আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি প্রশ্ন উত্তর // শঙ্খ ঘোষ // দশম শ্রেণী বাংলা // class 10 bengali ay aro bedhe bedhe thaki question answer

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি প্রশ্ন উত্তর // শঙ্খ ঘোষ // দশম শ্রেণী বাংলা // class 10 bengali ay aro bedhe bedhe thaki question answer

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি

প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, এই পোস্টটিতে আমি তোমাদের দেখিয়েছি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদের (WBBSE) মাধ্যমিক / দশম শ্রেণীর বাংলা শঙ্খ ঘোষর লেখা আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষায় কমন পাওয়ার মতো প্রশ্ন উত্তর ও সাজেশন । আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখবে যে প্রশ্নগুলির পাশে বেশি স্টার মার্ক (*) সেই প্রশ্নগুলির খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাজেশনের অন্তর্ভুক্ত । এতো সব প্রশ্নের উত্তর যদি তোমরা না পড়তে পারো , তবে স্টার মার্ক (*) প্রশ্ন উত্তরগুলি পড়লেই হবে । কিন্তু সবচেয়ে বেশি স্টার মার্ক (*) প্রশ্ন উত্তরগুলি আগে পড়বে ।

মার্ক – 1 ( MCQ )

১. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটির রচয়িতা (ক) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (খ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (গ) জয় গোস্বামী (ঘ) শঙ্খ ঘোষ

উত্তর (ঘ) শঙ্খ ঘোষ

২. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ? (ক) নিহিত পাতালছায়া (খ) পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ (গ) দিনগুলি রাতগুলি (ঘ) জলই পাষাণ হয়ে আছে

উত্তর (ঘ) জলই পাষাণ হয়ে আছে

৩. শঙ্খ ঘোষের প্রকৃত নাম (ক) প্রিয়দর্শী ঘোষ (খ) চিত্রভানু ঘোষ (গ) চিত্তরূপ ঘোষ (ঘ) চিত্তপ্রিয় ঘোষ

উত্তর (ঘ) চিত্তপ্রিয় ঘোষ

. “পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ” ‘হিমানী’ শব্দের অর্থ – (ক) বরফ (খ) পাহাড় (গ) আগুন (ঘ) লোহা

উত্তর – (ক) বরফ

. “ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে। কী ছড়ানো রয়েছে ? (ক) আমাদের শিশুদের শব (খ) সৈন্যদের শব (গ) লাল রঙের ফুল (ঘ) বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের শব

উত্তর (ক) আমাদের শিশুদের শব

. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’-র অর্থ হল  (ক) পরাধীনতাকে বরণ করা (খ) স্বাধীনতাকে আহরণ করা (গ) সবকিছু ভুলে যাওয়া (ঘ) ঐক্যবদ্ধ হওয়া  / সংঘবদ্ধ হওয়া

উত্তর (ঘ) ঐক্যবদ্ধ হওয়া  / সংঘবদ্ধ হওয়া

. “আমাদের ডান পাশে _____________  শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) গিরিখাদ (খ) উপত্যকা (গ) ধ্বস  (ঘ) চড়াই

উত্তর (গ) ধ্বস

. গিরিখাদ রয়েছে (ক) আমাদের উত্তরে (খ) আমাদের বাঁয়ে (গ) আমাদের দক্ষিণে (ঘ) আমাদের ডানপাশে

উত্তর (খ) আমাদের বাঁয়ে

. “আমাদের মাথায় ____________ শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) আকাশ (খ) মেঘ (গ) বোমারু (ঘ) চুল

উত্তর (গ) বোমারু

১০. “আমাদের __________ নেই কোনো” শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) অর্থ (খ) পদ (গ) পথ (ঘ) রাস্তা

উত্তর (গ) পথ

১১. “পায়ে পায়ে _________ বাঁধ” শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) পাথরের (খ) হিমানীর (গ) শিকলের (ঘ) বরফের

উত্তর (খ) হিমানীর

১২. “আমাদের মাথায় বোমারু”বোমারু’ শব্দের অর্থ (ক) বোমা নিক্ষেপকারী বিমান (খ) মহাকাশযান (গ) ইউ এফ ও (ঘ) রকেট

উত্তর – বোমা নিক্ষেপকারী বিমান

১৩. “আমাদের ঘর কী হয়েছে ? (ক) উড়ে গেছে (খ) ভেঙে গেছে (গ) ভেসে গেছে (ঘ) ডুবে গেছে

উত্তর  (ক) উড়ে গেছে

১৪. “আমাদের __________শব” শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) মানুষের (খ) শিশুদের (গ) পশুদের (ঘ) আত্মীয়দের

উত্তর – (খ) শিশুদের

১৫. “এ-মুহূর্তে না কি?” শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) মরে যাব (খ) হারিয়ে যাব (গ) কাঁদব (ঘ) হাসব

উত্তর (ক) মরে যাব

১৬. “আমাদের পথ __________ শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) নেই আর (খ) উড়ে গেছে (গ) পুড়ে গেছে (ঘ) বাঁকা

উত্তর  (ক) নেই আর

১৭. “আমাদের পথ নেই আর” উদ্ধৃতাংশে ‘পথ’ না থাকার অর্থ হল (ক) কোনো উপায় নেই (খ) কোনো খাদ্য নেই (গ) বাসস্থান নেই (ঘ) পোশাক নেই

উত্তর (ক) কোনো উপায়  নেই

১৮. “আমাদের পথ নেই আর”পথ’ শব্দটি কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে (ক) দু-বার (খ) একবার (গ) চারবার (ঘ) তিনবার

উত্তর (ক) দু-বার

১৯. আমাদের চোখ-মুখ কোথায় ঢাকা পড়েছে ? (ক) ইতিহাসে (খ) ভূগোলে (গ) জামাকাপড়ে (ঘ) রাস্তায়

উত্তর – (ক) ইতিহাসে

২০আমরা ভিখারি ___________ শূন্যস্থান পূরণ করো (ক) সাতমাস (খ) আটমাস (গ) নয়মাস (ঘ) বারোমাস

উত্তর (ঘ) বারোমাস

মার্ক – 1 ( SAQ )

১. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া ? *****

উত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটি ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ।

. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি কাদের ডাক দিয়েছেন ?

উত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি যুদ্ধবিধ্বস্ত, ছিন্নমূল, নষ্টনীড়, সর্বহারা মানুষদের ডাক দিয়েছেন।

৩. কথকের ডান পাশে কী আছে ? [অথবা] আমাদের ডান পাশে কী রয়েছে ? **

উত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কথকের ডানপাশে আছে ধসের উল্লেখ ।

৪. কবিতায় কথক তাঁর বাঁ পাশে কীসের উল্লেখ করেছেন ? **

উত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কথক তাঁর বাঁ পাশে গিরিখাতের উল্লেখ করেছেন ।

. কথকের মাথার ওপর কী ?

উত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কথকের মাথার ওপর বোমারু বিমানের ঘোরাফেরার কথা আছে।

৬. “আমাদের মাথায় বোমারু”- এ কথা বলার কারণ কী ? **

উত্তর আলোচ্য অংশটি উল্লেখের মধ্য দিয়ে কবি শঙ্খ ঘোষ যুদ্ধসংকুল সময়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন ।

৭. “ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!”- কী ছড়ানো রয়েছে ? ***

উত্তর শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কাছে দূরে শিশুদের মৃতদেহ ছড়ানো রয়েছে ।

৮. “আমাদের পথ নেই কোনো”- এরূপ মন্তব্যের কারণ কী ? ***

উত্তর যুদ্ধ, হিংসায় উন্মত্ত মানবসভ্যতা আজ পথভ্রষ্ট হয়েছে। যে-কোনো দিকে পা বাড়ালেই ঘটবে চরম বিপদ ।

. “আমাদের ঘর গেছে উড়ে” এ কথার অর্থ কী ?

উত্তর সাম্রাজ্যবাদী, পররাষ্ট্রলোলুপ শক্তি দুর্বল দেশগুলির ওপর বোমারু বিমান হানা চালিয়েছে। সাধারণ মানুষ হয়েছে আশ্রয়হীন। তাদের ঘর উড়ে গেছে।

১০. “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?” – কবিতার কথকের মনে এমন সংশয়ের কারণ কী ? *

উত্তর যুদ্ধ, হিংসা কেড়ে নিয়েছে আশ্রয়। নিরপরাধ শিশুরাও রেহাই পায়নি। তাদের মৃতদেহ ছড়িয়ে আছে কাছে-দূরে। এইসব দেখে ভীত, বেদনার্ত কবি-কথক, মৃত্যুর আশঙ্কা করেছেন ।

১১. “আমাদের পথ নেই আর”- তাহলে আমাদের করণীয় কী ? ******

উত্তর  আমাদের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেছে। পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, আরও বেঁধে বেঁধে থাকতে হবে ।

১২. ‘বেঁধে বেঁধে থাকি’- বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থ কী ? ******

উত্তর  বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থ ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকা, এক সঙ্গে থাকা ।

১৩. “আমাদের পথ নেই আর”পথ’ শব্দটি এখানে কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?

উত্তর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘পথ’ শব্দটি উপায় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ।

১৪. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”- এই বেঁধে বেঁধে থাকার প্রয়োজনীয়তা কী ? *****

উত্তর সাম্রাজ্যবাদী, যুদ্ধবাজ শক্তিকে প্রতিহত করার জন্যই বেঁধে বেঁধে থাকতে হবে অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে ।

১৫. “আমরাও তবে এইভাবে”– ‘এইভাবে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন  ?

উত্তর নিষ্পাপ শিশুরাও রেহাই পায়নি যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে। এভাবেই অসহায়ভাবে সবাই কি মারা যাবে? এই সংশয় ব্যক্ত হয়েছে ‘এইভাবে’ শব্দটিতে ।

১৬. কথকের পায়ে পায়ে কীসের বাঁধ ?

উত্তর পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ ।

১৭. “পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ”-এ কথা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? ****

উত্তর বরফ যেমন পাহাড়ি পথকে অগম্য করে দেয়; তেমনি যুদ্ধ, হিংসা মানবসভ্যতার পথকে করে তুলেছে দুর্গম। তাই পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ ।

১৮. “আমরা ভিখারি বারোমাস”- ‘আমরা’ কারা ? ****

উত্তর  ‘আমরা’ হল যুদ্ধবিধ্বস্ত, নিরাশ্রয় সাধারণ মানুষ ।

১৯. “আমাদের চোখমুখ ঢাকা”- কবি কেন এ কথা বলেছেন ? *****

উত্তর ইতিহাসে সাধারণ মানুষের জায়গা নেই। যদি-বা কোথাও তাদের কথা থাকে তাও নামমাত্র, ঝাপসা। সেখানে তাদের স্পষ্ট অবয়ব ফুটে ওঠে না। তারা থেকে যায় যবনিকার আড়ালে।

২০. “আমাদের কথা কে-বা জানে”– কাদের কথা কেউ জানে না ?

উত্তর নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিরাশ্রয়, সর্বহারা মানুষের কথা কেউ জানে না, কেউ তাদের খবরও রাখে না।

২১. “তবু তো কজন আছি বাকি” উদ্ধৃতিটির মধ্যে কবি কী বার্তা দিতে চেয়েছেন ?

উত্তর উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কবি আশাবাদের বার্তা দিয়েছেন। যারা বেঁচে আছে তারাই মানবশৃঙ্খল রচনা করে গড়ে তুলবে প্রতিরোধ ।

২২. “আমরা ভিখারি বারোমাস”- বারোমাস ভিখারি কেন ? ****

উত্তর সাধারণ মানুষ চিরকালই বঞ্চিত, উপেক্ষিত। সাম্রাজ্যবাদী শাসকশক্তির লোলুপতায় সাধারণ মানুষ তাদের জীবিকা ও আশ্রয় হারিয়ে ভিখারিতে পরিণত।

২৩. “আমাদের ইতিহাস নেই”- এ কথা বলার অর্থ কী ? ******

উত্তর ইতিহাস রাজা-মহারাজাদের সংগ্রামের কাহিনিতে মুখর। সেখানে সাধারণ মানুষের জায়গা নেই। তাই সাধারণ মানুষের ইতিহাস নেই।

২৪. “পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে”– ‘হয়তো’ অব্যয়টি প্রয়োগ করে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তর – পৃথিবীর থাকা-না-থাকা নিয়ে সাধারণ মানুষের কিছু যায়-আসে না। তারা সম্পূর্ণ উদাসীন। তাদের এই উদাসীনতা ‘হয়তো’ অব্যয়টির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে ।

২৫. “আমাদের ইতিহাস নেই”- এ কথা বলা হয়েছে কেন ? ******

উত্তর ইতিহাস মানেই সাম্রাজ্যবাদী, পররাষ্ট্রলোলুপ শাসকের কাহিনি, ইতিহাস মানেই রাজরাজড়াদের প্রশস্তি। সেখানে সাধারণ মানুষ উপেক্ষিত। তাদের এই উপেক্ষিত অবস্থা বোঝাতেই কথাটি বলা হয়েছে।

২৬. “তবু তো কজন আছি বাকি” কজন মিলে কী করা উচিত বলে কবি মনে করেছেন ?

উত্তর যে কজন টিকে আছে, বেঁচে আছে তাদের হাতে হাত মিলিয়ে বেঁধে বেঁধে থাকতে হবে অর্থাৎ মানববন্ধন রচনা করে একজোট হয়ে থাকতে হবে ।

২৭. “পৃথিবী হয়তো গেছে মরে”- এমন ধারণার কারণ কী ? ****

উত্তর নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষ যেন নেই-রাজ্যের বাসিন্দা, অন্য গ্রহের জীব। পৃথিবীর থাকা-না-থাকায় তাদের কিছু এসে যায় না। তাই পৃথিবী বাঁচুক বা মরুক, সে বিষয়ে তারা উদাসীন।

২৮. “আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।” – তারা দোরে দোরে ফিরেছেন কেন ? *****

উত্তর নিরাশ্রয়, সর্বহারা সাধারণ মানুষ শান্তি, সুস্থিতির আশায় ঘুরে বেড়িয়েছে সারা পৃথিবীতে। কিন্তু কোথাও পায়নি ভালোবাসা আর ভালো বাসা। তাই তাদের পথ পরিক্রমাও থামেনি।

২৯.“আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”- এ কথা বলার কারণ কী ? ******

উত্তর বেঁধে বেঁধে থেকে অর্থাৎ জোটবদ্ধ হয়ে থেকে মানবশৃঙ্খল রচনা করে একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই গড়ে তুলতে হবে সাম্রাজ্যবাদী শাসকশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। তাই এই জোট গঠনের জন্যই কবি উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।

৩০. “অথবা এমনই ইতিহাস”- কেমন ইতিহাস ? *****

উত্তর ইতিহাস সাধারণ মানুষের কথা বলে না, বলে সাম্রাজ্যলোভী শাসকদের কথা। সাধারণ মানুষ সেখানে ব্রাত্য। তাদের কথা যদি-বা থাকে, তাহলে তা গুরুত্বহীনভাবেই লেখা থাকে।

মার্ক – 3 প্রশ্ন উত্তর

(১) আমাদের ঘর গেছে উড়ে”- কাদের ঘর, কেন উড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন কবি ? ১+২ ***

উত্তরযাদের ঘর উড়ে গেছে: শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত নিরীহ সাধারণ মানুষের ঘরের কথা বলা হয়েছে।

উড়ে যাওয়ার কথা বলার কারণ: সাম্রাজ্যবাদী, পররাষ্ট্রলোলুপ, যুদ্ধবাজ শক্তিশালী দেশগুলি বিনা কারণে বা তুচ্ছ কারণে ঝাঁপিয়ে পড়ছে দুর্বল দেশগুলির ওপর। বোমারু বিমান বাহিনী দিয়ে তারা হামলা চালাচ্ছে। নিরীহ সাধারণ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পর্যন্ত কেড়ে নিচ্ছে। অসহায়, নিরপরাধ মানুষেরা হয়ে পড়ছে নিরাশ্রয়।

. “আমাদের ডান পাশে ধ্বস”– ‘ধ্বস’ কী ? এই উল্লেখের কারণ কী ? ১+২

উত্তর ধ্বস: ‘ধ্বস’ (আধুনিক বানান ‘ধস’) শব্দের অর্থ হল পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথর বা মাটির স্তূপ।

উল্লেখের কারণ: পাহাড়ি রাস্তায় যে-কোনো সময় ধস নামে। উপর থেকে গড়িয়ে আসে পাথর, মাটি। বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা, বিপর্যস্ত হয় জনজীবন। প্রাণহানিও ঘটে আকছার। কবিতায় ‘ধ্বস’ শব্দটি আকস্মিক বিপদের প্রতীক। যুদ্ধবাজ, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে সাধারণ মানুষের জীবন বিধ্বস্ত। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সম্ভাবনা, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান হারানোর চোখরাঙানি। ‘ধ্বস’ শব্দটি তাকেই ইঙ্গিত করছে।

৩. “আমাদের পথ নেই কোনো”- ‘পথ’ শব্দের অর্থ কী ? পথ না থাকার কারণ কী ? ১+২ ******

উত্তরপথ: ‘পথ’ শব্দের সাধারণ অর্থ রাস্তা বা সড়ক। তবে এখানে শব্দটি ‘উপায়’ অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে।

পথ না থাকার কারণ: “হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী; নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব,” সাধারণ মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ। যুদ্ধবাজ শাসকশক্তির লোলুপ আগ্রাসনে নিরপরাধ, নিরীহ সাধারণ মানুষদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাদের ডানদিকে ধস, বাঁয়ে গিরিখাত, মাথায় বোমারু বিমান বাহিনীর আক্রমণ, পায়ে পায়ে হিমানীর বাধা। চতুর্দিকে বিপদের মুখোমুখি হয়ে সাধারণ মানুষ আজ হতভম্ব, দিভ্রান্ত। তাই তাদের পথ বা উপায় নেই।

. “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?”-আমরা’ কারা ? এই মনোভাবের কারণ কী ? ১+২

উত্তর আমরা: ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় শঙ্খ ঘোষ ‘আমরা’ বলতে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছেন।

মনোভাবের কারণ: যুদ্ধ মানে ধ্বংস, সম্পদহানি, প্রাণ নিয়ে টানাটানি। যুদ্ধবাজ শাসকশক্তির আগ্রাসনে সাধারণ মানুষের জীবন বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, উদ্‌দ্ব্যস্ত। তাদের চারদিকে বিপদ। পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি। শিশুরাও রেহাই পায় না এই চক্রব্যূহ থেকে। মারা যায় কাতারে কাতারে। তাই মৃত্যুভয় চেপে বসেছে কবির মনে। বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নিয়ে সংশয় জেগেছে হৃদয় কোণে।

(৫) “আমাদের ইতিহাস নেই”- কে, কেন এ কথা বলেছেন ? ******

উত্তর বক্তা: মানবতাবাদী কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।

এ কথা বলার কারণ: সাধারণ মানুষের কথা ইতিহাসে নেই। কারণ প্রথাগত ইতিহাস হল ধর্মের ধ্বজাধারী ক্ষমতালোভী রাজা, নবাব কিংবা রাজনীতিকদের আখ্যান। এজন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ইতিহাসে যেন সাধারণ মানুষ নেই, কেবল যারা মারামারি, খুনোখুনি করেছে তারাই আছে। বিকৃত আরোপিত এই ইতিহাস নিছক শিশুপাঠ্য কাহিনি। এখানে চিনের প্রাচীর কিংবা মিশরের পিরামিড তৈরি করেছেন রাজা কিংবা ফ্যারাওরা। সাধারণ মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শ্রম সেখানে উপেক্ষিত। সাধারণ মানুষেরা বুর্জোয়াদের তোষণকারী ইতিহাসের পাতায় ব্রাত্য।

. “আমরা ফিরেছি দোরে দোরে।– ‘আমরা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের দোরে দোরে ফিরতে হচ্ছে কেন ? ১+২

উত্তর –  ‘আমরা’-র পরিচয়: ‘আমরা’ বলতে যুদ্ধবিধ্বস্ত নিরাশ্রয় সাধারণ মানুষদের কথা বলা হয়েছে।

দোরে দোরে ফেরার কারণ: “ঘরের সন্ধানী তুমি ঘর পেলে না/তীরের সন্ধানী তুমি তীর পেলে না”-জনজীবনে, ইতিহাসে উপেক্ষিত সাধারণ মানুষের এই অবস্থা। যুদ্ধ তাদের মাথার ওপরের ছাদ কেড়ে নিয়েছে। ছিনিয়ে নিয়েছে ভাবী প্রজন্মকে। তাদের জীবন-জীবিকাও হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত। সর্বহারা শ্রেণির মানুষেরা সারাজীবন ভিখারি হয়ে খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের খোঁজে ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্তে। সাহায্যের আশায় হত্যে দেয় পুঁজিপতিদের দরজায়।

. “আমাদের চোখমুখ ঢাকা” পঙ্ক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে দাও

উত্তরঅন্তর্নিহিত অর্থ: শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় সাধারণ মানুষের দুর্দশার ছবি এঁকেছেন। ইতিহাস সাধারণ মানুষকে গুরুত্ব দেয় না। রবীন্দ্রনাথের মতে, এই ইতিহাসে যেন সাধারণ মানুষ নেই, কেবল যারা মারামারি খুনোখুনি করেছে তারাই আছে। ক্ষমতাবানরা নিজেদের মতো করে ইতিহাস রচনা করায়। সেই ইতিহাসে থাকে কেবল তাদের চরিত গাথা, তাদের কীর্তিকলাপ, মহত্ত্ব, উদারতার ঢালাও বিজ্ঞাপন। সাধারণ মানুষ সেখানে ব্রাত্য কিংবা তাদের ভূমিকা গৌণ। একেই কবি ‘চোখমুখ ঢাকা’ বলেছেন।

৮. “আমাদের ইতিহাস নেই”- ‘আমরা’ কারা ? ‘ইতিহাস নেই’ কথাটির অর্থ কী ? ১+২ ******

উত্তর –  ‘আমরা’-র পরিচয়: ‘আমরা’ বলতে যুদ্ধবিধ্বস্ত নিরাশ্রয় সাধারণ মানুষদের কথা বলা হয়েছে।

ইতিহাস নেই’ কথাটির অর্থ: সাধারণ মানুষের কথা ইতিহাসে নেই। কারণ প্রথাগত ইতিহাস হল ধর্মের ধ্বজাধারী ক্ষমতালোভী রাজা, নবাব কিংবা রাজনীতিকদের আখ্যান। এজন্যই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ইতিহাসে যেন সাধারণ মানুষ নেই, কেবল যারা মারামারি, খুনোখুনি করেছে তারাই আছে। বিকৃত আরোপিত এই ইতিহাস নিছক শিশুপাঠ্য কাহিনি। এখানে চিনের প্রাচীর কিংবা মিশরের পিরামিড তৈরি করেছেন রাজা কিংবা ফ্যারাওরা। সাধারণ মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা শ্রম সেখানে উপেক্ষিত। সাধারণ মানুষেরা বুর্জোয়াদের তোষণকারী ইতিহাসের পাতায় ব্রাত্য।

৯. “আমরা ভিখারি বারোমাস”- ‘আমরা’ কারা ? ‘ভিখারি’ শব্দের তাৎপর্য স্পষ্ট করো। ১+২ *****

উত্তর –  ‘আমরা’-র পরিচয়: ‘আমরা’ বলতে যুদ্ধবিধ্বস্ত নিরাশ্রয় সাধারণ মানুষদের কথা বলা হয়েছে।

ভিখারি’ শব্দের তাৎপর্য: সাধারণ মানুষেরা চিরকাল ভিখারি। তাদের স্থান ইতিহাসে নেই। অথচ তারাই মানবসভ্যতার ধারক ও বাহক, তারা ‘সভ্যতার পিলসুজ’। সভ্যতারূপ প্রদীপকে মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তাই উপরের সবাই আলো পায়। অথচ এদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে। এদের শ্রমের বিনিময়ে মানবসভ্যতা এগোয় তরতরিয়ে। প্রতিদানে এরা পায় অনাহার, অশিক্ষা, আশ্রয়হীনতা, নিদারুণ নিপীড়ন। খাবার, পোশাক আর মাথা গোঁজার একটু আশ্রয়ের আশায় এরা ঘুরে বেড়ায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আর-এক প্রান্তে। তাই কবি এই সর্বহারা সাধারণ মানুষদের ‘ভিখারি’ বলেছেন।

১০. “পৃথিবী হয়তো গেছে মরে”– কবি কেন এ কথা বলেছেন ?

উত্তর উৎস ও প্রসঙ্গ: শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় সাধারণ মানুষের পৃথিবী সম্পর্কিত ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য অংশে ।

পৃথিবী মরে গেছে এ কথা বলার কারণ: সাধারণ মানুষ হল ‘সভ্যতার পিলসুজ’। সভ্যতার ধারক এবং বাহক। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠী যেহেতু সভ্যতার কান্ডারি, তাই তারা সবসময় শ্রমজীবী সাধারণ মানুষকে রেখে দেয় উপেক্ষার অন্ধকারে। আর্থসামাজিক দিক থেকে এরা এতটাই বিচ্ছিন্ন যে পৃথিবীর বেঁচে থাকা কিংবা মরে যাওয়ার সঙ্গে এদের কোনো সম্পর্কই নেই। দারিদ্র্য, অনাহার, অশিক্ষা, আশ্রয়হীনতা এদের চিরসঙ্গী। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এদের দিনরাত এমন ব্যস্ত থাকতে হয় যে পৃথিবীর থাকা-না-থাকার খবর নিয়ে ভাবনা-বিলাস এদের থাকে না। এদের এই বিরূপ মনোভাব বোঝাতেই পৃথিবী মরে গেছে বলা হয়েছে।

মার্ক – 5 প্রশ্ন উত্তর

১. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতাটির বিষয়বস্তু / মূল বক্তব্য বিবৃত করো । *******

উত্তর কবি শঙ্খ ঘোষ একজন সমাজমনস্ক যুগসচেতন কবি। তিনি তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটিতে সেই সমাজমনস্কতারই পরিচয় দিয়েছেন। কবির ভাবনা দেশকালের কবির চোখে সীমা অতিক্রম করে পৃথিবীর বুকে ন্যস্ত পৃথিবীর সাধারণ হয়েছে। চোখে পড়েছে মানুষের চরম বিপন্নতা।

মানুষের বিপন্নতায় কবি বললেন, ‘আমাদের ডান পাশে ধস/আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ’। দুর্গমতার চিত্র অঙ্কিত করে কবি কবিতার সূচনা করেছেন। মানবজীবন চিরমসৃণ নয় ঠিকই, কিন্তু এ তো মানুষের সৃষ্ট ভয়াবহতা। যার জন্য কবি বললেন,

“আমাদের মাথায় বোমারু

পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ।“

এতেই কবি প্রচ্ছন্নভাবে ইঙ্গিত দিলেন যে, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি পৃথিবীর বুকে তার ক্ষমতালোভে উন্মত্ত। তাদের হিংসার বলি সাধারণ মানুষ থেকে নিরীহ নিষ্পাপ শিশু পর্যন্ত। ক্ষমতালোভী শাসকের দল সাধারণ মানুষকে অন্ধকারে রেখে তাদের স্বার্থ সাম্রাজ্যবাদী চরিতার্থ করছে। দেশ-জাতির ইতিহাসকে শক্তির রূপ নিজেদের স্বার্থে বিকৃত করে নিজেদের মতো করে উপস্থাপিত করছে। ভিখারি দশায় পর্যবসিত করে রেখেছে সাধারণ মানুষকে। হিংসা, হানাহানি, দাঙ্গা, ধর্মীয় গোঁড়ামিতে মানুষকে মৃতবৎ করে রাখার প্রচেষ্টা। মানুষ তার স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। কবি দেশ-জাতির সঙ্গে পৃথিবীর মানুষের এক সামগ্রিক অসহায় বিপন্ন চিত্র উপস্থাপিত করেছেন।

মানুষ সভ্যতার বড়াই করলেও কর্মে তার প্রকাশ নেই। তবে কবি আশাবাদী, তিনি বলেছেন এখন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ বিবেক-মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে বেঁচে নেই, এমন কিছু মানুষ কবির আশ্বাসবাণী আছে যারা দেশের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে সমর্থ। কবি তাদের মনে প্রেরণা-শক্তি-সাহস জোগাতে একসঙ্গে ঐক্য-মৈত্রীর বার্তা নিয়ে সংঘবদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন। তাতেই পৃথিবী আবার নতুন করে বেঁচে থাকার স্বাদ পাবে। তাই তো কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে,

“আয় আরো হাতে হাত রেখে

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”

.“আমাদের শিশুদের শব / ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!” -কার, কোন কবিতার অংশ ? মূল গ্রন্থের নাম কী ? পাঠ্য কবিতা অনুসারে পঙ্ক্তি দুটির তাৎপর্য আলোচনা করো ১+১+৩

উত্তরকবি ও কবিতার নাম: উদ্ধৃতাংশটি শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার অংশ।

মূল গ্রন্থ: মূল গ্রন্থের নাম- ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’।

পঙ্ক্তি দুটির তাৎপর্যঃ “যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা/যুদ্ধ মানেই আমার প্রতি তোমার অবহেলা।” সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠীর লোলুপ আগ্রাসনে গোটা পৃথিবী জুড়ে নরক গুলজার। সাধারণ মানুষ উদ্ব্যস্ত আবার উদ্বাস্তু। তাদের ডাইনে ধস, বাঁয়ে গিরিখাত, মাথায় বোমারু বিমানের পাহারা, পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ। মাথার ওপর থেকে উড়ে গেছে ছাদ। ভাবী প্রজন্মও হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। সরল, নিষ্পাপ শিশুরাও রেহাই পায়নি যুদ্ধবাজদের হাত থেকে। কুঁড়ি ফুল হয়ে ফুটে ওঠার আগেই ঝরে গেছে।ভবিষ্যৎ হয়েছে অন্ধকার। পৃথিবীর সব প্রান্তেই যুদ্ধের শিকার হয়ে “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো।“ মানবতার এই নিষ্ঠুর অপমৃত্যুতে কবি ব্যথিত, মর্মাহত।

শিশুদের শব ছড়িয়ে থাকার কারণ: যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। কখনও বোমা, কখনও অনাহার, কখনও নষ্টনীড় হয়ে হেঁটে চলার ধকল আর কখনও রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতের গিনিপিগ হয়ে শিশুরা মারা যায় কাতারে কাতারে। তাদের মৃতদেহ ছড়িয়ে থাকে কাছে দূরে।

৩. “আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি ?” – এমনটা মনে হচ্ছে কেন ? ****

উত্তর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন ডেকে এনেছে একের পর এক যুদ্ধ। সাধারণ মানুষ হয়েছে উদ্ব্যস্ত এবং উদ্বাস্তু। ডাইনে ধস, বাঁয়ে গিরিখাত, মাথার ওপর বোমারু বিমানের পাহারা আর পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ সাধারণ মানুষকে করেছে উদ্ভ্রান্ত। চোখের সামনে শিশুরা পরিণত হচ্ছে শবে। কুঁড়ি ঝরে যাচ্ছে ফুল হয়ে ফুটের ওঠার আগেই। ভাবী প্রজন্মের এই হারিয়ে যাওয়া সাধারণ নির্বিবাদী মানুষকে করেছে ভীত, সন্ত্রস্ত। নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কেই তারা সন্দিহান হয়ে উঠেছে।

কিন্তু গোটা পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধবাজ রাজনীতির ‘বুড়ো খোকা’-দের দাপাদাপিতে সাধারণ মানুষের ‘মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’ বাসনাটুকুও অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। তাদের মনে আশঙ্কা জাগছে- এখন তো বেঁচে আছি, পরমুহূর্তে পৃথিবীর আলো দেখতে পাব তো? তাই প্রতিমুহূর্তে কণ্টকিত মানুষের মনে এই মৃত্যু-আশঙ্কা জেগেছে।

. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”– ‘বেঁধে বেঁধে থাকি’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? কবি কেন একথা বলেছেন ? ২+৩

উত্তর কবি শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ শীর্ষক কবিতা থেকে আহৃত চরণে কবি পৃথিবীর বুকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে যুদ্ধবিধ্বস্ত, সর্বহারা, আতঙ্কগ্রস্ত, অসহায় সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান জানিয়েছেন।

কবির চোখে ধরা পড়েছে পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া নানান দুঃসহ চিত্র। কোথাও ধনতান্ত্রিক দেশের ক্ষমতাবিস্তার, দাপট, কোথাও ধর্মান্ধতা, কোথাও বা গোষ্ঠীসংঘর্ষ এতই প্রকট না থেকে একত্র সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে ঐক্য, মৈত্রী সহযোগিতার ভিত্তিতে আগুয়ান হওয়ার কথা বলেছেন। ‘বেঁধে বেঁধে’ থাকার অর্থ বলতে কবি একত্রে চলার কথাও বলেছেন।

‘বেঁধে বেঁধে যে, সাধারণ মানুষ তার প্রভাবে বিপর্যস্ত। থাকি’ বলতে কবি তাদের এই অসহায় অবস্থায় বিচ্ছিন্নভাবে কবির কথা

কবির উক্ত কবিতাটি মানুষের কাছে এক সার্বিক বার্তা, এক জীবনদর্শন। সমাজে মানুষ একা বাঁচতে পারে না, প্রয়োজন আর পাঁচ জনের সহযোগিতা, সহমর্মিতা। বৃহত্তর কর্মে, বড়ো কোনো আন্দোলনে, প্রতিবাদস্থলে বহুর অবস্থান ও সহযোগিতায় কার্যসিদ্ধি ঘটে, নতুবা তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কবি সেই সত্যটিকে এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর বুকে সাম্রাজ্যবাদীর প্রভুত্ববিস্তারে বা গোষ্ঠীসংঘর্ষে সাধারণ মানুষের জীবনে যে বিপন্নতার সৃষ্টি হয়েছিল, কবি সেই অন্ধকার রুদ্ধ পথ থেকে বেরিয়ে আসার পথনির্দেশ করেছেন। সাধারণ মানুষের একমাত্র শক্তি হল মানুষের ঐক্য, মৈত্রী ও সহাবস্থান। মানুষের এই প্রতিরোধকে যে-কোনো শক্তিই ভয় পায়। তখন যুদ্ধাস্ত্রও এর প্রভাবে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। কবি তাই সাধারণ মানুষকে সাহস দিতে পথের দিশা দেখাবার জন্য একত্র সহাবস্থানের কথা বলেছেন। এতেই তারা প্রকৃত বাঁচার পথ খুঁজে পাবে।

৫. “আমাদের ইতিহাস নেই / অথবা এমনই ইতিহাস” – কবি আমাদের ইতিহাস নেই বলেছেন কেন ? ‘অথবা এমনই ইতিহাস’ বলতে কোন ইতিহাসের কথা বলেছেন বুঝিয়ে দাও । ২+৩ *****

[ অথবা ] “আমাদের ইতিহাস নেই”- কাদের, কেন ইতিহাস নেই ? উক্তিটির যৌক্তিকতা কবিতা অবলম্বনে বিচার করো । ১+১+৩ *****

উত্তর –  যাদের ইতিহাস নেই: শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় সাধারণ শ্রমজীবী মানুষদের ইতিহাস না থাকার কথা বলা হয়েছে।

ইতিহাস না থাকার কারণ: শ্রমজীবী সাধারণ জনগণ ইতিহাসে ব্রাত্য। কারণ প্রথাগত ইতিহাস ধর্মের ধ্বজাধারী আর সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের জয়গানে মুখর। অত্যাচারী, পররাজ্যলোলুপ, যুদ্ধবাজ, ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের কার্যকলাপ ইতিহাসে ফলাও করে লেখা থাকে। তাই সেখানে সাধারণ মানুষদের জায়গা হয় না।

যৌক্তিকতা: রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে, ভারতবর্ষের ইতিহাস হল ভারতবর্ষের নিশীথকালের একটা দুঃস্বপ্ন কাহিনি মাত্র। সেখানে সাধারণ মানুষ নেই, কেবল যারা মারামারি, খুনোখুনি করেছে তারাই আছে। এই ইতিহাসে চিনের প্রাচীরের নির্মাতা কিং, হান, সুই, নরদান ও জিং রাজারা; তাজমহলের নির্মাতা শাজাহান। চিনা রাজমিস্ত্রিদের উদয়াস্ত শ্রম কিংবা বিশ হাজার নির্মাণকর্মীর বাইশ বছরের খাটুনি সেখানে গুরুত্বহীন। অর্থ, প্রতিপত্তি, পেশিশক্তি যার, ইতিহাসে দাপট তার। তাই সাধারণ মানুষের ইতিহাস নেই-এ কথা সর্বাংশে সত্য।

৬.“আমরা ভিখারি বারোমাস”- ‘আমরা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তারা নিজেদের ভিখারি বলে মনে করেছে কেন ? ১+৪ ****

উত্তর – ‘আমরা’-র পরিচয়: শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘আমরা’ বলতে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষদের বোঝানো হয়েছে।

ভিখারি ভাবার কারণ: “সবচেয়ে ভালো খেতে গবীবের রক্ত।“-পৃথিবীতে এই ধরনের ধনপতি পালদের অভাব নেই। মার্কস কথিত havenots-দের শোষণ করেই এদের পসার ও প্রসার। অন্যদিকে যারা ম্যাক্সিম গোর্কি কথিত ‘the lower depths’ তারা অবহেলিত, লাঞ্ছিত, ব্রাত্য চিরকালই তাদের অবস্থা- “আগাছার মতো ভাসি দিনরাত আর/ঊর্ণাজালে স্পর্ধা শেষ ছায়াচ্ছন্ন করুণা পাথার।”

এরা ‘সভ্যতার পিলসুজ’। মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে। ওপরের সবাই আলো পায়। এদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে। সারা জীবন ধরে এরা শুধু দিয়েই যায়। পায় না কিছুই। সভ্যতার রথচক্রে পিষ্ট হওয়াই এদের নিয়তি। এদের কর্ম আর ঘর্মে সভ্যতার রেলগাড়ি জোরে দৌড়োয়। বিনিময়ে এরা পায় অশিক্ষা, অনাহার, আশ্রয়হীনতা আর লাগামছাড়া নির্যাতন। উদ্‌দ্ব্যস্ত এই মানুষেরা উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেড়ায় সারা পৃথিবী। ভালোবাসা আর ভালো বাসার আশা এদের কখনও পূরণ হয় না। ইতিহাসে সম্মানের আসন থেকেও তারা বঞ্চিত। তাই তারা নিজেদের ভিখারি ভেবেছে।

৭. “পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে/ পৃথিবী হয়তো গেছে মরে” – কবির মনে এরূপ সংশয় জেগেছে কেন ? ৫ **

উত্তর কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি দিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়েছেন। সেই দৃষ্টিতে কবির চোখে পড়েছে মানুষের অন্তর্লোকের চিত্র। মানুষ একদিন শ্বাপদসংকুল পরিবেশকে মানুষের বাসযোগ্য করে তুলেছিল। মানুষই শ্রম দিয়ে তিলতিল করে সভ্যতার শিখরে উন্নীত হয়েছিল। সেই মানুষই হিংসায় উন্মত্ত হয়ে মানবসভ্যতাকে আঘাত করতে সচেষ্ট। কোথাও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দম্ভের প্রকাশ, কোথাও ধর্মীয় অন্ধকারে বিনষ্ট। কবির কথায় “আমাদের মাথায় বোমারু / পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ।” মানবসভ্যতার গর্ব করার মতো বিষয়গুলো যেন কবির চোখে ম্লান হয়ে গেছে। ক্ষমতালিপ্স রাষ্ট্রনায়কদের অমানবিক হিংস্র কার্যকলাপে শিশুরা পর্যন্ত মৃত্যু-মুখে পতিত। “আমাদের শিশুদের শব / ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে” যে দেশ মাতৃসম, যেখানে মানুষ নিশ্চিন্তে শান্তিতে অবস্থান করে তৃপ্তি পায়, সেই দেশের মানুষকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রহর গুণতে হচ্ছে। কবিও কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় –

“আমরাও তবে এইভাবে

এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?”

পৃথিবী মানুষের শান্তির আবাসস্থল; অথচ সেই পৃথিবী মানুষের কাছে অসহনীয়, হিংসার-হানাহানির মৃত্যুপুরী হয়ে উঠেছে। কবির মনে তাই সংশয় জেগেছে। প্রশ্ন জেগেছে এ পৃথিবী কি সত্যই মানুষের বাসযোগ্য? মানুষ কি এখানে প্রকৃত বাঁচার স্বাদ নিয়ে বেঁচে রয়েছে; না মৃতবৎ দিন কাটাচ্ছে। যে পরিবেশে প্রতিনিয়ত মানুষের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তা কখনোই সুখকর পৃথিবী হয়ে উঠতে পারে না। কবির মনের সংশয়ের কারণ এটাই।

. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে কবির সমাজচেতনার যে পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা করো । ৫

উত্তর কবি শঙ্খ ঘোষ অত্যন্ত বিবেকবান, মননশীল ও প্রখর অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। তাই সমাজসচেতন কবি শঙ্খ ঘোষকে স্বাধীনতা পরবর্তী যুগের বিশৃঙ্খল পরিবেশ, অভাব-অনটন, কবির মননশীল প্রকৃতির অকৃপণতা ভীষণভাবে কষ্ট দিয়েছে।

উক্ত কবিতাটি তাঁর সমাজমনস্কতারই এক নমুনা। তিনি দেখেছেন, সভ্যতার অগ্রগতি ঘটিয়ে বিশ শতক থেকে একবিংশ শতকে পৌঁছেও পৃথিবীর মানুষ ক্ষমতালোভে দীপ্ত হয়ে অন্যকে হিংসাবিষ্ট করে তুলেছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর মুখে, তাছাড়া ধর্মান্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে লিপ্ত হয়েছে গোষ্ঠীসংঘর্ষে, তাতে বেড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা।

কবির চোখে জেগে ওঠা রূপ সাধারণ মানুষের বুকে নেমে এসেছে চরম বিপন্নতা। মাথার উপরে ছাদ হারিয়ে তারা হয়েছে নিরাশ্রয়; জীবনচলার পথ তাদের কাছে রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

“আমাদের পথ নেই কোনো

আমাদের ঘর গেছে উড়ে।”

সাম্রাজ্যবাদীর শক্তি হিংসায় এতটাই উন্মত্ত হয়েছিল যে, তার প্রকোপ থেকে শিশুরা পর্যন্ত মৃত্যুর হাত থেকে ছাড়া পাচ্ছিল না।

“আমাদের শিশুদের শব

ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।”

কবিও শঙ্কিত চিত্ত হয়ে ওঠেন। “এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?” ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রগুলি নিজেদের ক্ষমতার লোভে সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে না। তাদের ভয়-ভীতির কবলে ফেলে চোখ মুখ ঢেকে ভিখারিতে পরিণত করেছে। তারা যেন ইতিহাসের পাতা থেকে বিস্মৃত। কবি কিন্তু সাধারণ মানুষকে আশা দিয়েছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “কিছুই কোথাও যদি নেই । তবু তো কজন আছি বাকি।” অর্থাৎ সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিবেকবান মানবিক মূল্যবোধে দীপ্ত মানুষদের নিয়ে তিনি জীবনের পথে অগ্রসর হতে চান। তাই কবি বললেন,-

“আয় আরো হাতে হাত রেখে

আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”

মানুষকে আশার বাণী শুনিয়ে কবি সমাজসচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন ।

আরও পড়ুন –

জ্ঞানচক্ষু গল্প প্রশ্ন উত্তর

অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2026

বাংলা ব্যাকরণ: সমাস

প্রতিবেদন ও সংলাপ রচনা সাজেশন 2026

রচনা লেখার নিয়ম

Leave a Comment