ডাকঘর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর Class 12। দ্বাদশ শ্রেণী । চতুর্থ সেমিস্টার । Class 12 Dakghar Question Answer Semester 4
পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ
ডাকঘর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর Class 12
Mark – 5
(১) ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলকে কবিরাজ বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছিলেন কেন? অমলের সাথে ছেলের দলের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখো। [সংসদ নমুনা প্রশ্ন] ২ + ৩ = ৫
উত্তর –
নিষেধাজ্ঞার কারণে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলগুপ্তকে পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করেছেন সন্তানহীন দম্পতি মাধবদত্ত ও তাঁর স্ত্রী। অমল ছোটো থেকেই রোগাক্রান্ত। রোগমুক্তির আশায় কবিরাজকে দেখালে, কবিরাজ আন্দাজ করতে পারেন শিশুটির আয়ু কম। একইসঙ্গে কবিরাজমশাই এও বলেন অমলকে বাঁচাতে হলে কঠিন অনুশাসনের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। বিখ্যাত আয়ুর্বেদজ্ঞ মহর্ষি চ্যবন, চক্রধরদত্ত প্রমুখের নাম উল্লেখ করে অমলকে বাইরে বের করলে কী কী হতে পারে সে সম্পর্কে মাধবদত্তকে জানিয়েছেন কবিরাজ। অমলকে খুব সাবধানে রাখতে হবে, কোনোভাবেই ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। শরৎকালের রৌদ্র আর বায়ু দুটোই গায়ে লাগতে দেওয়া যাবে না। এইসব নিয়ম মেনে চলা কষ্টকর হলেও তাকে মেনে চলতে হবে । রোগীর গায়ে কোনোভাবেই যেন বাইরের হাওয়া না লাগে। বাইরে বের হলে এগুলির সংস্পর্শ ত্যাগ করা যাবে না এবং রোগ বৃদ্ধি পাবে। এজন্য বেরোতে নিষেধ করেছিলেন কবিরাজমশাই।
কথোপকথন : ছেলের দলকে অমল ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে এবং তাদের দাঁড়ানোর অনুরোধ জানায়। তারা খেলতে যাচ্ছে এবং খেলবে চাষ-খেলা। এতে তাদের লাঙল একটা লাঠি ও সঙ্গীদের মধ্যে দুজন গোরু হবে। তারা সমস্ত দিন এভাবে খেলবে। এ কথা শুনে অমল কল্পনা করে সারাদিন খেলার পর সন্ধ্যার সময় নদীর ধার দিয়ে বাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় যেন তার ঘরের সামনে দিয়ে যায় এ অনুরোধ রাখে অমল। ছেলের দল অমলকে বাইরে আসতে বললে কবিরাজের নিষেধের কারণে যেতে পারছে না জানায়। ছেলেরা চলে যেতে যেতেও থেকে যায় অমলের দেওয়া জাহাজ, জটাইবুড়ি, সেপাই প্রভৃতি খেলনাগুলি পাওয়ায়। এই খেলনাগুলি সে ফেরত চায় না, উপরন্তু বলে রোজ যদি এখানে আসে তাহলে নতুন খেলনা আনিয়ে দেবে। অমলের কথায় রাজি হয়ে সেপাইগুলি নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলতে থাকে। এই যুদ্ধের বন্দুক একটা মস্ত শরকাঠি। ছেলের দলের সাথে কথা বলতে বলতেই অমলের রোগাক্রান্ত শরীর অবসন্ন হয়ে আসে, ঘুম পায়। ঘুমানোর আগে ছেলের দল রাজার ডাক-হরকরাদের চেনে কিনা জানতে চাইলে ছেলেরা বলে তারা শুধু চেনেই না, তাদের দুজনের নামও জানে। সেই ডাক-হরকরারা যদি অমলকে চিনতে না-পারে-এ প্রশ্ন অমলের মনে উত্থাপিত হলে ছেলের দল জানায় “চিঠিতে তোমার নাম থাকলেই তারা তোমাকে ঠিক চিনে নেবে।” ।
(২) কীভাবে রাজার চিঠি অমলের কাছে এসে পৌঁছোলো ‘ডাকঘর’ নাটক অবলম্বনে তা নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করো। [সংসদ নমুনা প্রশ্ন] ৫
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে প্রহরী ও অমলের কথোপকথনের সময় প্রহরী প্রথম জানায়, “দেখো, একদিন তোমার নামেও চিঠি আসবে।“ এরপর থেকে অমলের চিঠি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেমন বেড়েছে তেমনই যাকে সামনে পেয়েছে তার কাছেই চিঠির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছে। রাজার কাছ থেকে রোজ একটা করে চিঠি পাওয়ার আশায় জানালার কাছে বসে থাকে অমল। সবার ওপর রেগে যাওয়া যার স্বভাব সেই মোড়লমশায়কেও সে বলেছে-জানালার পাশে বসে আছে চিঠি আসবে ভেবে। এ কথা শুনে মোড়ল রেগে গিয়ে বলে, “বেশ শীঘ্রই যাতে রাজার চিঠি তোদের বাড়িতে আসে, আমি তার বন্দোবস্ত করছি।“ ছেলের দলের সাথে নানা ধরনের গল্প করলেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে ডাক-হরকরাদের নাম জেনে নেয় এবং বলে, “আমার নামে যদি চিঠি আসে তারা কি আমাকে চিনতে পারবে?” ছেলের দলের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে অমল ঘুমাতে যায়।
তৃতীয় দৃশ্যে দেখি অমল শয্যাশায়ী, জানালার কাছে বসার ক্ষমতা নেই, তার মধ্যেও ঘরের মধ্যে আগত ফকিরবেশী ঠাকুরদার কাছে অমল জানতে চেয়েছে, “ডাকঘরে কি আমার নামে রাজার চিঠি এসেছে?” তার নামের চিঠি রওনা হয়ে গিয়েছে, পথে আছে। একদিন তার নামে চিঠি এসে পৌঁছোবে এ কথা ভেবেই অমল মনে মনে খুশি হচ্ছে। এদিকে অমলের শরীর আস্তে আস্তে অবশ হয়ে আসছে, চোখের ওপর থেকে থেকে অন্ধকার হয়ে আসছে। তার চিরঘুমে ঢলে পড়ার আগে “রাজার চিঠি কি আসবে না?” এরপর যে মোড়লমশাই একসময় অমলকে বিদ্রুপ করেছিল, সেই ভঙ্গিতেই অমলকে জানায়, “ওরে ছোঁড়া, তোর নামে রাজার চিঠি এসেছে যে।“ মোড়ল একখানা অক্ষরশূন্য কাগজ দেখায়, যেটাকে ঠাকুরদা সত্যই রাজার চিঠি বলে জানায়। মোড়ল পরিহাসের সুরে আরও জানায়, “রাজা লিখছেন, আমি আজকালের মধ্যেই তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি, আমার জন্যে তোমাদের মুড়ি-মুড়কির ভোগ তৈরি রেখো-রাজভবন আর আমার এক দন্ড ভালো লাগছে না।” এই চিঠির বয়ান থেকে জানা যায় রাজা স্বয়ং আসার আগে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিরাজকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
(৩) ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রটি তোমার কীরূপ লাগে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো। [সংসদ নমুনা প্রশ্ন] ৫
উত্তর:-
পরিচয়: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রধান ও নায়ক চরিত্র অমল। তাকে ছাড়া নাটকের অন্যান্য সব চরিত্র যেন অসাড়, প্রাণহীন। অমলের পরিচয় হিসেবে নাট্যকার জানিয়েছেন, “ছোটোবেলা থেকে বেচারার মা নেই। আবার সেদিন তাঁর বাপও মারা গেছে।” অনাথ বালককে আশ্রয় দিয়েছে গ্রামসম্পর্কিত পিসিমা ও তাঁর স্বামী মাধবদত্ত।
নাম-মাহাত্ম্য: অনাথ, কল্পনাবিলাসী, বিহঙ্গশিশু, যার নাম অমল। নামটি তাৎপর্যবাহী, পৃথিবীর কোনো মালিন্য যাকে স্পর্শ করে না, সেই অমল। Words Worth-এর ‘Ode on Immortality’ কবিতায় বর্ণিত শিশুর মতন অমলও দৈবী সম্পদের অধিকারী। তার “exterior doth belie his soul’s immensity”-তার রোগজর্জর ক্ষুদ্র দেহ, পাংশুমুখ দেখে সম্পূর্ণ বিচার করা যায় না, এই জন্যই অমলের পদবী ‘গুপ্ত’।
গিফ্টড চাইল্ড : অমল প্রতিভাবান, মনোবিজ্ঞানে যাকে বলে Gifted child। এদের বৈশিষ্ট্যই হল সব কিছুতে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করা। কাঠবিড়ালির দানাশস্য খাওয়া, দইওয়ালার ডাকের মধ্যে ও সুর, প্রহরীর ঘণ্টার আওয়াজে উদাসী হয়ে যাওয়া, সবাইকে সহজে বিশ্বাস করা; এমনকি মোড়লের মতো মানুষকেও সে বিশ্বাস করেছে। এই বিশ্বাসের জোরেই সে পরম মুক্তির সন্ধান পেয়েছে।
কল্পনাপ্রবণ মন: আদ্যিকালের পৃথিবীকে কখনও লৌকিক সীমানায় নিবিড় করে পেতে চেয়েছে, কখনও পৃথিবীর স্থানিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে চেয়েছে। কল্পলোকে বিচরণ করতে করতে জন্মান্তরে অভিজ্ঞতার সূত্রে সমগ্র পৃথিবী পরিক্রমা করেছে। কল্পনাশক্তি পরিপূর্ণ স্ফূর্তি পায় প্রহরী খেলাচ্ছলে রাজার চিঠির কথা বললে। তার ঘরের কাছাকাছি রাজার ‘ডাকঘর’ বসেছে, সেখান থেকে তার নামে চিঠি আসবে। নাটকের শেষে অমল মারা যায়, কিন্তু মৃত্যুর পূর্বক্ষণে জেনে যায় রাজার চিঠি এসেছে, রাজদূত ও রাজকবিরাজ এসেছেন রাজার আগমন বার্তা নিয়ে।
পরিশেষে বলা যায় যে, অমলের মুক্তিপিপাসাকেই নাটকে প্রতীকায়িত করা হয়েছে। সীমার সঙ্গে অসীমের মিলন, বন্ধন মুক্তির তত্ত্ব, চিত্তমুক্তির আকুলতা আছে। পরমাত্মার আহ্বানে সংসারের নানাবিধ বিধান, শাসন ও বাধার পীড়নে ক্লান্ত আমি’-র মুক্তি কামনার ইঙ্গিত আছে অমলের মধ্যে।
(৪) ‘ডাকঘর’ নাটকের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। [সংসদ নমুনা প্রশ্ন] ৫
উত্তর – সাহিত্যের একটি প্রধান অঙ্গ হল নামকরণ। প্রসঙ্গত বলা যায় যে নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়। নামকরণ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন-বিষয়কেন্দ্রিক, চরিত্রপ্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের নামকরণটি বিশেষ তাৎপর্যবাহী। ‘ডাকঘর’ উচ্চারণের সাথে সাথে মনে পড়ে চিঠি, ডাকঘর ও ডাক-হরকরা শব্দবন্ধগুলি। অমলের কাছে রাজার চিঠি আসা ও শেষে স্বয়ং রাজার আসা দুটিই বিশেষ তাৎপর্যময়। নাটকে রাজা হচ্ছেন বিশ্বের রাজা অর্থাৎ বিশ্বেশ্বর। চিঠির মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের কাছে তাঁর সংবাদ জানান দেন, ইঙ্গিত দেন, অন্যকে আহ্বান জানান। রাজার চিঠির আশায় মানুষ উৎকণ্ঠিত হয়ে থাকেন। অমলও রাজার চিঠির আকাঙ্ক্ষা করেছে।
এই নাটকে সমগ্র বিশ্বই ভগবানের ডাকঘর, এখানেই বিশ্বরাজের সমস্ত সৌন্দর্যের বার্তা একত্রিত হয়। চিঠিগুলি মূলত মানুষের অন্তরের বিবেক জাগানোর উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। আর ডাক-হরকরার কাজ হল চিঠি বিলি করা। রাজার চিঠির তারাই বাহক বা দূত। পৃথিবীর যা কিছু অপূর্ব সৌন্দর্য প্রকাশ তার মধ্যেই ভগবানের বার্তা থাকে। যারা রূপ ও রসের মাধ্যমে রাজার আনন্দরূপ মানুষের কাছে ফুটিয়ে তোলে, তারাই ডাক-হরকরা। অমলের ইচ্ছা সে রাজার ডাক-হরকরা হবে, রাজার আনন্দলিপি দিকে দিকে বয়ে নিয়ে বেড়াবে, রাজার সৌন্দর্য প্রচারে সে সহায়ক হবে।
‘ডাকঘর’-এ স্বদেশ ও সমকালও উপস্থিত। রাজার আগমন বলতে তৎকালীন ইংরেজ শাসক রাজা পঞ্চম জর্জ নাটকটি প্রকাশের কিছুদিন আগেই ভারতে এসেছিলেন। সেজন্য ‘ডাকঘর’ শুধু বস্তুবাচক নয়, পাশাপাশি মানুষের অন্তরাত্মার মুক্তির বাণীও সেখান থেকে প্রকাশিত। সেজন্য ‘ডাকঘর’ নাটকটির ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণ হিসেবে সার্থক হয়েছে বলা যায়।
২ এবং ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(৫) “মুশকিলে পড়ে গেছি। যখন ও ছিল না তখন ছিলই না”- বক্তা কেন মুশকিলে পড়েছেন ? ৫
উত্তর:–
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ডাকঘর’ (১৯১২) নাটকের প্রথম দৃশ্যে মাধবদত্ত মুশকিলে পড়েছেন। মাধবদত্তের নিজের কোনো সন্তান নেই। এতদিন পর্যন্ত সন্তানস্নেহ উপলব্ধি করতে পারেননি। কিন্তু তাঁর স্ত্রীর গ্রামসম্পর্কের ভাইপো, পিতৃ-মাতৃহারা অমলকে তিনি তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছেন। অমলের ওপর মাধবদত্তের বাৎসল্যরস সঞ্চারিত হতে শুরু করেছে। অমল রোগগ্রস্ত শিশু, আয়ু খুব কম। কবিরাজের কথামতো তিনি অমলকে রৌদ্র আর বায়ু থেকে রক্ষা করার জন্য ঘরের মধ্যে আটকে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। শৈশবকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা খুবই মুশকিলের। অমল যতদিন ছিল না ততদিন সন্তান স্নেহ বা হারানোর কোনো যন্ত্রণা ছিল না। কিন্তু অমল যখন মাধবদত্তের ঘর জুড়ে বসল, সেই ঘর থেকে যদি অমলের ভালোমন্দ কিছু ঘটে যায় তাহলে মাধবদত্তের ঘর আবার অন্ধকার হয়ে যাবে, তিনি সন্তানহারা হয়ে যাবেন। এই সন্তান হারানোর কথা ভেবেই মাধবদত্ত মুশকিলে পড়ে গেছেন।
মাধবদত্ত এতদিন পর্যন্ত বহু পরিশ্রম করে টাকা রোজগার করেছেন একপ্রকার নেশাগ্রস্তের মতো হয়ে। তাঁর এতদিনের সঞ্চয়ে কেউ ভাগ বসায়নি বা ভাগ বসানোর মতো কেউ ছিল না। কিন্তু অমল এ বাড়িতে আসার পর থেকে তার চিকিৎসার জন্য নানাভাবে টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর সঞ্চিত সম্পদে হাত পড়েছে। এ বিষয়েও মাধবদত্তের একপ্রকার বৈষয়িক ভাবনা কাজ করেছে। বিষয়ী মানুষের সঞ্চিত সম্পদ খরচ হয়ে যাওয়া মুশকিলে পড়ার সামিল।
(৬) “কিন্তু কী বিষয়ে সাবধান হতে হবে সেইটে স্থির করে দিয়ে যান।”-সাবধান হওয়ার জন্য কবিরাজ কোন কোন বিষয় উল্লেখ করেছেন ? ৫
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলগুপ্ত রোগাক্রান্ত শিশু। তার রোগের উপশমের জন্য মাধবদত্ত কবিরাজমশাইয়ের কাছে জানতে চেয়েছেন তাদের কী কী করণীয়। সেই বিষয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবিরাজ জানিয়েছেন, অমলকে খুব সাবধানে রাখতে হবে; কোনোভাবেই ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। শরৎকালের রৌদ্র আর বায়ু দুটোই গায়ে লাগতে দেওয়া যাবে না। এইসব নিয়ম মেনে চলা কষ্টকর হলেও তাকে মেনে চলতে হবে; কারণ যে জিনিস মেনে চলা যত কষ্টকর, সে জিনিসের ফল হয় আরামদায়ক বা শুভ। রোগীর গায়ে কোনোভাবেই যেন বাইরের হাওয়া না লাগে। কবিরাজের এত বিধিনিষেধের বেড়াজাল সত্ত্বেও একসময় অমল সমস্ত কিছু ছিন্ন করে শূন্যের পথে পাড়ি দেয়। তার জীবন্মুক্তি ঘটে।
(৭) “তুমি যে ছেলে খেপাবার সদ্দার।”- এমন কথা বলার কারণ কী ? ৫
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকে মাধবদত্ত ঠাকুরদা সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন নাটকে এই ঠাকুরদা চরিত্রটি নানাভাবে এসেছে। ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল রোগে-অসুখে জীর্ণ একটি শিশু। শারীরিক ও মানসিক ব্যাধিতে জর্জরিত হয়ে যখন সে মৃত্যুর দোরগোড়ায়, তখন সেই বিবর্ণ জীবনে একরাশ মুক্তির হাওয়ার মতো আবির্ভাব ঘটেছে ঠাকুরদার। যাঁর আগমনকে একপ্রস্থ বালাই হিসেবেই মনে করেছেন বিষয়ী মাধবদত্ত, তাই তাঁকে এমন কথা বলতে শুনি।
শিশুমনে যাতে খুব সহজেই আকর্ষিত হয়ে যান এমন রূপে হাজির হন ঠাকুরদা। ‘ডাকঘর’ নাটকে তিনি অমলের কাছে আসেন ফকির রূপে। কিন্তু অমলকে তিনি ঘরের বাইরে নিয়ে যাননি বরং ঘরের মধ্যেই রাখার চেষ্টা করেছেন। মাধবদত্ত যখন প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন তখন ঠাকুরদা আশ্বস্ত করার জন্য বলেছেন, ঘরে ধরে রাখবার মতো খেলাও তিনি কিছু জানেন। অর্থাৎ যিনি ঘরের বাইরে বার করতে জানেন, তিনিই পারেন ঘরের মধ্যে ধরে রাখতে। বদ্ধ জীবনে একরাশ মুক্ত বাতাস সবাই বয়ে আনতে পারে না যেটা পেরেছিলেন ঠাকুরদা। আর তাইতো তিনিই প্রথম রাজার কথা বলেছেন, নানান দেশ দেখার অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। অমলের কল্পনা প্রবণতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হালকা দেশ বা ক্রৌঞ্চদ্বীপের কথা শুনিয়ে রোগাক্রান্ত শিশুর মনে কল্পনার জাল ছড়িয়ে রোগচিন্তার মুক্তি ঘটাতে চেয়েছেন। কিন্তু বিষয়ী, হিসেবি মাধবদত্তের মতো মানুষের কাছে তা ‘ছেলে খেপাবার’ ধান্দা বলে মনে হয়েছে।
ডাকঘর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন উত্তর Class 12
(৮) “আমার মতো খেপা আমি কালকে একজনকে দেখেছিলুম।”- অমলের দেখা খেপা মানুষটির বর্ণনা দাও। ৫
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলের প্রশ্নগুলি শুনে মাধবদত্তের মনে হয়েছে, অমলকে ঘরে আটকে রাখার জন্য তার খেপামি বেড়ে গিয়েছে। সেই খেপামির চোখ দিয়ে সে অপর একজন মানুষকে খুঁজে পেয়েছে। তার বর্ণনা দিতে গিয়ে অমল বলেছে লোকটির কাঁধে একটি বাঁশের লাঠি, লাঠির আগায় একটি পুঁটুলি বাঁধা এবং বাঁ হাতে একটি ঘটি। তার পায়ে পুরোনো একজোড়া নাগরা জুতো, সেটা পায়ে দিয়েই ডুমুরগাছের তলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরনার কাছে লাঠিসহ পুঁটুলি নামিয়ে হাত পা ধুয়ে নিয়ে পুঁটুলি থেকে ছাতু বার করে জল দিয়ে মেখে খেয়ে নিল। খাওয়া শেষ করে আবার পুঁটুলি বেঁধে ঘাড়ে নিয়ে পায়ের কাপড় গুটিয়ে ঝরনার জলের ভিতর নেমে জল কেটে কেটে এক সময় পার হয়ে চলে গেল। অমলও ওই মানুষটির মতো করতে চায়। তার ইচ্ছা, “কত বাঁকা বাঁকা ঝরনার জলে আমি পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে পার হতে হতে চলে যাব”-দুপুরবেলায় সবাই যখন ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে তখন আমি কোথায় কতদূরে কেবল কাজ খুঁজে খুঁজে বেড়াতে বেড়াতে চলে যাব”- অর্থাৎ পুঁটুলি বাঁধা বাঁশের লাঠি কাঁধে লোকটির মতো কোনো নিরুদ্দেশের পথে কাজ খুঁজতে চলে যাব। অমলও চায় লোকটির মতো প্রকৃতির কোলে কাজ করতে।
(৯) ডাকঘর’ নাটক অনুসরণে দইওয়ালার গ্রামের পরিচয় দাও। ৫
উত্তর: রবি ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলের সাথে বাইরের যে-সমস্ত মানুষের পরিচয় হয়েছে, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পরিচয় হয় দইওয়ালার। নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যের শুরুই হয়েছে অমল ও দইওয়ালার কথোপকথন দিয়ে। দইওয়ালার পেশা গ্রামে গ্রামে দই ফেরি করা। রাস্তার পাশের ঘরের জানালায় বসে অমল যখন শুনতে পায় ‘দই-দই-ভালো দই।‘ তখনই তাকে ডাক দেয়। প্রথমে তাদের ক্রেতা-বিক্রেতাধর্মী কথাবার্তা থেকে পরিচয়ের জগতে চলে আসে। দইওয়ালা বহুদূর গ্রাম থেকে রোজ দইয়ের পসরা নিয়ে আসে। তাদের গ্রামটি পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলায়, শামলী নদীর ধারে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ খেতে গোরুগুলি চরে বেড়ায়। তাদের পাড়ার নাম গোয়ালাপাড়া। এই নামটির সাথে দুধের সম্পর্ক জড়িত। গোয়ালাপাড়ার মেয়েরা শামলী নদী থেকে কলসিতে জল ভরে মাথায় করে বাড়ি নিয়ে যায়। অমলের কথা অনুযায়ী গোয়ালাপাড়ার মেয়েরা সবাই লাল শাড়ি পরে তা ঠিক নয়। তাদের গ্রামের রাস্তা লাল মোরামের, রাস্তার দু-পাশে পুরোনো কালের বড়ো বড়ো গাছ সারিবদ্ধভাবে আছে। দইওয়ালার কথা থেকে অনুমান করা যায় গ্রামের মেয়েরা ঘর-গৃহস্থালির কাজকর্ম করে, আর পুরুষেরা দূরের দূরের গ্রামে দই বেচে বেড়ায়। অমলের কল্পচোখে দইওয়ালার গ্রামের চিত্র অনেকটাই ফুটে ওঠে, কিন্তু কল্পনা ও বাস্তব দুটো একেবারে সমার্থক নয়। তাই বাস্তবের পথ দিয়ে দইওয়ালা তার গ্রামের বর্ণনা দিয়েছে। তাদের গ্রামের গোরুগুলিকে দাঁড় করিয়ে দুধ দোয়া হয় এবং তা থেকেই মেয়েরা সন্ধেবেলা দই পাতে। অর্থাৎ গ্রামের সমস্ত মানুষ দুগ্ধজাত পণ্যের কারবারে যুক্ত। দইওয়ালার গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তার সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক চিত্র এভাবেই ‘ডাকঘর’ নাটকটিতে প্রকাশিত হয়েছে।
(১০) “তুমি আমার দই একটু খেলে আমি কত খুশি হব।”- বক্তা কে ? উক্তিকির আলোকে চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর–
বক্তা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘ডাকঘর’ গ্রন্থে উল্লেখিত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন দইওয়ালা ।
দইওয়ালার চরিত্র : দইওয়ালা সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি। পেশা দই বিক্রি। এক গ্রাম থেকে দূরবর্তী গ্রামে কাঁধে দই-এর পসরা নিয়ে ফেরি করে বেড়ায়। একজন পণ্য বিক্রেতা; যার সঙ্গে অন্যের কেনা-বেচার সম্পর্ক। তারপরেও এই মানুষটি অমলের সাহচর্যে এসে তার পেশাকে ভুলে, অন্য এক মায়াময় জগতে পাড়ি দেয়।
দইওয়ালাকে কেবলমাত্র দইওয়ালা হিসেবে সবাই চেনে, অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রেতা-বিক্রেতার, এভাবেই দইওয়ালা অভ্যস্ত। কিন্তু অমলের সাথে কথা বলার সূত্রে মানুষটি যেন অন্য এক মানুষ হয়ে যায়। দইওয়ালা কল্পনাও করতে পারে না তার মতো একজন সাধারণ ফেরিওয়ালার গ্রাম কেউ চিনতে পারে, যেতে চাইতে পারে। অমল তার মনের আগল খুলে দেয়, দইওয়ালা নতুন বিস্ময়ে রূপকথার জগতে যেন চলে যায়। দই বিক্রি করার মধ্যে যে কোনো আনন্দ থাকতে পারে, তার ‘দই-দই-ভালো দই!’ ডাক যে কারও ভালো লাগতে পারে সেটাও কল্পনাতীত। তার গ্রাম্য সরল সাদাসিধে মনোভাব নিয়ে অমলের কথার সাথে বাৎসল্যপ্রেমে আটকে যায়। সে মনে করে দই বেচার কাজ খুব সুখকর নয়, তাই অমলকে বলে- “মরে যাই! দই বেচতে যাবে কেন বাবা? এত পুঁথি পড়ে তুমি পণ্ডিত হয়ে উঠবে।” একদিকে দই বেচা খুব কষ্টকর কাজ, অন্যদিকে আর একটি ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়-তার জীবনে বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পড়াশোনা শেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সেজন্য সে চায় অমল লেখাপড়া শিখে মস্ত মানুষ হয়ে উঠুক, তার মতো ফেরিওয়ালা যেন না হয়। আসলে দইওয়ালা চরিত্রটির মধ্যে রবীন্দ্রনাথ বাস্তবতাকে যেমন ধরতে চেয়েছেন, তেমনই উপযুক্ত জল-হাওয়া পেলে কল্পনার স্বপ্নরাজ্যে পাড়ি দিতে পারে তাও দেখিয়েছেন।
অমল ও দইওয়ালা দুই অসমবয়সী মানুষের সাথে খুব সহজেই এক বহুদিনের পূর্বপরিচিতের সম্বন্ধ গড়ে ওঠে। সে তার ছোটো বোনঝির সাথে অমলের বিয়ে দিতে চায়।আসলে গ্রাম্যজীবনের সহজসরল হার্দ্য সম্পর্কের চিত্র ফুটে ওঠে। এইভাবে দইওয়ালা চরিত্রটি নাটকের পক্ষে এক অনিবার্য চরিত্র হয়ে ওঠে।
২ এবং ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(১১) “আমাকে তোমার মতো ঐ রকম দই বেচতে শিখিয়ে দিয়ো।“- অমল দই বেচা শিখতে চায় কেন ? ৫
উত্তর:
কবিগুরুর ‘ডাকঘর’ নাটকের অমল প্রতিভাবান, মনোবিজ্ঞানে যাকে বলে gifted child। এসব শিশুর বৈশিষ্ট্যই হল সব কিছুতে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করা। অমল এবং দইওয়ালার কথোপকথনের সময় অমল বেশ কিছু সূক্ষ্ম জিনিস কল্পনায় অনুভব করে। অমল যেহেতু রোগাক্রান্ত শিশু, কবিরাজ তাকে সারাদিন ঘরের মধ্যে বসে থাকতে বলেছে। কিন্তু অমল চায় ‘বিহঙ্গশিশুর’ মতো সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে। দইওয়ালার কাজ গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানো। সারাদিন তার কাটে প্রকৃতির মধ্যে, নতুন নতুন মানুষের সাথে, যা অমলের ঐকান্তিক ইচ্ছা। সেই ইচ্ছাকে রূপায়িত করতে গেলে দই বেচতে শিখতে হবে বলে অমলের মনে হয়েছে।
দইওয়ালা যখন ‘দই-দই-ভালো দই’ বলে ডাকতে ডাকতে যায়, সেই ডাকটা অমলের খুব ভালো লাগে। ওই ডাকের মধ্যে এক রকমের সুর আছে সেটাই শেখার; এটা সাধারণ মানুষের ধারণাতেও আসে না যে, কেজো কথার মধ্যেও শিক্ষণীয় কিছু থাকে বলে। অমল যেহেতু অতি-কল্পনাপ্রবণ, তাই তার ধারণাতে ওই ডাকের আলাদা মাধুর্য বহন করে আনে। অমল সেটাও শিখতে চায়। অমল যদি দইওয়ালা হতে পারত তাহলে সে রোজগার করতে পারত।
(১২) “মনে হচ্ছে যেন সব বেদনা চলে গেছে।”-এমন কথা বলার কারণ কী ? ৫
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের শুরুতেই দেখি কবিরাজের কঠোর নিদানে ওষ্ঠাগত প্রাণ অমলের তীব্র মুক্তিপিপাসা। তার এই মুক্তিপিপাসা, ঠাকুরদার অজানা যাদুমন্ত্রে ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়। বাত, পিত্ত, শ্লেষ্মা তার শরীরে চরমাকার ধারণ করে। কিন্তু রাজার চিঠির প্রত্যাশায় সে এতটাই ব্যাকুল যে পার্থিব জ্বালাযন্ত্রণা রোগব্যাধি সকলই তার অতন্দ্র প্রত্যাশার কাছে হার মানে। সে নিজ লক্ষ্যে এতটাই অনড় যে ব্যাকুল চিত্তে ফকিরকে প্রশ্ন করে বসে- “রাজার চিঠি কী আসবে না”। অবশেষে কবিরাজের আগমন ঘটে। কবিরাজ অমলকে প্রশ্ন করে “সে কেমন বোধ করছে”। অমল জানায় এখন তার মধ্যে আর কোনো বেদনা নেই। পরমাত্মার সন্ধানে সংসারের নানান শাসন ও বাধার পীড়নে ক্লান্ত অমল এখন জীবন্মুক্ত। তাই কোনো বেদনা নেই। কোনো ক্লান্তি নেই-পরম পাওয়ার সন্ধানে সে পরমানন্দ-তাই এত বেদনা সবই আজ ফাঁকি। সব বেদনা চলে যাওয়ার লক্ষণ ভালো নয় বলে কবিরাজের মনে হয়েছে এবং ফলশ্রুতি অমল চির ঘুমের দেশে চলে গেছে।
(১৩) “অমন করে ডাকাডাকি করছ কেন? আমাকে ভয় কর না তুমি?”– তাকে ভয় করার কারণ কী ? ৫
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরী অমলকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছে। অমলের সঙ্গে দ্বিতীয় যে ব্যক্তির পরিচয় হয় সে হল প্রহরী। তাকে ভয় পাওয়ার দুটি কারণ ভাবা যেতে পারে।
প্রথমত: প্রহরী রাজকর্মচারী। ‘ডাকঘর’ নাটক যখন লেখা হচ্ছে তখন ইংরেজ আমল। ইংরেজদের অধীনস্ত কর্মচারীরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সাধারণ মানুষের ওপর তাদের অত্যাচারের সীমা ছিল না। ‘ডাকঘর’ রচনাকালে ইংরেজদের সর্বময় কর্তা ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জ। ইংরেজরা অঞ্চলের খবরাখবর পাওয়ার জন্য প্রহরী বা চৌকিদার-এর মতো কর্মচারী নিযুক্ত করত। তাদের কাজই হল কোথায় কী হচ্ছে সে খবর পৌঁছে দেওয়া। সে কারণে এহেন কর্মচারীদের মানুষজন সমীহ করে চলতেন এবং এক অর্থে তোয়াজ করে চলতেন। কোনো ভুলচুক হলেই প্রহরী রাজার কাছে নালিশ করত। অমলকে সেরকম ভয় দেখিয়েছে প্রহরী, “একেবারে রাজার কাছে যদি নিয়ে যাই?” প্রহরী আশা করেছিল অন্য সবাই যেমন তাকে ভয় পায়, তেমনই এ শিশুটিও তাকে ভয় পাবে।
দ্বিতীয়ত: এই প্রহরী যেন স্বয়ং ভগবানের দূত। প্রহরা দেওয়ার কাজই করে এমন নয়, তার প্রধান কাজ প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজিয়ে মানুষজনকে সময় সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া। অমলের কথার সূত্রে জানতে পারি, সারাদিন ধরে তাকে এই কাজ করতে হয়। দুপুরবেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ঘরের প্রদীপ নিভে যাওয়া রাত্রিবেলায়ও তার ঘণ্টা বাজে। ঘণ্টা সবসময় বেজে চলেছে, কিন্তু এই ঘণ্টার আওয়াজ সবাই সবসময় শুনতে পায় না, যার কানে এই ঘণ্টার আওয়াজ পৌঁছোয় তাকে ইহজনমের সমস্ত কাজ ফেলে যেতেই হবে অন্যলোকে। সে যেন ভগবান অর্থাৎ যমরাজের দূত। মৃত্যুকে কোনো মানুষ ভয় পায় না, সেকারণে প্রহরী ও তার ঘণ্টার আওয়াজকে ভয় পায়। অমল ভয় পায় না, সে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে, কামনা করছে। তার পক্ষেই তো প্রহরীকে ভয় না-পাওয়াই স্বাভাবিক। অমল নিজেই চায় “নিয়ে যাও না আমাকে।” এ কারণেই অমল প্রহরীকে ভয় পায় না।
২ এবং ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(১৪) ‘ডাকঘর’ নাটকে চিঠির গুরুত্ব আলোচনা করো। ৫
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে প্রহরী ও অমলের কথোপকথন সূত্রে প্রথম চিঠির প্রসঙ্গ। আসে। প্রহরী অমলকে জানায়, “রাজার ডাকঘরে রাজার কাছ থেকে সব চিঠি আসে”। এরপর থেকে অমল প্রতিমুহূর্ত অপেক্ষা করেছে কখন রাজার চিঠি আসবে।
অমলের কাছে রাজার চিঠি আসা ও শেষে স্বয়ং রাজার আসা এই দুটি বিশেষ তাৎপর্যময়। চিঠিতে থাকে সংবাদ বা বার্তা। অনেকসময় সামনাসামনি যে কথা বলা সম্ভব হয় না, তা খুব সহজেই চিঠিতে ব্যক্ত করা যায়। দূরবর্তী কোনো মানুষের সংবাদ জানতে ও জানাতে চিঠিই একমাত্র মাধ্যম। এই নাটকে রাজা হচ্ছেন বিশ্বের রাজা অর্থাৎ বিশ্বেশ্বর। সমগ্র পৃথিবীর অসংখ্য আনন্দরূপের মধ্য দিয়ে, অসংখ্য সৌন্দর্যরাজির মাধ্যমে রাজা নিজেকে প্রকাশ করেন, বার্তা দেন। সৌন্দর্যরূপের মধ্য দিয়ে সংবাদ জ্ঞাপন করেন। বিশ্বের বিচিত্র সৌন্দর্য প্রকাশ করে চিঠি। এই চিঠির মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের কাছে তাঁর সংবাদ জানান দেন, ইঙ্গিত দেন, অন্যকে আহ্বান জানান-এই বিশ্বব্যাপী সৌন্দর্য ও মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সংযোগের মাধ্যম চিঠি। রাজার চিঠির আশায় মানুষ উৎকণ্ঠিত হয়ে আছে। অমলও রাজার চিঠির আকাঙ্ক্ষা করছে।
এই নাটকে চিঠি শুধু বার্তাই বহন করে না, মানুষকে মনুষ্যজন্ম পরিত্যাগ করে যাওয়ার সময় কখন ঘনিয়ে আসে সে-কথাও রাজার ডাকঘর থেকে চিঠির মারফত এসে পৌঁছোয়-সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে অসীমের পথে পাড়ি দিতে হয়।
(১৫) “না, ভুলব না। দেখো, মনে থাকবে।“- এই উক্তির আলোকে বক্তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। ৫
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে প্রথম সুধার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সুধা শশী মালিনীর মেয়ে। তার কাজ সাজি ভরে ফুল তুলে মালা গাঁথা ও বিক্রি করা। সুধার কাজের চাপ এতটাই যে সে তার বেনেবউ পুতুলের বিয়ে দেওয়া বা পুষি মেনিকে নিয়ে আদর করার অবকাশ পায় না। সুধা চলমান সময় সম্পর্কেও সচেতন, তাই অমলকে শাসনের সুরে বলে-“তুমি দুষ্টুমি কোরো না, লক্ষ্মী ছেলে হয়ে এইখানে স্থির হয়ে বসে থাকো, আমি ফুল তুলে ফেরবার পথে তোমার সাথে দেখা করে যাব।“ আবার অমল তার কাছে বিনা পয়সায় ফুল চাইলে সে দিতে রাজি হয় না। আসলে কঠিন বাস্তব পাওনা-দেনার হিসাব বুঝে নিতে বাধ্য করেছে গরিব শশী মালিনীর মেয়েকে। সেজন্য অমল তাকে যখন বলে “তুমি আমার পারুলদিদি হবে?” তখনও সে যে মালিনীর মেয়ে সে-কথা ভোলেনি।
তার জীবনে আনন্দ, কল্পনা, বিশ্রামের ফুরসত নেই- “আমি যদি তোমার মতো এই স্থানে বসে থাকতে পারতুম তাহলে কেমন মজা হত।“ সুধা তার দেওয়া কথা রেখেছিল, সে সত্যিই এসেছিল। কিন্তু অমল তখন চিরনিদ্রায় ঢলে পড়েছে। নাটকের শেষ সংলাপ সুধার- “বোলো যে, সুধা তোমাকে ভোলেনি।” এ সম্পর্কে অজিত চক্রবর্তী লিখছেন-“সে অমলের আধখানা দরজা বন্ধ করিয়া দিতে চাহিয়াছিল, তাহার সেই ক্ষণিক মোহটুকু সে অমলের মৃত্যুর পরেও রাখিয়া গেল, …এই এতটুকুর মধ্যে সমস্ত নারীপ্রকৃতির একটি রহস্য কবি কৌশলে ছুঁইয়া গিয়াছেন।“ আসলে সুধা সৌন্দর্যের প্রতীক, তার হাতের ফুল প্রেমের প্রতীক। পরমাত্মা ও মানবাত্মার মধ্যে সংযোগস্থাপন এবং মানবীয় প্রেমের চিত্র ফুটে উঠেছে সুধার মধ্য দিয়ে।
(১৬) “পাহাড়ের ঝরনা আছে?”-কোন পাহাড়ের কথা বলা হয়েছে ? সেই পাহাড় সম্পর্কে ঠাকুরদা কী বলেছেন নিজের ভাষায় লেখো। ২+৩=৫
উত্তর: পাহাড়ের পরিচয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে শয্যাগত অমলের বিছানার পাশে এসে ফকিরের বেশধারী ঠাকুরদা অমলকে নানা রূপকথার রাজ্যের কথা বলতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পাখিদের দেশের কথা বলেন। সেই দেশে সব নীল পাহাড় আছে, সেই নীল পাহাড়ে পাখিদের বাসা। সন্ধের সময় যখন পাহাড়ের ওপর সূর্যাস্তের আলো এসে পড়ে, সেসময় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা বাসায় ফিরতে থাকে-সেই সময় আকাশের রঙে, পাখির রঙে আর পাহাড়ের রঙে এক অপূর্ব দৃশ্য গড়ে ওঠে।পাহাড় সম্পর্কে ঠাকুরদার বর্ণনা পাখিদের দেশের নীল পাহাড়ে ঝরনা আছে কিনা এ প্রশ্ন করলে ঠাকুরদা জানান, সেখানে ঝরনা অবশ্যই আছে, ঝরনা না-থাকলে চলে নাকি? সেই ঝরনার জল মেখে মনে হয় যেন “একেবারে হীরে গলিয়ে ঢেলে দিচ্ছে।“ ঝরনার জল যেন নৃত্য করতে করতে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসছে। “নুড়িগুলোকে ঠুং-ঠাং ঠুং-ঠাং করে বাজাতে বাজাতে কেবলই কল্কল্ ঝরঝর করতে করতে ঝরনাটি সমুদ্রের ২ মধ্যে গিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে।” ঠাকুরদার মতে ঝরনার এই ঝরঝর করে ঝরে পড়া বন্ধ করার সাধ্য কোনো কবিরাজের নেই। পাহাড়ের পাখিগুলি পর্যন্ত ঠাকুরদাকে একটা সামান্য তুচ্ছ মানুষ বলে একঘরে করে রাখে। যদি একঘরে করে না-রাখত তা হলে ঠাকুরদার ঐকান্তিক ইচ্ছা “ঐ ঝরনার ধারে তাদের হাজার হাজার বাসার একপাশে বাসা বেঁধে সমুদ্রের ঢেউ দেখে দেখে সমস্ত দিনটা কাটিয়ে দিতুম।“ এভাবে ঠাকুরদা অমলের চোখের সামনে এক রঙিন স্বপ্নের জগৎ গড়ে তুলতে চেয়েছেন।
Maek – 2
(১) কী দেখে মাধবদত্তের বুক ফেটে যায় ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে কবিরাজের কথামতো অমলকে সূর্যের আলো, বাতাস প্রবেশ করে না এমন ঘরে আটকে রাখতে পারলেও কবিরাজের বিধিবিধান ছিল বড্ড বেশি কঠিন। বালক অমল রোগের সমস্ত দুঃখ সহ্য করে নিলেও কবিরাজ যে ওষুধ দেন সেগুলি খাবার সময় আরও বেশি কষ্ট পায়। অমলের এই কষ্ট দেখে গ্রামসম্পর্কিত পিসেমশাই মাধবদত্তের বুক ফেটে যায়।
(২) “আমার স্ত্রী যে পোষ্যপুত্র নেবার জন্য খেপে উঠেছিল।”- কেন ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে ‘আমার স্ত্রী’ বলতে মাধবদত্তের স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই, সন্তানস্নেহ থেকে বঞ্চিত। একজন নারীর সম্পূর্ণতা তার সন্তানের মধ্য দিয়ে। মাধবদত্ত টাকা রোজগারের জন্য বাইরে বাইরে কাটালেও তাঁর স্ত্রীকে সারাদিন বাড়িতে একাই কাটাতে হয়। তাঁর নিঃসঙ্গ, একাকীত্বময় জীবনের অবসান ঘটাতে পারে একমাত্র সন্তান। তা ছাড়া এই মাধবদত্তের স্ত্রী একটা অবলম্বন পেতে চাইছিলেন। স্থায়ী অবলম্বন হতে পারে একমাত্র সন্তান। এজন্যই মাধবদত্তের স্ত্রী অনেকটা খ্যাপাটে হয়ে উঠেছিলেন।
(২) অমল উঠোনটাতে যেতে চায় কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল অর্থাৎ অমলগুপ্তের উপস্থিতির পর থেকেই লক্ষ করা গেছে, সে রোগাক্রান্ত বলে গৃহবন্দি। সে ঘরের বাইরে সামান্য উঠোনে যেতে চায়, কিন্তু মাধবদত্ত যেতে দিতে চান না। অমল উঠোনে যেতে চায় কারণ তার গ্রামসম্পর্কিত পিসিমা অর্থাৎ মাধবদত্তের স্ত্রী সেখানে বসে জাঁতা দিয়ে ডাল ভাঙেন। সে পিসিমার মতো ঘরের বাইরে থাকতে চায় এবং আরও ভালো করে দেখতে চায় কাঠবিড়ালিরা ভাঙা ডালের টুকরোগুলি দুই হাতে তুলে নিয়ে লেজের উপর ভর দিয়ে বসে কেমনভাবে কুটুস কুটুস করে খায়।
(৩) “আমি যদি কাঠবিড়ালি হতুম তবে বেশ হত।“-অমলের এমন ভাবনার কারণ কী ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল ওরফে অমলগুপ্তের প্রবেশের পর থেকেই দেখতে পাই সে গৃহবন্দি। তার ঘরের বাইরে যাওয়ার অধিকার নেই। কাঠবিড়ালিরা যেমন মুক্ত প্রান্তরে এগাছে ওগাছে ঘুরে বেড়াতে পারে, যা পায় তাই খেতে পারে, অমলের কিন্তু তেমন সুযোগ নেই-তার বিধিনিষেধ আছে। তার পিসিমা জাঁতায় ডাল ভাঙার সময় ডালের খুদগুলি পড়ে থাকে, তা মহানন্দে লেজের ওপর ভর দিয়ে বসে দুই হাত দিয়ে তুলে কাঠবিড়ালি কুটুস কুটুস করে খায়। অমলের ইচ্ছা করলেও কাঠবিড়ালির মতো বাইরে গিয়ে খাবার খেতে পারবে না। যদি খেতে পারত তাহলে বেশ হত।
(৪) মাধবদত্তের মতে পণ্ডিত মানুষেরা কেমন হন ?
[অথবা], মাধবদত্তের মতে একজন মানুষ কীভাবে বড়ো পণ্ডিত হয়ে ওঠেন ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল ও মাধবদত্তের কথোপকথনের সময় পণ্ডিত ব্যক্তি নিয়ে কথা হতে থাকে। সেখানে মাধবদত্তের মতে যাঁরা পণ্ডিত হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে চান তাঁরা ঘর থেকে সাধারণত অমলের মতো বাইরে আসে না। অর্থাৎ সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বড়ো বড়ো পুথি পড়েন। এত পড়াশোনা করেন ফলে কোনোদিকে তাকাবার তাঁদের সময় নেই। তাঁদের চোখ সারাক্ষণ পুথির দিকে। তাঁরা এমন পড়াশোনা করেন, যা দেখে সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। মাধবদত্তও চান অমলকে বড়ো পণ্ডিত করতে, তাহলে ঘরে আটকে রাখার কোনো সমস্যা হবে না, অসুখও বাড়বে না।
(৫) “আমার ভারি ইচ্ছে করে ঐ পাহাড়টা পার হয়ে চলে যাই।“-অমলের এমন ইচ্ছার উত্তরে মাধবদত্ত কী বলেছিলেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমলকে যে ঘরে রাখা হয়েছে, সেই ঘরের জানালা দিয়ে দূরে যে পাহাড় দেখা যায়, অমলের খুব ইচ্ছে সেখানে যেতে। এ কথা শুনে মাধবদত্ত জানান পাহাড়টা মস্ত বেড়ার মতো উঁচু হয়ে আছে, ওপারে কী আছে দেখা যায় না। ওপারের কিছু দেখতে দিতে চায় না বলেই বেড়ার মতো উঁচু হয়ে আছে। পাহাড়ের যদি সেরকম ইচ্ছে না-থাকত তাহলে এত বড়ো বড়ো পাথর জড়ো করে তো উঁচু পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার ছিল না।
(৬) “পণ্ডিতরা বুঝি শুনতে পায় না?”- পণ্ডিতরা কী শুনতে পায় না ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল যে ঘরে আছে সেই ঘরের জানালা দিয়ে দূরে যে পাহাড় দেখা যায় সেই পাহাড়টি যেন নীল আকাশের দিকে হাত তুলে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছে। সেই আহ্বানের সুর অনেক দূরের যারা ঘরের মধ্যে বসে থাকে, তারাও দুপুরবেলা যখন একা একা জানালার পাশে বসে থাকে তখন শুনতে পায়। আসলে অমল যেন ওই পাহাড়ের ডাক দুপুরবেলা জানালার পাশে বসে শুনতে পায়। অথচ পাহাড়ের এই আহ্বান পণ্ডিতেরা শুনতে পায় কিনা সে বিষয়ে অমলের মনে প্রশ্ন জেগেছে।
৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(৭) “হয় বই-কি। কত লোক কাজ খুঁজে বেড়ায়।“-কোন প্রসঙ্গে এমন কথা বলেছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল তার মতো একজন খেপা লোককে দেখেছে বলে মাধবদত্তকে অর্থাৎ তার পিসেমশায়কে জানায়। সেই লোকটার সাথে অমলের কথা বলার সূত্রে অমল জেনে নেয় সে যেন কোথায় কাজ খুঁজতে যাচ্ছে। তার কাঁধে একটা বাঁশের লাঠি, লাঠির আগায় একটা পুঁটুলি বাঁধা। লোকটার পায়ে একজোড়া পুরোনো নাগরা জুতো, বাম হাতে একটা ঘটি। সে মাঠের পথ দিয়ে পাহাড়ের দিকে যাচ্ছে কাজের খোঁজে। কাজ খুঁজতে যাওয়ার প্রসঙ্গেই এমন উক্তি।
(৮) “পিসিমাকে বলে রেখেছি”- পিসিমাকে অমল কী বলে রেখেছে এবং পিসিমা সে প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েছিলেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল জানালা দিয়ে একটি লোককে কাজের খোঁজে যেতে দেখেছিল। সেই লোকটি তার যাত্রাপথে যে ঝরনার পাশে বসে পুঁটুলি থেকে ছাতু বের করে খেয়েছিল সেই ঝরনার ধারে গিয়ে একদিন ছাতু খাওয়ার বাসনা জানিয়েছিল অমল তার পিসিমা অর্থাৎ মাধবদত্তের স্ত্রীকে।
অমলের এই ইচ্ছার কথা শুনে মাধবদত্তের স্ত্রী নাকি জানিয়েছিলেন অমল যেদিন সুস্থ হয়ে উঠবে, সেদিন ওই ঝরনার ধারে নিয়ে গিয়ে তাকে ছাতু খাইয়ে আনবে। এ কথা আমরা অমলের কথা থেকে জানতে পারি।
(৯) “ভালো হলেই কিন্তু আমি চলে যাব।“-বক্তা কোথায় যেতে চায় ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যেই অমল এমন ইচ্ছার কথা তার পালকপিতা অর্থাৎ গ্রামসম্পর্কিত পিসেমশাই মাধবদত্তকে জানিয়েছে। অমল বর্তমানে ঘরের মধ্যে বন্দি। সে সুস্থ হয়ে উঠলে নাগরা জুতো পরা লোকটির মতো দূরের পাহাড়ের ওপারে চলে যাবে। দূরে যে বাঁকা বাঁকা ঝরনা আছে তার জলে পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে চায় অমল। গৃহী মানুষেরা দুপুরবেলা যখন ঘরের দরজা বন্ধ করে দিবানিদ্রায় ব্যস্ত থাকবে, তখন অমল চায় অনেক দূরে কেবলমাত্র কাজ খুঁজে খুঁজে বেড়াতে চলে যাবে। অমল সুস্থ হলে এভাবে চলে যেতে চায়।
(১০) রাস্তার ধারের ঘরটিতে অমল বসে থাকতে চায় কেন ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যের শেষে গিয়ে অমলকে এমন মনোভাব পোষণ করতে দেখি। যেহেতু কবিরাজ ও বড়োদের নিষেধের কারণে অমলের ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই, সেজন্য রাস্তার পাশের ঘরে থাকলে রাস্তা দিয়ে যারাই যাবে তাদের অনেকের সাথে দু-দণ্ড গল্প করা যাবে। বাইরের পৃথিবীর খবর বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করবে। নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। অমল চায় ঘর আর বাইরের পার্থক্য ঘোচাতে। ঘরে বসে থেকেও মনকে সারাক্ষণ বাইরে রাখা সম্ভব তা যেন সে প্রমাণ করতে চায়।
(১১) ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমলের সাথে কাদের কাদের দেখা হয়েছিল ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যের সমাপ্তি ঘটেছে অমলের রাস্তার ধারের ঘরটিতে বসার বাসনা জানিয়ে। দ্বিতীয় দৃশ্যের শুরু থেকে দেখা যায় রাস্তা থেকে যাওয়া এক-একজন ব্যক্তির সাথে অমলের দেখা হচ্ছে, পরিচয় হচ্ছে। যাদের সাথে পরপর দেখা হয়েছে তারা হল-দইওয়ালা, প্রহরী, পঞ্চানন মোড়ল, বালিকা অর্থাৎ সুধা এবং সব শেষে দেখা হয়েছে ছেলের দলের সাথে।
(১২) “শুনে আমার মন কেমন করছে।“– কী শুনে, কার মন কেমন করছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যের শুরুতেই দইওয়ালার ‘দই-দই-ভালো দই’ ডাক শুনে অমলের মন কেমন করে ওঠে। দইওয়ালার দূর থেকে হাঁকতে হাঁকতে চলে যাওয়া অমলের মনকে কেমন করে দেয়। যে ডাক শুনে সচরাচর মানুষ কোনো কল্পনার স্তরেই পৌঁছোতে পারে না, সেখানে অমল তার কল্পনাবিলাসী মন নিয়ে অন্য এক ভুবন আবিষ্কার করে ফেলে। সেকারণে দইওয়ালার ডাকের মধ্যেও অমল যেন দূরে পাড়ি দেওয়ার এবং মানুষকে সম্মোহিত করার সুর শুনতে পায়। তাই এ ডাক শুনলে অমলের মন কেমন করে।
(১৩) “দইওয়ালা, তুমি কোথা থেকে আসছ?”-এ প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েছিলেন দইওয়ালা ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল ও দইওয়ালার কথোপকথনের মধ্য দিয়ে দইওয়ালা কোথা থেকে আসছে জানতে চায় অমল। দইওয়ালা জানায় পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলায়, শামলী নদীর ধারে, যেখানে মেঠো রাস্তা লাল মোরামের, সেই গ্রাম থেকে আসছে। তাদের গ্রামে পাহাড়ের কোলে গোরু চড়ে বেড়ায়, মেয়েরা নদীতে জল আনতে যায় কলশি নিয়ে, তাদের গ্রামের নাম গোয়ালাপাড়া।
(১৪) দইওয়ালার চলে যাওয়ার পরেও কেমন করে অমল দই বিক্রি করার কথা বলে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল ও দইওয়ালার কথোপকথনের পর দইওয়ালা চলে যাওয়ার পরেও অমলের মধ্যে দইওয়ালার আদবকায়দার রেশ রয়ে যায়। সে দইওয়ালার মতো সুর করে বলতে থাকে ‘দই, দই, দই, ভালো দই।‘ একইসঙ্গে সে দই বেচতে গিয়ে জানায় এই দই সেই পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলায় শামলী নদীর ধারের গোয়ালাদের বাড়ির দই। ভোর যখন হয় তখন তারা গাছের তলায় গোরুগুলি দাঁড় করিয়ে দুধ দুয়ে নেয় এবং সন্ধ্যাবেলা সেই দুধ দিয়ে মেয়েরা যে দই পাতে, সেই দই সে বিক্রয় করতে এসেছে। এই দই খুবই ভালো দই। দইওয়ালার প্রস্থানের পরেও এ রেশ অমলের মধ্যে থেকে যায়।
৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(১৫) “বেশ লাগে তোমার ঘণ্টা”– কখন অমলের কাছে ঘণ্টার আওয়াজ ভালো লাগেয় ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে দেখা যায় প্রহরী প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজায়। এ ঘণ্টার আওয়াজ অমলের বেশ ভালো লাগে যখন দুপুরবেলা তাদের বাড়ির সকলের খাওয়াদাওয়া হয়ে যায়। খাওয়ার পর তার পিসেমশাই অর্থাৎ মাধবদত্ত কোথায় কাজ করতে বেরিয়ে যান, মাধবদত্তের স্ত্রী অর্থাৎ অমলের পিসিমা রামায়ণ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েন এবং তাদের খুদে কুকুরটা উঠোনের এক কোণের ছায়ায় লেজের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুমোতে থাকে, তখন প্রহরীর ঘণ্টার আওয়াজ অমলের শুনতে খুব ভালো লাগে।
(১৬) “তোমার ঘণ্টা কেন বাজে?”-প্রহরী এ প্রশ্নের কী উত্তর দিয়েছেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল প্রহরীকে এমন প্রশ্ন করেছে। প্রহরীর ঘণ্টা দিন-রাতের প্রতিটা প্রহরে প্রহরে প্রতিনিয়ত বেজে চলেছে। বালক অমলের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জেগেছে ঘণ্টা কেন বাজে? এর উত্তরে প্রহরী অমলকে জানায় সময় কারও জন্য কোথাও থেমে থাকে না, চলমানতাই সময়ের ধর্ম, তাই সময় কেবলই চলে যাচ্ছে। এই সাধারণ অথচ চিরন্তন সত্য কথাটিই সবাইকে জানান দেওয়ার জন্য প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজে-ঢং ঢং ঢং।
(১৭) “আমার সেই ভালো কবিরাজ কবে আসবেন।“-ভালো কবিরাজের আগমন আকাঙ্ক্ষা করেছে কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল এমন আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছে প্রহরীকে। পিসেমশাই মাধবদত্তের ঠিক করা কবিরাজ অমলকে ঘরের বাইরে যেতে দেন না, তিনি সব সময় সব কিছুকে ধরে রাখতে চান। এই কবিরাজের অধীনে থাকলে ঘর থেকে তার মুক্তি সম্ভব নয়, তাই প্রহরীর বলা ভালো কবিরাজ এসে যাতে তার বদ্ধদশার মুক্তি ঘটান সে আকাঙ্ক্ষাই অমল প্রকাশ করেছে।
(১৮) “ওখানে কী হয়েছে?”-কী দেখে বক্তার মনে এমন প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল ও প্রহরীর কথোপকথনের সময় অমল প্রহরীকে এমন প্রশ্ন করেছে। তার প্রশ্ন করার > কারণ হল যে ঘরের জানালার পাশে সে বসে আছে, তার বাইরে রাস্তা এবং রাস্তার ওপারের যে বড়ো বাড়ি আছে, সেই বাড়িতে একটা নিশানা উড়িয়ে { দিয়েছে। সেই বড়ো বাড়িতে প্রতিনিয়ত লোকজন আসছে আর যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখেই অমলের মনে এমন প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। তার প্রশ্নের উত্তরে প্রহরী জানায় সেখানে নতুন ডাকঘর বসেছে।
(১৯) “তোমার কাজও খুব ভালো-“-এ কথা বলার পর বক্তা কী বলেছে নিজের ভাষায় লেখো ।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরী ও অমল যখন কথা বলতে থাকে তখন অমল ডাক-হরকরাদের কাজটাই সকলের চেয়ে ভালো বলে মনে করলেও প্রহরীর ঘণ্টা বাজানোর কাজটাও তার ভালো লাগে। দুপুর বেলার ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্রে চারিদিক যখন নিস্তব্ধ তখন প্রহরীর ঘণ্টা বেজে ২ ওঠে। আবার কোনো কোনোদিন রাত্রি বেলা যখন অমলের ঘুম ভেঙে যায় ৪ তখন বিছানায় জেগে উঠলে দেখে ঘরের প্রদীপ নিভে গিয়েছে এবং বাইরে ঘন অন্ধকার, তার মধ্যে হঠাৎ প্রহরীর ঘণ্টা বেজে ওঠে। অর্থাৎ সময়ে সময়ে মানুষকে সময় সম্পর্কে সচেতন করার কাজও অমলের খুব ভালো লাগে।
(২০) মোড়ল সম্পর্কে প্রহরীর বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল ও প্রহরী যখন কথা – বলছিল তখন প্রহরী দেখতে পায় অনেক দূরে মাথায় একটা মস্ত গোলপাতার ছাতি পরে কেউ একজন এগিয়ে আসছেন। গোলপাতার ছাতা দেখেই প্রহরী বুঝতে পারল মোড়লমশাই আসছেন। তাঁর নাম পঞ্চানন কিন্তু সব কিছুতে মোড়লি করে বলে মোড়ল বিশেষণটাই পরিচিতি পেয়ে গেছে। তাঁকে কেউ মানে না অথচ আপনি মোড়লি করে। মোড়ল সবার সাথে ইচ্ছে করেই ঝগড়া বাধায়, সেইজন্যই সবাই তাঁকে ভয় পায়। সবার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে শত্রুতা তৈরি করে। এই শত্রুতা করাই পঞ্চানন মোড়লের এক ধরনের ব্যাবসা।
(২১) ‘ডাকঘর’ নাটকে সুধার কাজ কী ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে আমরা প্রথম সুধাকে দেখতে পাই, সে শশী মালিনীর মেয়ে। তার কাজ সাজি ভরে ফুল তুলে নিয়ে এসে মালা গাঁথা। সে ফুল তুলতে পটু, তার চেয়ে ফুলের খবর কেউ বেশি জানে বলে সে মনে করে না। বেলা বাড়ার আগেই তাকে ফুল তুলতে হয়, কারণ “দেরি হলে ফুল আর থাকবে না।” সে ফুল তোলার কাজে এতটাই ব্যস্ত যে তার বেনেবউ পুতুলের বিয়ে দেওয়া বা পুষি মেনিকে নিয়ে খেলা করার সময় পায় না।
(২২) “সেই যে রোজ আমার কাছে এসে নানা দেশ-বিদেশের কথা বলে ২ যায়-“-কে, কোন কোন দেশের কথা বলেছেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে অমল মাধবদত্তকে এমন কথা বলেছে। ফকির ছদ্মবেশধারী ঠাকুরদা এসে অমলকে নানা দেশের কথা বলে যান। যেমন-ক্রৌঞ্চদ্বীপ, যেখানে নীল পাহাড়ে সবুজ রঙের পাখিদের বাসা, হালকা দেশের কথা। আর রাজা যেখানে থাকেন সেখানে রোজ ভিক্ষা করতে যান, সেখানেও তিনি অমলকে নিয়ে যাবেন। এই সমস্ত দেশ-বিদেশের কথা বলেছেন।
(২৩) “এখন বলুন ব্যাপারখানা কী।“-এখানে কোন্ ব্যাপারের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে আমরা দেখতে পাই কবিরাজমশাই প্রথম দৃশ্যের পর আবার তৃতীয় দৃশ্যে অমল কেমন আছে তা দেখতে এসেছেন। অমলকে দেখতে এসে তার হাসি দেখে কবিরাজের ভালো বোধ হয়নি। তাঁর মনে হয়েছে অমলকে আর ধরে রাখা যাবে না। তিনি নিষেধ করেছিলেন ঘরের মধ্যে শরতের রৌদ্র ও বাতাস যাতে প্রবেশ না-করে, কিন্তু দুটোই প্রবেশ করে রোগীকে আরও অসুস্থ করে দিয়েছে। অর্থাৎ রোগীর মধ্যে মৃত্যু লক্ষণ ফুটে উঠেছে। এই ব্যাপারটির কথা এখানে বলা হয়েছে।
(২৪) “একি উৎপাত! আমি আসি ভাই!”-কোন্টাকে উৎপাত বলে মনে হয়েছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে কবিরাজ অমলকে দেখতে এসে তার রোগের লক্ষণ সম্পর্কে মাধবদত্তের সাথে যখন কথা বলছিলেন তখন মোড়লকে আসতে দেখে কবিরাজ এমন কথা বলেন। মোড়লের স্বভাব সম্পর্কে সবাই প্রায় অবগত। তার সাথে ইচ্ছা করে কেউ মুখোমুখি হতে চায় না। সামনাসামনি হলেই সে কোনো-না-কোনো বিষয় নিয়ে ঝগড়া বাধাবে, শত্রুতা করবে। কবিরাজ চান না কারোর সাথে ইচ্ছাকৃত শত্রুতা বাড়াতে, তাই মোড়লের আগমনকে তাঁর উৎপাত বলে মনে হয়েছে।
(২৫) ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে অমল ঘুমোচ্ছে ভেবে মোড়লকে ঠাকুরদা চুপ করতে বললে, অমল কী উত্তর দিয়েছিল ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে মোড়ল প্রবেশ করেই বলে ওঠেন “কী রে ছোঁড়া!” এ কথা শুনেই ঠাকুরদা মোড়লকে “আরে আরে, চুপ চুপ!” বললে অমল জানায় তারা তাকে ঘুমোচ্ছে ভাবলেও সে ঘুমোয়নি। সে সব কিছু শুনতে পাচ্ছে, অনেক দূরের মানুষের কথাও যেন শুনতে পাচ্ছে। সে যেন শুনতে পাচ্ছে তার মৃত বাবা-মা তার মাথার কাছে বসে কথা বলছেন। অর্থাৎ আমাদের দৃশ্যমান জগতের বাইরের কথাও যেন সে শুনতে পাচ্ছে।
৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে
(২৬) “আমাকে তোমার পায়ের ধুলো দাও।”- বক্তা এমন কথা কেন বলেছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে অমল ও মোড়লের কথোপকথনের সময় অমল এ কথা বলেছে। প্রহরীর কাছ থেকেই অমল প্রথম শুনেছিল মোড়ল লোকটি ইচ্ছে করে লোকের সাথে শত্রুতা করে। কেউ তার সামনে যেতে চায় না। কিন্তু অমল মোড়লের কথা শুনে কখনোই খারাপ অর্থে নেয় না। অমলের বিশ্বাস মোড়লমশাইয়ের জন্যই রাজা তাকে চিঠি পাঠাচ্ছেন এবং শেষপর্যন্ত মোড়ল নিজেই রাজার চিঠি বয়ে আনবে তা অমল কোনোদিন ভাবতেও পারেনি। অথচ সেই মোড়ল রাজার চিঠি নিয়ে এসেছেন, এজন্যই পায়ের ধুলো নিতে চায় অমল। টাকার
(২৭) ‘ডাকঘর’ নাটকে রাজকবিরাজের আগমন ঘটতেই তিনি কোন্ কাজটি করেছিলেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যের শেষের দিকে রাজকবিরাজের আগমন লক্ষ করা যায়। শয্যাগত অমলের ঘরে প্রবেশ করেই চারিদিকে যা কিছু বন্ধ ছিল “খুলে দাও, খুলে দাও, যত দ্বার-জানালা আছে সব খুলে দাও” বলে সবই প্রায় নিজের হাতে খুলে দিলেন। বাইরের তারার আলো ঘরে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করে দিলেন। ঘরটিকে পরিষ্কার করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখতে বলেছেন।
(২৮) “কোনো দরকার নেই।“-কোন্ প্রসঙ্গে এমন উক্তি করেছেন ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যের শেষের দিকে আমরা লক্ষ করি সত্যি সত্যি রাজার আগমন ঘটেছে। এই উপলক্ষ্যে রাজার জন্য মুড়ি-মুড়কির ভোগের কথা রাজদূত জানিয়েছেন। এই ভোগের কথা আগে তাচ্ছিল্যভরে বললেও এখন আর কোনোরকম সংশয় না-রেখে মোড়ল জানায় “আমার বাড়িতে যদি লোক পাঠিয়ে দাও তা হলে রাজার জন্যে ভালো ভালো কিছু-“ খাবার অর্থাৎ মুড়ি-মুড়কি আনিয়ে রাখবেন। । কিন্তু মোড়লের বাড়ির কোনো খাবারের প্রয়োজন নেই বলেই রাজকবিরাজ তৎক্ষণাৎ এ কথা জানান “কোনো দরকার নেই”।
(২৯) সমগ্র ‘ডাকঘর’ নাটকজুড়ে অমলের সাথে অনেকের সাক্ষাৎ হয়েছে, কিন্তু এদের মধ্যে একবারই মাত্র সাক্ষাৎ হয়েছে-কাদের কাদের ?
উত্তর: ‘ডাকঘর’ নাটকে অসুস্থ অমল জানালার পাশে বসে থেকে এবং ঘরে যাঁরা এসেছেন সেখান থেকেই তার পরিচয়ের সূত্র গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে একবারই দেখা হয়েছে-দইওয়ালা, প্রহরী, সুধা, ছেলের দল, ঠাকুরদা, রাজদূত ও রাজকবিরাজের সাথে। এঁদের সঙ্গে অমলের দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ হয়নি। এ ছাড়া অন্যান্য সব চরিত্র, যেমন-মাধবদত্ত, কবিরাজ, মোড়ল-এঁদের সঙ্গে – অমলের একের অধিকবার দেখা হয়েছে।
Mark – 3
(১) “মুশকিলে পড়ে গেছি।“- বক্তা কী মুশকিলে পড়েছেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যের শুরুতেই মাধবদত্ত এমন কথা বলেছেন। মাধবদত্ত ও তাঁর স্ত্রীর এতদিন কোনো সন্তান ছিল না। তাঁর স্ত্রীর অনুরোধে ছোটোবেলায় মা-হারা এবং সদ্য বাবা-হারা অমলগুপ্তকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অমলকে কেন্দ্র করে এতদিনের অবরুদ্ধ সন্তানস্নেহের আগল গেছে খুলে। কিন্তু কবিরাজ মারফত জানতে পারেন অমল এমন রোগে আক্রান্ত, তাতে তার আয়ু খুবই কম। তাই সন্তান যতদিন ছিল না ততদিন সন্তান হারানোর যন্ত্রণাও ছিল না। কিন্তু এখন অমল এসে তার ঘর আলো করে বসে আছে, পিতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন। অমলকে কী করে বাঁচিয়ে রাখবেন সেটাই বড়ো মুশকিলের বিষয় হয়ে উঠেছে বস্তা মাধবদত্তের কাছে।
(২) “কবিরাজমশায় আপনি কী মনে করেন”- কবিরাজমশাই কী মনে করেছিলেন, নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমলকে দেখার পর কবিরাজমশায়ের মনে হয়েছে অমলের ভাগ্যে যদি আয়ু থাকে তা হলে সে অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে। শুধু ভাগ্যের দোহাই না-দিয়ে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রানুযায়ী শরৎকালের রৌদ্র আর হাওয়া দুটোই যেন বালকের গায়ে না-লাগে, এ দুটো তার শরীরে বিষের মতো কাজ করবে। সেজন্য ওকে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখতে হবে এবং ঘরে কোথাও যেন দরজা-জানালা খোলা না-থাকে। অমলকে এভাবে রাখা কষ্টকর হলেও রাখা দরকার। কারণ কষ্ট করলে তার ফল ভালো হয়। অমলের শরীরে বাত, পিত্ত, শ্লেষ্মা একসাথে খুব বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে করে বাঁচার আশা কম। এখন একমাত্র উপায় রৌদ্র, বাতাস না-লাগানো বা লাগতে না-দেওয়া।
(৩) ঠাকুরদাকে দেখলে মাধবদত্তের ভয় করে কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমলকে আশ্রয় করে মাধবদত্ত তাঁর পিতৃসত্তাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেন। কবিরাজের বিধান অনুযায়ী তিনি অমলকে সূর্যের আলো ও বাতাস থেকে দূরে রেখেছেন। অমলকে একটা ভয় বা অনুশাসনের মধ্যে রাখতে চাইছেন। ঠাকুরদা সেই অনুশাসনের বেড়া ভেঙে দিতে ভালোবাসেন, শিশুমনে মুক্ত কল্পনার সঞ্চার করে দেন। অমলের বদ্ধদশার জীবনে যদি বাইরের প্রকৃতির কল্পিত মায়াময় জগতের গল্প ঠাকুরদা শোনাতে শুরু করেন তাহলে অমলকে ঘরে আটকে রাখা মুশকিল হয়ে যাবে। তা ছাড়া ঠাকুরদার স্বভাবের মধ্যেই আছে ছেলেদের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য খেপিয়ে তোলা। একারণেই ঠাকুরদাকে মাধবদত্তের ভয়।
(৪) “এই ছেলেটিকে আমার যে কিরকম লেগে গিয়েছে-“ মাধবদত্তের কেমন লেগেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে মাধবদত্ত তাঁর স্ত্রীর গ্রামসম্পর্কের ভাইপো অমলকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করতে অনেকটাই ভবাধ্য হয়েছেন। মাধবদত্ত অবস্থাবান গৃহস্থ। তিনি টাকা রোজগার করেছেন খুব কষ্ট করে। তিনি সবসময় ভাবতেন তাঁর এতদিনের এত পরিশ্রমের সম্পদ বাইরের কোথাকার কোন ছেলে এসে সব নষ্ট করে দিয়ে যাবে তা তিনি মানতে পারতেন না। কিন্তু অমলকে দত্তক নেওয়ার পর থেকে সে ভাবনা সরে গিয়ে তাঁর মনে হচ্ছে টাকার পরম সৌভাগ্য যে, ছেলের জন্য খরচ করতে পারছেন। আগে যেখানে নেশার ঘোরে পড়ার মতো অবস্থায় টাকা রোজগার করতেন, টাকা রোজগার না-করে থাকতে পারতেন না; বর্তমানে টাকা রোজগার করতে গিয়ে এক ধরনের আনন্দ অনুভব করেন, কারণ এখন যা টাকা রোজগার করছেন সবই অমল পাবে ভেবে। অর্থাৎ অমল আসার পর থেকে টাকা রোজগার বা খরচ করা, সবেতেই তিনি আনন্দ উপভোগ করেন।
(৫) “পুঁথি পড়লেই কি সমস্ত জানতে পারে?”- উদ্ধৃত অংশটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল মাধবদত্তকে উদ্দেশ্য করে এমন কথা বলেছে। শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যায়তনিক ধরাবাঁধা গণ্ডিবদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে বেরিয়ে এসে মুক্ত প্রকৃতি থেকে শিক্ষালাভ। শুধুমাত্র পুথিগত শিক্ষা নয়, পাশাপাশি প্রকৃতিপাঠও প্রয়োজন বলে রবীন্দ্রনাথ মনে করেছিলেন। তাঁর নিজের জীবন এর বড়ো দৃষ্টান্ত। শুধু পুথিগত শিক্ষা দিয়ে জীবন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না; সব কিছু থেকে, সবার কাছ থেকে শিক্ষণীয় কিছু আছে। তা ছাড়া আরও একটি বিষয় রবীন্দ্রনাথ মনে করাতে চেয়েছেন-বড়ো বড়ো পুথি পড়লেই সব জানা যায় না। সে-কথাই অমলের মুখ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ করিয়েছেন।
(৬) “আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলুম।”— দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কে, কী দেখতে লাগল ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে বদ্ধ ঘরের জানালার পাশে বসে অমল একজন ব্যক্তিকে দেখতে পেয়েছিল, যে লোকটির পায়ে একজোড়া পুরোনো নাগরা জুতো, কাঁধে লাঠি, লাঠির আগায় পুঁটুলি বাঁধা এবং বাম হাতে একটা ঘটি ছিল। সেই লোকটি কাজের খোঁজে যখন যাচ্ছিল তখন অমল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতে পেল যেখানে ডুমুরগাছের তলা দিয়ে ঝরনা বয়ে যাচ্ছে, সেখানে লোকটি কাঁধের লাঠি নামিয়ে রাখল। এরপর ঝরনার জলে আস্তে আস্তে হাত পা ধুয়ে নিয়ে পুঁটুলিতে রাখা ছাতু বের করে জল দিয়ে মেখে খেতে লাগল। খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আবার পুঁটুলি বেঁধে লাঠি ঘাড়ে করে, পায়ের কাপড় গুটিয়ে নিয়ে সেই ঝরনার জলের ভিতরে নেমে জল কেটে কেটে একসময় পার হয়ে গেল। এ দৃশ্যই অমল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিল।
(৭) “কিনবে না তো আমার বেলা বইয়ে দাও কেন?”- বক্তার এমন বক্তব্যের কারণ কী ? ৩
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের শুরুতেই আমরা দেখতে পেলাম ঘরের জানালা দিয়ে রাস্তায় দই ফেরি করা দইওয়ালাকে অমল ডাকে। দইওয়ালা ‘দই-দই-ভালো দই’ রবে ডেকে যাওয়ার অর্থই হল ক্রেতা-সাধারণকে তার উপস্থিতি জানান দেওয়া। তাতে করে যারা দই কিনবে তারা দইওয়ালাকে ডেকে নেবে। অমলের ডাক শুনে দইওয়ালা সে আশাতেই এসেছিল কিন্তু জানতে পারে বালকটির কাছে কোনো পয়সা না-থাকায় দই কিনতে অপরাগ। এ কথা শোনার পরেই দইওয়ালা বলেছিল তাকে ডেকে এভাবে বেলা বইয়ে দেওয়া কেন? দইওয়ালার গ্রামে গ্রামে গিয়ে দই ফেরি করে বেড়ানোই কাজ, খদ্দেরদের সম্মোহন করা, আর দ্রব্য বিক্রয় করা, সর্বশেষ মুনাফা করা। তা দিয়েই তার সংসারনির্বাহ হবে। অথচ কারও সাথে গল্প করে যদি সময় অতিবাহিত করে ফেলে, তবে তার দই বিক্রি হবে না, মুনাফাও হবে না। সে-কথা ভেবেই দইওয়ালা এমন কথা বলেছিল।
(৮) “তুমি নিশ্চয় কোনোদিন সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলে।” – বক্তার এমন কথা মনে হওয়ার কারণ কী ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল এবং দইওয়ালার কথোপকথন সূত্রে দইওয়ালার ধারণা হয়েছে অমল কোনোদিন হয়তো তাদের গ্রামে গিয়েছিল, না-হলে তাদের গ্রামের বর্ণনা এভাবে দেয় কী করে। অমল জানায় তাদের গ্রাম অনেক দূরে, সেখানে লাল রঙের রাস্তার দু-পাশে অনেক পুরোনো কালের খুব বড়ো বড়ো গাছের সারি আছে। সেখানে পাহাড়ের গায়ে সব গোরু চড়ে বেড়ায়, মেয়েরা কলশি মাথায় নিয়ে নদীতে জল আনতে যায়। এ দৃশ্য অমলের কল্পদৃষ্টিতে প্রতিভাত হলেও দইওয়ালার কাছে বাস্তব, সত্যি বলে মনে হয়েছে। তাই অমল সত্যিই কোনোদিন হয়তো দইওয়ালার গ্রাম দেখেছে বলে তার মনে হয়েছে।
(৯) “আমাকে তোমার মতে ঐ রকম দই বেচতে শিখিয়ে দিয়ো।“- অমল দই বেচতে শিখতে চায় কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল দইওয়ালাকে এমন কথা বলেছে। অমলকে কবিরাজের নির্দেশে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। সে চায় মুক্ত পরিবেশে থাকতে, সুস্থ হলে কাজ করতে যেতে চায়। দইওয়ালা যেমন এক গ্রাম থেকে আর-এক গ্রামে ঘুরে ঘুরে দই বিক্রি করে, বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হয়, অমলও তেমনই চায়। সে চায় দইওয়ালাদের গ্রামের রাঙা রাস্তার ধারে বুড়ো বটের তলায় গোয়ালাপাড়া থেকে দই নিয়ে দূরে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করতে। এই বিক্রয় করার সূত্রে গ্রামে গ্রামে যেতে পারবে। দইওয়ালার ‘দই, দই, দই-ভালো দই’ এ ডাক অমলের ভীষণ ভালো লাগে, এ সুর ও দই বিক্রয় করা শিখে নিয়ে সেও দই বিক্রিৎ করতে চায়। এটা যদি করতে পারে তাহলে তাকে আর ঘরের মধ্যে আটকে থাকতে হবে না, মুক্ত প্রকৃতি ও নানা জনের সাথে সে প্রাণখুলে মিশতে পারবে। হবে না জেনেও সে পসরা নামিয়ে অমলের কাছে এসে বসে, গল্প করে, এক ভাঁড় দই বিনাপয়সায় খেতে দিতে চায়। এভাবেই দইওয়ালার ভিতরে পরিবর্তন সূচিত হয়।
(১০) অমলের সাথে কথা বলার সূত্রে প্রহরী চরিত্রের কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে দইওয়ালার পরেই এ আসে প্রহরী। শুধু প্রহরা দেওয়ার কাজই করে এমন নয়, তার প্রধান কাজ প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজিয়ে মানুষজনকে সময় সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া। অমলের সাথে কথোপকথনের প্রথম সংলাপ থেকেই মানুষটির ভিতরে – লুকানো একটি অসম্পূর্ণতা আমরা লক্ষ করি। অমলের ডাক শুনে প্রহরী এসে জানায় “আমাকে ভয় কর না তুমি?” এ কথা বলার অর্থ প্রহরী জানে সবাই । তাকে ভয় পায়, বিশেষ করে ছোটো ছেলেমেয়েরা। এই ভয় পাওয়াকে যে সে মনে মনে বেশ পছন্দ করে তা সংলাপের ধরন থেকে বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু যখন জানতে পারে অমল তাকে ভয় পায় না এবং রাজার কাছে ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখিয়েও অমলকে কাবু করা যায় না, তখন প্রহরীর ভিতর থেকে অন্য একটি মানুষ বেরিয়ে আসে; যে অমলের কষ্টে ব্যথিত হয়, অমলের কথাসূত্রেই কথা বলতে শুরু করে, সে যেন অমলের সমমনষ্কা একজন মানুষ। অমল তাকে প্রতিদিনের চেনা জীবনের বাইরে অন্যরকম অভিজ্ঞতার স্বাদ দেয়। এখানেই প্রহরী চরিত্রে পরিবর্তন।
(১১) “একেবারে রাজার কাছে যদি নিয়ে যাই?”- এখানে রাজা কে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে ‘রাজা’ দুটি অর্থে প্রতিভাত। প্রহরীর মুখেই অমল জানতে পারে তার ঘরের কাছাকাছি রাজার ডাকঘর বসেছে। শুনে অমলের কল্পনাপ্রবণ মন উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। বাস্তবতার বিচারে ‘ডাকঘর’ লেখার সময়কাল ১৯১২ বা তার কাছাকাছি সময়ে যে-কোনো ডাকঘরই হওয়ার কথা রাজার ডাকঘর, কারণ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে থেকে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ভারত উপনিবেশের শাসনকর্তা ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জ। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর তিনি ভারতে আসেন, ৩০ ডিসেম্বর ছিল তাঁর কলকাতায় আসার কথা। এই অর্থে তৎকালীন ভারতের শাসনকর্তাকে বোঝানো হতে পারে। আবার প্রহরী যে অর্থেই বলুক, অমল কিন্তু রাজা বলতে পঞ্চম জর্জকে বোঝে না, তার কল্পনায় রাজা এক অন্যরূপ নিয়ে আসেন। রাজা হলেন বিশ্বের রাজা-বিশ্বেশ্বর।
(১২) “সে-দেশে সবাইকে যেতে হবে বাবা।“- উদ্ধৃত অংশটি অমল কোন অর্থে গ্রহণ করেছে এবং কোন অর্থে বলেছে-তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: সময় কারও জন্য বসে থাকে না, নিরন্তর বয়ে চলে। প্রহরীর এ কথা শুনে অমলের মনে হয়েছে সময় এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। সেই দেশ কেউ দেখেনি, অমলের ভারি ইচ্ছা সেই দেশে সময়ের সাথে সাথে চলে যাওয়ার। প্রহরী সময় সম্পর্কে বলতে গিয়ে অর্থগত ব্যঞ্জনায় বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। মানুষ জন্ম নিলে মরতেই হবে এ বিধান খন্ডাবার ক্ষমতা কারও নেই। যার যখন যাওয়ার সময় হবে তাকে এই মায়াময় জগৎ পরিত্যাগ করে মৃত্যুর অপর পারের জগতে পাড়ি দিতেই হবে। প্রহরে প্রহরে ঘণ্টার আওয়াজ-আসলে যিনি যে প্রহরে শুনতে পান, তাঁকে সেই প্রহরেই যাত্রা করতে হবে। এ ডাক/আওয়াজ উপেক্ষা করার নয়। অমলের অন্য দেশে। যাত্রা করার সময় হয়ে এসেছে-সে-কথাই প্রহরী যেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
(১৩) ডাক-হরকরা সম্পর্কে প্রহরীর মন্তব্যগুলি নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল ও প্রহরীর কথোপকথন সূত্রে অমলকে রাজা চিঠি পাঠাবেন বলে প্রহরী জানায়। কিন্তু সেই চিঠি কে নিয়ে আসবে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রহরী ডাক-হরকরাদের সম্বন্ধে অল্প কিছু কথা বলে। রাজার যারা ডাক-হরকরা হয় তাদের বুকে গোল গোল সোনার তকমা লাগানো থাকে, সেটা পরেই নানা জায়গায় যায়। এই ডাক-হরকরা বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে চিঠি বিলি করে। রোদ নেই বৃষ্টি নেই, গরিব নেই, বড়ো মানুষ নেই, সবার ঘরে ঘরে চিঠি বিলি করে বেড়ানোই এদের কাজ। সে কাজে ফাঁকি দেবার জো নেই, কারণ সে কাজ ‘খুব জবর কাজ!’
(১৪) রাজার চিঠি এলে অমল কী করতে চায়-তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল প্রহরীর মারফত রাজার ডাকঘর বসা এবং সেখান থেকে তার নামেও চিঠি আসতে পারে এ খবর জানতে পারে। চিঠি আসার খবর পাওয়ার পর থেকে অমলের মধ্যে নানা চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। সে যদি রাজার কাছ থেকে প্রতিদিন একটা করে চিঠি পায় তাহলে সে খুব খুশি হবে এবং জানালার কাছে বসে বসে পড়বে। পরক্ষণেই তার মনে আসে সে তো লেখাপড়া জানে না, তাহলে তার চিঠি কে পড়ে দেবে? মাধবদত্তের স্ত্রী অর্থাৎ তার পিসিমা রামায়ণ পড়তে পারে কিন্তু রাজার লেখা চিঠি কি পড়তে পারবে? এ প্রশ্নও অমলের মনে জায়গা করে নেয়। শেষপর্যন্ত কেউ যদি চিঠি পড়তে না পারে তাহলে জমিয়ে রেখে দেবে, সে যখন বড়ো হবে, পড়তে শিখবে তখন পড়বে।
(১৫) “রাজা যদি চিঠি লেখে, তাহলে-“-অমলের এ কথার উত্তরে মোড়ল কী বলেছিলেন-তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে মোড়ল ও অমলের যখন কথোপকথন চলছিল, তখন অমল মোড়লকে উদ্দেশ্য করে উদ্ধৃত উক্তিটি বলে। এ কথা শোনার পরে মোড়ল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ব্যঙ্গের ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে জানায় ছেলেটি তো কম যায় না। স্বয়ং রাজা অমলকে চিঠি লিখবে সংশয়ী মোড়ল তা বিশ্বাস করতে চান না। ব্যঙ্গ করে এও বলেন সে যেহেতু রাজার পরমবন্ধু, তাই রাজা তার সাথে দেখা করতে না-পারার জন্য যেন শুকিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর পরিহাস প্রিয়তা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং মনে মনে আরও বেশি অমল ও মাধবদত্তের ওপর রাগ পোষণ করতে থাকেন। সেজন্য অনেকটা রাগের সুরেই বলেন “আর বেশি দেরি নেই, চিঠি হয়তো আজই আসে কি কালই আসে।” অর্থাৎ মোড়ল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গি এখানেও বজায় রাখেন ।
(১৬) ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলের সাথে বালিকা হিসেবে সুধার যে কথোপকথন হয় তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল সুধার নাম জানার আগে নাট্যকার ‘সুধা’-র পরিবর্তে ‘বালিকা’ শব্দটি চারবার মাত্র ব্যবহার করেছিলেন। মল ঝঝম্ করতে করতে যে বালিকা চলে যাচ্ছে তাকে অমল দাঁড়াতে বললে বালিকা জানায় তার দাঁড়াবার সময় নেই, দাঁড়ালে তার বেলা বয়ে (বেড়ে) যাবে। অমলের ফ্যাকাশে চোখমুখ দেখে বালিকার মনে হয়েছে “যেন সকাল বেলাকার তারা”। অমল জানে না তার কী হয়েছে কিন্তু কবিরাজের নির্দেশমতো বাইরে যাওয়া বারণ। বালিকা তার স্বাভাবিক বুদ্ধি অনুযায়ী জানায় কবিরাজের কথা মেনে চলা উচিত, বড়োদের কথা না-শুনে দুরন্তপনা করা উচিত নয়, তাহলে “লোকে দুষ্টু বলবে।” অমল যেহেতু বাইরে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে সে কারণে বালিকাটি অমলের ঘরের আধখানা খোলা দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর যখন অমল জানতে চায় সে কে, তখনই বালিকা পরিচয় ছাড়িয়ে স্বনামে পরিচিত হয়, তার নাম সুধা, শশী মালিনীর মেয়ে।
(১৭) “ফুলের খবর আমার চেয়ে তুমি নাকি বেশি জানো!”-সুধার এ কথায় অমল কী উত্তর দিয়েছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল যদি সুধার সাথে বাইরে যেতে পারত তাহলে উঁচু ডালে যেখানে দেখা যায় না সেখান থেকে সুধার জন্য ফুল পেড়ে দিত। অমল তার কল্পনাপ্রবণ মনের বিস্তার ঘটিয়ে দেয়; সে রূপকথার সাতভাই চম্পার রাজ্যে চলে যায়। এই বন্দিদশার মুক্তি ঘটলে সে চলে যেতে পারত খুব ঘন বনের মধ্যে, যে বনে রাস্তা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। তার ইচ্ছা “সরু ডালের সব-আগায় যেখানে মনুয়া পাখি বসে বসে দোলা খায়” সেখানে চাঁপা ফুল হিসেবে ফুটতে। অমল তার কল্পনার পাখায় ভর করে ঠাকুরমার ঝুলির চম্পার চাঁপাফুল ফোটার রূপকথার জগতে বিচরণ করতে থাকে। সেই কল্পজগৎ থেকেই সুধাকে তার পারুলদিদি হওয়ার আহ্বান জানায়।
(১৮) ছেলেরা প্রথমে কী খেলা করেছিল এবং এমন খেলার কথা নাট্যকার কেন আনলেন বলে মনে হয় ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যের শেষে ছেলের দলের সাথে দেখা হয় অমলের। তারা হইহই করে খেলতে যাচ্ছে। অমল জানতে পারে তারা ‘চাষ-খেলা’ খেলবে। এই খেলায় লাঠি হল লাঙল এবং দুজন সতীর্থ গোরু সাজবে। লাঙল-গোরু নিয়ে তারা ‘চাষ-খেলা’ খেলবে। আমাদের কৃষিভিত্তিক বাংলা। তাই তো ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রকৃতি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রকৃতির সাহচর্যেই গ্রামীণ কৃষির বিকাশ। গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক ব্যবস্থার মধ্যেই নব আনন্দের উত্থান এবং লাঙলের উল্লেখের মধ্য দিয়ে নবজীবনের সন্ধান-এর প্রসঙ্গকেই নাট্যকার তুলে ধরলেন। মাটি কর্ষণের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় নবজন্মের-ছেলের দল নবযৌবনের দূত। এই নবযৌবনের বার্তার মাধ্যম ‘চাষ-খেলা।‘
(১৯) অমল ছেলের দলকে তার সব খেলনা দিয়ে দেয় কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যের শেষের দিকে দেখা যায় অমল তার সমস্ত খেলনা ছেলের দলকে দিয়ে দেয়। সে জানায়, “এ-সব ধুলোয় ছড়ানো পড়েই থাকে-এ আমার কোনো কাজে লাগে না।” অর্থাৎ এ খেলনাগুলি তাকে আর আকর্ষণ করে না। বিষয়টি দু-রকমভাবে দেখা যেতে পারে-মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী কোনো মানুষ যখন বুঝতে পারে তার মৃত্যু প্রায় আগত, তখন গতকাল যেটার জন্য সে লালায়িত ছিল বা শিশুরা যে খেলনা অন্য বাচ্চাকে দিত না, সেটি সে অক্লেশে অন্যকে দিয়ে দেয়। খেলনা ব্যাপারটিকে অন্যভাবে দেখলে দেখা যাবে খেলনা আসলে বাস্তব কোনোকিছুর খানিকটা কল্পনাময় অতিশায়িত রূপ, যা আমাদের বাস্তব কল্পনার একটা আদল গড়ে দিতে সাহায্য করে মাত্র। কিন্তু কেউ যখন বাস্তবের ধরাছোঁয়ার বাইরে বিচরণ করে তখন এইসব খেলনার আর কোনো প্রয়োজন বোধ করে না, অমলের ক্ষেত্রে সেটাই মূল কারণ হয়েছে। অমল কল্পনার এমন এক ভুবন আবিষ্কার করে ফেলেছে, যেখানে এই সামান্য খেলনার মতো উপাদানের প্রয়োজন বাহুল্য হয়ে পড়ে। তাই অমল তার খেলনাগুলি অবলীলায় দিয়ে দিতে চায়।
(২০) “সেখানে থাকলে আমি খুব ভালো থাকি।“- কে, কোথায় থাকলে ভালো থাকে এবং তাকে সেখানে থাকতে দেওয়া হয় না কেন ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্য তথা অন্তিম দৃশ্যে শয্যাগত অমল জানালার কাছে থাকলে খুব ভালো থাকে।
অমলের রোগের লক্ষণ বেড়ে যাওয়ার জন্য এখন শুধু ঘরের মধ্যেই নয়, শয্যা থেকে উঠতে নিষেধ করেছেন কবিরাজ। অমল যে জানালার কাছে বসে থাকত সেখানে শহরের প্রায় সকল ছেলেবুড়ো এসে হাজির হত এবং তাদের সাথে অমল ভাব জমিয়ে গল্প করত। ফলে অমলের ঘরের দরজার কাছে যেন একটা বড়োসড়ো মেলা বসে যেত। ঘরের মধ্যে আলো-বাতাস প্রবেশে কোনো বাধা থাকত না। রৌদ্র ও বাতাসের সংস্পর্শে অমলের রোগের লক্ষণ আরও বেড়ে গিয়েছে, তার মুখখানা আরও ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। এই কারণে অমলকে এখন আর জানালার কাছেও থাকতে দেওয়া হয় না।
(২১) “তুমি যে কী নও তা তো ভেবে পাই নে।“- কার সম্পর্কে কেন এমন মন্তব্য ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের শেষ তথা তৃতীয় দৃশ্যে মাধবদত্ত ফকিরের বেশধারী ঠাকুরদাকে দেখে এমন কথা বলেছেন।
মাধবদত্ত ঠাকুরদাকে বেশকিছু কাজে খুবই সমীহ করেন আবার ভয়ও পান। ঠাকুরদা এমন ব্যক্তি যিনি ছেলেদের খেপিয়ে দেন। বালকের চোখের সামনে নানা রঙিন স্বপ্নের জাল বুনে দেন, নতুন নতুন জায়গার গল্প শোনান, তাতেই ছেলেরা মাতোয়ারা। মাধবদত্তের আরও মনে হয়েছে ঠাকুরদা চরিত্রটি কেমন যেন রহস্যময়ী, কখন কোথায় থাকেন তার ঠিক নেই। তাঁর নাকি কোনো জায়গায় যেতে কোনো খরচ হয় না এবং যেখানে খুশি যেতে পারেন। এসব কারণেই মাধবদত্তের মনে হয়েছে লোকটা কী যে নয়, তার ঠিক নেই। ভগবানের প্রতি বিশ্বাসের চিহ্ন নেই অথচ শেষে গিয়ে অমল ও রাজার মিলনের সময় সেই মানুষটিই মূর্তির মতো হাত জড়ো করে নীরব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই প্রথম দেবতার প্রতি বিশ্বাস দেখা গেল। এসব কারণেই মাধবদত্তের এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।
(২২) :ফকিরকে অমলের ভালো লাগে কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে ফকিরের বেশধারী ঠাকুরদা এলে অমল খুশি হয়ে ওঠে। অমলের খুশি হওয়াকে দু-ভাবে দেখা যেতে পারে-এর একটা সহজ কারণ তার কল্পনাবিলাস ফকিরের কাছে প্রশ্রয় পায়। ফকির অমলকে ক্রৌঞ্চদ্বীপ, হালকা দেশের মতো নানা অদ্ভুত দেশের গল্প বলেন। এতে বালক অমলের একাকীত্ব, রোগযন্ত্রণা অনেকটা কেটে যায়। সে মনে মনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিচরণ করতে পারে। আবার অন্যভাবে বলা যায় অমলের সঙ্গে ফকিরের মনের একটা সেতু আছে। অমল যেমন না-দেখা, অজানা নানা কিছুকে কল্পনা করে নিতে পারে, তেমনই ফকিরও সেই কল্পনার দোসর হয়ে উঠতে পারে। এসব কারণেই ফকিরকে অমলের ভালো লাগে।
(২৩) “আমি যখন ভালো হব তখন তুমি আমাকে চেলা করে নেবে বলেছিলে,”-কে, কোন্ প্রসঙ্গে, কেন এমন কথা বলেছে ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে অমল ফকিরবেশী ঠাকুরদাকে এমন কথা বলেছে। ঠাকুরদা তাঁর খেয়ালখুশি মতো জায়গায় যেতে পারেন, যেতে কোনো খরচও লাগে না, এমন কথা শুনে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছে।
অমলের এমন মন্তব্য করার কারণ সে গৃহবন্দি হলেও তার মন কোনো বাধাতেই বদ্ধ নয়। তার কল্পনার দৃষ্টিতে সে অদেখা, অজানাকে দেখতে/জানতে পারে। আর ঠাকুরদা অমলের সেই কল্পনাবিলাসী মনে আরও কল্পনার প্রলেপ লাগিয়ে দেন। ঠাকুরদার সাথে ঘোরার জন্য তার সহযাত্রীরা চেলা হতে চেয়েছে।৫৬ এর চাচার হাইলেমাত
(২৪) “কেবলই অমল যাই-যাই করতে নেই-“-বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে মাধবদত্ত অমলকে উদ্দেশ্য করে এমন কথা বলেছেন। প্রমথনাথ বিশীর কথায় অমল ‘বিহঙ্গশিশু’। সমস্ত বাধা-বন্ধন উপেক্ষা করে অসীম-অনন্তের মাঝে মিশে যেতে চায় অমল। বিষয়ী মাধবদত্ত তাত্ত্বিকতা বোঝেন না, এতদিন পরে পাওয়া সন্তানমুখ হারাতে চান না। অমল বলে সে যেদিন ভালো হয়ে উঠবে সেইদিন ফকিরের কাছ থেকে মন্ত্র নিয়ে নিরুদ্দেশের পথে পাড়ি দেবে। প্রকৃতির নদী, পাহাড়, সমুদ্র ছাড়িয়ে মহাশূন্যের পথে পাড়ি দেবে। যেখানে কোনো বাধা-বন্ধন, মায়া-মমতা তাকে আচ্ছন্ন করতে পারবে না। এই মহাজাগতিক আহ্বান অমলকে আকর্ষণ করে, মাধবদত্তকে করে তোলে ভীত-সন্ত্রস্ত। ‘যাই-যাই’ করার মধ্যে হারানোর যন্ত্রণা মাধবদত্ত পেতে চান না, অশুভ বার্তা মুখে আনতে চান না-তাই এমন কথা বলেছেন। চাক। নাগ
(২৫) দইওয়ালার বোনঝিকে ঘিরে অমলের কল্পদৃশ্য বা স্বপ্ন দৃশ্যের বর্ণনা দাও তোমার নিজের ভাষায়।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে মাধবদত্ত এসে অমলকে জানান দইওয়ালা তার বোনঝির বিয়ে বলে কলমিপাড়ায় বাঁশির বায়না করতে গিয়েছে। এ কথা শুনে অমল জানায় দইওয়ালা ছোটো বোনঝির সাথে তার বিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিল। সেই কল্পিত বিয়েকে কেন্দ্র করে অমল স্বপ্নজাল বুনতে থাকে। নাকে নোলক, লাল ডুরে শাড়ি পরে দইওয়ালার বোনঝি তার টুকটুকে বউ হয়ে আসবে। সেই টুকটুকে বউ সকালবেলা নিজে হাতে করে কালো গোরুর দুধ দুয়ে নতুন মাটির ভাঁড়ে ফেনাসুদ্ধ অবস্থায় অমলকে খেতে দেবে। যখন সন্ধ্যা হয়ে আসবে তখন গোয়াল ঘরে প্রদীপ দেখিয়ে এসে তার পাশে বসে রূপকথার মায়াজাল বুনে ভসাতভাই চম্পার গল্প করবে।
(২৬) “অমন নবীন চোখ তো আমার নেই, তবু তোমার দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমিও দেখতে পাচ্ছি।“-ঠাকুরদা কী কী দেখতে পেয়েছিলেন, তার কয়েকটি প্রমাণ দাও।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’ নাটকের অমল বালক, ঠাকুরদা বয়স্ক। দুজনের মধ্যেই কল্পনার চোখ আছে। অমলের কল্পিত চোখে আরও রসদ ঢেলে যান ঠাকুরদা। রাজার চিঠি কোন পথে কেমন করে আসবে তা অমলের কল্পনার সাথে ঠাকুরদা তাঁর কল্পনাকেও মিলিয়ে নেন। ডাক-হরকরা কোন্ পথে কেমনভাবে আসছেন তাও অমলের কল্পনার সাথে মিলিয়ে দেখতে চেষ্টা করেন। রাজার কাছে ভিক্ষা নিতে যাওয়ার স্বপ্নজাল অমলের সামনে মেলে ধরেন। এ ছাড়া মিথ্যাভাবে “একখানা অক্ষরশূন্য কাগজ” দেখিয়ে মোড়ল রাজার চিঠি বলে চালাতে চেয়েছিল, কিন্তু সেই সাদা কাগজে অক্ষর দেখতে পেয়েছিলেন ঠাকুরদা-যে বয়স্ক মানুষটি শিশুর সারল্যে অমলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কল্পনার জগৎকে মূর্ত করে তুলতে পারেন।
(২৭) “ঘরে বসে থাকলেই বা এত কিসের দুঃখ?”-অমল এখন ঘরে বসে থাকলেও দুঃখ পায় না কেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যজুড়ে একের-পর-এক জনের কাছে অমল বাইরে যাওয়ার বাসনা ব্যক্ত করেছে এবং তাদের কাজকে তার ভালো লেগেছে। কিন্তু তৃতীয় দৃশ্যে এসে দেখি অমল এখন ঘরে বসে থাকলেও দুঃখ করে না। প্রথম প্রথম তার মনে হত কোনোভাবেই যেন দিন কাটছে না। যেদিন থেকে প্রহরীর কাছে ডাকঘর স্থাপন ও রাজার চিঠি আসার কথা জানতে পেরেছে, সেদিন থেকে রোজই এখন অমলের ভালো লাগে- “এই ঘরের মধ্যে বসে বসেই ভালো লাগে।“ রাজার ডাকঘর থেকে একদিন সত্যি সত্যি তার নামে চিঠি আসবে সে-কথা মনে করলেই সে খুব খুশি মনে চুপ করে ঘরের মধ্যে বসে থাকতে পারে। এখন বাইরে যাওয়ার জন্য মন কেমন করে না। সে বাইরে গেলে তাকে না-পেয়ে ডাক-হরকরারা চলে যাবে, তাই ঘরের মধ্যেই বসে থাকতে চায়।
(২৮) “ওতে রোগীকে বড়ো জাগিয়ে রেখে দেয়।” কীসে রোগীকে আরও জাগিয়ে রাখে বলে কবিরাজের মনে হয়েছে ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে অমলের অবস্থা দেখে কবিরাজের মনে হয়েছে এ রোগীকে আর বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। রোগীর রোগ উপশমের জন্য যে-সমস্ত বিধান দিয়েছিলেন তার সবগুলিই প্রায় লঙ্ঘিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। শরতের রৌদ্র আর হাওয়া লাগাতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু তিনি এসে দেখছেন সদর দরজার ভিতর দিয়ে হু হু করে হাওয়া বয়ে যাচ্ছে । বাইরের লোকজনের আনাগোনা করতে নিষেধ করেছিলেন কিন্তু অমলের দরজার সামনে যেন রোজ মেলা লেগে যেত। তাই লোকজনের আনাগোনা বন্ধ করতে হবে, একান্তই যদি কেউ এসে পড়ে তাহলে তাকে খিড়কি-দরজা দিয়ে প্রবেশ করাতে হবে। অমলের ঘরের জানালা দিয়ে সূর্যাস্তের আভা আসছে, সেটাও বন্ধ করা প্রয়োজন, কারণ ওতে রোগীর রোগের লক্ষণ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
(২৯) “দোহাই আপনার, এসব কথা নিয়ে পরিহাস করবেন না।”- কোন কথা নিয়ে পরিহাস করতে নিষেধ করেছেন ?
উত্তর: অমলের মুখ থেকে মোড়ল শুনেছে যে রাজার কাছ থেকে চিঠি আসবে। অমলের এই কথাকে সবাই প্রায় অলীক কল্পনা বলে ভাবলেও মোড়ল ভাবেনি। তার মনে হয়েছে রাজপরিবারের সাথে হয়তো মাধবদত্তের কোনোভাবে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে; হয়তো মাধবদত্তের পয়সা আছে, সেই সুবাদে। পয়সাওয়ালা লোকদের সাথে ওঠাবসা শুরু করেছেন এজন্য এ বালকটি সত্যকথা প্রকাশ করে ফেলেছে বলে মোড়লের ধারণা হয়েছে। তা না-হলে বালকটি রাজার চিঠির অপেক্ষা করবে কেন এবং তাদের মতো যোগ্য পরিবারের সাথে যোগাযোগ হতে পারে, সে কারণেই হয়তো তাদের বাড়ির সামনে রাজার ডাকঘর বসেছে। মোড়ল মাধবদত্তকে এও জানায় রাজা নাকি আজকালের মধ্যেই তাদের বাড়িতে আসবেন এবং তাঁর জন্য মুড়ি-মুড়কির ভোগ প্রস্তুত রাখতে বলেছেন, রাজভবনের খাবার নাকি রাজামশাইয়ের আর ভালো লাগছে না। মোড়লের এ সমস্ত কথাগুলি মাধবদত্তের কাছে এক ধরনের তামাশা বা ব্যঙ্গ বা পরিহাস বলে মনে হয়েছে।
(৩০) “ঠাকুরদা, তুমিও খেপে গেলে নাকি।“-ঠাকুরদার কোন কথা শুনে মাধবদত্ত এমন মন্তব্য করেছেন ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে মোড়লমশাই মাধবদত্তের পোষ্যপুত্রের নামে রাজার চিঠি আসা, রাজপরিবারের সাথে বন্ধুত্ব হওয়া, এমনকি রাজভবন ছেড়ে রাজা তাদের বাড়িতে আসছেন বলে পরিহাস করতে থাকলে ঠাকুরদা আর চুপ করে থাকতে পারেন না। মাধবদত্তের কাছে মোড়লের কথাগুলি পরিহাস বলে মনে হলেও ঠাকুরদার কাছে পরিহাস বলে মনে হয় না, কারণ অমলের সাথে কেউ পরিহাস করতে পারে না। রাজার চিঠি অবিশ্বাসীদের চোখে ফাঁকা কাগজ মনে হলেও, সেই কাগজে অক্ষর দেখতে পাচ্ছেন ঠাকুরদা। তাতে রাজা লিখেছেন, “তিনি স্বয়ং অমলকে দেখতে আসছেন, তিনি তাঁর রাজকবিরাজকেও সঙ্গে করে আনছেন।“ এ কথা মিথ্যা পরিহাস বলে কোনোভাবেই ঠাকুরদা মনে করতে পারেন না। তখন মাধবদত্ত ঠাকুরদার এই কথা শুনে উপরোক্ত মন্তব্য করেছিলেন।
(৩১) “আমার কেমন ভয় হচ্ছে। এ যা দেখছি এ-সব কি ভালো লক্ষণ?”-বক্তার এমন মনোভাবের কারণ কী ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্য অর্থাৎ একেবারে প্রায় শেষে এসে দেখি অমলের ঘুম এসেছে বলে ঘরের প্রদীপের আলো নিভিয়ে দিয়ে, আকাশের তারার আলো আসার ব্যবস্থা করেছেন রাজকবিরাজ। অর্থাৎ অবসানের মধ্যে যখন ডুবে যাচ্ছে এই বালক, ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে সেতু তৈরি হচ্ছে আকাশে ফুটে থাকা তারার আলোটির সঙ্গে। তখন মাধবদত্ত শুধু একবার চিৎকার করে ওঠেন, “ঠাকুরদা, তুমি অমন মূর্তিটির মতো হাত জোর করে নীরব হয়ে আছ কেন? আমার কেমন ভয় হচ্ছে। এ যা দেখছি এ-সব কি ভালো লক্ষণ? এরা আমার ঘর অন্ধকার করে দিচ্ছে কেন! তারার আলোতে আমার কী হবে!” মাধবদত্তের এ হাহাকার আমার আপনার মতো মানুষের কান্না। আর-পাঁচজন বিষয়ী মানুষের মতো সংসার-পুত্র নিয়ে থাকতে চান মাধবদত্ত। অমলের অসীমের মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়ার মতো তাত্ত্বিকতা তিনি বুঝতে চান না, তিনি অমলকে আঁকড়ে পুত্রসুখে দিন কাটাতে চান। কিন্তু রাজকবিরাজও ঠাকুরদার কথাবার্তা বুঝতে না-পেরে এমন কথা বলেছেন।
(৩২) তৃতীয় দৃশ্যে মৃত্যুর মুহূর্তে অমলের কাছে কার কোন্ শোনা কথা সত্যি হয়েছিল ?
উত্তর: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকের অমল এক-একজনের কাছ থেকে এক-এক রকমের কথা জানতে পেরেছিল এবং শেষপর্যন্ত সে-কথা সত্যি হয়ে দেখা গিয়েছিল-
( ক) দইওয়ালা অমলের জন্য দই রেখে যেতে ভোলে না। রেখে যায়।
(খ) প্রহরী তাকে প্রথম শুনিয়েছিল রাজার ডাকঘর বসার কথা এবং এও বলেছিল সেখান থেকে তার নামে একদিন চিঠি আসবে। নাটকের শেষে সত্যিই সেই চিঠি আসে।
(গ) মাধবদত্তের ঠিক করা কবিরাজ অমলকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে কিন্তু কবিরাজের থেকেও বড়ো রাজকবিরাজ এসে তাকে ছেড়ে দিয়ে যাবেন এ কথা বলেছিলেন প্রহরী। নাটকের শেষে দেখা যায় রাজকবিরাজ অমলকে মুক্ত করে দিয়েছেন।
(ঘ) মোড়ল রাজার চিঠি আসবে বলেছিল, শেষপর্যন্ত নিজেই সেই চিঠি নিয়ে আসে।
(ঙ) রাজার জন্য মুড়ি-মুড়কির ভোগ তৈরি রাখতে বলেছিল মোড়ল, শেষপর্যন্ত রাজকবিরাজও সে-কথা জানায়।
(চ) সুধা অমলকে কথা দিয়েছিল ফুল তুলে ফেরার সময় তারজন্য ফুল দিয়ে যাবে, শেষপর্যন্ত সুধা ভোলেনি, নাটকের শেষে তাই হয়।
আরও পড়ুন –
বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর
বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর
YouTube – Samim Sir