বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর। দ্বাদশ শ্রেণী। চতুর্থ সেমিস্টার। Class 12 Bangalir Cholochitrer Itihas Long Question Answer । Semester 4
বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর
Mark – 2
(১) রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি কে, কবে তৈরি করেন ?
উত্তর: ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে হীরালাল সেন এবং তাঁর ভাই মতিলাল সেন রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি তৈরি করেন।
(২) ভারতীয় প্রথম তথ্যচিত্রকারের নাম এবং তাঁর দুটি তথ্যচিত্রের নাম উল্লেখ করো।
উত্তর: ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হীরালাল সেন নান্দীকাররা প্রথম তথ্যচিত্রকার হিসেবে স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব।
তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্র হল-‘দিল্লি দরবার’ এবং ‘বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন’।
(৩) নির্বাক সিনেমা যুগের কয়েকজন চিত্রপরিচালকের নাম লেখো।
উত্তর: নির্বাক সিনেমা যুগের প্রথম পর্যায়ের পরিচালকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-হীরালাল সেন, জ্যোতিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রিয়নাথ গাঙ্গুলি, ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিচালকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-প্রমথেশ বড়ুয়া, নীতিন বসু, চারু রায়, দেবকী কুমার বসু প্রমুখ।
(৪) ভারতে প্রদর্শিত প্রথম সবাক ছবির নাম লেখো এবং ছবিটি প্রথম কবে, কার উদ্যোগে প্রদর্শিত হয় ?
উত্তর: ভারতে প্রদর্শিত প্রথম সবাক ছবি হল- ‘মেলোডি অব লাভ’। ছবিটি ম্যাডানের উদ্যোগে ১৯২৮-এর ডিসেম্বরে এলফিনস্টোন পিকচার প্যালেসে হলিউডের ইউনিভার্সাল কোম্পানির উদ্যোগে প্রদর্শিত হয়।
(৫) ম্যাডানের প্রযোজনায় প্রথম বাংলা টকি (সবাক সিনেমা)-র নাম ও মুক্তির সময়কাল উল্লেখ করো।
উত্তর: ম্যাডানের প্রযোজনায় প্রথম বাংলা টকির নাম হল-‘জামাইষষ্ঠী’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল।
(৬) ম্যাডানের প্রযোজনায় প্রথম ভারতীয় টকি (হিন্দি)-র নাম ও মুক্তির সময়কাল উল্লেখ করো।
উত্তর: ম্যাডানের প্রযোজনায় প্রথম ভারতীয় টকি (হিন্দি)-র নাম ‘আলম আরা’। এই ছবিটি ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে বম্বেতে প্রদর্শিত হয়।
(৭) চলচ্চিত্র পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়ার বিখ্যাত চলচ্চিত্রের নাম ও মুক্তির সময়কাল উল্লেখ করো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্র সাহিত্যে সবাক যুগের প্রথমার্ধের অন্যতম খ্যাতিমান পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়ার দুটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র হল- ‘দেবদাস’ (১৯৩৫), ‘গৃহদাহ’ (১৯৩৫), ‘মুক্তি’ (১৯৩৭), ‘শাপমুক্তি’ (১৯৩৭), ‘রজত জয়ন্তী’ (১৯৩৯), ‘উত্তরায়ণ’ (১৯৪১) প্রভৃতি।
(৮) প্রথম বাংলা সিনেমায় ‘প্লেব্যাক’ প্রথা আরম্ভ হয় কত খ্রিস্টাব্দে, কার, কোন সিনেমায় ?
উত্তর: সবাক যুগের প্রথমার্ধের অন্যতম একজন চিত্রপরিচালক নীতিন বসু ‘ভাগ্যচক্র’ সিনেমায় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্লেব্যাক প্রথার সূচনা করেন।
5 মার্কের বড় প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(৯) উত্তম-সুচিত্রা রোমান্টিক জুটি হিসেবে ক-টি সিনেমায় কাজ করেছেন এবং তাঁদের অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম ও মুক্তির সময়কাল লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রের রোমান্টিক জুটি উত্তম-সুচিত্রা প্রায় তিরিশটি ছবিতে কাজ করেছেন। তাঁদের অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম হল- ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। – ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে।
(১০) সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমা সম্পর্কে অতিসংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ কাহিনি অবলম্বনে পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের অনবদ্য সৃষ্টি ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সাহায্যে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ছবিটি মুক্তি পায়। ছবির সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন পণ্ডিত রবিশংকর। ক্যামেরায় ছিলেন সুব্রত মিত্র আর শিল্প নির্দেশক ছিলেন বংশীচন্দ্র গুপ্ত। এঁদের সকলের প্রচেষ্টায় ছায়াছবিটি পাশ্চাত্য সিনেমার সমতুল মর্যাদা পেয়েছিল। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দ্য বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ (মানবতার শ্রেষ্ঠ দলিল) শিরোপা নিয়ে পুরস্কৃত হয়।
(১১) সত্যজিৎ রায় পরিচালিত কয়েকটি সিনেমার নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রের বিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় পরিচালিত সিনেমার নাম হল-‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫), ‘পরশপাথর’ (১৯৫৮), ‘জলসাঘর’ (১৯৫৮), ‘অপরাজিত’ (১৯৫৯), ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯), ‘দেবী’ (১৯৬০), ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ (১৯৭০), ‘সোনার কেল্লা’ (১৯৭৪), ‘আগন্তুক’ (১৯৯১) প্রভৃতি।
(১২) ঋত্বিক ঘটকের প্রথম প্রদর্শিত ছবির নাম, মুক্তির সময়কাল ও ছবির বিশেষত্ব লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের প্রথম ছবি ‘নাগরিক’ কিন্তু প্রদর্শিত ছবি ‘অযান্ত্রিক’। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে।
ছোটোগল্পকার সুবোধ ঘোষের গল্প অবলম্বনে গাড়ি ও চালকদের পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন ছবির মুখ্য বিষয়। ছবিতে সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্ব ও বাস্তব জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
(১৩) ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ছায়াছবির নাম ও মুক্তির সময়কাল উল্লেখ করো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রের প্রসিদ্ধ পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল- ‘নাগরিক’ (১৯৪২), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৮), ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), ‘যুক্তি-তক্কো-গপ্পো’ (১৯৭৭) প্রভৃতি।
(১৪) মৃণাল সেন পরিচালিত বিখ্যাত ছায়াছবির নাম ও মুক্তির সময়কাল উল্লেখ করো।
উত্তর: চলচ্চিত্র পরিচালক মৃণাল সেনের বিখ্যাত ছায়াছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-‘রাতভোর’ (১৯৫৬), ‘নীল আকাশের নীচে’ (১৯৫৯), ‘বাইশে শ্রাবণ’ (১৯৬০), ‘পুনশ্চ’ (১৯৬১), ‘ভুবন সোম’ (১৯৬৯), ‘ইন্টারভিউ’ (১৯৭০), ‘পদাতিক’ (১৯৭৩), ‘একদিন-প্রতিদিন’ (১৯৭৯), ‘খারিজ’ (১৯৮২), ‘আকালের সন্ধানে’ (১৯৮১) প্রভৃতি।
(১৫) চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিংহের বিখ্যাত ছায়াছবিগুলির নাম লেখো ও মুক্তির সময়কাল উল্লেখ করো।
উত্তর: বাংলার স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিংহের বিখ্যাত ছায়াছবির নাম এবং মুক্তির সময়কাল- ‘অঙ্কুশ’ (১৯৫৪), ‘কাবুলিওয়ালা’ (১৯৫৭), ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ (১৯৬০), ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ (১৯৬২), ‘জতুগৃহ’ (১৯৬৪), ‘হাটে বাজারে’ (১৯৬৮), ‘সাগিনা মাহাতো’ (১৯৭০)।
(১৬) তপন সিংহের ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিটি কবে মুক্তি পায় ? এই ছবিতে কাবুলিওয়ালার ভূমিকায় কে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান ?
উত্তর: সুবিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিংহের ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
এই ছায়াছবিতে কাবুলিওয়ালার ভূমিকায় অভিনয় করেন বিখ্যাত অভিনেতা ছবি বিশ্বাস।
(১৭) পরিচালক তরুণ মজুমদার পরিচালিত বিখ্যাত সিনেমাগুলির নাম লেখো।
উত্তর: চলচ্চিত্রকার তরুণ মজুমদারের বিখ্যাত সিনেমাগুলি হল- ‘পলাতক’ (১৯৬৩), ‘বালিকাবধূ’ (১৯৬৭), ‘নিমন্ত্রণ’ (১৯৭১), ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ (১৯৭৩), ‘ফুলেশ্বরী’ (১৯৭৪), ‘দাদার কীর্তি’ (১৯৮০) প্রভৃতি।
(১৮) বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম-সুচিত্রা জুটির অভিনীত কয়েকটি ছায়াছবির নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা ছায়াছবিতে উত্তম-সুচিত্রা রোমান্টিক জুটির অভিনীত ছবিগুলি হল-‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘হারানো সুর’, ‘শাপমোচন’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘পথে হলো দেরী’, ‘এন্টনী ফিরিঙ্গী’, ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘দেয়া-নেয়া’ প্রভৃতি।
(১৯) বাংলা চলচ্চিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত কয়েকটি ছায়াছবির নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য ছায়াছবিগুলি হল-‘অপুর সংসার’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘চারুলতা’, ‘কিনু গোয়ালার গলি’, ‘জোড়া দীঘির চৌধুরী পরিবার’, ‘হাটে বাজারে’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘গণদেবতা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘কোনি’, ‘বেলাশেষে’ প্রভৃতি।
(২০) বাংলা চলচ্চিত্রে মহানায়ক উত্তমকুমার অভিনীত কয়েকটি ছায়াছবির নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রে মহানায়ক উত্তমকুমার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছায়াছবিগুলি হল-‘দৃষ্টিদান’, ‘নষ্টনীড়’, ‘বসু পরিবার’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘শাপমোচন’, ‘সাহেব-বিবি-গোলাম’, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘সপ্তপদী’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘অগ্নীশ্বর’ প্রভৃতি।
(২১) বাংলা চলচ্চিত্রে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন অভিনীত কয়েকটি ছায়াছবির নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছায়াছবিগুলি হল-‘সাত নম্বর কয়েদী’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘অ্যাটম বম্ব’, ‘সদানন্দের মেলা’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘বলয়গ্রাস’, ‘দেবদাস’, ‘শাপমোচন’, ‘সাগরিকা’, ‘শিল্পী’, ‘হারানো সুর’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘দেবী চৌধুরাণী’ প্রভৃতি।
(২২) বাংলা চলচ্চিত্রাভিনেতা উৎপল কুমার দত্ত অভিনীত কয়েকটি ছায়াছবির নাম লেখো।
উত্তর: অভিনেতা উৎপল কুমার দত্তের অভিনীত ছায়াছবিগুলি হল- ‘ভুবন সোম’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘গোলমাল’, ‘রঙ্গ বিরঙ্গি’, ‘আগন্তুক’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’ প্রভৃতি।
(২৩) ‘অপু ট্রিলজি’ বলতে কী বোঝ ? ‘অপু ট্রিলজি’-এর পরিচালকের নাম ও মুক্তির সময়কাল উল্লেখ করো। ২
উত্তর: ‘অপু ট্রিলজি’ বলতে বোঝানো হয় পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার-এই ত্রয়ী সিনেমাকে।
অপু ট্রিলজির পরিচালক বাংলা চলচ্চিত্রের সার্থক রূপকার সত্যজিৎ রায়। অপু ট্রিলজির মুক্তির সময়কাল হল- ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫), ‘অপরাজিত’ (১৯৫৯), ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯)।
(২৪) বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যজিতের নায়ক হিসেবে কে পরিচিত ছিলেন ? সেই নায়কের অভিনীত কয়েকটি ছায়াছবির নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যজিতের নায়ক হিসেবে পরিচিত কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল-‘অপুর সংসার’, ‘চারুলতা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ প্রভৃতি।
5 মার্কের বড় প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(২৫) চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের বিখ্যাত ছায়াছবিগুলির নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রের স্বতন্ত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল-‘নাগরিক’ (১৯৫২), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮), ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ (১৯৫৮), ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০), ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬৫), ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘যুক্তি-তক্কো-আর গপ্পো’ (১৯৭৪) প্রভৃতি।
(২৬) মৃণাল সেন পরিচালিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রটির নাম কী ? চলচ্চিত্রটির বিশেষত্ব কী ?
উত্তর: বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন পরিচালিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র হল-‘ভুবন সোম’ (হিন্দি)।
চলচ্চিত্রটির বিশেষত্ব হল উৎপল দত্তের অভিনয়, গল্প বলার ভঙ্গি, সিনেমার বয়ন ও চিত্রভাষা প্রভৃতি। কাহিনির উপজীব্য বিষয় হল-গুজরাটে বসবাসকারী এক কড়া নিয়মনিষ্ঠ ব্যুরোক্র্যাটের সঙ্গে এক গ্রাম্য বালিকার সম্পর্ক। শ্যাম বেনেগাল, গোবিন্দ নিহালনীর মতো পরিচালকদের মতে ‘ভুবন সোম’ ভারতীয় হিন্দি সিনেমায় এক নতুন ভাবনা ও তরঙ্গের জন্ম দিয়েছিল।
(২৭) চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিখ্যাত কয়েকজন বিদেশি তথ্যচিত্রকারের নাম লেখো।
উত্তর: চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিখ্যাত কয়েকজন তথ্যচিত্রকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-রবার্ট হবাইন, রবার্ট ফ্লাহাটি, গ্রিয়ারসন, আইজেনস্টাইন, জরিস ইভান্স, আলবার্তো কাভালকান্তি, পুডভকিন, জঁ ভিগো প্রমুখ।
Mark – 3
(১) সবাক সিনেমা পর্বে নিউ থিয়েটার্সের ভূমিকা কী ছিল ?
উত্তর: বাঙালির উদ্যোগে চলচ্চিত্রের পথ চলার উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের সূচনা করেছিল নিউ থিয়েটার্স। বি এন সরকার বাংলা চলচ্চিত্রকে আকর্ষণীয় ও সময়োপযোগী করে তোলার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ ও গুণী শিল্পীদের একই প্ল্যাটফর্মে আনতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। পরিচালনার ক্ষেত্রে দেবকী কুমার বসু ও প্রমথেশ বড়ুয়া, ক্যামেরায়-নীতিন বসু, শব্দ প্রকৌশলে-মুকুল বসু, গানে-রাইচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, শচীনদেব বর্মন, অজয় ভট্টাচার্য, অভিনয়ে-ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, কানন দেবী প্রমুখ। শিল্পীদের আত্মত্যাগ ও প্রচেষ্টায় নিউ থিয়েটার্স অল্প সময়েই জনপ্রিয় এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। নিউ থিয়েটার্সের হাতে বাংলা চলচ্চিত্র বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
(২) চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হীরালাল সেনের অবদান লেখো।
উত্তর: ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হীরালাল সেন প্রথম তথ্যচিত্রকার হিসেবে স্বনামধন্য একজন বলিষ্ঠ শিল্পসফল ব্যক্তিত্ব। চলচ্চিত্র শিল্পজগতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে। অনেকে তাঁকে ভারতের সর্বপ্রথম বিজ্ঞাপন বিষয়ক চলচ্চিত্রের নির্মাতা বলেও গণ্য করেন। এ ছাড়াও ভারতের রাজনীতিক চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন পথিকৃৎ।
পাশ্চাত্য দেশে সিনেমার ছায়ায় এ দেশের মানুষের বিনোদনের জন্য ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে হীরালাল সেন ও তাঁর ভাই মতিলাল সেন ‘রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি’ তৈরি করেন। বিদেশ থেকে মুভি ক্যামেরাসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কিনে এনে মঞ্চসফল বেশ কিছু নাটকের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে টুকরো টুকরো দৃশ্য সংযোজিত করে ছায়াছবি নির্মাণ করেন। সেইসব ছবিগুলি ক্লাসিক থিয়েটারে পরিবেশিত হয়। তাঁর তৈরি বিখ্যাত দুটি তথ্যচিত্র হল-‘দিল্লি দরবার’ এবং ‘বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন’। সৃষ্টিশীল কর্মনিষ্ঠ হীরালাল সেন প্রায় চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মিত ছবিগুলির গনি মধ্যে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে তৈরি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবি হল ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ভ্রাতৃ বিবাদে কোম্পানিটি বন্ধ হয়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রতিষ্ঠিত রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি বিধ্বংসী আগুনের গ্রাসে নিশ্চিহ্ন তে হয়। তাঁর সৃষ্টিকর্মের সৌজন্যে চলচ্চিত্রের প্রাক্-পর্বে ভারতীয় তথা বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি ‘পথদ্রষ্টা’ হিসেবে স্মরণীয়।
(৩) বাংলা চলচ্চিত্রে ‘নিউ থিয়েটার্স’-এর গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্র জগতে ম্যাডানের বিকল্প হিসেবে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদেশি প্রযুক্তিবিদ্যায় গড়ে উঠেছিল নিউ থিয়েটার্স। সবাক যুগের প্রাক্কর্বে প্রসিদ্ধ ইঞ্জিনিয়ার বীরেন্দ্রনাথ সরকার নিউ থিয়েটার্স গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। বাংলা ছায়াছবিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে তিনি বিশেষ উদ্যোগী হয়ে উঠেছিলেন। সমকালীন বহুগুণী শিল্পীকে একই প্ল্যাটফর্মে এনে চলচ্চিত্র জগৎকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন। নিউ থিয়েটার্সের পরিচালক হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন দেবকী কুমার বসু ও প্রমথেশ বড়ুয়া। ক্যামেরায় নীতিন বসু ও শব্দ -প্রকৌশলে মুকুল বসুর কর্মনিষ্ঠায় ছবি ও শব্দ অন্যতর মাত্রা পেয়েছিল। গানের জগতে রাইচাঁদ বড়াল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পঙ্কজ মল্লিক, শচীনদেব বর্মন, কমল দাশগুপ্ত, অজয় ভট্টাচার্যের কণ্ঠ দর্শকদের প্রলুব্ধ করেছিল। অভিনয়ে ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়ুয়া, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, কে এল সায়গল, কানন দেবী প্রমুখের কলাকৌশল অভিনবত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই সময় বাংলা সাহিত্যে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, নরেন্দ্র দেব, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্রের মতো আরও কয়েকজন প্রথিতযশা সাহিত্যিককে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য বা চিত্রভাষ্য সৃজনে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে নিউ থিয়েটার্স তিরিশের দশকে বাংলা সিনেমায় বৈচিত্র্যের সঞ্চার হয়। নিউ থিয়েটার্স প্রযোজিত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল-‘পুনর্জন্ম’, ‘চিরকুমার সভা’, ‘পল্লীসমাজ’, ‘বিদ্যাপতি’, ‘বড়দিদি’, ‘উদয়ের পথে’ প্রভৃতি। শব্দ, যন্ত্র, অভিনয় ও চিত্রনাট্যের উপস্থাপনায় নিউ থিয়েটার্স হয়ে উঠেছিল জনপ্রিয়।
5 মার্কের বড় প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(৪) বাংলা চলচ্চিত্রে ‘অপু ট্রিলজি’-র (১৯৫৫-৫৯) গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রে পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কিংবদন্তী হয়ে ওঠার পেছনে ‘অপু ট্রিলজি’-র ভূমিকা ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত এই ছবিগুলি ছিল সমৃদ্ধ ভাবনার পরিচায়ক। ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫), ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯)-এই ছবি ত্রয়ী বাংলা চলচ্চিত্রে অপু ট্রিলজি নামে পরিচিত। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল ‘পথের পাঁচালী’ ছায়াছবি। এই ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন পণ্ডিত রবিশংকর এবং শিল্পনির্দেশক ছিলেন বংশীচন্দ্র গুপ্ত আর ক্যামেরায় ছিলেন সুব্রত গুপ্ত। এঁদের সকলের আন্তরিক প্রয়াসে ‘পথের পাঁচালী’ শ্রেষ্ঠ পাশ্চাত্য ছায়াছবির সমতুল ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দ্য বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ (মানবতার শ্রেষ্ঠ দলিল) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। এই ছবির সৌজন্যে পরিচালক সত্যজিৎ রায় ‘অস্কার’ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।
পথের পাঁচালীর পরের অংশ নিয়ে তিনি সৃজন করেছিলেন ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯) সিনেমা। এই চলচ্চিত্র ত্রয়ীকে প্রায়ই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের বিষয়কে আশ্রয় করে পরিচালক ছবিটি নির্মাণ করেছেন। গ্রাম্য নিসর্গ প্রকৃতির মাঝে অপুর বড়ো হয়ে ওঠা, পাঠশালায় পাঠ ও তার সহজ জীবনবোধ জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। অপু ট্রিলজির অভিনেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, কানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, উমা দাশগুপ্ত, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
বাংলা চলচ্চিত্রে ‘অপু ট্রিলজি’ নতুন ভাবনার জন্ম দিয়ে যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। সংলাপ নির্মাণ, কাহিনির উপস্থাপনায় অভিনবত্ব ও অপু ট্রিলজিকে অমরত্ব দান করেছে। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এর স্থান নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
(৫) তথ্যচিত্র কী ? তথ্যচিত্রের শ্রেণিকরণ করো।
উত্তর: তথ্যচিত্র হল বাস্তব তথ্যনির্ভর অ-কাহিনিচিত্র।
চলচ্চিত্র সমালোচকদের দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্যচিত্র কাহিনি ভেদে বৈচিত্র্যপূর্ণ। যেমন-(১) প্রামাণিক তথ্যচিত্র (অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক বিষয়ের বিশ্লেষণ নির্ভর), (২) প্রাসঙ্গিক (সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নির্ভর), (৩) অবস্থানগত (বিভিন্ন সংবাদচিত্র যা মূলত ঘটনা নির্ভর), (৪) তথ্যমূলক (শিক্ষামূলক, প্রায়োগিক, অ্যাডভেঞ্চার-কেন্দ্রিক তথ্যনির্ভর উপস্থাপনা), (৫) জীবনীকেন্দ্রিক (বিশিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও জীবনের ৪ নানা দিক), (৬) ব্যক্তিগত (একেবারে ঘরোয়া বিষয় বা কোনো গোপন কর্মকাণ্ড নির্ভর), (৭) ভ্রমণমূলক (অভিযান বা অনুসন্ধানকেন্দ্রিক রোমহর্ষক বিবরণ)।
Mark – 5
(১) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায়ের অবদান লেখো। [সংসদ নমুনা প্রশ্ন]
উত্তর:
কথামুখ : ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক হলেন সত্যজিৎ রায়। তাঁর হাতেই বাংলা ও ভারতীয় সিনেমার নবজন্ম ঘটে।
পরিচালিত চলচ্চিত্র: তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র মোট ৩৬টি। এই ৩৬টি ছবির মধ্যে ২৯টি কাহিনিচিত্র, ৫টি তথ্যচিত্র ও ২টি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি রয়েছে। সেইসব ছায়াছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘পথের পাঁচালী’, ‘পরশ পাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘অপরাজিত’, ‘দেবী’, ‘অশনি সংকেত’, ‘অপুর সংসার’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘চারুলতা’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘আগন্তুক’, ‘The Inner Eye’, ‘Sikkim’ প্রভৃতি।
বিষয় : চলচ্চিত্রের বিষয়বৈচিত্র্য তিনি বাংলা সাহিত্যকে সুনিপুণভাবে চলচ্চিত্রে প্রয়োগ ঘটান। তাঁর চিত্রভাবনায় দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি রোমাঞ্চকর সাসপেন্স, শাসক শ্রেণির নিপীড়নের কাহিনি, গ্রামীণ প্রকৃতি, সামাজিক ও সমকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রতিচ্ছবি প্রতিভাসিত হয়েছে তাঁর বিভিন্ন চলচ্চিত্রে। তিনি বৈচিত্র্যময় জীবনকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত করেছেন। তাঁর ছবির মধ্যে একটা অব্যক্ত গভীর বাণী নিহিত আছে, যা দর্শককে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। এককথায় তাঁর ছবিতে বিশ্বায়নের ছায়া লক্ষিত হয়। নিতী চাচীক তাবীলোক
কৃতিত্ব: বাংলা চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উন্নীত করার অন্যতম পুরোধা হলেন সত্যজিৎ রায়। বাংলা চলচ্চিত্র বিকাশের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৪৭-এ তাঁরই উদ্যোগে চিদানন্দ দাশগুপ্ত সহ আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়- ‘কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি’।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি : সত্যজিৎ রায় বাংলা ও বাঙালির গর্ব। তিনি বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত সম্মান ও স্বীকৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-ফ্রান্সের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘Region of owner’, ‘একাডেমি অফ মোশন পিকচার্স’ থেকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য বিশেষ অস্কার, গ্র্যান্ড প্রাইজ আর ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড, রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক, ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউটের মাদার ল্যান্ড ট্রফি, ভারতের সর্ব্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রভৃতি।
মূল্যায়ন: বাংলা চলচ্চিত্রে কালজয়ী ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায়। তিনি শুধু চলচ্চিত্র পরিচালক বা প্রযোজক ছিলেন না, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক হিসেবেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর ছবির ভাবনা ও বিষয় প্রশংসার দাবি রাখে।
(২) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর:
কথামুখ : বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটক ছিলেন আপন স্বাতন্ত্র্যে প্রোজ্জ্বল চিত্রপরিচালক। তাঁর ছবিতে মধ্যবিত্ত জীবনের আর্থিক অনটনের কারণে মানবজীবনের দুর্দশা ও হতাশা জীবন্ত হয়ে উঠেছে। দেশভাগের যন্ত্রণার বাস্তব অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে সৃজন করেছেন নৈপুণ্যের সাথে একাধিক চলচ্চিত্র। শিল্প সৃষ্টির বিষয়ে তাঁর দর্শনে রবীন্দ্র অনুরাগের ছোঁয়া লক্ষ করা যায়।
চলচ্চিত্র ভাবনার বিষয়বৈচিত্র্য: পারিবারিক শিল্প-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড়ো হওয়ায় ঋত্বিক ঘটকের ভাবনা ছিল সত্য ও বাস্তবমুখী। পরিচালক বিমল রায়ের সহযোগী হিসেবেই তাঁর চলচ্চিত্র জগতে হাতেখড়ি। তাঁর শিল্পভাবনায় বামপন্থা ও মানবতা সযত্নে লালিত হয়েছে। তাঁর পরিচালিত সিনেমাগুলি ছিল যুগচেতনার প্রতিমূর্তি।
পরিচালিত চলচ্চিত্র: তাঁর পরিচালিত প্রথম ছায়াছবি ‘নাগরিক’ ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হলেও মুক্তি পায় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তৈরি ‘অযান্ত্রিক’ তাঁর দ্বিতীয় কিন্তু প্রথম প্রদর্শিত ছবি। যন্ত্রের সাথে মানুষের সম্পর্কের টানাপোড়েন, মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দু প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠেছে। চিত্র সমালোচকদের মতে এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ ছায়াছবি। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘যুক্তি-তক্কো আর গল্প’ প্রভৃতি। তাঁর নির্মিত তথ্যচিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘Chhou Dance of Purulia’, ‘দুর্বার গতি পদ্মা’ প্রভৃতি।
কৃতিত্ব: বাংলা চলচ্চিত্রকে আধুনিক মনস্কতায় শিল্পসম্মতভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। দেশে ও বিদেশে তাঁর তৈরি চলচ্চিত্র চর্চিত ও প্রশংসিত হয়েছে। তিনি চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে অধ্যাপক হিসেবে বহু তরুণ ছাত্রছাত্রীকে চলচ্চিত্র শিল্পে অনুপ্রাণিত করেছেন।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি: চলচ্চিত্রে বাংলা ও বাঙালিকে আন্তর্জাতিক সীমানায় পরিচিতি করিয়ে তিনি ভূয়সী প্রশংসিত হয়েছেন। ১৯৫৭-এ ‘মুসাফির’ চলচ্চিত্রের জন্য ৫ম জাতীয় চলচ্চিত্রে পুরস্কৃত হন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মধুমতী’ চলচ্চিত্র ৬ষ্ঠ ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ১৯৭০-এ ‘হীরের প্রজাপতি’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ পুরস্কার (প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক) লাভ করেন। ওই বছরে ভারত সরকার তাঁকে শিল্পকলায় কৃতিত্বের জন্য পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ চলচ্চিত্রের জন্য ‘বাচসাস’ পুরস্কারে সম্মানিত হন।
মূল্যায়ন: সমালোচকেরা ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় অতিনাটকীয়তা ও ভারসাম্যহীনতার কথা বলে থাকেন। কিন্তু আজকের দর্শক ও বোদ্ধারা উপলব্ধি করেন, তিনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এক স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র প্রতিভার অধিকারী। আবেগে, মননে, সংলাপে, দৃশ্যের সংঘর্ষ নির্মাণে তাঁর সিনেমা সম্পূর্ণ অভিনব। তিনি আপামর বাঙালি তথা দেশবাসীর হৃদয়ে সত্য ও বাস্তবের দ্রষ্টা। বাংলা সিনেমাকে তিনি যে উচ্চতা দিয়েছেন, তা সর্বকালীন স্বীকৃতির দাবিদার।
(৩) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পরিচালক মৃণাল সেনের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর:
কথামুখ: কিংবদন্তি মৃণাল সেন বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পে গভীর চিন্তাশীলতার ছাপ রেখেছেন। ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায়ের মতো তিনিও বাংলার চলচ্চিত্রকে যথার্থ আন্তর্জাতিক রূপ দিয়েছেন। প্রকৃত অর্থে বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় তিনি হলেন পরিবর্তনের অন্যতম বাহক। চলচ্চিত্র ভাবনার বিষয়বৈচিত্র্য তাঁর ছবি সমাজের বাস্তব সমস্যাকে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পরিচালিত প্রথম ছায়াছবি ‘রাতভোর’।
পরিচালিত চলচ্চিত্র: তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’ বাণিজ্যিক সফলতার মুখ না-দেখলেও পরবর্তী ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’ তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল এবং বিশেষ পরিচিতি দিয়েছিল। ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিটি তাঁকে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তাঁর সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বাণিজ্যসফল ছবি ‘ভুবন সোম’। এই ছবির গল্প বলার ভঙ্গি, চিত্রভাষ্য, অভিনয়, বিষয়বৈচিত্র্য অভিনবত্বের পরিচায়ক। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল-‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’, ‘পুনশ্চ’, ‘পদাতিক’, ‘কোরাস’, ‘মৃগয়া’, ‘একদিন-প্রতিদিন’, ‘খারিজ’, ‘আকালের সন্ধানে’ প্রভৃতি।
কৃতিত্ব: প্রথমত, কম খরচে কীভাবে ভালো সিনেমা করা যায়, তার যথার্থ নিদর্শন রেখেছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত, অস্থির সময়কে চিত্রভাষা দিয়ে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং শিল্পকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। তৃতীয়ত, মনের অন্দরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, দুঃখযন্ত্রণা, অসহায়তা নিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের প্রবৃত্তির ছবি প্রাঞ্জল করে তুলেছেন। চতুর্থত, পুরাতন প্রথা ভেঙে নতুনের জন্ম দিয়েছেন। সমাজের চেনা ছবির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিফলন তাঁর ছবিতে প্রকট হয়েছে।
সম্মাননা: মৃণাল সেন ভারত ও ভারতের বাইরে থেকে উচ্চ সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি দীর্ঘদিন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ দি ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার পান। এ ছাড়াও ফরাসি সরকার তাঁকে ‘কমান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটারস’ এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁকে ‘অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ’ সম্মানে ভূষিত করেন।
মূল্যায়ন: সিনেমা জগতে বাঙালির ও বাংলায় প্রতিনিধিত্বকারী বিখ্যাত বাঙালি চিত্রপরিচালক মৃণাল সেন। ছকে বাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে মধ্য ও নিম্নবিত্ত মনোজগতের দ্বন্দু জটিলতা সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
(৪) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পরিচালক তপন সিংহের অবদান লেখো।
উত্তর:
কথামুখ: বাংলা চলচ্চিত্রের অধ্যায়ে অন্যতম একজন চিত্রপরিচালক তপন সিংহ। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গনে হাজির হয়েছিলেন নিউ থিয়েটার্সের বাণী দত্তের সহকারী শব্দ প্রকৌশলী হিসেবে। বেশিরভাগ ছবির বক্স অফিস জনপ্রিয় হওয়ায় চলচ্চিত্র জগতে তিনি বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন এবং কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন।চলচ্চিত্রের ভাবনা ও বিষয়বৈচিত্র্য সাহিত্য বিষয়ের সাথে একাত্ম হয়ে তাঁর ভাবনা বিভিন্ন ছায়াছবিতে রূপায়িত করেছেন।
পরিচালিত চলচ্চিত্র: বাংলা ছায়াছবি সৃজনে তাঁর কল্পনার বাস্তবায়ন বৈচিত্র্যপূর্ণ। আধুনিক প্রকৌশলে তাঁর ছায়াছবিগুলিকে অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর পরিচালিত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল- ‘অঙ্কুশ’, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’, ‘জতুগৃহ’, ‘হাটে-বাজারে’, ‘আপনজন’, সাগিনা মাহাতো’, ‘হারমোনিয়াম’, ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, ‘সফেদ হাতি’, ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, ‘গল্প হলেও সত্যি’ প্রভৃতি।
কৃতিত্ব : বাংলা চলচ্চিত্রে তপন সিংহ সামাজিক বাস্তবতার অন্যতম রূপকার। জীবনকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে সত্যকে উন্মোচিত করেছেন। তাঁর ছায়াছবির বিষয়ের সাথে কুশীলব নির্বাচনে দূরদর্শিতা লক্ষ করা যায়। তাঁর তৈরি ছায়াছবিতে আলাদা আলাদা স্বাদ বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। বাংলা ছায়াছবিকে সমৃদ্ধ ভাবনায় দেশীয় গণ্ডি থেকে মুক্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করে তুলেছিলেন ও বাংলা সিনেমার জগৎকে তিনি শ্রদ্ধাশীল করে তুলেছিলেন।
সম্মাননা: তাঁর দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে তিনি ১৫টি জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমাটি ভারতের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার ও বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। ‘আদালত ও একটি মেয়ে’ ছায়াছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত হন। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে চলচ্চিত্রে কৃতিত্বের জন্য দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত হন। তাঁকে ভারত সরকার চতুর্থ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রীতে’ও ভূষিত করেন। বহুবার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন।
মূল্যায়ন: বাংলা চলচ্চিত্রে শিশুকিশোর মনের উপযোগী চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর হাতে ছবি বৈচিত্র্যময় হয়ে শিল্পকলায় পরিণত হয়েছে। চিত্রধর্মিতা ও আবেগময়তা তাঁর ছবিকে স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তাঁর মতো সংবেদনশীল, পরিশ্রমী এবং নিষ্ঠাবান পরিচালক চলচ্চিত্র ইতিহাসে বিরল। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলা চলচ্চিত্রে কালজয়ী শিল্পী।
(৫) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।
উত্তর:
কথামুখ: বাংলা চলচ্চিত্র জগতে পরিচালক সত্যজিতের ‘নায়ক’ হিসেবে কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি সত্যজিতের ৩৪টি সিনেমার মধ্যে ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ অভিনয় ও কণ্ঠ দর্শকদের মোহময় করে তুলেছিল। তিনি সুদীর্ঘ ষাট বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনশোরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সত্যজিতের পরিচালনায় ‘অপুর সংসার’ ছায়াছবিতে প্রথম অভিনয় জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো গুণী পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করেছেন।
অভিনয় জীবন : সত্যজিৎ পর্বেই তাঁর পরিচিতি ও সুখ্যাতি গগনচুম্বী হয়ে উঠেছিল। অপর্ণা সেন, শর্মিলা ঠাকুর, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অনবদ্য অভিনয় করে তিনি কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় হল ‘ফেলুদা’ চরিত্র। সত্যজিতের ‘সোনার কেল্লা’ ও ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিতে ফেলুদার চরিত্রে অসামান্য অভিনয়ের মাধ্যমে শিশু-কিশোরেরও মনের মানুষ হয়েছেন।
বক্স অফিস: সত্যজিৎ রায়ের মানসপুত্র সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সুদক্ষ অভিনয় গুণে মন ছুঁয়েছিলেন আপামর বাঙালি তথা বিশ্ববাসীর। তাঁর বক্স অফিস ছিল উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ। সেই সময়কার তরুণ অভিনেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র শিল্পী। তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল-‘অপুর সংসার’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘চারুলতা’, ‘জোড়া দীঘির চৌধুরী পরিবার’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘কোনি’, ‘বেলাশেষে’, ’১৫ পার্ক এভিনিউ’, ‘সাঁঝবাতির রূপকথা’ প্রভৃতি। চাই মশালায় ঘাকলাদার।
সম্মাননা: জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুদক্ষ অভিনয়ের জন্য তিনি সম্মানিত হয়েছেন বিশেষ পুরস্কারে। তাঁর বহু পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-পদ্মশ্রী, জুরী অ্যাওয়ার্ড, পদ্মভূষণ, দেশিকোত্তম, দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড, বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ৮ বার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার প্রভৃতি।
মন্তব্য: বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি বাচিক শিল্পী হিসেবেও তিনি কিংবদন্তি হয়েছেন। কখনও নায়ক বা খলনায়ক চরিত্রে, কখনও-বা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে মুগ্ধ করেছেন চলচ্চিত্র অনুরাগীদের। তাঁর জীবনচর্যার ছাপ বাঙালি মননে ও চলনে আজও বিদ্যমান। তিনি বাঙালিদের হৃদয়ে অন্তরের পরমাত্মীয় হিসেবে স্মরণীয় ও বরণীয়।
(৬) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উৎপল দত্ত স্মরণীয় কেন ? তাঁর অভিনীত কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম লেখো।
উত্তর: বাংলা চলচ্চিত্রে উৎপল দত্তের বিশিষ্টতা বাংলা চলচ্চিত্রে ইতিহাসে সুদক্ষ, সুকৌশলী অভিনেতা হিসেবে উৎপল দত্ত স্বনামধন্য শিল্পী। গণনাট্য আন্দোলনের সময় নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবে তাঁর অভ্যুত্থান ঘটে। সমকালীন অভিনয় জগতের ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন অন্যতম অভিনেতা। খলনায়ক কিংবা পার্শ্বচরিত্র ও কৌতুক চরিত্রে সফলভাবে তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর মননশীলতার ছাপ বহু ছায়াছবিকে বাণিজ্যিক সফলতা এনে দিয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। শেক্সপিয়ার থিয়েটারের সঙ্গে তাঁর ওতপ্রোত সম্পর্ক থাকায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ পরিচিত লাভকরেছেন। গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবেও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি প্রোজ্জ্বল হয়ে আছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি পরিচালনা করেছেন দক্ষতার সাথে বহু চলচ্চিত্র। তাঁর পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘মেঘ’, ‘ঘুম ভাঙার গান’, ‘ঝড়’, ‘বৈশাখী মেঘ’, ‘মা’ প্রভৃতি। অভিনয়ে ও সৃজনে উৎপল দত্ত বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর অভিনয়ে প্রজ্ঞার সাথে উপস্থাপন কৌশল অভিনবত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
উৎপল দত্ত অভিনীত চলচ্চিত্র: তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল-‘ভুবন সোম’ (হিন্দি), ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘গোলমাল’, ‘রঙ্গ বিরঙ্গি’, ‘আগন্তুক’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বহু থিয়েটার ও নাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনয়ের বিশেষত্ব তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দিয়েছে এবং জনপ্রিয় করে তুলেছে।
(৭) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রমথেশ বড়ুয়ার অবদান আলোচনা করো।
উত্তর:
কথামুখ : বাংলা চলচ্চিত্র জগতে প্রমথেশ বড়ুয়া আপন স্বাতন্ত্র্যে প্রোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি একদিকে সুঅভিনেতা, অন্যদিকে সুদক্ষ পরিচালক ও প্রযোজক।
পরিচালনা ও অভিনয় : বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর আবির্ভাব রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে। রাজনীতি ও অভিনয় সূত্রে কলকাতায় এসে ধীরেন গাঙ্গুলির সংস্থা ব্রিটিশ ডমিনিয়ন ফিল্মসের বোর্ড অফ ডিরেক্টর হন। তাঁর প্রথম অভিনয় ওই কোম্পানিরই ‘পঞ্চশর’ ছবিতে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে। চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরক্ত হয়ে তিনি ক্যামেরা ও আলোক সম্পাতের প্রকৌশলী শিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন সুদূর প্যারিসের ফক্স স্টুডিয়োতে। বিদেশ থেকে স্বদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করে অভিনব প্রকৌশলে গড়ে তোলেন নির্বাক ছবি ‘অপরাধী’। সূর্যের আলোর বিচ্ছুরণের ওপর নির্ভর করে তোলা ছবির পরিবর্তে কৃত্রিম উপায়ে ৪০ হাজার ওয়াটের লাইট ব্যবহার করে ছবি তুলে ভারতীয় সিনেমাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেন। সাহিত্যের গল্পকে আশ্রয় করে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম অসামান্য জনপ্রিয় ছায়াছবি ‘দেবদাস’। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে ‘দেবদাস’ নামক দ্বিভাষিক ছবিটি প্রমথেশ বড়ুয়াকে খ্যাতির উচ্চশিখরে পৌঁছে দেয়। ছবির গভীরে নায়কের ব্যর্থ প্রেমের হাহাকারময় জীবনের ট্র্যাজেডি বাঙালির ভাবাবেগকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। তাঁর পরবর্তী সিনেমা ‘মুক্তি’ ট্র্যাজিক ও বিয়োগান্তক কাহিনিকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছিল। সেটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় প্রমথেশ বড়ুয়া চলচ্চিত্র জগতে যশস্বী হয়ে ওঠেন। তিনি নিজে ছবি পরিচালনা করেছেন, আবার সেই ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। তাঁর সিনেমার অন্যতম অভিনেত্রী কাননবালা দেবী।
উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় ছায়াছবি: তাঁর উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় ছায়াছবির মধ্যে অন্যতম হল – ‘চরিত্রহীন’ (১৯৩১), ‘অপরাধী’ (১৯৩১), ‘বেঙ্গল’ (১৯৩১), ‘রূপলেখা’ (১৯৩৪), ‘দেবদাস’ (১৯৩৫), ‘গৃহদাহ’ (১৯৩৫), ‘মুক্তি’ (১৯৩৭), ‘শাপমুক্তি’ (১৯৩৭), ‘অধিকার’ (১৯৩৯), ‘রজত জয়ন্তী’ (১৯৩৯), ‘উত্তরায়ণ’ (১৯৪১) প্রভৃতি।
মন্তব্য: সফল পরিচালক ও অভিনেতা প্রমথেশ বড়ুয়া বাংলা সিনেমায় সামাজিক, পারিবারিক ও রোমান্টিক বিষয়কে কেন্দ্র করে জনপ্রিয় ও বাণিজ্যসফল ছবি বানিয়ে তিনি এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। বিশেষ করে ‘উত্তরায়ণ’ সিনেমায় ভারতে তিনিই প্রথম সাবজেক্টিভ ক্যামেরার ব্যবহার করেন এবং অভিনয়েও তিনি এক ধরনের ম্যানারিজমের জন্ম দেন। ঋত্বিক ঘটক তাঁর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন-“সেই বদ্ধ জানালার যুগে এই লোকটা কিছু করার চেষ্টা করেছে।”
(৮) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উত্তম কুমারের (অরুণ কুমার) ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর:
কথামুখ : বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিংবদন্তি ‘মহানায়ক’ হিসেবে প্রোজ্জ্বল তারকা উত্তমকুমার। অভিনয়ের আভিজাত্যে ও নৈপুণ্যে তিনি বাঙালির ‘আইকন’। আপামর বাঙালির হৃদয়ে তিনি প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব হিসেবে পূজিত। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বহু প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি অসাধারণ হয়ে উঠেছেন।
অভিনয় জীবন: বাঙালির মহানায়ক উত্তমকুমারের অভিনয় জীবনের সূত্রপাত ‘মায়াডোর’ চলচ্চিত্রে। তবে ছবিটি মুক্তি পায়নি। তাঁর প্রথম অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দৃষ্টিদান’। ‘বসু পরিবার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পাওয়ার পরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন। রোমান্টিক নায়ক কিংবা পার্শ্বচরিত্রে নৈপুণ্যের সাথে অভিনয় করে বাঙালির হৃদয়ে আপনজন হয়েছেন।
পরিচালক উত্তমকুমার সুঅভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র অভিনয় জগতে তিনি যেমন সুখ্যাতি লাভ করেছেন পরিচালক হিসেবেও ঠিক তেমনই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ‘শুধু একটি বছর’, ‘১৯৭৩-এ ‘বন পলাশীর পদাবলী’, ‘১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ তাঁর পরিচালনায় মুক্তি পায় এবং ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
বক্স অফিস: জনপ্রিয় অভিনেতা, গায়ক, সুরকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে তাঁর বক্স অফিস ছিল উচ্চাসনে। তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল- ‘দৃষ্টিদান’, ‘নষ্টনীড়’, ‘বসু পরিবার’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘শাপমোচন’, ‘পথে হলো দেরী’ (রঙিন ছবি), ‘হারানো সুর’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘দেয়া-নেয়া’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, ‘সপ্তপদী’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘বাঘ বন্দীর খেলা’, ‘সব্যসাচী’, ‘শ্রীকান্তের উইল’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘নায়ক’ প্রভৃতি।
সম্মাননা: ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ‘চিড়িয়াখানা’ ও ‘এন্টনী ফিরিঙ্গি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রথম ভরত পুরস্কারে সম্মানিত হন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে অভিনয়ে সুখ্যাতির জন্য জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান পান। ১৯৬৯-এর ১৯ জানুয়ারি কলকাতা পুরসভা তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা জানায়।
মন্তব্য: বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘মহানায়ক’ হিসেবে প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব উত্তমকুমার। অভিনেতা হিসেবে সব সীমানার বাঁধ ভেঙে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তিনি স্বনামধন্য শিল্পী। অভিনয়ে তাঁর বাচনভঙ্গি, ঠোঁটে গান বাঙালির মনের রসনাকে আজও তৃপ্ত করে। তাঁর ব্যক্তিত্বের ছাপ বাঙালি যুবমানসের সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী। এককথায় উত্তমকুমার বাঙালির আবেগ, ভালোবাসার অন্য নাম। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুলাই ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবির শুটিং চলাকালীন হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হন।
(৯) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সুচিত্রা সেনের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর:
কথামুখ : বাংলা চলচ্চিত্রের রাজরানি কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি মাইলস্টোন। সুদীর্ঘ সময় ধরে সুদক্ষ অভিনয়ের জন্য বহুজনের বিচারে তিনি অদ্বিতীয়া। অসংখ্য চরিত্রে অনন্য সাধারণ রূপায়ণের জন্য কোষ্ঠিপাথরে তাঁর অগ্নিপরীক্ষা ঘটেছে বারংবার।
অভিনয় জীবন: বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে সুপরিচিত অভিনেত্রী হিসেবে যশস্বী শিল্পী সুচিত্রা সেন। মহানায়ক উত্তমকুমারের বিপরীতে নায়িকা চরিত্রে বহু ছায়াছবিতে সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। সুদর্শনা ও সুঅভিনেত্রী সুচিত্রা সেন দীর্ঘ কয়েক বছর প্রায় ৫৩টি ছায়াছবিতে অভিনয় করে চলচ্চিত্র জগতে একাধিপত্য কায়েম করেছেন।
বক্স অফিস: তাঁর অভিনীত সিংহভাগ ছবির বক্স অফিস ছিল উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ। তাঁর অভিনীত বিখ্যাত ছায়াছবিগুলি হল-‘সাত নম্বর কয়েদী’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘অ্যাটম বম্ব’, ‘মরণের পরে’, ‘সদানন্দের মেলা’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘গৃহপ্রবেশ’, ‘বলয়গ্রাস’, ‘সাঁঝের প্রদীপ’, ‘দেবদাস’, ‘শাপমোচন’, ‘সাগরিকা’, ‘শুভরাত্রি’, ‘হারানো সুর’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘সপ্তপদী’, ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’, ‘মেঘ কালো’, ‘ফরিয়াদ’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’, ‘আঁধি’ প্রভৃতি।
সম্মাননা: ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে রৌপ্য পুরস্কার জয় করেন। তিনি প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার কর্তৃক ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম ঘোষিত হলেও তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেননি। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্ব্বোচ্চ সম্মাননা ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত হন।
মন্তব্য: ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর চলচ্চিত্র জগৎ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। জীবনের শেষ সময়গুলি লোকচক্ষুর অন্তরালে রামকৃষ্ণ সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। সুচিত্রা সেন বাঙালি তরুণীদের কাছে সেই সময়ে ছিলেন ‘ফ্যাশান আইকন’। তিনি বাঙালিদের নিজস্ব সংস্কৃতির বার্তাবাহক হিসেবে বহু বছর দর্শককে নির্মল আনন্দ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন –
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর
YouTube – Samim Sir