মবিনাশী ভাবনার প্রতিফলন।

পরিবেশ রক্ষায় সবুজ প্রকৃতি: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম। গাছের সঙ্গে জীবজগতের সম্পর্কও অবিচ্ছেদ্য। গাছপালার সমাবেশ যেমন প্রাকৃতিক বায়ুর বিশুদ্ধিকরণ করে, তেমনি একটি পরিণত গাছ প্রতি বছর ঘরে ১৩ কেজি CO, শোষণ করে। আর গড়ে প্রায় ১১৮ কেজি অক্সিজেন দান করে। ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ থেকে মরুর আগ্রাসন রোধে গাছপালার বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অন্যতম কারণও সবুজের সমারোহ। বিশেষ করে, শহরে ‘Heat Island’-বলতে যা বোঝায়, তা প্রতিরোধে বৃক্ষরোপণ একান্ত অপরিহার্য। কারণ, গাছ আমাদের নিঃস্বার্থ ও উপকারী বন্ধু।

উপসংহার: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘আমি দেখি’ কবিতায় বলেছেন- “শহরের অসুখ হা করে কেবল সবুজ খায়। সবুজের অনটন ঘটে।” কিন্তু মানুষ চেষ্টা করলে সব সম্ভব। সেজন্য, যুগের দাবিতে নগরায়ণ ঘটবে। সে নগর হোক সবুজে মোড়া।

সাবধানে চালাও, জীবন বাঁচাও

ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘স্ফুলিঙ্গ’ কবিতায় বলেছেন-“যাওয়া আসার একই যে পথ। জান না তাকি অন্ধ? / যাবার পথ রোধিতে গেলে। আসার পথ বন্ধ।“ কাজেই বাড়ির বাইরে পা ফেললে পথই আমাদের পথের সন্ধান দেয়। অথচ পথে চলতে গিয়ে ঘটে অহরহ অঘটন। কারণ যতদিন যাচ্ছে ততই পথেঘাটে বাড়ছে জনসংখ্যা আর সে-সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও।অসাবধানতার ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সেই কারণে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘পথ সুরক্ষা আইন’ কিংবা রাজ্য সরকারের ‘Safe drive save life’ বা ‘সাবধানে চালাও, জীবন বাঁচাও’ প্রচার অভিযান আজ জরুরি হয়ে উঠেছে।

পথ নিরাপত্তার প্রাথমিক পদক্ষেপ: পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার নজরুল মঞ্চ থেকে ২০১৬ সালের ৮ জুলাই পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে কর্মসূচি ঘোষণা করেন তা হল- ‘সাবধানে চালাও, জীবন বাঁচাও’ অর্থাৎ ‘Safe drive, save life’। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই জনস্বার্থ বিষয়ক প্রচারাভিযানের আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের আমলে কেন্দ্রীয় সরকার ও সক্রিয় হন। সেদিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘Safe drive, save life’ কর্মসূচি অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে।

সেভ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কী ?: এটি রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি। এর উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। নিত্যদিন আমাদের বিদ্যালয় থেকে কর্মস্থল, অফিস, কোর্ট, যেখানেই যাই না কেন সড়কই নিদান। এজন্য চলার পথে নিজেকে এবং অপরের জীবনকে রক্ষা করার বিষয়ে রীতিমতো সচেতনতা দরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই প্রচারমূলক অভিযানে যানবাহনে বিনামূল্যে ‘সাবধানে চালাও, জীবন বাঁচাও’ বা ‘Safe drive, save life’ স্টিকার লাগানো এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক আইন মেনে চলার উপর জোর দেওয়া হয়।

সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ-এর উদ্দেশ্য: অসাবধানে রাস্তা পারাপারের সময় পথচারীর অকাল মৃত্যু ঘটছে। আবার যার হাতে গাড়ি চালানোর স্টিয়ারিং রয়েছে তার বেপরোয়া মনোভাবের জন্য নিরীহ পথচারীকেও অকালে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। কিন্তু সময়ের চেয়ে মানুষের জীবনের দাম অনেক বেশি মহার্ঘ। এই কর্মসূচির মাধ্যমে ট্রাফিক আইন মেনে চলার পাশাপাশি সাবধানতা অবলম্বনের জন্য প্রশাসনিক পর্যায় থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

পথ নিরাপত্তার প্রয়োজন কেন ? : পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর নিরিখে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত শীর্ষে রয়েছে। ভারতে সড়ক দুর্ঘটনার মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গ ১১তম। দিন দিন মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে তার মধ্যে ৭০% মানুষের মৃত্যু ঘটে সড়ক দুর্ঘটনায়। সেজন্য, রাজ্য সরকারের এই জনমুখী কর্মসূচির ফলে ১৯.৫% পথদুর্ঘটনা কমেছে। ওদিকে কেন্দ্র, এদিকে রাজ্যসরকার সম্মিলিতভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ৫০% কমিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।

পথ নিরাপত্তায় গৃহীত পদক্ষেপ : ‘সাবধানে চালাও, জীবন বাঁচাও’-এই কর্মসূচি রূপায়ণে পুলিশ-প্রশাসন, পরিবহন কর্মী, পথচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা একসূত্রে গ্রন্থিত। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সিসি টিভি ক্যামেরা বসানো হয়। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিতকরণ, নো হেলমেট, নো পেট্রোল। হেলমেট বা সিট বেল্ট না পরলে জরিমানা। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা নয়। মদ্যপ অবস্থায় ড্রাইভ দণ্ডনীয়। রাত দশটার পর উড়ালপুলে বাইক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। গাড়িতে ওভারলোড কমানো-সহ স্কুলপাঠ্য বইয়ে, পোস্টারে, ব্যানারে, পদযাত্রায়, ক্যাম্প স্থাপন করে চলে পথনিরাপত্তার প্রচার।

উপসংহার: এখন প্রতিটি সড়কের বিভিন্ন স্থানে লেখা রয়েছে-“Speed thrills, but kills.” তবু আমাদের চেতনার উদয় ঘটে না। কেবল আইনের জন্য নয়, বরং নিজের জন্যই ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা উচিত। আর এই বার্তা জনতার দরবারে পৌঁছে দিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য।

চন্দ্রযান

ভূমিকা: ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই এবং ২৩ আগস্ট ভারতের মহাকাশ গবেষণার দুটি ঐতিহাসিক দিন। ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চন্দ্রযান-৩, চন্দ্রজয়ের স্বপ্ন নিয়ে ঐতিহাসিক অভিযান শুরু করে। ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট সফলভাবে চাঁদকে ছুঁয়ে দেখেছিল ভারতের চন্দ্রযান-৩। ২০২৪ সালের ২৩ আগস্ট ছিল চন্দ্রাভিযানের বর্ষপূর্তি।

চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২: চাঁদে ভারতের প্রথম অভিযান শুরু হয় ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর। এই মহাকাশযানটি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে চাঁদের মাটিতে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক, খনিজ এবং ফোটো জিয়োলজিক্যাল ম্যাপিং-এর কাজ করে। এরপর দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান ২০১৯ সালের ২২ জুলাই চন্দ্রযান-২।

চন্দ্রযান-৩-এর প্রযুক্তিগত দিক: সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি চন্দ্রযান-৩ হল চন্দ্রযান-২-এর একটি ফলো-অন মিশন। ISRO-দ্বারা পরিচালিত এই চন্দ্রযানটি ল্যান্ডার এবং রোভার কনফিগারেশন নিয়ে গঠিত। ল্যান্ডার যানটি চাঁদে Soft Landing করে। রোভার ‘প্রজ্ঞান’ চন্দ্রপৃষ্ঠে থাকা সমস্ত কিছুর অনুসন্ধান করার চেষ্টা করে। অরবিটারের কাজ ছিল চাঁদের বায়ুমণ্ডলের বিষয়ে সমস্ত তথ্যকে সংগ্রহ করে তা অধ্যয়ন করা।

উৎক্ষেপণের মাহেন্দ্রক্ষণ এবং পরবর্তী কার্যক্রম: ১৪ জুলাই শুক্রবার নির্ধারিত সময় দুপুর ২:৩৫ মিনিটে LVM3 রকেটের সাহায্যে উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণের পর ৪০ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকে। ২৩ আগস্ট ২০২৩, সন্ধ্যা ৬:০৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে-Manzinus (Crater) এবং Simplelius N নামক গর্তের মাঝে ‘শিবশক্তি পয়েন্ট’ নামক স্থানে সফলভাবে ধীর অবতরণ করে। আর ‘বিক্রম ল্যান্ডার’ সেখানে অবতরণ করতেই তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ‘Luner Rover’ বা ‘রোভার প্রজ্ঞান’ নামক রোবটটি। তার চাকার সাহায্যে অশোক স্তম্ভ’ এবং ‘ইসরো’-এর প্রতীক চিহ্ন এঁকে ফেলে।

চন্দ্রযান-৩-এর উদ্দেশ্য: চন্দ্রযান-৩ মিশনে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র ISRO-এর উদ্দেশ্য ছিল-চাঁদে রোভারের ড্রাইভিং ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ ও তা প্রদর্শন করা। চাঁদের গঠন আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠে উপলব্ধ উপকরণগুলির উপর পরীক্ষানিরীক্ষা পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণ করা। এ ছাড়াও-মহার্ঘ বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ-সহ চাঁদে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত আছে কি না তাও খুঁজে বের করা। জল বা বরফের সন্ধান করা। চাঁদে পৃথিবীর মতো প্রাণের অস্তিত্বত্ত্ব আছে কি না তাও অনুসন্ধান করা।

চন্দ্রাযান-৩ এর সাফল্য: বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারতের চন্দ্রজয়ের শিরোপা এবং বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয়ের পালক যুক্ত হয়। নাসা-সহ বিশ্বের অপরাপর মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র থেকে ISRO-কে অভিনন্দন জানানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ISRO-র মহাকাশ বিজ্ঞানীদের হার্দিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

চন্দ্রযান-৩ এর গুরুত্ব ও সম্ভাবনা: মাত্র চার দিন অনুসন্ধানের মাঝেই Luner Rover রোবটটি অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালশিয়াম, লোহা, ক্রোমিয়াম, টাইটানিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং সিলিকন ইত্যাদি খনিজের তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়াও মহাকাশ গবেষণার সাফল্যের মাপকাঠিতে ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আন্তর্জাতিক স্তরের স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছেন। এরপর সারা বিশ্ব ভারতীয় মহাকাশ প্রযুক্তি বিদ্যার উপর আস্থা রাখতে পারবে। ISRO বিশ্ববাসীকে নতুন মহাকাশ প্রযুক্তির নির্দেশনা দেওয়ার যোগ্যতাও প্রমাণ করেছে।

উপসংহার: চন্দ্রযান-৩ প্রকল্পের প্রধান পরিচালক হলেন ড.পি.ভিরামুথুভেল। তাঁর নেতৃত্বাধীন মহাকাশ বিজ্ঞানীগণ মাত্র ৬১৫ কোটি ব্যয়ে নিরলস সাধনার দ্বারা চন্দ্রযান-৩ মিশনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবার ভারতবর্ষকে যে মর্যাদা দান করেছেন, সে অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আরও পড়ুন

Article and Preposition – করার নিয়ম

আদরিনী গল্পের MCQ প্রশ্ন উত্তর

নবম শ্রেণী ইতিহাস প্রথম অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

নবম শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প প্রশ্ন উত্তর

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন উত্তর

নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

এডুকেশন প্রথম অধ্যায় MCQ

YouTube – Samim Sir

Leave a Comment