তিমির হননের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর। জীবনানন্দ দাশ । দ্বাদশ শ্রেণী । চতুর্থ সেমিস্টার । class 12 timir hononer gaan kobita long question answer । jibonanondo das – WBCHSE

তিমির হননের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর। জীবনানন্দ দাশ । দ্বাদশ শ্রেণী । চতুর্থ সেমিস্টার । class 12 timir hononer gaan kobita long question answer । jibonanondo das – WBCHSE

তিমির হননের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

Mark – 5

(১) ‘তিমির হননের গান’ কবিতাটি কোন্ প্রেক্ষাপটে লেখা ? কবি কেন ‘তিমিরবিলাসী’ নয়, ‘তিমিরবিনাশী’ হতে চেয়েছেন ? [সংসদ নমুনা প্রশ্ন] ২+৩=৫

উত্তর:

প্রেক্ষাপট: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘তিমির হননের গান’ কবিতাটি রচনা করেছেন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে। অর্থাৎ বাংলার মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে রচিত হয়েছে উক্ত কবিতাটি। একদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা, অন্যদিকে পঞ্চাশের প্রাণঘাতী মন্বন্তর বাংলার জনজীবনে ডেকে এনেছিল ভয়ানক সংকট। মানুষের মনে ছিল না কোনো শান্তি, ছিল না আগামীতে ভালো থাকার কোনো আশ্বাস। যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ শুধু মানুষের প্রাণকেই কেড়ে নেয়নি, ধ্বংস করেছিল মানসিক আশা-ভরসার জায়গাগুলিকেও। একদিকে মানুষের মৃত্যুমিছিল, অন্যদিকে প্রাকৃতিক ও ব্যাবহারিক সম্পদের বিনাশ-বাংলার আকাশ তখন অন্ধকারে ঢাকা। এমনই তমসাচ্ছন্ন প্রেক্ষাপটে কবি জীবনানন্দ দাশ রচনা করেছেন ‘তিমির হননের গান’ কবিতাটি।

কবির ‘তিমিরবিলাসী’ না-হয়ে ‘তিমিরবিনাশী’ হতে চাওয়ার কারণ: সাহিত্য হল সমাজদর্পণ। অর্থাৎ সাহিত্যিকের রচনার মধ্যে সমাজের প্রতিবিম্ব ধরা পড়ে। সেইসঙ্গে সাহিত্যিকের মনের গভীরে জমে থাকা ভাবেরও প্রকাশ ঘটে সাহিত্যের পাতায়। সভ্যতার সংকটকে প্রত্যক্ষ করে কবিগণ কখনোই নীরব থাকতে পারেন না। সমাজের নৈরাজ্য, অসাম্য, অন্ধকারের অবসান তাঁরা আকাঙ্ক্ষা করেন। আর সেই ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটান তাঁদের রচনায়। কবিরা চান সমাজকে শোধন করতে। অন্ধকারের উৎস থেকে আলোর অভিমুখে যাত্রার পথনির্দেশ করেন কবিগণ। বিলাসীতাপূর্ণ গড্ডলিকা প্রবাহে তাঁরা ভাসমান নন। মধ্যবিত্তের ভোগবাদী জীবনদর্শনে সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সভ্যতার বুনিয়াদ গঠন করে সাধারণ জনগণ। তাঁরা কখনোই তিমিরবিলাসী হতে পারেন না। কারণ তিমিরের নেতিবাচক প্রভাবে তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন অধিক। চিরন্তন যাত্রী-মানুষ পথ চলতে চলতেই আলোর ঠিকানা খুঁজে নেবেন বলে কবির বিশ্বাস। তিমিরের অবসান ঘটানোই তাঁদের উদ্দেশ্য। কবিও এই সত্যকেই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। তাই তিনি ‘তিমিরবিলাসী’ নন, ‘তিমিরবিনাশী’ হতে চেয়েছেন।

(২) “সেই সব রীতি আজ মৃতের চোখের মতো”কোন রীতির কথা কবি বলতে চেয়েছেন ? তাকে মৃতের চোখের মতো মনে হয়েছে কেন ? ৩+২=৫

উত্তর:

কবির বলা রীতির পরিচয়: প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকরতা এবং মন্বন্তরে বিধ্বস্ত বাংলার তমসাচ্ছন্ন প্রেক্ষাপটে কবি উক্ত কবিতাটি রচনা করেছেন। ফলে সামাজিক সংকটের ছবিটিও ধরা পড়েছে এই কবিতায়। কবি বলতে চেয়েছেন আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে এই পৃথিবীর রূপ এমন স্বার্থের বিষবাষ্পে পরিপূর্ণ ছিল না। নানাপ্রকার সামাজিক রীতিনীতির মাধ্যমে মানুষের মেলবন্ধন সুদৃঢ় ছিল। মানুষ আপনার বাইরে বেরিয়েও অনেকটা বড়ো করে মানুষকে আপন করে নিতে পারত। তারা পারস্পরিক সাহচর্যে হাসি-আনন্দে মেতে উঠতে পারত। সেখানে কোনো মানসিক গ্লানি, মলিনতা ছিল না; ছিল শুদ্ধ প্রেমের বন্ধন। নির্মল আকাশের মতোই তাদের চোখের ভাষা ছিল আবিলতাহীন। জীবনকে ভালোবেসে শিখতে চেয়েছিল তারা। জলের মতো সহজভাবে মিশেছিল তারা। শুদ্ধ প্রেম, আবিলতাহীন চোখের ভাষা, জীবনকে শিখতে চাওয়া- এই সব রীতির কথাই কবি বলতে চেয়েছেন। মৃতের চোখের মতো মনে হওয়ার কারণ : কবির মতে পূর্বের সহজসরল জলের মতো মিশে গিয়ে অন্তরের আকর্ষণ অনুভব করা তথা শুদ্ধ প্রেম আজ আর নেই। যুদ্ধ, মন্বন্তর কেড়ে নিয়েছে মানুষের মনের শান্তি। মধ্যবিত্তমদির শ্রেণি বিলাসীতায় নিমগ্ন। সাধারণের প্রতি তাদের রয়েছে শুধুই ঘৃণা। মৃত মানুষের চোখ ঘোলাটে বা ফ্যাকাসে হয়। বোঝাই যায় তা প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। আধুনিক ভোগবাদী সমাজে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কও যেন এমনই প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। মানবিক সম্পর্কের এমন শুষ্কতা, প্রাণহীনতার কারণেই পূর্বের প্রচলিত রীতিগুলিকে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে মৃতের চোখের মতো মনে হয়েছে কবির।

(৩) “স্বতই বিমর্ষ হ’য়ে ভদ্র সাধারণ/চেয়ে দ্যাখে তবু সেই বিষাদের চেয়ে”–  ‘ভদ্র সাধারণ’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? কবি এখানে কোন বিষাদের কথা বলতে চেয়েছেন ? ২+৩=৫

উত্তর:

ভদ্র সাধারণ’-এর পরিচয়: প্রশ্নোক্ত অংশটি জীবনানন্দ দাশ রচিত তিমির হননের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্যমান অংশে ‘ভদ্র সাধারণ’-এর কথা কবি উল্লেখ করেছেন। সাধারণ অর্থে ‘ভদ্র সাধারণ’ বলতে শিক্ষিত, মার্জিত রুচিসম্পন্ন, সংবেদনশীল মানুষকে বোঝায়, যাঁরা সমাজের রীতিনীতি ও নৈতিকতা সম্পর্কে ভীষণভাবে সচেতন। এঁরা স্বাভাবিকভাবেই বিবেকবানও হন। তবে আলোচ্য কবিতায় কবি মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষগণকে ইঙ্গিত করেছেন, যাদের পূর্বোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির অনেকগুলি বর্তমান থাকলেও মধ্যবিত্তমদিরতায় তারা আক্রান্ত হয়ে বিলাসী, আত্মস্বার্থ সর্বস্ব। দরিদ্র সাধারণের প্রতি তাদের আচরণ অমানবিক। এমন শ্রেণিকেই কবি আলোচ্য কবিতায় ‘ভদ্র সাধারণ’ বলে বিদ্রুপ করেছেন।

কবির ব্যক্ত বিষাদের কথা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পঞ্চাশের মন্বন্তরে বিপর্যস্ত হয়েছে বাংলার জনজীবন। এই সংকটকালেও বিলাসী মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিজেদের বিলাসী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। আধুনিক যুগযন্ত্রণায় তাদের বাসনা হয়তো-বা পরিতৃপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবুও নিজেদের আকাঙ্ক্ষা মেটাবার আপ্রাণ চেষ্টায় তারা মগ্ন। অপরিসীম ভোগবাসনা চরিতার্থ করাকেই এই মধ্যবিত্ত ভদ্রসমাজ জীবনদর্শন বলে মনে করে। ‘ভদ্র সাধারণ’ অনুভব করতে পেরেছিল সভ্যতার পঙ্কিল অবস্থাকে, কিন্তু তারা তাদের লোভকে সংবরণ করতে পারেনি। বিলাসীতা তাদের রক্তে গভীরভাবে প্রথিত হয়ে আছে। সাধারণ দরিদ্র শ্রেণির মানুষের দুঃখযন্ত্রণায় তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের সীমাহীন ভোগবাসনা বর্তমান পটভূমিতে পূর্ণ হবে না-এমনটা অনুমান করেই তারা বিমর্ষ। সমাজের অবক্ষয় বুঝতে পেরেও তারা প্রতিবাদী নয়, পরিবর্তনের চেষ্টা নেই তাদের মধ্যে, এতটাই আত্মকেন্দ্রিকতা তাদের গ্রাস করেছে। সমাজের বড়ো অংশ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন, তাই অনেকটাই নিঃসঙ্গ। ফলে হতাশাগ্রস্তও তারা। এই কারণেও তারা বিমর্ষ তথা বিষাদগ্রস্ত। পূর্বোক্ত বিষাদের কথাই কবি আলোচ্যমান কবিতায় ব্যাক্ত করেছেন।

(৪) ‘তিমির হননের গান’ কবিতার মাধ্যমে কবি সমাজকে কোন বার্তা দিতে চেয়েছেন ? এখানে কবিসত্তার প্রকাশ ঘটেছে কীভাবে লেখো ৩+২=৫

উত্তর:

কবিতায় সমাজকে দেওয়া কবির বার্তা: কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যের অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল ‘তিমির হননের গান’ কবিতাটি। ‘তিমির’ অর্থাৎ অন্ধকার, এই অন্ধকার বলতে কবি সামাজিক বা রাজনৈতিক অসাম্য, নিষ্ঠুরতা, চেতনার অবক্ষয়, মানবিক মূল্যবোধের পতনজনিত অন্ধকারকে বুঝিয়েছেন; যা আমাদের ঘিরে রেখেছে আষ্টেপৃষ্টে, এর থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই তিমিরকে ধ্বংস তথা নাশ করাই হল ‘তিমির হনন’ কথার অর্থ। বিশ্বযুদ্ধ ও মন্বন্তরের সমকালে প্রাণহানী, সম্পদহানী, মানবতার অপমানে এদেশের বুকে নেমে এসেছিল সীমাহীন অন্ধকার। মানুষের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছিল কালো যবনিকা। মধ্যবিত্ত শ্রেণি আপ্লুত হয়ে ছিল স্বপমদিরতায়। এমন পরিস্থিতি তো দরিদ্র সাধারণ চায় না, তেমনই চান না মানবতাবাদী কবিও। কবি চান – অন্ধকার দূর করে আলোকে আহ্বান জানাতে। তিমিরবিলাসী জীবন তো দরিদ্রদের জন্য নয়, তিমিরকে নাশ করে আলোর স্রোতে গা ভাসাতে চায় তারা। চিরন্তন যাত্রী মানুষ চলতে চলতেই অন্ধকারের উৎস থেকে আলোর ঠিকানা খুঁজে নিতে চায়। কারণ আমরা ‘তিমিরবিনাশী’। কবি সমাজকে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চেয়েছেন।

কবিসত্তার প্রকাশ: মানুষের অন্তর্যন্ত্রণাকে ছোটো ছোটো বাক্যে তুলে ধরতে পারেন আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ। আবার সেই বাক্যগুলি ইচ্ছাশক্তির জন্ম দেয়। সেই ইচ্ছাশক্তির জোরে জীবন উপস্থিত হতে পারে সময়ের রাজপথে। সেই রাজপথ অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যৎ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। আর সেই রাজপথের যাত্রীগণ কখনোই নিশ্চিন্তে দিনযাপন করবেন না, হতে পারবেন না তিমিরবিলাসী। অন্ধকারকে মেনে নেবেন না তাঁরা। অন্ধকার সাঁতরে আলোর উৎসের দিকেই যাত্রা করবেন তাঁরা, কারণ তাঁরা তিমিরবিনাশী। আলোচ্য ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় এই সত্য প্রকাশের মাধ্যমে কবিসত্তার সংগ্রামী, মানবদরদী, নৈরাশ্য কাটিয়ে আশাবাদের দিকগুলিই প্রকট হয়ে উঠেছে। আলোর প্রত্যাশী ও জীবনমুখী কবিসত্তার প্রকাশ ঘটেছে এখানে।

২ এবং ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে

(৫) ‘তিমির হননের গান’ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।

উত্তর: সাহিত্যের একটি প্রধান অঙ্গ হল নামকরণ। প্রসঙ্গত বলা যায় যে নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়। নামকরণ নানা আঙ্গিকে হতে পারে, যেমন-বিষয়কেন্দ্রিক, চরিত্রপ্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। এবার আলোচনা করে দেখা যাক যে, কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ কবিতার নামকরণটি সার্থক কিনা।

তিমিরকে সাধারণ জনগণ কখনোই মেনে নিতে চায় না। যুগের যন্ত্রণায় কাতর হয়েও একটা আরাম পাওয়ার জন্য তিমিরকে হত্যা করতে চায় তারা। আলোর অভিমুখে যাত্রা করতে চায় তারা অথচ তিমিরবিলাসী হওয়াটাই যেন নাগরিক জীবনের করুণ পরিণতি। জীবনানন্দের ভাষায়- “মহানগরীর মৃগনাভি ভালোবাসি।” তুচ্ছ ভোগসুখেই এরা তৃপ্ত, এরা আত্মকেন্দ্রিক। অন্যদিকে সভ্যতার বুনিয়াদ গড়ে তোলে যে দরিদ্র মানুষজন তারা সংগ্রাম করে বাঁচার-লঙ্গরখানার অন্ন খুঁটে খায়। তবু তারাই অন্ধকারের উৎস থেকে আলো খুঁজে আনার চেষ্টা করে চলেছে অনবরত। সভ্যতার পিলসুজ সাধারণ নরনারী পথ চলতে চলতেই অন্ধকারের কূপ হতে মুক্ত হয়ে আলোর সাগরে অবশ্যই একদিন অবগাহন করবে-এটাই কবির বিশ্বাস।

সমগ্র কবিতার প্রেক্ষাপটেই কবি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তিমিরকে হত্যা করা অর্থাৎ অন্ধকারের অবসানকল্পেই আমাদের যাত্রা। আমরা তিমিরবিলাসী নই, তিমিরবিনাশী আমরা। তিমির বিনাশের অদম্য আকাঙ্ক্ষার কথাই আলোচ্য কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে এবং তিমির হননের ব্যঞ্জনাই দ্যোতিত হয়েছে আলোচ্য কবিতাটিতে। তাই বলা যায় যে ‘তিমির হননের গান’ নামকরণটি ব্যঞ্জনাধর্মী ও সার্থক হয়ে উঠেছে।

(৬) ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় কবি একাধিকবার ‘তবু’ শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন কেন, আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় ‘তবু’ শব্দটি ছয়বার ব্যবহার করেছেন। ‘তবু’ অব্যয়টি সাধারণভাবে পূর্বের কোনো ঘটনার সাপেক্ষে ব্যবহার করা হয়। কবি আলোচ্য কবিতায় বিভিন্ন আঙ্গিকে ‘তবু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অন্ধকার, শোষণ, ব্যর্থতা, বিষণ্ণতা, মৃত্যুর আসন্নতাকে অতিক্রম করেও আলোর সন্ধানে ছুটে যেতে হয় মানুষকে। অনেক কিছু না-পেলেও, অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও নতুন কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ব্যর্থতা আর গ্লানি মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়-এর পরেও মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকে জগৎকে নতুন করে পাওয়ার। এখানেই ‘তবু’ শব্দটির ব্যবহার তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে।

আলোচ্য ‘তিমির হননের গান’ কবিতার আলোকে বলা যায়-আমাদের পূর্বপুরুষদের পালিত রীতিনীতি বর্তমানে ‘মৃতের চোখের মতো’ প্রাণহীন; ‘তবু’ আলোর দিকে চেয়ে থাকা, অন্ধকারে সমাচ্ছন্ন দিগন্ত; ‘সূর্যলোক নেই’; ‘তবু’ মনোরম সূর্যালোকের প্রতীক্ষাতেই হৃদয়ের হাসিটুকুকে বাঁচিয়ে রাখা, ভদ্র সাধারণ ‘স্বতই বিমর্ষ’; তাদেরই সৃষ্টি করা বর্তমান পৃথিবীর সংকটবস্থাকে উপলব্ধি করে; ‘তবু’ সেই বিষাদের থেকেও অধিক বিষাদময় অন্ধকারে আচ্ছন্ন অন্নহীন বাসস্থান হারা দরিদ্রদের জীবন। দরিদ্ররা সংগ্রাম করে টিকে থাকার জন্য। ‘এরা সব এই পথে’ অথবা ‘ওরা সব ওই পথে’-এই ‘এরা’ আর ‘ওরা’-য় দ্বিধাবিভক্ত সমাজ। ‘তবু’ মধ্যবিত্ত শ্রেণির কোনো হুঁশ নেই। বেদনা আছে জেনেও – অন্তহীন বেদনার পথেই তাদের যাত্রা। চারিদিকে নৈরাশ্য, নিঃসঙ্গতা; ‘তবু’ আমরা আলোর খোঁজ করি, বেঁচে থাকার প্রাণপণ প্রয়াসে মগ্ন রাখি নিজেদের। মহানগরীর রহস্যময়তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মধ্যবিত্তরা, যেন মৃগনাভি পাওয়ার মত্ততায় নিমগ্ন চেতনা তাদের। তাই তারা হয়ে পড়েন তিমিরবিলাসী। ‘তবু’ সাধারণের চেতনা সমাজের বুক থেকে তিমিরকে দূরে সরাতে চায়। কারণ চলমান মানুষ কখনোই তিমিরবিলাসী নয়, তিমিরবিনাশী হতে চায়। এই তিমিরকে ছিন্ন করে আলোচ্য কবিতায় বারবার ‘তবু’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

(৭)  “জীবিত বা মৃত রমণীর মতো ভেবে-অন্ধকারে -মহানগরীর মৃগনাভি ভালোবাসি।“প্রসঙ্গ উল্লেখ করে, উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ২+৩=৫

উত্তর:

প্রসঙ্গ: প্রশ্নোক্ত অংশটি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। হরিণের নাভি থেকে নিঃসৃত হয় এক সুগন্ধি। মূলত পুরুষ হরিণের নাভির কাছে অবস্থিত এক বিশেষ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এই সৌগন্ধ। আলোচ্যমান কবিতায় ‘মৃগনাভি’ শব্দের মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন-যা আমিষাশী ঘ্রাণকে বয়ে আনে। আধুনিক মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজের সংকটেও বেদনাহীন। কারণ নিজেদের বিলাসী জীবন নিয়েই তারা ব্যস্ত। নাগরিক জীবনের এমন অপরিসীম ভোগবাসনা প্রসঙ্গেই কবি ‘মৃগনাভি’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

তাৎপর্য: কবির চেতনায় মহানগরী হয়ে উঠেছে রহস্যময়ী এক রমণী। হতে পারে তিনি জীবিত, আবার হতে পারে তিনি মৃত। যেন আলো-আঁধারিতে ঘেরা এক চরিত্র এই মহানগরী, যাকে কবি ভালোবাসেন, যার জন্য কবি আন্তরিক আকর্ষণ অনুভব করেন। মহানগরীর দ্বিবিধ রূপ উপলব্ধি করেছেন কবি। কখনও তা কলকাকলীপূর্ণ, সবুজ প্রাণের মতোই সে প্রাণবন্ত; আবার কখনও তা ক্লান্ত-বিষণ্ণ অন্ধকারে নিমগ্ন-তখনই তাকে মৃত রমণী বলে মনে করেছেন কবি। আসলে আলো-কালোর দ্বন্দ্বে দ্বিধান্বিত হয়েছে কবিচেতনাও। তাই মৃগনাভি অর্থাৎ সুগন্ধির খোঁজ করেছেন তিনি। এখানে মধ্যবিত্তমদিরতাই কাজ করেছে কবির হৃদয়ে।

সুগন্ধির খোঁজে হরিণ ছুটে বেড়ায় অথচ তারই নাভির কাছ থেকে নিঃসৃত হয় এই সৌগন্ধ। অর্থাৎ বিলাসী মনোভাবাপন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি অসীমকে ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষাতে মশগুল হয়ে থাকে অথচ নিজের গণ্ডিকে তারা বোঝে না। ‘অন্ধকার’ শব্দটিকে কবি ব্যবহার করেছেন মহানগরীর রহস্যময়তাকে বোঝাতে। ‘মৃগনাভি’ যেন অধরা বস্তু, তাকে ধরার জন্য লুব্ধ মধ্যবিত্ত শ্রেণি। শহরের বিষণ্ণতা, একাকিত্ব আবিষ্ট করে কবির চেতনাকে, যা উদ্ধৃত অংশে বর্ণিত হয়েছে। মহানগরী প্রাণময় সত্তা হয়ে উঠে কবিচিত্তকে মগ্ন করেছে তাতে নিমগ্ন হতে।

(৮) “শতাব্দীর সূর্যের নিকটে/আমাদের জীবনের আলোড়ন-” -উদ্ধৃতাংশে কবি সূর্যের প্রসঙ্গ কেন এনেছেন ? জীবনের আলোড়ন বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?৩+২=৫

উত্তর:

প্রসঙ্গ: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ংকরতা এবং পঞ্চাশের প্রাণঘাতী মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে রচিত আলোচ্য কবিতাটি। অর্থাৎ সময়টা মানবসভ্যতার পক্ষে মোটেই সুবিধের ছিল না। বাংলার সমাজ ও সভ্যতা হয়ে পড়েছিল তমসাচ্ছন্ন। সেই তমসাচ্ছন্নতাকে ছিন্ন করে সূর্যের – আলোয় বেরিয়ে আসার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা ধ্বনিত হয়েছে আলোচ্য চরণদ্বয়ে। – সূর্যালোকের অভাবে পৃথিবীতে নেমে আসে নিকষ অন্ধকার। এই অন্ধকার – মানবিক চেতনাকেও স্থবিরতায় পর্যবসিত করে। অন্ধকার সাঁতরে আলোর দিকে যাত্রা করাই আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন কবি – জীবনানন্দ দাশ। সূর্যালোকই পারে আমাদের মনের শুভকে জাগ্রত করতে। তাই কবি উদ্ধৃতাংশে সূর্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।

জীবনের আলোড়ন’-সরলার্থ: পারিপার্শ্বিক নানান ঘটনা মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে, আলোড়িত করে। আজকের মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল না আমাদের পূর্বপুরুষদের পৃথিবী। আমাদের পূর্বপুরুষগণ পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলেমিশে হেসে-খেলে গড়ে তুলেছিলেন সভ্যতার বুনিয়াদ। সহজসরল প্রেমের সম্পর্কে কান্না-হাসিতে আলোড়িত হত তাঁদের জীবন। সহযোগিতা, সহমর্মিতার মাধ্যমে তাঁরা পরস্পরকে বুঝেছেন, একটু একটু করে লিখেছেন বেঁচে থাকার কৌশল। তাঁদের জীবনকে গ্রাস করতে পারেনি বর্তমানের তুচ্ছাতিতুচ্ছ সংকীর্ণ মানসিকতা। তাঁদের জীবন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে ভরপুর। ‘জীবনের আলোড়ন’ বলতে কবি এমন গতিশীল, প্রাণময় জীবনের স্পন্দনকেই বুঝিয়েছেন।

২ এবং ৩ মার্কের প্রশ্ন উত্তর নীচে দেওয়া আছে

(৯) “সূর্যালোক নেই-তবু—/সূর্যালোক মনোরম মনে হ’লে হাসি।“কোন প্রসঙ্গে কবি উক্তিটি করেছেন ? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো। ২+৩=৫

উত্তর:

প্রসঙ্গ: প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পঞ্চাশের মন্বন্তর বাংলার বুকে নামিয়ে এনেছিল ভয়ানক সংকটকালীন পরিস্থিতি। মানবসভ্যতায় নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। কোথাও যেন কোনো আলোর সন্ধান নেই। তবে আমজনতাকে তো প্রাণের দীপশিখা জ্বালিয়ে রাখতেই হবে, অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত আলোর সন্ধান করতে হবে। সূর্যালোকের প্রত্যাশায় মনের হাসিটুকুকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন-এই প্রসঙ্গেই কবি উক্তিটি করেছেন।

তাৎপর্য: জীবনের আলোর দিক, ঔজ্জ্বল্যের দিক, আশার দিককে সূচিত করে আলো। রাতের অবসানে সূর্যের আলো নতুন দিনকে চিহ্নিত করে। আলো জীবনে বয়ে আনে সুখ, প্রশান্তি। অন্ধকার বিদূরিত হয়ে সূর্যালোক প্রকাশিত হলেই আমাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কারণ অন্ধকার কেউ চায় না। সকালের কোমল আলোর সৌন্দর্যে পুলকিত হয় মানবহৃদয়। অন্ধকার হল জীবনের নেতিবাচক দিক, আলো ইতিবাচক দিক। আমাদের আকাঙ্ক্ষা থাকে নেতিবাচকতা কাটিয়ে উঠে ইতিবাচকতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। উদ্ধৃতাংশের দ্বিতীয় চরণটি আনন্দময় জীবনের প্রত্যাশাকে বাড়িয়ে দেয়। অন্ধকার কখনোই জীবনের লক্ষ্য নয়, হাসি-আনন্দে মিলেমিশে একত্রে সমব্যথী-সহমর্মী হয়ে বেঁচে থাকাটাই জীবনের লক্ষ্য। এইভাবে বাঁচাই সূর্যের মনোরম আলোর মতোই জীবনকেও আলোকময় করে তুলতে পারে।

Mark – 2

(১) কোনো হ্রদে/কোথাও নদীর ঢেউয়ে’কারা, কী করেছে ?

উত্তর: আবহমান কাল ধরেই মানুষ মানুষের সঙ্গে মিশতে চেয়েছে, আত্মীয়তার বন্ধন গড়তে চেয়েছে। হ্রদ বা নদীর ঢেউ তো প্রতীক, আসলে মানুষ মনের শান্তি খুঁজতে পরস্পরের সান্নিধ্য চেয়েছে। নাগরিক সভ্যতার মলিনতা থেকে দূরে সরে গিয়ে অশান্ত হৃদয়কে স্নিগ্ধ করার জন্য ‘আমরা’ অর্থাৎ মধ্যবিত্ত মানসিকতাসম্পন্ন মানুষেরা পারস্পরিক সাহচর্যে বসবাস করেছিল।

(২) ‘দু-দণ্ড জলের মতো মিশে’– কথার অর্থ লেখো।

উত্তর: জলের মতো মিশে বলতে বোঝানো হয়েছে সহজ-সুন্দরভাবে মেশাকে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে চায়, পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধুত্বকে নিবিড় করতে চায়, জীবনকে সুন্দরভাবে গতিময় করে তুলতে চায়। আর এটা তখনই সম্ভব হয় যদি তাদের মধ্যে পারস্পরিক মনের মিল গড়ে ওঠে, যা তাদের মনকে ভরিয়ে রাখতে পারে অনাবিল স্নিগ্ধতায়। এমন সরলভাবে মেলামেশাকেই জলের মতো মেশা বলেছেন কবি।

(৩) “আমাদের জীবনের আলোড়ন-“এমন শব্দগুচ্ছ কবি কোন প্রসঙ্গে ব্যবহার করেছেন ? ২

উত্তর: একদা আমাদের পূর্বপুরুষগণ পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলেমিশে সভ্যতার বুনিয়াদ গড়ে তুলেছিলেন। সহজসরল সম্পর্কের মাধ্যমে আনন্দ-হাসিতে মেতে উঠতেন তাঁরা। সুখ-দুঃখ, কান্না-হাসিতে আলোড়িত হত তাঁদের জীবন। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষের কড়াল গ্রাসে পতিত হয়ে মানুষের জীবন থেকে হারিয়েই যেতে বসেছে সুস্থ-সুন্দর-সরল অনুভূতিগুলি। এই প্রসঙ্গে কবি জীবনানন্দ দাশ ‘তিমির হননের গান’ কবিতার প্রশ্নোদ্ভূত শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছেন।

(৪) “আমরা হেসেছি,/আমরা খেলেছি;”– ‘আমরা’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন ?

উত্তর: ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ বলতে চেয়েছেন-আমাদের পূর্বপুরুষগণই একদা গড়ে তুলেছিলেন সভ্যতার বুনিয়াদ। মানুষে মানুষে পারস্পরিক সহযোগিতার ও সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সহজসরল সম্পর্ক গড়েছিলেন তাঁরা। তাঁরাও কিন্তু মধ্যবিত্ত মানসিকতাসম্পন্নই ছিলেন। যদিও বর্তমানের প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্তের জীবনদর্শন আর আগের মতো নেই। ‘আমরা’ বলতে কবি নিজে এবং মধ্যবিত্ত মানসিকতাসম্পন্ন পূর্বপুরুষদের বুঝিয়েছেন।

(৫) “সেই সব রীতি আজ মৃতের চোখের মতো তবু”-কবি কোন রীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন ?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশের কথায় মানুষ একদা নির্মল হৃদয়ে হাসি-আনন্দে নেচে উঠেছিল। সেখানে কোনো গ্লানি, মলিনতা ছিল না, মানুষে মানুষে ছিল শুদ্ধ প্রেম। নির্মল আকাশের মতোই তাদের চোখের ভাষা ছিল আবিলতাহীন। জীবনকে ভালোবেসে শিখতে চেয়েছে তারা। জলের মতোই সহজভাবে মিশেছে তারা। শুদ্ধ প্রেম, আবিলতাহীন চোখের ভাষা, জীবনকে শিখতে চাওয়া-এইসকল রীতির প্রতিই কবি ইঙ্গিত করেছেন।

(৬) ‘আজ মৃতের চোখের মতো’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তর: একদা আমাদের পূর্বপুরুষগণ নির্মল হাসি-খেলায় মেতে উঠেছিলেন কারণ তাঁরা পরস্পর পরস্পরের সাথে জলের মতো সহজভাবে মিশতে পেরেছিলেন। আজ আর সেই দিন নেই। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ কেড়ে নিয়েছে মানুষের মনের শান্তি। মৃত মানুষের চোখ ফ্যাকাসে ঘোলাটে হয়ে যায়। বোঝাই যায় তা প্রাণহীন। ‘মৃতের চোখের মতো’ বলতে মানুষের প্রাণহীন আচরণ বা সম্পর্ককেই বুঝিয়েছেন কবি। এমন সম্পর্ক আন্তরিকতাশূন্য, শুষ্ক। এখানে নেই নিটোল ভালোবাসা।

(৭) “সেই জের টেনে আজো খেলি।”– ‘সেই জের’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশের ‘তিমির হননের গান’ কবিতাটি পাঠ করে বোঝা যায় আমাদের পূর্বপুরুষগণ গৌরবময় ঐতিহ্য বহন করতেন, তাঁরা পরস্পর পরস্পরকে নির্মল হৃদয়ে ভালোবাসতেন। জলের মতো সহজসরলভাবে মিশতে পারতেন তাঁরা। এভাবেই তাঁরা গড়ে তুলেছিলেন সভ্যতার বুনিয়াদ। বর্তমানে সেই সুস্থ পরিবেশ না-থাকলেও আলোর পথ চেয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে সামনে রেখেই। ‘সেই জের’ বলতে আমাদের সুন্দর ঐতিহ্যকেই বুঝিয়েছেন কবি, যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি।

(৮) “সূর্যালোক নেই-তবু-“-উদ্ধৃতাংশের প্রসঙ্গ নির্দেশ করো।

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ১৩৫০-এর মন্বন্তর বাংলার বুকে নামিয়ে এনেছিল ভয়ানক সংকটকালীন পরিস্থিতি। মানবসভ্যতায় নেমে এসেছিল ঘোর অমানিশা। কোথাও যেন কোনো আলোর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু আমজনতাকে তো প্রাণের দীপশিখাকে প্রদীপ্ত রাখতে হবে। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত আলোকের সন্ধান করতে হবে। সূর্যালোকের প্রত্যাশায় মনের হাসিটুকুকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। এই প্রসঙ্গেই প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি ব্যবহার করেছেন কবি।

(৯) “স্বতই বিমর্ষ হয়ে ভদ্র সাধারণ চেয়ে দ্যাখে”ভদ্র সাধারণ স্বতই বিমর্ষ কেন ? ২

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় উল্লেখ করেছেন ভদ্র সাধারণ নিজে নিজেই বা নিজের থেকেই তাকিয়ে দেখে সভ্যতার বর্তমান পঙ্কিল রূপকে। তারাও হয়তো বুঝতে পারে বর্তমানে কোথাও শুদ্ধ প্রেম, আন্তরিকতা পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই ভদ্র-সাধারণ মধ্যবিত্ত বিলাসী মনোভাবাপন্ন শ্রেণি নিজেদের লোভকে সংবরণ করতে অক্ষম। সীমাহীন তাদের পাওয়ার বাসনা কখনোই পরিতৃপ্ত হয় না, তাই এই শ্রেণি স্বতই বিমর্ষ।

(১০)  “লঙ্গরখানার অন্ন খেয়ে”লঙ্গরখানা কী ?

উত্তর: কোনো স্থানে বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা ঘটলে আর্ত, পীড়িত সাধারণ জনগণ খাদ্য সমস্যায় পড়েন। তখন সরকারি ৪ বা বেসরকারি উদ্যোগে পীড়িত মানুষদের জন্য অন্নের ব্যবস্থা করা হয়। একেই লঙ্গরখানা বলা হয়। ১৩৫০ বঙ্গাব্দের দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে বহুস্থানে লঙ্গরখানা স্থাপন করা হয়েছিল। খাদ্যের জন্য সেখানে নিরন্ন দরিদ্র মানুষগণ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষা করতেন। কখনো-কখনো দেখা যেত লঙ্গরখানার একমুঠো অন্নের জন্য মানুষের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনাও।

(১১) “নর্দমার থেকে শূন্য ওভারব্রিজে উঠে”- এখানে কাদের, কোন মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে ?

উত্তর: আধুনিক যুগযন্ত্রণায় সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয় সমাজের নীচুতলার মানুষদের। দুর্ভিক্ষের কালো ছায়া তাদেরকে ঘিরে ধরে। লঙ্গরখানায় খাদ্যের সারিতে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় কেটে যায় তাদের। তবুও তারা আলোকময় জীবনের স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে, জীবনটা বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে। উদ্ধৃতাংশে এমন সাধারণ শ্রেণির স্বপ্নমদিরতা ও > বেঁচে থাকার মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে।

(১২) “নক্ষত্রের জ্যোৎস্নায় ঘুমাতে বা ম’রে যেতে জানে।”-কবি কোন্ প্রসঙ্গে উদ্ধৃত চরণটি উত্থাপন করেছেন ?

উত্তর: যুগের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সাধারণ শ্রেণির মানুষ সামান্য বিশ্রাম পেতে চায়। নক্ষত্রের আলো তো জোরালো নয়, তাতে আঁধার দূর হয় না কিন্তু দরিদ্র শ্রেণির মানুষ সামান্যতেই খুশি। তাদের আলোর তীব্রতার প্রয়োজন নেই, নক্ষত্রের মৃদু আলোতেই তারা অনেকটা হাসি-খেলায় মেতে উঠতে পারে। মধ্যবিত্তের বেদনা, নিরাশার ডিঙি পেরিয়ে টিকে আছে আমজনতা। এমন আলোচনা প্রসঙ্গেই কবি জীবনানন্দ উদ্ধৃত চরণটি উত্থাপন করেছেন।

(১৩)  ‘মধ্যবিত্তমদির জগৎ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তর: সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা নিজেদের স্বার্থের গণ্ডির বাইরে গিয়ে ভাবতে পারে না। তারা অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বচ্ছল, তারা স্বপ্নবিলাসী কিন্তু তারা আত্মকেন্দ্রিক। তারা ভোগবাদী মানসিকতায় মগ্ন হয়ে অনেকক্ষেত্রেই রুচিহীন, বিচারহীনভাবে বেঁচে থাকতেই ভালোবাসেন। তারা তিমিরবিলাসী-বৃহত্তর মানবজগতের কথা এরা ভাবতেই পারে না।

(১৪) ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় কবি ‘মৃগনাভি’ শব্দটি কোন প্রসঙ্গে উত্থাপন করেছেন কেন ? ২

উত্তর: হরিণের নাভি থেকে নিঃসৃত সুগন্ধি বিশেষ হল কস্তুরী। মূলত পুরুষ হরিণের নাভির কাছে অবস্থিত এক বিশেষ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় এই সুগন্ধি। ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় ‘নাভি’ শব্দের মাধ্যমে কবি জীবনানন্দ দাশ বোঝাতে চেয়েছেন-যা আমিষাশী ঘ্রাণকে বয়ে আনে। আধুনিক মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমাজের সংকটেও বেদনাহীন। কারণ তারা কেবল নিজেদের বিলাসী জীবন নিয়েই ব্যস্ত। নাগরিক জীবনের অপরিমিত ভোগবাসনা প্রসঙ্গেই কবি ‘মৃগনাভি’-র বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।শ্য

(১৫) ‘অন্তহীন বেদনার পথে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মন্বন্তর বাংলার জনজীবনে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। জীবনানন্দ দাশের ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় তার ইঙ্গিত দিয়েছেন কবি। মধ্যবিত্ত শ্রেণি আপনাদের বিলাসী জীবন থেকে বেরিয়ে আসেনি, অন্যদিকে দরিদ্র শ্রেণির দুঃখ-বেদনার কোনো অন্ত ছিল না। লঙ্গরখানায় খাদ্যের সারিতে দাঁড়াতে হয়েছে বাঁচার তাগিদে। কষ্টে-ক্লিষ্টে অন্ন খুঁটে খেতে হয় তাদের। ‘অন্তহীন বেদনার পথে’ বলতে তাদের জীবনের করুণ পরিণতির কথাই বুঝিয়েছেন কবি।

(১৬)  “তিমিরবিনাশী হতে চাই”এখানে কবির কোন মানসিকতার প্রকাশ আনা ঘটেছে ?

উত্তর: সাহিত্যিকগণের রচনায় সমাজের প্রকৃষ্ট ছবি ধরা পড়ে। সেইসঙ্গে লেখকের মনের গভীরে জমে থাকা ইচ্ছার প্রকাশও ঘটে সাহিত্যের দর্শনে। কবিগণ কখনও সভ্যতার সংকট দেখে নীরব থাকতে পারেন না। সমাজের অন্ধকার নৈরাজ্যের অবসান চান তারা। তাঁরা চান সমাজকে শোধন করতে। অন্ধকারের উৎস হতে আলোর পথে যাত্রার পথনির্দেশ করেন কবিগণ। বিলাসীতাপূর্ণ গড্ডলিকা প্রবাহে তাঁরা ভাসমান নন। আলোচ্য অংশে কবির { সুস্থ ও উদার মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে।

Mark – 3

(১) “একদিন ভালোবেসে গেছি।”-কে, কীভাবে ভালোবেসেছে ?

উত্তর: কবি জীবনানন্দের ‘তিমির হননের গান’ কবিতার কথক এবং পূর্বপুরুষগণ ভালোবেসেছেন। প্রকৃতপক্ষে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও পূর্বে ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ থাকত।

একদা মানুষ সহমর্মিতা, সহযোগিতা, ভালোবাসার সম্পর্কে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ হত। মানুষের মনে আনন্দ থাকত। তাদের হাসি-খেলায় ছিল না কোনো গ্লানি। নির্মেঘ আকাশের মতোই হৃদয় ছিল নির্মল। জীবনকে তারা নানা অভিঘাতের মাধ্যমে শিখে নিতে চেয়েছিল। আমাদের পূর্বপুরুষগণও মধ্যবিত্ত মানসিকতাসম্পন্ন ছিলেন, তবে তা আজকের মতো স্বার্থপরতায় পূর্ণ ছিল না। তাঁরা অনেক মানবিক ছিলেন-এটা আমাদের গর্বের বিষয়। এমন গর্বিত ঐতিহ্য আমাদের সঙ্গে আছে, এই ঐতিহ্যে নেই কোনো মলিনতা, নেই কোনো গ্লানি। আমাদের এই ঐতিহ্য স্মরণীয় আমাদের জীবনে। কারণ এই ঐতিহ্যকে পাথেয় করেই আমরা এগিয়ে চলেছি। এভাবেই পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকারকে একদিন ভালোবেসেছি আমরা।

(২) “হেমন্তের প্রান্তরের তারার আলোক।”উদ্ধৃত চরণটির প্রসঙ্গসহ তাৎপর্য লেখো।

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের গৌরবময় ইতিহাস আমরা বহন করেছি কিন্তু বাস্তবে বর্তমান পরিস্থিতি নৈরাশ্যজনক। সেই প্রসঙ্গেই কবি উদ্ধৃত চরণটি ব্যবহার করেছেন। তিয়ালপায়ে হেমন্তকালীন প্রকৃতির বিষাদময়তার পরিচয় রয়েছে উদ্ধৃতাংশে। প্রকৃতি সেইসময় কুয়াশার চাদরে যেন মোড়া থাকে। রাতের আকাশে তারাদের আলোও যেন প্রাণহীন-এমনই নিষ্প্রভ থাকে। একদা আমাদের পূর্বপুরুষগণ প্রাণের আবেগে জেগে উঠতেন, পরস্পর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হাসি-খেলায় মাততেন। বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর যেন সব কেড়ে নিয়েছে। তাই পুরোনো সব রীতিনীতি বর্তমানে মৃতের চোখের মতোই প্রাণহীন হয়ে পড়েছে-নেই সারল্য, নেই প্রেম, নেই আলোর দিশা। তবুও তো আলোর খোঁজে ছুটতেই হয়। বর্তমানে সেই আলো হেমন্তের তারার আলোর মতোই শক্তিহীন, মলিন। উদ্ধতাংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বুঝিয়েছেন।

(৩) “চেয়ে দ্যাখে তবু সেই বিষাদের চেয়ে”কোন বিষাদের কথা কবি বলতে চেয়েছেন ?

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ভয়ংকর মন্বন্তরে বিপর্যস্ত হয়েছে বাংলার জনজীবন। এই সংকটকালেও বিলাসী মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিজেদের বিলাসী মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে অক্ষম। তবে বর্তমান পরিবেশে তাদের বাসনা হয়তো-বা পরিতৃপ্ত হতে সমস্যা হতে পারে। আধুনিক যুগযন্ত্রণায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাহিদা তো কখনোই কমেনি। অপরিসীম ভোগবাসনায় মগ্ন থাকাকেই তারা তাদের জীবনদর্শন বলে মনে করত। ভদ্র সাধারণ নিজেরাই অনুভব করেছিল সভ্যতার পঙ্কিল অবস্থাকে। এই মধ্যবিত্ত বিলাসী মনোভাবাপন্ন শ্রেণি নিজেদের লোভকে সংবরণ করতে পারে না। সাধারণ দরিদ্র শ্রেণির মানুষের দুঃখযন্ত্রণায় তাদের কোনো দায় আছে বলেও তারা মনে করে না। তাদের ভোগবাসনা সীমাহীন, তাদের এই বাসনাও অনেক ক্ষেত্রে পূরণ হবে না সাম্প্রতিক সমাজব্যবস্থায়। তাই তারা বিষাদগ্রস্থ। এই বিষাদের কথাই কবি আলোচ্য কবিতায় বলতে চেয়েছেন।

(৪) “মধ্যবিত্ত মানুষের বেদনার নিরাশার হিসেব ডিঙিয়ে” -কারা, কী করে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ‘কারা’ বলতে সমাজের অর্থনৈতিকভাবে নীচুতলায় বসবাসকারী দরিদ্র সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়েছে। যারা বাঁচার জন্য কঠিন সংগ্রাম করে অথচ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঘৃণার পাত্র এরা।

আধুনিক যুগযন্ত্রণায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়তে হয় সমাজে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র শ্রেণিকে। দুর্ভিক্ষের কালো ছায়া ঘিরে ধরে তাদেরকে। লঙ্গরখানায় খাদ্যের সারিতে অপেক্ষা করতে করতে জীবনের খানিকটা সময় কেটে যায় এদের। তারা তবুও অন্ধকারের বিনাশ চায়, আলোকময় জীবনের স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে তারা। মধ্যবিত্তের হতাশা, বেদনা, নিরাশার ডিঙি পেরিয়েও টিকে থাকতে চায় এই দরিদ্র অসহায় শ্রেণির মানুষ।

(৫)তিমির হননের গান’ কবিতায় ‘এরা’ ও ‘ওরা’ বলতে কবি কাদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন ?

উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় ‘এরা’ ও ‘ওরা’-এর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে সমাজের দুই শ্রেণির মানুষের চিন্তা-চেতনা ও পরিস্থিতির চিত্র অঙ্কন করেছেন। দিও পিটায়ীচী

‘এরা’ বলতে সভ্যতার বুনিয়াদ গঠনকারী শ্রমজীবী দরিদ্র শ্রেণিকে আর ‘ওরা’ বলতে আত্মসর্বস্ব, ভোগবাদী, বিলাসী মধ্যবিত্তকে ইঙ্গিত করেছেন কবি। সমাজের অবক্ষয়ে এই মধ্যবিত্তের কোনো ভূক্ষেপ ছিল না, ছিল না দরিদ্রের জন্য কোনো বেদনাবোধও। এরাই আবার লঙ্গরখানায় খাদ্যের সারিতে দাঁড়িয়ে অন্ন খুঁটে খাওয়া মানুষদের ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে রেখে, ঠেলে দেয় অন্তহীন বেদনার পথে। ‘এরা’ না-খেতে পেয়ে গ্রামেগঞ্জে, নগরে-প্রান্তরে ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে। অন্যদিকে ‘ওরা’ মহানগরীর মৃগনাভি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মশগুল হয়ে থাকে। সীমাহীন ভোগবাসনায় লিপ্ত থাকতে থাকতে ‘ওরা’ ভুলেই যায় সমাজটা শুধু তাদের নিয়েই নয়, সাধারণ মানুষও আছে এখানে; তাদের প্রতিও যত্নশীল হওয়া উচিত। ‘এরা’ বিরামহীনভাবে জীবনসংগ্রামে লিপ্ত থাকে আর ‘ওরা’ দরিদ্রের শ্রমকে চুরি করে নিজেদের বিলাসীতায় কাজে লাগায়।

(৬)তিমির হননের গান’ কবিতায় কবি কোন বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন?

উত্তর: জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ প্রকৃতপক্ষে অন্ধকারকে বিদূরিত করে এগিয়ে যাবার গান। বিশ্বযুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের মনে শক্তি ফিরে পাওয়ার গান হল আলোচ্য কবিতাটি। দরিদ্র শ্রেণির মানুষ ক্ষুধার অন্ন পাওয়ার জন্য লঙ্গরখানায় মানুষের সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় আর অন্যদিকে মধ্যবিত্তমদির জগতের ‘তিমিরবিলাসী’ মানসিকতা-এই দুই বিপরীত মনোভাবের মানুষের বৈশিষ্ট্য আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। কবির মতে আমরা কোনো এক সমুজ্জ্বল ভোরের প্রত্যাশায় রয়েছি। মানবতাকে রক্ষা করতে হলে আমাদের অন্ধকারের যাত্রী হলে চলবে না, আমাদের হতে হবে অন্ধকার-বিনাশী। সংশয়ের অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে রেখে আমাদের আলোর পথযাত্রী হতেই হবে। কারণ অন্ধকার তো জীবন হতে পারে না, অন্ধকার সাঁতরে আলোতে ফেরাই জীবনের লক্ষ্য। এই বার্তাই কবি আলোচ্য কবিতায় দিতে চেয়েছেন।

(৬)অন্য এক আকাশের মতো চোখ নিয়ে”উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘তিমির হননের গান’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বযুদ্ধ ও মন্বন্তরের ভয়ংকর পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আলোর সন্ধানে অগ্রসর হয়েছিল মানুষ, সেই প্রসঙ্গেই চরণটি আলোচিত হয়েছে।

‘অন্য এক আকাশের মতো’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন- সংকটের কালো মেঘে সমাচ্ছন্ন আকাশ নয়, হিংসা আর বিদ্বেষের বিষবাষ্পে আদৃত আকাশ নয়; যে আকাশ নির্মেঘ, যে আকাশে সূর্যের শুদ্ধ হাসি দর্শন করা যায়; সেই { নির্মল আকাশের মতো মলিনতাহীন চোখ নিয়ে একদা মানুষ মেতে উঠেছিল হাসি-খেলায়। হৃদয়ের শুদ্ধতা ধরা পড়ত চোখের সহজসরল দৃষ্টিতে, কোনো গ্লানি সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত না। এমন পরিচ্ছন্ন মানসিকতাকেই উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন কবি।

আরও পড়ুন

কেন এল না কবিতার প্রশ্ন উত্তর

নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর

ডাকঘর প্রশ্ন উত্তর

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর

বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর

YouTube – Samim Sir

Leave a Comment