ভূগোল 2/3/5 মার্ক প্রশ্ন উত্তর। প্রথম অধ্যায়। দশম শ্রেণী। Class 10 Geography Chapter 1 Question Answer। WBBSE
Class 10 Geography Chapter 1 Question Answer
Mark – 2
(1) হিমরেখা কী ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: যে কাল্পনিক রেখার ওপরে সর্বদা বরফ জমে থাকে বা যে রেখার নীচে বরফ গলে জলে পরিণত হয়, তাকে হিমরেখা বলে। বিখ্যাত ভূবিজ্ঞানী এফ জে মঙ্কহাউসের (F J Monkhohouse) মতে, ‘সর্বদা বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের নিম্নতম প্রান্তরেখাকে হিমরেখা বলে’।
বৈশিষ্ট্য: (i) হিমরেখার উচ্চতা বা অবস্থান সর্বদা উয়তার ওপর নির্ভরশীল। (ii) হিমরেখার উচ্চতা নিরক্ষরেখা থেকে মেরুর দিকে ক্রমশ কমতে থাকে। (iii) হিমরেখার উচ্চতা গ্রীষ্মকালে বৃদ্ধি পায় ও শীতকালে হ্রাস পায়।
উদাহরণ: হিমালয় পর্বতের 4500-6000 মিটার উচ্চতায় হিমরেখা দেখা যায় এবং মেরু অঞ্চলে হিমরেখা সমুদ্রতলে অবস্থান করে।
(2) লোয়েস সমভূমি বলতে কী বোঝো ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: বায়ুবাহিত অতি সূক্ষ্ম বালিকণা উৎস অঞ্চল থেকে দূরে কোথাও অবক্ষিপ্ত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।
উৎপত্তি: 0.05 মিলিমিটারের কম ব্যাসযুক্ত বালিকণা সহজেই প্রবল বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে ভাসমান অবস্থায় বাহিত হয়। এই বায়ুর গতি মন্দীভূত হলে বা এই বায়ু কোনো আর্দ্রবায়ু বা বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হলে বায়ুস্থিত বালিকণাগুলি সহজেই অবক্ষিপ্ত হয় এবং লোয়েস সমভূমি গড়ে ওঠে।
(3) মরুখাত (Blow out) কাকে বলে ?
[অথবা],
ধান্দ কী ?
উত্তর –
বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার টন বালুকারাশি মরুভূমির একস্থান থেকে অন্যত্র অপসৃত হলে সেখানে খাতের সৃষ্টি হয়। এইপ্রকার খাত বা অবনত ভূমি মরুখাত বা Blow out নামে পরিচিত। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এগুলি ‘বাফেলো হলো’ নামে পরিচিত। মিশরের কাতারা (সাহারার অন্তর্গত) হল পৃথিবীর বৃহত্তম মরুখাত। এর আয়তন প্রায় 19,500 বর্গকিমি এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 134 মিটার নীচে অবস্থিত। ভারতের রাজস্থানের থর মরুভূমিতে এই গর্তগুলিকে ধান্দ বলা হয়।
(4) এরিটি কাকে বলে ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: হিমবাহের উৎসমুখী ক্ষয়ের ফলে একই পর্বতশৃঙ্গের দুই দিকে দুটি করির সৃষ্টি হলেও তাদের আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকলে মধ্যবর্তী সংকীর্ণ খাড়া শিরা বা তীক্ষ্ণ প্রাচীরের মতো অংশের সৃষ্টি হয়, যা অ্যারেট বা এরিটি নামে পরিচিত।
উদাহরণ: হিমালয় এবং কারাকোরাম পর্বতে অনেক এরিটি দেখা যায়।
(5) গিরিখাত কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর –
সংজ্ঞা: বৃষ্টিবহুল পার্বত্য অঞ্চলে নদী পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি করে। এর ফলে নদীখাত যথেষ্ট গভীর হয়। নদীখাত খুব গভীর ও সংকীর্ণ হতে হতে যখন ইংরেজি অক্ষর V-আকৃতির হয়, তখন তাকে বলা হয় গিরিখাত।
উদাহরণ: দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর এল ক্যানন দ্য কল্কা বিশ্বের গভীরতম (3270 মি) গিরিখাত।
(6) মন্থকূপ কী ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: নদীর উচ্চগতিতে নদী খাতের তলদেশে হাঁড়ির ন্যায় যে গর্তের সৃষ্টি হয়, তাকে মন্থকূপ বলে।
উৎপত্তিঃ নদীর উচ্চগতিতে জলধারার সঙ্গে বাহিত শিলাখন্ডগুলি নদীখাতের তলদেশে ধাক্কা ও পাক খেতে খেতে সামনের দিকে এগিয়ে যায় এবং ঘর্ষনের ফলে নদীখাত ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে জলস্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গর্তগুলি হাঁড়ির ন্যায় আকার ধারণ করে। যা মন্থকূপ নামে পরিচিত।
উদাহরণ: খরকাই নদীতে এরূপ মন্থকূপ পরিলক্ষিত হয়।
(7) নগ্নীভবন কী?
উত্তর –
আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন সম্মিলিতভাবে ভূপৃষ্ঠের ওপরের শিলাস্তরকে অপসারিত করে অন্যস্থানে পরিবাহিত করে। এর ফলে নীচের শিলাস্তর উন্মুক্ত বা উদ্ঘাটন হয় তাই এই প্রক্রিয়াকে ‘নগ্নীভবন’ বলে।
(8) স্বাভাবিক বাঁধ বলতে কী বোঝো ?
উত্তর – নদীর নিম্ন গতিপথে দুই তীর বরাবর নদীবাহিত পলি ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে যে অনেকটা উঁচু বাঁধের মতো ভূমিরূপ গঠন করে তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বা লেভি বলা হয়।
(9) জলবিভাজিকা কাকে বলে ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: একটি নদী অববাহিকা থেকে অপর একটি নদী অববাহিকা যে উচ্চভূমি দ্বারা পৃথকীকৃত হয়, তাকে জলবিভাজিকা বলে। পাহাড়, পর্বত প্রভৃতি উচ্চভূমি জলবিভাজিকারূপে অবস্থান করে।
যেমন- এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকা।
(10) বার্গশ্রুন্ড কী ?
উত্তর – উচ্চ পার্বত্য উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ হওয়ার সময় বরফাবৃত পর্বতের খাড়া ঢাল ও হিমবাহের মধ্যে যে গভীর ও সংকীর্ণ উল্লম্ব ফাটল বা ফাঁক দেখা যায়, তাকে বার্গশ্রুন্ড বলে।
(11) প্লায়া কী ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: মরুভূমির পাহাড় ঘেরা অবনমিত অঞ্চলগুলিতে জল জমে যে লবণাক্ত হ্রদ সৃষ্টি করে, তাকে প্লায়া বলে।
বৈশিষ্ট্য: (১) প্লায়া একটি লবণাক্ত জলের হ্রদ। (২) প্লায়া কর্দমস্তর দ্বারা বেষ্টিত।
উদাহরণঃ (১) দক্ষিণ আমেরিকায় এই হ্রদগুলি ‘স্যালিনা’ নামে পরিলক্ষিত হয়। (২) আরব অঞ্চলে ‘সবঘা’ বা ‘শট্’ নামে পরিচিত।
(12) খরস্রোত বলতে কী বোঝো ?
উত্তর –
নদীর পার্বত্য প্রবাহে যেসব অসংখ্য ছোটো ছোটো জলপ্রপাত গঠিত হয়, তাদের খরস্রোত বলে। নদীর পার্বত্য প্রবাহে প্রায় সর্বত্রই খরস্রোতের সৃষ্টি হয়।
যেমন- আফ্রিকার জাইব নদীর খরস্রোত।
(13) করি বা সার্ক বলতে কী বোঝো ?
উত্তর – উচ্চ পর্বতগাত্রে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত বড়ো হাতলযুক্ত ডেকচেয়ারের মতো যে ভূমিরূপ গঠিত হয়, তাকে স্কটল্যান্ড ‘করি’ এবং ‘ফ্রান্সে’ সার্ক বলা হয়। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে এইরূপ ‘করি’ বা ‘সার্ক’ লক্ষ করা যায়।
(14) মরূদ্যান কী ?
উত্তর – মরু অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে কোনো স্থানের বালুকারাশি বায়ু দ্বারা অপসারিত হলে সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এইভাবে সৃষ্ট কোনো গর্তে ভৌমজলস্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়লে সেখানে উদ্ভিদ ও জনবসতি গড়ে ওঠে। মরুভূমির মাঝে এই নৈসর্গিক স্থানকে মরুদ্যান বলে।
(15) জলপ্রপাত কাকে বলে ?
উত্তর – নদীর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কঠিন ও কোমল শিলা অবস্থান করলে নদী স্রোতের দ্বারা কোমল শিলাকে দ্রুত ক্ষয় করে কিন্তু কঠিন শিলা কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ফলে, কঠিন শিলার ওপর থেকে জল লাফিয়ে কোমল শিলায় পড়ে, একে জলপ্রপাত বলে।
(16) হিমবাহ কী ?
উত্তর – ল্যাটিন শব্দ ‘Glacies’ থেকে ‘Glacier’ শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ ‘Ice’ বা ‘বরফ’। সুনির্দিষ্ট খাত বা উপত্যকা বরাবর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে খুব ধীরে চলমান সুবিশাল বরফের স্তূপকে বলা হয় হিমবাহ। এককথায় হিমবাহ হল বরফের নদী। ভূবিজ্ঞানীর ফ্লিন্ট-এর মতে, হিমবাহ হল এক বিশালাকৃতির বরফের স্তূপ যা প্রধানত তুষার জমে সৃষ্টি হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থান করছে এবং গতিশীল অবস্থায় রয়েছে অথবা একদা গতিশীল ছিল।
(17) পর্যায়ন কাকে বলে ?
[অথবা],
পর্যায়ন বলতে কী বোঝো ?
উত্তর –
সংজ্ঞা : যেসব বহির্জাত প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠে ক্ষয়, বহন, সঞ্চয় কার্যের মাধ্যমে ভূমিভাগ সমতলে পরিণত করে, তাকে পর্যায়ন বলে।
বৈশিষ্ট্য: (১) পর্যায়ন হল অবরোহন ও আরোহন এর সম্মিলিত রূপ।(২) পর্যায়ন শব্দটি প্রথম তুলে ধরেন ভূতত্ত্ববিদ চেম্বারলিন ও স্যালিসবেরি।(৩) ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূমিসমতল হওয়ার প্রক্রিয়া হল পর্যায়ন।
(18) কর্তিত শৈলশিরা কী ?
উত্তর –
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর গতি খুব বেশি হলে নদীর দিকে এগিয়ে থাকা শৈলশিরা বা অভিক্ষিপ্তাংশ (Spur) গুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং নদীর গতিপথ অনেকটা সোজা হয়ে যায়। এই ধরনের ভূমিরূপকে কর্তিত শৈলশিরা বলে।
উদাহরণ: তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীতে দেখা
(19) জলচক্র কাকে বলে ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: জলের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার মাধ্যমে বারিমণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও শিলামণ্ডলের মধ্যে চক্রাকারে আবর্তনকে জলচক্র বলে।
বৈশিষ্ট্য : (১) জলচক্রের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠে জলরাশির ভারসাম্য বজায় থাকে।
(20) ষষ্ঠঘাতের সূত্রটি লেখো।
উত্তর –
সংজ্ঞা: নদীর গতিবেগের সাথে বহন ক্ষমতার আনুপাতিক প্রকাশ হল যষ্ঠঘাতের সূত্র।
সূত্রঃ নদীর জলের গতিবেগ কোন কারণে ২ গুণ বাড়লে নদীর বহন ক্ষমতা বাড়ে ৬৪ গুণ, এটি হল নদীর ষষ্ঠঘাতের সূত্র ।
প্রবক্তা : নদীর যষ্ঠঘাতের সূত্র এর প্রবক্তা হলেন – W. Hopkins (1842 খ্রীঃ)।
(21) সমপ্রায়ভূমি বলতে কি বোঝো ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: আর্দ্র অঞ্চলে জলপ্রবাহ, বৃষ্টির জল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা উচ্চভূমি বা প্রাচীন মালভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উঁচুনীচু ভূমি বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাকে সমপ্রায়ভূমি বলে।
বৈশিষ্ট্য: (১) সমপ্রায়ভূমি সাধারণত আর্দ্র অঞ্চলে ঘটে। (২) জলপ্রবাহ, বৃষ্টির জল ও অন্য প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা সমপ্রায়ভূমি সৃষ্টি হয়। (৩) সমপ্রায়ভূমি উচ্চভূমি বা প্রাচীন মালভূমি ক্ষয় পেয়ে সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: ছোটোনাগপুর মালভূমির কোনো কোনো স্থান সমপ্রায়ভূমি।
(22) ড্রামলিন কী ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: হিমবাহের সঙ্গে বয়ে আসা নুড়ি, কাঁকড়, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে উল্টানো নৌকা বা আধখানা ডিম বা উল্টানো চামচের মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে ড্রামলিন বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য: (১) ঝাঁকে ঝাঁকে বা বহু ড্রামলিন একসঙ্গে অবস্থান করলে একে ডিম ভর্তি ঝুড়ির মতো লাগে। (২) ড্রামলিনের দৈর্ঘ্য ২-৩ কিমি হয় এবং প্রস্থ ৪০০-৬০০ মিটার এবং উচ্চতা ৬-৬০ মিটার। হয়।
উদাহরণঃ (১) উত্তর আইল্যান্ড (২) উত্তর ইংল্যান্ড প্রভৃতি স্থানে ড্রামলিন দেখা যায়।
(23) হিমশৈল কাকে বলে ?
উত্তর –
সংজ্ঞাঃ সমুদ্র জলে ভাসমান বরফের স্তুপকে হিমশৈল বলে।
বৈশিষ্ট্য: (১) হিমশৈল হল ভাসমান বরফের স্তুপ। (২) হিমশৈলের ৮/৯ অংশ জলের নীচে ডুবে থাকে ও ১/৯ অংশ জলের ওপরে ভেসে থাকে।
গুরুত্ব: হিমশৈল মগ্নচড়া সৃষ্টিতে সাহায্য করে, যা বাণিজ্য গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
(24) ইনসেলবার্জ কী ?
উত্তর –
সংজ্ঞাঃ অনেক সময় প্রায় ও সমপ্রায় মরুভূমির মধ্যে সমান উচ্চতা বিশিষ্ট অনেকগুলি টিলাকে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করতে দেখা যায়। এগুলি অত্যন্ত কঠিন পাথরে গঠিত বলে মরুভূমির মধ্যেও ক্ষয় প্রতিরোধ করে দাড়িয়ে থাকে। এগুলিকে ইনসেলবার্জ বলে।
বৈশিষ্ট্য: (১) মরুভূমির মধ্যে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অনুচ্চ টিলা বা পাহাড়গুলিকে ইনসেলবার্জ বলে। (২) বিজ্ঞানী L. C. King এর নামরকণ করেন।
উদাহরণঃ (১) আফ্রিকার কালাহারী মরুভূমিতে এইরূপ ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
(25) মরুকরণ কাকে বলে ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: ধারাবাহিকভাবে মরুভূমির আয়তন বা ক্ষেত্রফল বৃদ্ধি পাওয়াকে মরুভূমি সম্প্রসারণ বা মরুকরণ বলে।
মরুভূমি সম্প্রসারণের কারণঃ (১) ক্ষরা বৃদ্ধি পায় (২) বৃক্ষছেদন ও বনভূমির ধ্বংস (৩) কৃষি সম্প্রসারণ ও জারায়ন (৪)ভূমি ধ্বংস (৫) অতিরিক্ত পশুচারণ।
সমভূমি সম্প্রসারণ রোধের উপায়:(১) বৃক্ষরোপন (২) জলসেচ (৩) পরিবেশ দূষণ কমানো(৪) পশুচারণ রোধ (৫) জন সচেতনতা বৃদ্ধি
(26) বার্খান কী ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: বায়ু যেদিক থেকে প্রবাহিত হয় তার আড়াআড়িভাবে যেসব বালিয়াড়ি গঠিত হয়, তাকে তির্যক বালিয়াড়ি বলা হয়। যেসব বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা আধখানা চাঁদের মতো তাকে বার্খান বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য: (১) বার্খান-এর বায়ুপ্রবাহের দিকটা উত্তল হয় এবং পেছনের দিকটা অবতল আকৃতির হয়।(২) বার্খান-এর দুইপ্রান্তে শিং-এর ন্যায় শিরা দেখা যায়। (৩) বাখান একটি তুর্কি শব্দ যার অর্থ কিরগিজ স্তেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি।(৪) বার্খান-এর উচ্চতা ২-৩ মিটার, প্রস্থ ২০-৩০ মিটার হয়।
(27) হিমশৈল বলতে কী বোঝো ?
উত্তর –
সংজ্ঞা: সমুদ্র জলে ভাসমান বরফের স্তুপকে হিমশৈল বলে।
বৈশিষ্ট্য: (১) হিমশৈল হল ভাসমান বরফের স্তুপ। (২) হিমশৈলের ৮/৯ অংশ জলের নীচে ডুবে থাকে ও ১/৯ অংশ জলের ওপরে ভেসে থাকে।
গুরুত্ব: হিমশৈল মগ্নচড়া সৃষ্টিতে সাহায্য করে। যা বাণিজ্যিক মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
(28) আদর্শ নদী বলতে কী বোঝ ?
উত্তর –
ভূমির ঢাল ও নদীর কার্যের তারতম্য অনুসারে নদীর গতিপথকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়- (i) উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ, (ii) মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ, (iii) নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ। যেসব নদীর এই তিনটি গতিই স্পষ্ট বোঝা যায়, তাকেই আদর্শ নদী বলে। যেমন-ভারতের গঙ্গা নদীকে আদর্শ নদী বলা হয়। গঙ্গার উৎস গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত অংশ হল পার্বত্যগতি, হরিদ্বার থেকে পশ্চিমবঙ্গের ধুলিয়ান পর্যন্ত মধ্যগতি এবং ধুলিয়ান থেকে মোহানা পর্যন্ত নিম্নগতি।
Mark – 3
(1) অবরোহণ ও আরোহণ প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয় | অবরোহণ | আরোহণ |
সংজ্ঞা | ভূপৃষ্ঠের কোনো উঁচু স্থানে প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয়কার্য সংঘটিত হলে স্থানটি নীচু হয়ে যায় বলে, একে অবরোহণ প্রক্রিয়া বলে। | ভূপৃষ্ঠের কোনো নীচু স্থানে প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা সঞ্চয়কার্য সংঘটিত হলে স্থানটি উঁচু হয়ে যায় বলে, একে আরোহণ প্রক্রিয়া বলে। |
উচ্চতা | এই প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায়। | এই প্রক্রিয়ায় ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। |
পদ্ধতি | আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয়, নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ দ্বারা ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে অবরোহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। | নদী, বায়ু, হিমবাহ, ভৌমজল, সমুদ্রতরঙ্গ দ্বারা সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে আরোহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। |
নিয়ন্ত্রক | আবহবিকারের তীব্রতা, প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয় করার ক্ষমতা, শিলার গঠন, প্রকৃতি, পুঞ্জিত ক্ষয়ের পরিমাণ প্রভৃতির ওপর অবরোহণ প্রক্রিয়ার হার নির্ভর করে। | ভূমির ঢাল আরোহণ প্রক্রিয়ার অন্যতম নিয়ন্ত্রক, পলির পরিমাণ পর্যাপ্ত ও জোগান নিয়মিত হতে হবে। |
প্রকৃতি | এটি নেতিবাচক প্রক্রিয়া | এটি ইতিবাচক প্রক্রিয়া |
(2) নদী উপত্যকা ও হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয় | নদী উপত্যকা | হিমবাহ উপত্যকা |
উপত্যকার অবস্থান | তুষারাবৃত অঞ্চল ছাড়া নদী উপত্যকা ভূপৃষ্ঠের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। | হিমবাহ উপত্যকা শুধু সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চল ও শীতল মেরু অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। |
উপত্যকার আকৃতি | পার্বত্য অঞ্চলে যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয়, সেখানে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় হিমবাহ উপত্যকার তলদেশ ও পার্শ্বদেশ প্রায় সমানভাবে ক্ষয় ও মসৃণ হয় এবং এর ফলে উপত্যকার আকৃতি ইংরেজি U অক্ষরের মতো হয়। | শুষ্ক বা অর্ধশুষ্ক অঞ্চলে পার্শ্বক্ষয়ের চেয়ে নিম্নক্ষয়ের মাত্রা বেশি হয় বলে । আকৃতির এবং আর্দ্র বা আর্দ্রপ্রায় অঞ্চলে নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পার্শ্বক্ষয়ও হতে থাকে বলে আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি হয়। |
প্রকৃতি | নদীখাতের ঢাল, শিলাস্তরের গঠন ও নদীতে জলের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নদী উপত্যকার প্রকৃতি। | ভূমির ঢাল, হিমদ্রোণি বা হিমখাতে বরফের পরিমাণ ও শিলাস্তরের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে হিমবাহ উপত্যকার প্রকৃতি। |
(3) বহির্জাত প্রক্রিয়ার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ?
উত্তর – বহির্জাত প্রক্রিয়ার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
(a) শক্তির মূল উৎস: বহির্জাত প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী ভূমিরূপ পরিবর্তনকারী শক্তির মূল উৎস হল সৌরশক্তি।
(b) প্রক্রিয়া: প্রধানত আরোহণ ও অবরোহণ প্রক্রিয়ায় ভূমিভাগের পর্যায়ন বা সমতলীকরণ ঘটে।
(c) অংশগ্রহণকারী শক্তি: বহির্জাত প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী প্রধান শক্তিগুলি হল আবহবিকার, পুঞ্জীক্ষয়, নগ্নীভবন, নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ ও ভৌমজল।
(4) সব নদীতে বদ্বীপ গঠিত হয় না কেন ?
উত্তর – সব নদীতে বদ্বীপ গঠিত হয় না, কারণ – (i) সব নদী দীর্ঘ হয় না, তাদের উপনদীর সংখ্যা কম থাকে ও তাদের মধ্য ও নিম্নপ্রবাহ অনতিদীর্ঘ হয়। (ii) মোহনার কাছে প্রবল সমুদ্রস্রোত থাকলে, সমুদ্র গভীর ও উন্মুক্ত এবং সমুদ্রে জোয়ারভাটার প্রকোপ বেশি হলে বদ্বীপ গড়ে ওঠে না। (iii) এছাড়া যেসব নদীতে বায়ুপ্রবাহ নদীস্রোতের দিকে চালিত হয় ও নদীতে ক্ষয়কার্য কম হয় সেখানে নদীতে পলির অভাব হয়, ফলে মোহনায় পলি সঞ্চয় কম হয় এবং বদ্বীপ গড়ে ওঠে না। যেমন-আমাজন নদীতে বদ্বীপ গড়ে ওঠেনি।
(5) ইয়ার্দাঙ ও জুইগেন-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর –
বিষয় | ইয়ার্দাঙ | জুইগেন |
শিলার অবস্থান | মরু অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের দ্বারা ইয়ারদাং সৃষ্টি হয়। | মরু অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে বায়ুর ক্ষয়কার্যের দ্বারা জিউগেন সৃষ্টি হয়। |
উচ্চতা | এর উচ্চতা সাধারণত 6 মিটার পর্যন্ত হয়। | এর উচ্চতা 3-30 মিটার পর্যন্ত হয়। |
আকৃতি | ইয়ারদাং মোরগের ঝুঁটির মতো দেখতে হয়। | জিউগেন ছোটো ছোটো ব্যাঙের ছাতার মতো দেখতে হয়। |
মস্তকদেশ | এদের মাথাগুলি ক্ষয়ের ফলে তীক্ষ্ণ বা ছুঁচোলো হয়। | এদের মাথাগুলি ক্ষয়ের ফলে চ্যাপটা ও সমতল টেবিলের মতো হয়। |
সৃষ্টির প্রক্রিয়া | বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ইয়ারদাং সৃষ্টি হয়। | মূলত অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় জিউগেন গড়ে ওঠে। |
ঢাল | দুই পাশের ঢাল ভিন্ন প্রকৃতির হয়। | দুই পার্শ্ব সমান ঢালযুক্ত হয়। |
বায়ুপ্রবাহের দিক | শিলার সমান্তরালে বায়ু প্রবাহিত হয়। | কোনো নির্দিষ্ট দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় না। |
উদাহরণ | তুর্কিস্তানের মরুভূমি ও চিলির আটাকামা মরুভূমিতে ইয়ারদাং দেখা যায়। | আমেরিকার সোনেরান মরুভূমি ও অ্যারিজোনাতে জিউগেন দেখা যায়। |
(৬) মরু সম্প্রসারণের কারণ কী ?
উত্তর –
মরু সম্প্রসারণের প্রাথমিক কারণ হল – (i) বালিপূর্ণ বাতাসের আগমন (ii) খরার প্রাদুর্ভাব (iii) বিশ্ব উন্নায়ন।
মনুষ্য সৃষ্টির কারণ – (i) ব্যাপক হারে বৃক্ষচ্ছেদন (ii) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ (iii) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় কৃষিকাজ (iv) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় জলসেচ।
(৭) নদী অববাহিকা ও জলবিভাজিকা-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর –
নদী অববাহিকা | জলবিভাজিকা |
প্রধান নদী তার উপনদী ও শাখানদীসহ উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই বিস্তীর্ণ ভূমিভাগকে প্রধান নদীর অববাহিকা বলে। | একটি নদী অববাহিকা থেকে অপর একটি নদী অববাহিকা যে উচ্চভূমি দ্বারা পৃথকীকৃত হয়, তাকে জলবিভাজিকা বলে। পাহাড়, পর্বত, প্রভৃতি উচ্চভূমি জলবিভাজিকারূপে অবস্থান করে। |
যেমন- আমাজন নদীর অববাহিকা পৃথিবীর বৃহত্তম নদী অববাহিকা। | যেমন- এশিয়া মহাদেশের মধ্যভাগের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল পৃথিবীর বৃহত্তম জলবিভাজিকা |
(৮) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর –
বিষয় | গিরিখাত | ক্যানিয়ন |
উৎপত্তি | নদীর উচ্চগতিতে বৃষ্টিবহুল পার্বত্য অঞ্চলে গিরিখাত সৃষ্টি হয়। | বৃষ্টিহীন শুষ্ক বা মরুপ্রায় অঞ্চলে ক্যানিয়ন সৃষ্টি হয়। |
আকৃতি | গিরিখাত ‘V’ আকৃতির খুব গভীর ও সংকীর্ণ। | ক্যানিয়ন I আকৃতির অত্যন্ত গভীর ও খুব সংকীর্ণ হয়। |
ক্ষয়কাজ | নদীতে পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হয়। | বৃষ্টিপাতের অভাবে নিম্নক্ষয় খুব বেশি হয়, পার্থক্ষয় প্রায় হয় না। |
ভূমির ঢাল | পার্শ্বদেশের ঢাল কম খাড়া হয়। | পার্শ্বদেশের ঢাল খুব খাড়া হয়। |
নদীখাত | নদীখাতে অপেক্ষাকৃত কম সংকীর্ণ হয়। | নদীখাত সুগভীর ও খুবই সংকীর্ণ হয়। |
উপনদীর সংখ্যা | গিরিখাতে দু-পাশ থেকে কিছু উপনদী এসে মেশে। | যেহেতু এটি শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়, তাই কোনো উপনদী এসে মেশে না। |
উদাহরণ | চিনের ইয়াংসি কিয়াং নদীর ইচাং গিরিখাত। | কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। |
(৯) ঝুলন্ত উপত্যকায় কীভাবে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয় ?
উত্তর –
হিমবাহ গলে গেলে উপহিমবাহ উপত্যকা বা ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলধারা প্রবল বেগে প্রধান হিমবাহ উপত্যকায় আছড়ে পড়ে এবং জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। ঝুলন্ত উপত্যকায় এই জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণগুলি হল –
(i) উপহিমবাহ এবং প্রধান হিমবাহের ক্ষয়ক্ষমতার পার্থক্য: উপহিমবাহের তুলনায় প্রধান হিমবাহের ক্ষয়ক্ষমতা অনেক বেশি হওয়ায় প্রধান হিমবাহ উপত্যকাটি উপহিমবাহ উপত্যকার তুলনায় অনেক গভীর হয়।
(ii) খাড়াই ঢাল: প্রধান হিমবাহ উপত্যকাটি অধিক গভীর এবং উপহিমবাহ উপত্যকাটি কম গভীর হওয়ায় উপহিমবাহ উপত্যকাটি খাড়াই ঢালে প্রধান হিমবাহের উপত্যকার সঙ্গে মেশে।
(iii) ঢালের বিচ্যুতি: উভয় উপত্যকার সংযোগস্থলে ঢালের বিচ্যুতি ঘটে বলে উপহিমবাহ সৃষ্ট ঝুলন্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়ে নীচে প্রধান হিমবাহ সৃষ্ট গভীর উপত্যকায় প্রবলবেগে পতিত হয় এবং জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে।
উদাহরণ : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমিতি জলপ্রপাত, ভারতের বদ্রীনাথের কাছে বসুধারা জলপ্রপাত।
(১০) পলল ব্যজনী কিভাবে সৃষ্টি হয় ?
উত্তর –
সংজ্ঞা:
পার্বত্য অঞ্চলের পর নদী যখন সমভূমিতে এসে পড়ে তখন ভূমির ঢাল হঠাৎ অনেকটা কমে গিয়ে নদীর বেগ ও বহন ক্ষমতা দুটোই কমে যায়, ফলে নদী উপত্যকায় নুড়ি, বালি, পলি পর্বতের পাদদেশে শঙ্কুর আকারে সঞ্চিত হয়। একে পলল শম্ভু বলে।
এই পলল শম্ভু যখন হাত পাখার মতো দেখতে হয় বা অর্ধগোলাকার আকৃতি ধারণ করে তখন তাকে পলল ব্যজনী বলে।
উদাহরণ –
(১) কুশি নদীতে পলল শম্ভু দেখা যায়।
(২) উত্তরাখন্ডের গঙ্গা নদীতে এরূপ পলল ব্যজনী পরিলক্ষিত হয়।
(১১) বার্খান ও সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর –
বিষয় | বার্খান | সিফ বালিয়াড়ি |
সংজ্ঞা | মরু অঞ্চলে বায়ুর প্রবাহ পথে আড়াআড়ি বালিয়াড়িকে বার্খান বালিয়াড়ি বলে। | মরু অঞ্চলে বায়ুর প্রবাহ পথে সমান্তরাল বালিয়াড়িকে সিফ বালিয়াড়ি বলে। |
শব্দার্থ | বার্খান শব্দের অর্থ কিরঘিজ স্তেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি। | সিফ কথার অর্থ সোজা বালিয়াড়ি। |
আকৃতি | ইহা অর্ধচন্দ্রাকৃতি হয়। | ইহা শৈলশিরার মতো দেখতে হয়। |
উচ্চতা | বার্খানের উচ্চতা ২-৩ মিটার। | সিফের উচ্চতা ১০০ মিটার। |
গঠন | বার্খানের সম্মুখ উত্তল ও পিছনের দিক অবতল এবং দুই দিকে দুটো শিং থাকে। | শীর্ষভাগ করাতের মতো এবং অগ্রভাগ সূঁচালো হয়। |
সম্পর্ক | বার্খান ভেঙে সিফ বালিয়াড়ি গঠিত হতে পারে। | সিফ বালিয়াড়ি ভেঙে বার্থান গঠিত হয় না। |
(১২) অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়ি ও তির্যক বালিয়াড়ি – এর মধ্যে পার্থক্য লেখো। [ME ’23, ’16]
উত্তর –
বিষয় | অনুদৈর্ঘা বা সিফ বালিয়াড়ি | তির্যক বালিয়াড়ি |
গঠন | বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে। | এগুলি অর্ধচন্দ্রাকৃতির মতো হয়। এদের সম্মুখভাগ উত্তল এবং পেছনের অংশ অবতল হয়। |
আকৃতি | এগুলি সংকীর্ণ শৈলশিরা বা সোজা তলোয়ারের মতো হয়। | বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে তির্যক বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে। |
দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ | এই বালিয়াড়ির দৈর্ঘ্য বেশি এবং প্রস্থ কম। | এই বালিয়াড়ির দৈর্ঘ্য কম এবং প্রস্থ বেশি। |
উচ্চতা | এর উচ্চতা কয়েকশো মিটার হয়। | এর উচ্চতা 10-30 মিটার হয়। |
রূপান্তর | অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি থেকে তির্যক বালিয়াড়ির সৃষ্টি হয় না। | তির্যক বালিয়াড়ির একটি শিং প্রসারিত হয়ে তির্যক বালিয়াড়ি গঠন করে। |
শিং-এর উপস্থিতি | এই বালিয়াড়িতে কোনো প্রকার শিং দেখা যায় না। | এই বালিয়াড়িতে দুই প্রান্তে শিং গড়ে ওঠে। |
উদাহরণ | ভারতের থর মরুভূমিতে সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায়। | কালাহারি মরুভূমিতে তির্যক বালিয়াড়ি দেখা যায়। |
(১৩) ড্রামলিন ও রসেমতানে -এর পার্থক্য লেখো।
উত্তর –
বিষয় | রসেমতানে | ড্রামলিন |
সংজ্ঞা | হিমবাহের প্রবাহপথে কোন কঠিন শিলা খন্ড উচু টিভির আকারে অবস্থান করলে হিমবাহের অবঘর্ষ জনিত ক্ষয়ের ফলে সম্মুখ ভাগ মসৃণ ও বিপরীত ভাগ উৎপাটন প্রক্রিয়ায় অমসৃণ হয়ে যে ভূমিভাগের সৃষ্টি হয় তাকে রসেমতানে বলে। | হিমবাহ বাহিত নুড়ি, কাঁকড়, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে উল্টানো নৌকা বা আধখানা ডিম বা উল্টানো চামচের মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে ড্রামলিন বলে। |
প্রকৃতি | ইহা হিমবাহের ক্ষয়জাত ভূমিরুপ। | ইহা হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ। |
আকৃতি | অসমতল টিভির মতো যার এক দিক মসৃণ ও অপর দিক অমসৃণ। | উল্টানো নৌকা বা আধখানা ডিমের মতো। |
অবস্থান | উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে গঠিত হয়। | পর্বতের পাদদেশে গঠিত হয়। |
অবস্থানের প্রকৃতি | একইভাবে অবস্থান করে। | একসঙ্গে অসংখ্য দেখা যেতে পারে। |
(১৪) বায়ুর ক্ষয়কার্যের পদ্ধতিগুলি কি কি ?
উত্তর – বায়ু প্রধানত তিনটি প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে থাকে। যথা-
(১) অপসারণ বা অবনমন (২) অবঘর্ষ (৩) ঘর্ষণ
(১) অপসারণ বা অবনমন : মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ু প্রবাহের দ্বারা একস্থানের বালি অন্যত্র উড়ে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি করে, তাকে অপসারণ বা অবনমন বলে।
(২) অবঘর্ষঃ মরু অঞ্চলে বায়ুর সঙ্গে বাহিত ছোটো প্রস্তরখন্ড, কোর্টেজ কণা, বালুকা চূর্ণ-এর সঙ্গে ভূ-পৃষ্ট সংলগ্ন প্রস্তরখন্ডের ঘর্ষণে প্রস্তর খন্ড যখন ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তখন তাকে অবঘর্ষ বলে।
(৩) ঘর্ষণ: বায়ুর সঙ্গে বাহিত শিলাখন্ড নুড়ি, কাঁকড় প্রভৃতি যখন নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়ে আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভেঙে যায়, তখন তাকে ঘর্ষণ বলে।
(১৫) মহাদেশীয় হিমবাহ ও উপত্যকা হিমবাহ – এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর –
বিষয় | মহাদেশীয় হিমবাহ | উপত্যকা হিমবাহ |
বিস্তার | সুমেরু ও কুমেরুর সুবিশাল অঞ্চল জুড়ে এই প্রকার হিমবাহ অবস্থান করে। | নিম্ন ও মধ্য অক্ষাংশের উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের উপত্যকায় এই হিমবাহ অবস্থান করে। |
আয়তন | আয়তনে সুবিশাল হয়। | আয়তন তুলনামূলকভাবে কম হয়। |
আকৃতি | মধ্যভাগ উত্তল প্রকৃতির ও প্রান্তদেশ অবতল হয়। | মধ্যভাগ অবতল প্রকৃতির ও প্রান্তদেশ উত্তল আকৃতির হয়। |
গভীরতা | মধ্যভাগের গভীরতা বেশি (সর্বোচ্চ 4,500 মি) ও প্রান্তভাগে কম হয়। তাই এদের দেখতে অনেকটা কচ্ছপের পিঠের মতো হয়। | এদের গভীরতা সাধারণত কম হয় (20-30 মি)। তবে মধ্যভাগের তুলনায় প্রান্তদেশে গভীরতা বেশি হয়। |
গতিবেগ | পার্শ্বচাপের প্রভাবে অগ্রসর হয় বলে ধীরগতিসম্পন্ন হয়। | উচ্চ স্থান থেকে নীচের দিকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নেমে আসে বলে গতিবেগ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। |
প্রবাহের দিক | সাধারণত কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। | পর্বতের ঢাল বরাবর প্রবাহিত হতে থাকে। |
হিমরেখার অবস্থান | হিমরেখা সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছে অবস্থিত হয়। | হিমরেখা অক্ষাংশভেদে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় অবস্থান করে। |
বৈশিষ্ট্য | এই প্রকার হিমবাহের প্রান্তভাগে নুনাটাকস্ ও হিমশৈলের সৃষ্টি হয়। | উপত্যকা হিমবাহের প্রবাহপথে ক্রেভাস ও পর্বতের সঙ্গে হিমবাহের সংযোগস্থলে বার্গস্রুন্ড দেখা যায়। |
উদাহরণ | আন্টার্কটিকা মহাদেশের ল্যামবার্ট পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ। | আলাস্কার হুবার্ড পৃথিবীর বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহ। এ ছাড়া কারাকোরাম পর্বতে অবস্থিত সিয়াচেন ভারতের বৃহত্তম উপত্যকা হিমবাহ। |
Mark – 5
(১) নদীর উচ্চগতিতে ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ।
[অথবা],
পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ।
উত্তর –
নদীর উচ্চগতিতে ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল-
(ক) গিরিখাত ও ক্যানিয়ন : অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ ইংরেজি ‘V’ আকৃতির নদী উপত্যকাকে গিরিখাত বলে। অপরদিকে, ‘Canyon’ শব্দটি স্পেনীয় শব্দ ‘Canon’ থেকে এসেছে যার অর্থ নল। শুষ্ক ও প্রায় শুষ্ক পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদী অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় পার্শ্বক্ষয়ের তুলনায় নিম্নক্ষয় বেশি করে। ফলে উপত্যকা ‘V’ আকৃতির পরিবর্তে ‘।’ আকার ধারণ করে। তখন তাকে ক্যানিয়ন বলে।
উৎপত্তি: নদীর পার্বত্যপ্রবাহে যদি কোনো শিলাস্তর অপেক্ষাকৃত কম কঠিন হয় এবং জলপ্রবাহ যদি খুব বেশি হয়, তাহলে নদী নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাশের দিকে ক্রমশ ক্ষয়সাধন করতে থাকে। এর ফলে নদী উপত্যকা খুব সংকীর্ণ ও গভীর আকার ধারণ করে এবং ‘V’ আকৃতির উপত্যকা বা গিরিখাতে পরিণত হয়। অপরদিকে, শুষ্ক অঞ্চলে নদীর কেবল নিম্নক্ষয়ের ফলে উপত্যকা গভীর হয় এবং ‘I’ আকৃতির উপত্যকা বা ক্যানিয়ন গঠিত হয়।
উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। চিনের ইয়ারলুং সাংপো নদীর সাংপো ক্যানিয়ন (5,300 মিটার) পৃথিবীর গভীরতম ক্যানিয়ন। নেপালের কালিগণ্ডকী নদীর গিরিখাত পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত ।
(খ) জলপ্রপাত : কোনো উঁচু অংশ থেকে খাড়া ঢাল বরাবর নীচে পতিত জলপ্রবাহকে জলপ্রপাত বলে ।
উৎপত্তি: (i) নদীর গতিপথে পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলা অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। এই খাড়া ঢালে জলপ্রপাতের উৎপত্তি ঘটে। (ii) এছাড়া চ্যুতির ফলে সৃষ্ট খাড়া ঢাল বরাবর জলপ্রপাতের উৎপত্তি ঘটে। (iii) পর্বত বা মালভূমি যেখানে সমভূমিতে মেশে সেখানে ঢালের তারতম্য দেখা যায়। এই অংশেও নদীতে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।ঝুলন্ত উপত্যকায় হিমবাহ গলে নদী প্রবাহিত হলে জলপ্রপাত গড়ে ওঠে ।
উদাহরণ : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নায়াগ্রা জলপ্রপাত এবং ভারতের ধুঁয়াধর জলপ্রপাত ।
(গ) মন্থকূপ : অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় নদীখাতে সৃষ্ট ছোটো ছোটো প্রায় গোলাকার গর্তগুলিকে মন্থকূপ বলে ।
উৎপত্তি : পার্বত্য অঞ্চলে অসমান নদীপথে জল পাক খেতে খেতে এগিয়ে চলে। নদীর জলের সঙ্গে বাহিত নুড়ি, পাথর, শিলাখন্ডগুলিও পাক খেতে থাকে ও নদী তলদেশে আঘাত করে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় প্রায় গোলাকার গর্তের সৃষ্টি করে, একে মন্থকূপ বলে।
উদাহরণ: জব্বলপুরের পূর্বদিকে গৌর নদীর তলদেশে অনেক মন্থকূপ দেখা যায়।
(ঘ) প্রপাতকূপ : জলপ্রপাতের পাদদেশে জলস্রোতের সঙ্গে পতিত শিলাখন্ডের আঘাতে প্রায় গোলাকার গহ্বরের সৃষ্টি হলে তাকে প্রপাতকূপ বলে।
উৎপত্তি: অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় জলপ্রপাতের পাদদেশে ক্ষয় ক্রমশ বাড়তে থাকে ও মন্থকূপগুলি আকার ও আয়তনে ক্রমশ বেড়ে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে গর্তের আকার ক্রমশ বৃদ্ধি করে ও প্রপাতকূপের সৃষ্টি করে। শুষ্ক ঋতুতে নদীতে জলের পরিমাণ হ্রাস পেলে দৃশ্যমান হয়।
উদাহরণ: সুবর্ণরেখা নদীর হজ্ব জলপ্রপাতে প্রপাতকূপ দেখা যায়। চেরাপুঞ্জির কাছে নোহকালিকাই জলপ্রপাতের পাদদেশে বিশালাকৃতির প্রপাতকূপ দেখা যায়।
(ঘ) আবদ্ধ শৈলশিরা : অনেক সময় পার্বত্য শৈলশিরাগুলিকে দূর থেকে আবদ্ধ বা শৃঙ্খলিত রয়েছে বলে মনে হয়, একে আবদ্ধ শৈলশিরা বলে।
সৃষ্টি: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে শৈলশিরা দ্বারা কোনো নদী বাধা পেলে নদীটি বাধা কাটিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হলে আবদ্ধ শৈলশিরা গঠিত হয়।
উদাহরণ: গঙ্গার ঊর্ধ্বগতিতে আবদ্ধ শৈলশিরা পরিলক্ষিত হয়।
(২) নদীর নিম্নগতিতে সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ।
উত্তর –
নদীর নিম্নগতিতে সঞ্চয় বা অবক্ষেপণ কার্যের প্রাধান্যই সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। নিম্নগতিতে নদীর অবক্ষেপণ কার্যে গঠিত প্রধান ভূমিরূপগুলি হল –
(ক) প্লাবনভূমি : নদীর নিম্নগতিতে প্লাবনের ফলে নদীর দুই কূলে পলি, বালি, নুড়ি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, তাকে প্লাবনভূমি বলে।
সৃষ্টি: নিম্নগতিতে নদীর বোঝা নদীবক্ষে ক্রমশ সঞ্চিত হয়ে নদীখাতের গভীরতাকে দ্রুত কমিয়ে দেয়। এই অবস্থায় বর্ষার অতিরিক্ত জল নদীতে এসে পড়লে নদীতে প্লাবন সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে জল বাষ্পীভূত হওয়ার ফলে নদী দ্বারা বাহিত পলি, বালি, নুড়ি নদীখাতের দুই পার্শ্বে থিতিয়ে পড়ে। ক্রমাগত নদী উপত্যকার দুইপাশে পলল সঞ্চিত হয়ে সমভূমি গঠন করে, যা প্লাবন সমভূমি নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য: (i) প্লাবনভূমি প্রায় সমতল প্রকৃতির হয়। (ii) এটির দৈর্ঘ্য মোটামুটি 50-60 কিমি এবং প্রস্থ কয়েকশো মিটার থেকে কয়েক কিমি হয়। (iii) প্লাবনভূমি যথেষ্ট উর্বর প্রকৃতির হয়।
উদাহরণ: বিহারের রাজমহল অঞ্চলে গঙ্গার গতিপথের দুপাশে প্লাবনভূমি দেখা যায়। এছাড়া আমাজন, ইয়াংসি কিয়াং প্রভৃতি নদীর তীরেও এই প্লাবনভূমি গড়ে উঠেছে।
(খ) স্বাভাবিক বাঁধ বা লেভি :
নিম্নগতিতে নদীর উভয় তীরে পলি, কাদা, বালি সঞ্চিত হয়ে যে বাঁধ সৃষ্টি হয়, তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বলে ।
উৎপত্তি: অগভীর নদী উপত্যকা বর্ষার অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না। ফলে, নদীতে বন্যা দেখা দেয়। কাদা মিশ্রিত বন্যার জল দুকুল প্লাবিত করে পলির অধঃক্ষেপণ ঘটিয়ে প্লাবন সমভূমির সৃষ্টি করে। নদীর দুই তীরে মোটা দানার মতো নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি পদার্থ ক্রমে ক্রমে জমা হয়ে নদী তীর বাঁধের ন্যায় উঁচু হয়ে স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক বাঁধ সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে আরো নিম্নপ্রবাহে নদী গতিপথ পরিবর্তন করলে স্বাভাবিক বাঁধগুলি দেখে পূর্ববর্তী নদীখাত সহজেই চিহ্নিত করা যায়।
বৈশিষ্ট্য: (i) স্বাভাবিক বাঁধ কোনো নদীপথের সমান্তরালে গড়ে ওঠে। (ii) প্লাবনভূমির তল থেকে স্বাভাবিক বাঁধের উচ্চতা 3-4 মিটার হয় । (iii) স্বাভাবিক বাঁধ নিম্নগতিতে নদীর বন্যা প্রতিরোধ করে।
উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও মুরশিদাবাদে এরূপ অনেক স্বাভাবিক বাঁধ গড়ে উঠেছে। উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি নদীর স্বাভাবিক বাঁধ পৃথিবীর দীর্ঘতম স্বাভাবিক বাঁধ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় 611 কিমি ।
(গ) বদ্বীপ : নদীর মোহানা সংলগ্ন অংশে নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে গ্রিক অক্ষর ∆ (ডেল্টার) ন্যায় ভূমিরূপ সৃষ্টি হলে তাকে বদ্বীপ বলে। A N Strahler-এর মতে, “যখন একটি নদী কোনো স্থির জলাশয়ে পতিত হয়ে সেখানে নুড়ি, পলি, বালি, কাদার সঞ্চয় করে, তাকে বদ্বীপ বলা হয়।
সৃষ্টি: (i) নদীর মোহানায় সুক্ষ্ম পলির সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়। (ii) নদীগর্ভ অধিক পলি সঞ্চয় দ্বারা ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে ওঠে। ফলে, নদীর গভীরতা কমে যায়। (iii) ভূমি ঢালের অভাবে নদীতে স্রোত না থাকায় সামান্য বাধা পেলেই নদী শাখাপ্রশাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়। (iv) নদীর দুই শাখার মধ্যবর্তী অংশে পলি সঞ্চয় ঘটে। (v) নদীর সঙ্গেঙ্গ সমুদ্রতরঙ্গ বাহিত পলিরও সঞ্চয় ঘটে। ফলে, নদী ও সমুদ্র উভয়ের পলির সমন্বয় হয়। (vi) এরপর মাত্রাহীন ‘ব’-এর মতো বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টার (△) মতো আকৃতির পরিণত বদ্বীপের উৎপত্তি ঘটে।
নামকরণ: নীলনদের মোহানায় ত্রিকোণাকার ভূমি দেখে ঐতিহাসিক হেরোডোটাস গ্রিক অক্ষর ডেল্টার (△) সঙ্গে তুলনা করে নাম দেন ‘ডেল্টা’।
শ্রেণিবিভাগ: বদ্বীপ বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন- ত্রিকোণাকার বদ্বীপ, ধনুকাকৃতি বদ্বীপ, পাখির পায়ের আকৃতিবিশিষ্ট বদ্বীপ, হ্রদ বদ্বীপ, সমুদ্র বদ্বীপ প্রভৃতি।
উদাহরণ: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের মিলিত বদ্বীপ পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম বদ্বীপ। এছাড়া হুগলি নদীর মোহানায় সাগরদ্বীপ, হাড়িয়াভাঙা নদীর ও মোহানার অনতিদূরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন দ্বীপ পূর্বাশা।
(ঘ) খাঁড়ি : নদীর বদ্বীপ সংলগ্ন অংশে প্রশস্ত নদী মোহানাকে খাঁড়ি বলা হয়।
সৃষ্টি: নদীর মোহানা অঞ্চলে জলস্রোতের বেগ যদি বেশি থাকে অথবা, সমুদ্রের জোয়ার প্রবল হলে সেখানে পলি সঞ্চিত হতে পারে না। ফলে, নদীর মোহানাতে কোনো বদ্বীপ গঠিত হতে পারে না এবং জোয়ারের জল প্রবলবেগে নদীর মধ্যে প্রবেশ করে নদীখাতকে অধিক চওড়া ও বিস্তৃত করে খাঁড়ি সৃষ্টি করে।
উদাহরণ: টেমস নদীর মোহানা, ওৰ নদীর মোহানা (পৃথিবীর দীর্ঘতম খাঁড়ি) ইত্যাদি ।
(৩) বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ আলোচনা করো ।
[অথবা],
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ আলোচনা করো ।
উত্তর –
বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান তিনটি ভূমিরূপ হল –
(ক) গৌর:
সংজ্ঞা : মরু অঞ্চলে উঁচু বড়ো শিলাখন্ডের নীচে কোমল শিলাস্তর অবস্থান করলে, নীচের কোমল শিলাস্তর অবঘর্ষ পদ্ধতিতে দ্রুত ক্ষয় পেয়ে যায়। ফলে উপরের কঠিন শিলা কম ক্ষয় পেয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো চওড়া ও চ্যাপটা হয়ে অবস্থান করে। একে গৌর বলে।
উদাহরণ – আফ্রিকায় সাহারা মরুভূমিতে এরূপ গৌর দেখা যায়। এরা মরুভূমির মাঝে টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে।
(খ) জিউগেন:
সংজ্ঞা :
মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলার স্তর ওপর নীচে অবস্থান করলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের আঘাতে নীচের কোমল শিলা বেশী এবং উপরের কঠিন শিলা কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর ফলে শিলার উপরি অংশ চওড়া ও চ্যাপটা এবং নীচের অংশ সরু হয়ে প্রায় সমতল চূড়া বিশিষ্ট ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, যাকে জিউগেন বলে।
বৈশিষ্ট্য-(i) গড় উচ্চতা ৩০-৪০ মিটার হয়ে থাকে। (ii) এদের উপবিভাগ বা মস্তকদেশ চ্যাপ্টা ক্ষয় কাজ বেশি করে ও সমতল হয়। (iii) এদের দেখতে ছোট ছাতার মতো।
উদাহরণ- কালাহারি, অস্ট্রেলিয়া মরুভূমিতে এরূপ জিউগেন পরিলক্ষীত হয়।
(গ) ইয়ারদাঙ:
সংজ্ঞা :
মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের পথে কঠিন শিলা ও কোমল শিলা পাশাপাশি অবস্থান করলে, দুটি কঠিন শিলার মধ্যবর্তী কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয় পেয়ে সুড়ঙ্গের মতো আকার ধারণ করে, আর কঠিন শিলাস্তর গুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে টিলার আকারে দাড়িয়ে থাকে। যাকে ইয়ারদাঙ বলে। ভূমিরূপ বিজ্ঞানী ব্লাকওয়েন্ডার ইয়ারদাঙ এর নামকরণ করেন।
বৈশিষ্ট্য : (১) ইয়ারদাঙের উচ্চতা ৫-৭ মিটার হয় এবং বিস্তার ৫০-৪০০ মিটার হয়। (২) এরা প্রায় সমতলভাবে অবস্থান করে।
উদাহরণ- সাহারা, গোবি মরুভূমিতে এরুপ ভূমিরূপ দেখা যায় ।
(ঘ) ইনসেলবার্জ:
সংজ্ঞা :
অনেক সময় প্রায় সমপ্রায় মরুভূমির মধ্যে সমান উচ্চতা বিশিষ্ট অনেকগুলি টিলাকে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করতে দেখা যায়। এগুলি অত্যন্ত কঠিন পাথরে গঠিত বলে, মরুভূমির মধ্যেও ক্ষয় প্রতিরোধ করে দাড়িয়ে থাকে। এগুলিকে ইনসেলবার্জ বলে।
বৈশিষ্ট্য – (১) মরুভূমির মধ্যে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত অনুচ্চ টিলা বা পাহাড়গুলিকে ইনসেলবার্জ বলে। (২) ভূবিজ্ঞানী পাসার্জ নাম দেন ইনসেলবার্জ।
উদাহরণ- আফ্রিকা ও কালাহারীর মরুভূমিতে এরূপ ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
(ঘ) পেডিমেন্ট:
সংজ্ঞা :
মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে কোন উচ্চভূমি থাকলে দীর্ঘদিন ধরে বায়ু ও জল ধারার মিলিত কার্যে তা ধীরে ধীরে মৃদু ঢালযুক্ত প্রায় সমতল ভূমিতে পরিণত হয়, এরূপ সমপ্রায় ভূমিকে বলা হয় পেডিমেন্ট।
বৈশিষ্ট্য : (১) পেডিমেন্ট হলো বায়ুর ক্ষয়কার্যের দ্বারা গঠিত সমপ্রায় ভূমি। (২) এই পেডিমেন্ট-এর মধ্যে অনুচ্চ টিলা দেখা যায়। যাকে ইনসেলবার্জ বলে।
উদাহরণ- আফ্রিকা ও কালাহারী মরুভূমিতে এরূপ ভূমিরূপ পরিলক্ষিত হয়।
(৪) বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত প্রধান ভূমিরূপ গুলির বর্ণনা দাও।
[অথবা],
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত যেকোন দুটি ভূমিরূপের সচিত্র বর্ণনা দাও।
উত্তর –
বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে প্রধানত দুই ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয়। যথা- (ক) বালিয়াড়ি (খ) লোয়েস সমভূমি।
(ক) বালিয়াড়ি
সংজ্ঞা :
বায়ু প্রবাহ পথে কোন স্থানে বাধা পেলে যে উঁচু ও ঢিবির আকারে বালির স্তুপ গঠন করে তাকে বালিয়াড়ি বলে।
শ্রেণী বিভাগ – বায়ুর প্রবাহ পথের দিক শিং অনুযায়ী বালিয়াড়ি প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
(১) তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান – বায়ু যেদিক থেকে প্রবাহিত হয় তার আড়াআড়িভাবে যেসব বালিয়াড়ি গঠিত হয় তাকে তির্যক বালিয়াড়ি বলে। যেসব তির্যক বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা আধখানা চাঁদের মতো তাদের বার্খান বলে। বার্থানের বায়ুমুখী উত্তল ঢাল শিং দীর্ঘ ও মৃদু (10°-15°) এবং বিপরীত দিকের অবতল ঢাল অপেক্ষাকৃত খাড়া (35°)।
বৈশিষ্ট্য- (ক) বার্থানের বায়ুপ্রবাহের দিকটা উত্তল এবং পিছনের দিকটা অবতল আকৃতির হয়। (খ) বার্থানের দুই প্রান্তে সিং-এর ন্যায় শিরা দেখা যায়। (গ) বার্খান একটি তুর্কি শব্দ। যার অর্থ খিরগিজ স্তেপ অঞ্চলের বালিয়াড়ি। (ঘ) বার্খানের উচ্চতা ২-৩ মিটার এবং প্রস্থ ২০-৩০ মিটার।
উদাহরণ – সাহারা মরুভূমিতে অনেক বার্খান দেখা যায়।
(২) অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়ি – বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে যেসব বালিয়াড়ি গঠিত হয়, তাদের অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে। যেসব অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি খুব লম্বা ও সরু হয়, তাদের সিফ বালিয়াড়ি বলে।
বৈশিষ্ট্য- (ক) সিফ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ সোজা তরবারি (খ) ইহার দৈর্ঘ্য কয়েক কিমি থেকে কয়েকশো কিমি হয় এবং উচ্চতা ১০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। (গ) দুটি সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশকে করিডর বলে।
উদাহরণ- সাহারা, কালাহারি, থর মরুভূমিতে এরূপ বালিয়াড়ি দেখা যায়।
(খ) লোয়েস সমভূমিঃ
বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে অতি সুক্ষ বালুকণা বহু দূরে পরিবাহিত ও সঞ্চিত হয়ে যে ভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে।
বৈশিষ্ট্য- (ক) লোয়েস একটি জার্মান শব্দ, যার অর্থ স্থান চ্যুত বস্তু। (খ) এর গভীরতা ৩০-৯০ মিটার।
উদাহরণ – গোবী মরুভূমির বালি হোয়াং-হো নদীর উপত্যকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস, সমভূমি গঠন করেছে।
(৫) হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।
উত্তর – হিমবাহের কার্য প্রধানত তিন প্রকার। যথা- (i) ক্ষয়সাধন (ii) বহন (iii) সঞ্চয়। হিমবাহের গতি, বরফের পরুত্ব ও শিলার প্রকৃতির ওপর হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ক্ষমতা নির্ভর করে। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল-
(ক) সার্ক বা করি :
সংজ্ঞা: পার্বত্য হিমবাহের উৎসক্ষেত্রে ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট Amphitheatre বা আরামকেদারার ন্যায় ভূমিরূপকে ফরাসি ভাষায় সার্ক ও ইংরেজিতে কবি, জার্মানিতে কাব, ওয়েলেসের ভাষায় কুম ও নরওয়েতে বন ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় বটন বলা হয়। হিমবাহ বিজ্ঞানী শারপেঁতিয়া 1823 সালে প্রথম ‘সার্ক’ শব্দটি ব্যবহার করেন। হিমবাহ পশ্চাদপসারণ করলে এই ভূমিরূপটি দেখা যায়।
গঠন: এর তিনটি অংশ তিনভাবে গঠিত হয়। যথা- (i) উৎপাটন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়ের দ্বারা সৃষ্ট হয় পেছনের খাড়া মস্তক প্রাচীর, এগুলি 750-800 মিটার উচ্চ হয়। (ii) অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট তলদেশের গভীর বেসিন এবং (iii) কম ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট সম্মুখের চৌকাঠের ন্যায় উঁচু অংশ হল করিওষ্ঠ । বরফমুক্ত করিতে জল জমলে হ্রদের সৃষ্টি হয়। এই হ্রদকে করিহ্রদ বা টার্ন বলে। হিমালয় পর্বতের হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে এরকম বহু হ্রদ দেখা যায়।
উদাহরণ: অ্যান্টার্কটিকার ওয়ালকট নামক সার্কটি পৃথিবীর গভীরতম (3000 মিটার) সার্ক।
(খ) হিমশিরা বা এরিটি :
সংজ্ঞা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে পাশাপাশি দুটি সার্ক সৃষ্টি হলে তাদের মাঝের বিভাজিকাটিও ক্ষয়প্রাপ্ত ও সংকীর্ণ হয়ে শৈলশিরার আকারে অবস্থান করে। এই শৈলশিরাকে হিমশিরা বা এরিটি বলে।
বৈশিষ্ট্য: (i) এগুলি ছুরির ফলার ন্যায় তীক্ষ্ণ বা করাতের দাঁতের ন্যায় খাঁজকাটা হয়। (ii) এরিটির কোনো অংশ ভেঙে গেলে এক সার্ক থেকে অন্য সার্কে যাওয়ার পথকে গিরিপথ (Pass) বলা হয়।
উদাহরণ: আল্পস পার্বত্য অঞ্চলে এরূপ বহু এরিটি দেখা যায়।
(গ) পিরামিড চূড়া :
সংজ্ঞা: কোনো শৃঙ্গের চারদিকেই সার্ক ও এরিটি থাকলে সেই শৃঙ্গকে পিরামিড চূড়া বলে। সুইস আল্পসে এরূপ শৃঙ্গকে হর্ণ বলে।
উদাহরণ: ম্যাটারহর্ন ও ভিস হর্ন । এ ছাড়াও হিমালয়ের শিবলিঙ্গ ও নীলকণ্ঠ । হল দুটি পিরামিড চূড়ার উদাহরণ।
(ঘ) ‘U’ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী :
সংজ্ঞা: হিমবাহ সৃষ্ট উপত্যকাকে হিমদ্রোণী বলে।
গঠন: যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয় সেই উপত্যকাটি হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা অত্যন্ত প্রশস্ত, মোটামুটি মসৃণ তলদেশ ও পার্শ্বদেশ খাড়া ঢালবিশিষ্ট উপত্যকায় পরিণত হয়। এই হিমদ্রোণী দেখতে ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো তাই একে ‘U’ আকৃতির উপত্যকাও বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য: (i) অনেক সময় এই রকম গভীর উপত্যকায় হিমবাহ গলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়। যেমন-হিমালয়ের রূপকুণ্ড হ্রদ। (ii) অনেক সময় হিমদ্রোণীতে হিমসোপান বা সিঁড়ির মতো ধাপ দেখা যায়।
উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমিতি উপত্যকা।
(ঙ) ঝুলন্ত উপত্যকা :
সংজ্ঞা: প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপরে উপহিমবাহ উপত্যকাগুলির অবস্থানকে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।
গঠন: উপনদী যেমন মূল নদীতে এসে মেশে তেমনি পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সময় ছোটো ছোটো কয়েকটি উপহিমবাহ বিভিন্ন দিক থেকে এসে প্রধান হিমবাহের সঙ্গে মিলিত হয়। ছোটো বড়ো সব হিমবাহই ক্ষয়কার্যের দ্বারা পৃথক পৃথক উপত্যকা বা হিমদ্রোণী গঠন করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রধান হিমবাহে বরফের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় উপত্যকাটি উপহিমবাহ উপত্যকাগুলির থেকে বেশি গভীর ও বড়ো হয়ে থাকে। এই কারণে হিমবাহ সরে গেলে মনে হয় উপহিমবাহ উপতাকাগুলি প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এরূপ ভূমিরূপ ঝুলন্ত উপত্যকা নামে পরিচিত।
উদাহরণ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের নরপর্বত থেকে নীচের দিকে কুবের নামে ঝুলন্ত উপত্যকা দেখা যায়।
(চ) রসে মতানে :
সংজ্ঞা: হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা সৃষ্ট একদিক মসৃণ ও ভূমিরূপকে রসে মতানে বলে। ভূবিজ্ঞানী সসার 1804 খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ‘রসে মতানে’ শব্দটি ব্যবহার করেন।
গঠন: হিমবাহের প্রবাহ পথে কোনো কঠিন শিলা উঁচু ঢিবির আকারে অবস্থান করলে হিমবাহের অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে ঢিবির প্রতিবাত ঢাল অর্থাৎ, হিমবাহ প্রবাহের দিকটি মসৃণ, চকচকে ও আঁচড়যুক্ত হয়। কিন্তু অনুবাত ঢাল অর্থাৎ, বিপরীত দিকটি উৎপাটন ক্ষয় প্রক্রিয়ায় অসমতল, ভগ্ন ও খাঁজকাটা হয়। এই প্রকার ভূমিরূপ রসে মতানে নামে পরিচিত।
বৈশিষ্ট্য: (i) রসে মতানে একটিমাত্র শিলায় গঠিত হয়। (ii) এর উচ্চতা বেশি হলেও এর বিস্তৃতি ও দৈর্ঘ্য কম।(iii)এই ভূমিরূপ থেকে হিমবাহের গতিপথের ধারণা পাওয়া যায়। (iv) এর মসৃণ মৃদু ঢালকে ‘স্টস’ এবং অমসৃণ খাড়া ঢালকে ‘লি’ বলা হয়। (v) স্কটল্যান্ডীয় ভাষায় ‘রসে মতানে’ কথার অর্থ হল ‘ভেড়ার মাথা’
উদাহরণ: মধ্য হিমালয় অঞ্চলে রসে মতানে দেখা যায়, ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লাম্বাটডোম’ একটি রসে মতানে। এ ছাড়াও কাশ্মীর উপত্যকায় ঝিলামের উপনদী লিডার নদীর উপত্যকায় রসে মতানে দেখা যায়।
(৬) হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করো ।
উত্তর – হিমবাহের ক্ষয়জাত পদার্থগুলি (A) উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এবং (B) পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ গঠন করে –
(A) উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ:
গ্রাবরেখা বা মরেন: উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়জাত পদার্থগুলি হিমবাহের সঙ্গে বাহিত হয়ে উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয়। এরূপ সঞ্চয়কে গ্রাবরেখা বলে।
অর্থ: ‘মোরেন’ (গ্রাবরেখা) একটি প্রাচীন ফরাসি শব্দ, যার অর্থ মাটি ও প্রস্তর দ্বারা গঠিত তীর ।
শ্রেণিবিভাগ: গ্রাবরেখাগুলিকে সাধারণত দু-ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
(ক) অবস্থান অনুসারে প্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ –
(i) প্রান্ত গ্রাবরেখা : হিমবাহের সামনে বা শেষপ্রান্তে সন্বিত গ্রাবরেখা। (ii) পার্শ্ব প্রাবরেখা : হিমবাহের উভয়পার্শ্বে সজ্জিত গ্রাবরেখা। (iii) ভূমি গ্রাবরেখা : হিমবাহের নীচে উপত্যকার ভূমিভাগে সঞ্চিত গ্রাবরেখা। (iv) মধ্য প্রাবরেখা : পাশাপাশি দুটি হিমবাহের মধ্যবর্তী স্থানে সঞ্চিত গ্রাবরেখা। (v) হিমাকদ গ্রাবরেখা : হিমবাহের ফাটলের মধ্যে সঞ্চিত গ্রাবরেখা। (vi) হিমতল গ্রাবরেখা : পর্বতগাত্র ও হিমবাহের ফাটলের মধ্য দিয়ে প্রস্তরখণ্ড হিমবাহের তলায় পৌঁছলে, তাকে হিমতল গ্রাবরেখা বলে।
(খ) আকৃতি ও প্রকৃতি অনুসারে প্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ –
(i) বলয়ধর্মী প্রাবরেখা : হিমবাহের প্রান্তভাগে বলয়ের আকারে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা বলে। (ii) অবিন্যস্ত প্রাবরেখা : হিমবাহের প্রান্তভাগে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে সঞ্চিত গ্রাবরেখাকে অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা বলে। (iii) রোজেন গ্রাবরেখা : গ্রাবরেখাগুলি একে অপরের ওপর সম্মিত হলে তাদের রোজেন গ্রাবরেখা বলে। (iv) ওরায়িত সামুদ্রিক প্রাবরেখা : উপকূল অঞ্চলে হিমবাহ প্রসারিত হলে সমুদ্রের তলদেশে স্তরে স্তরে গ্রাবরেখা সঞ্চিত হয়। এদের স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা বলে।
উদাহরণ: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচেন ও লাচুং অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়।
(B) পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয়আত ভূমিরূপ:
(ক) ড্রামলিন : Gaelic drumlin শব্দ থেকে Drumlin শব্দটি এসেছে যার মোচারে আক্ষরিক অর্থ ‘ডিবি’ (Mound)। হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে বিভিন্ন আকৃতির ক্ষয়জাত পদার্থগুলি সঞ্চিত হয়ে উলটানো নৌকা বা চামচের আকৃতির ঢিবি গড়ে ওঠে। একে ড্রামলিন বলে।
শ্রেণিবিভাগ – ড্রামলিন প্রধানত দু-প্রকার। যথা-
(i) গ্রাবসঞ্চিত ড্রামলিন : এগুলি অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পদার্থ (গ্রাব) দ্বারা গঠিত ড্রামলিন। (ii) শিলা ড্রামলিন : এই ড্রামলিনগুলির সম্মুখভাগে শিলা সঞ্চিত হয় এবং পিছনের দিকে গ্রাব সঞ্চিত হয়।
বৈশিষ্ট্য: (i) ড্রামলিনগুলির অক্ষ (Axis) হিমবাহের প্রবাহের দিকে সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। (ii) ড্রামলিনের হিমবাহ প্রবাহের দিকের অংশটি অমসৃণ ও বিপরীত দিকের অংশটি মসৃণ হয়। (iii) ড্রামলিনগুলি 1-2 কিমি দীর্ঘ ও 400-600 মিটার প্রশস্ত হয়। (iv) ড্রামলিনের উচ্চতা সাধারণত 15-30 মিটার হয়ে থাকে। (v) ড্রামলিন সর্বদা ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায়। তাই ড্রামলিন ভরতি অঞ্চলকে ‘ঝুড়ি ভরতি ডিমের ন্যায় ভূপ্রকৃতি’ (Basket of Egg Topography) বলে। (vi) বহু ড্রামলিন একত্রে থাকলে তার মধ্যবর্তী অংশে জল জমে জলাভূমি সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডে প্রচুর ড্রামলিন দেখা যায় এবং কুমায়ুন হিমালয়ের পিন্ডারী হিমবাহে সঞ্চয়কার্যের ফলে এই প্রকার ভূমিরূপ গড়ে উঠতে দেখা যায়। এছাড়াও উত্তর আমেরিকার উইসকনসিন ও মধ্য নিউইয়র্ক প্রদেশে ড্রামলিন দেখা যায়।
(খ) আগামুক : হিমবাহ দ্বারা বাহিত বিভিন্ন আকৃতির শিলাখন্ড অনেকসময় হিমবাহের পাদদেশে এমন স্থানে এসে সঞ্চিত হয় যেখানে, ওই ধরনের শিলা দেখা যায় না অর্থাৎ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এই শিলাখণ্ড যেন ভিনদেশি। এরূপ শিলাখণ্ডকে আগামুক বা (ল্যাটিন শব্দ Erraticus Wandering) ভ্রমিতশিলা বলে।
বৈশিষ্ট্য: (১) আগামুকের শিলাধর্মের সঙ্গে স্থানীয় শিলাধর্মের কোনো মিল থাকে না। (ii) আগামুকগুলি সাধারণত কঠিন শিলায় গঠিত হয়।
উদাহরণ: কাশ্মীরের পহেলগাঁও অঞ্চলে, কানাডার অ্যালবার্ট রাজ্যে আগামুক দেখা যায়।
(৭) বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠার কার্যকারণ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর – মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে হঠাৎ অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে সাময়িক সময়ের জন্য অস্থায়ী নালা সৃষ্টি হয়ে যায়। বায়ু ও জলধারার নির্মিত কার্যে ভূমিরূপ নানা পরিবর্তন হয়।
(ক) পেডিমেন্ট : পেডিমেন্ট শব্দের অর্থ ‘পাহাড়ের দেশ’ (Pedi = পাদদেশ; Mont = পর্বত)।
উৎপত্তি: বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে মরুভূমির পর্বতের পাদদেশে এই পেডিমেন্টের উৎপত্তি হয়। মরুমধ্যস্থিত পর্বত পাদদেশে বায়ুবাহিত ও জলধারার মিলিত ক্ষয় ও সঞ্চয় ক্রিয়ায় গড়ে ওঠা ঊর্ধ্বাংশ ঢালু ও নিম্নাংশ প্রায় সমতল আকৃতির বিশিষ্ট ভূমিরূপকে পেডিমেন্ট বলে। পেডিমেন্ট শব্দটি ব্যবহার করেন জে কে গিলবার্ট।
বৈশিষ্ট্য: (i) এর ঢাল ৬০-৭০ মতো হয়। (ii) এর আকৃতি অবতল প্রকৃতির। (iii) পাদদেশে নুড়ি বালি জমে সাময়িক জলধারার সৃষ্টি হয়।
শ্রেণিবিভাগ: পেডিমেন্ট তিনপ্রকার-
(i) আবৃত্ত পেডিমেন্ট: পাতলা ঝুড়ির আবরণে ঢাকা পেডিমেন্ট।
(ii) সম্মিলিত বা একত্রীভূত পেডিমেন্ট: একাধিক পেডিমেন্ট পরস্পর মিলে সৃষ্ট পেডিমেন্ট। (iii) ব্যবচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলস্রোত দ্বারা বিচ্ছিন্ন পেডিমেন্ট।
উদাহরণ: আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায়।
(খ) বাজাদা : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি প্রবল বর্ষণের প্রভাবে সৃষ্ট হওয়া অস্থায়ী জলধারা ও বায়ুপ্রবাহের মিলিত সঞ্চয়কাজের ফলে যে প্রায় সমতলভূমির সৃষ্টি করে তাকে বলে বাজাদা।
উৎপত্তি: কখনো-কখনো মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে অস্থায়ী জলধারা বা ওয়াদি গঠিত একাধিক পলল ব্যঞ্জনী একসঙ্গে অবস্থান করলে বাজাদা গড়ে ওঠে।
বৈশিষ্ট্য: (i) সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত এই বাজাদা কয়েক কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। (ii) এর গড় ঢাল হয় ৩০-৪০।
উদাহরণ: সাহারা মরুভূমির অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশবর্তী অঞ্চল বাজাদা ভূমিরূপ দেখা যায়। এ ছাড়া কালাহারি, আরব ও অস্ট্রেলীয় মরুভূমিতেও বাজাদা দেখা যায়।
(গ) ওয়াদি : আরবি শব্দ ‘ওয়াদি’-এর অর্থ ‘শুষ্ক উপত্যকা’। মরু অঞ্চলে সৃষ্ট শুষ্ক নদীখাতকে ওয়াদি বলে।
উৎপত্তি: মরু অঞ্চলে হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি হলে, বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেগবতী ক্ষণস্থায়ী জলধারা ঢালু পর্বতগাত্রে নদীখাতের সৃষ্টি করে। শুষ্ক অঞ্চলে জলের অধিগ্রহণ এবং অধিক পরিমাণে বাষ্পীভবনের ফলে নদীখাত দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ওয়াদি সৃষ্টি হয়। মরুভূমি অঞ্চলে যেখানে ২৫-৫০ সেমি বাৎসরিক বৃষ্টি ঘটে, তখন সেখানে ওয়াদি গড়ে ওঠে।
বৈশিষ্ট্য: (i) এটি স্বল্প দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নদীখাত। (ii) অধিকাংশ সময়ই নদীখাত শুষ্ক থাকে।
উদাহরণ: আরব মরুভূমিতে বহু ওয়াদি দেখা যায়।
(ঘ) প্লায়া : মরু অঞ্চলে অপসারণ সৃষ্ট গর্তে লবণাক্ত জল জমে যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে বলে প্লায়া। লবণাক্ত জল জমা হয় বলে ওই হ্রদকে বলে প্লায়া; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে মেক্সিকোর মরু অঞ্চলে পর্বতবেষ্টিত লবণাক্ত হ্রদকে বলে বোলসন। আফ্রিকায় প্লায়াকে শট্স (Shorts) বলে।
উৎপত্তি: প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির বালি অপসারিত হয়ে ছোটো বড়ো অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়। এই গর্তগুলো যদি খুব গভীর হয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকে স্পর্শ করে, তাহলে ভূগর্ভস্থ জল ও বৃষ্টির জল জমা হয়ে সেখানে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি হয়।
(৮) হিমবাহ ও জলধারার মিলিত সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট প্রধান ভূমিরূপগুলির চিত্রসহ বর্ণনা দাও।
উত্তর– হিমরেখার নীচে হিমবাহ গলে ছোটো ছোটো অস্থায়ী জলধারার সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত জলধারা হিমবাহজাত পদার্থগুলিকে বহন করে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চয় করে। একে হিমবাহ-জলধারা সঞ্চয় বা নদী-হৈমবাহিক সপ্তয় বলে। এই সঞ্চয়কার্যের ফলে গড়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য ভূমিরূপগুলি হল – বহিঃবিধৌত সমভূমি, এসকার, বোল্ডার ক্রে ও টিল, কেম ও কেমমণ্য, নব, কেটল ও কেটল হ্রদ, ভ্যালিট্রেন, ড্রামলিন।
(ক) বহিঃবিধৌত সমভূমি : পর্বতের পাদদেশে হিমবাহবাহিত নুড়ি, পাথর, কাদা, বালি প্রভৃতি জমা হয়ে অনেকসময় এক বিশাল সমতল ভূমির সৃষ্টি করে। এরূপ সমভূমিকে বহিঃবিধৌত সমভূমি বা Outwash Plain বলে। অনেকসময় এই সমভূমিতে সৃষ্ট কোনো গর্তে হিমবাহগলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ জাতীয় সমভূমি দেখতে পাওয়া যায়।
(খ) এসকার – অধিকাংশ হিমবাহের তলদেশ দিয়ে হিমবাহ গলিত জল স্রোতের আকারে বয়ে যায়। ফলে, হিমবাহের তলদেশে সেই স্রোতের প্রবাহপথ বরাবর একটি সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়। কালক্রমে এই সুড়ঙ্গটি নুড়ি, বালি, পলি, কাঁকর ইত্যাদি হিমগ্রাব দ্বারা ভরাট হয়ে দীর্ঘ, অনুচ্চ, আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতো আকৃতিবিশিষ্ট ভূমিরূপ গঠন করে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় একে এসকার বলে।
বৈশিষ্ট্য: (i) যতক্ষণ কোনো অঞ্চল হিমবাহ দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে ততক্ষণ এসকার দেখা যায় না। হিমবাহ গলে গেলে এসকার উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। (ii) এগুলি কয়েক কিমি থেকে কয়েকশো কিমি লম্বা হয়। এগুলি 5 থেকে 50 মিটার উঁচু হয় এবং উপত্যকার ঢাল বরাবর প্রসারিত হয়। (iii) এগুলি আঁকাবাঁকা ও সংকীর্ণ হয়। (iv) এসকারের উভয় দিকে হ্রদ অবস্থান করে। (v) এসকার মূলত প্রান্ত গ্রাবরেখার সঙ্গে যুক্ত থাকে।
উদাহরণ: ফিনল্যান্ডের ‘পুনকাহারয়ু’ একটি বিখ্যাত এসকার।
(গ) বোল্ডার-ক্রু ও টিল : হিমবাহ গলে গেলে হিমবাহের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখণ্ড ও সুক্ষ্ম শিলাচূর্ণ স্থানে স্থানে সঞ্চিত হয়। এইরূপ ইতস্তত সঞ্চিত অবক্ষেপকে বোল্ডার-ক্লে ও টিল বলে। সাধারণত বোল্ডার-ক্লের ক্ষেত্রে প্রস্তরখণ্ড এবং টিলের ক্ষেত্রে শক্ত কাদার প্রাধান্য থাকে।
উদাহরণ: উত্তর ইউরোপের বহু রাষ্ট্রে এরূপ অবক্ষেপ দেখা যায়।
(ঘ) কেম ও কেমসোপান : নিশ্চল হিমরাশি দ্বারা বোল্ডার-ক্রে ও টিল। সৃষ্ট নদী যখন হিমবাহবাহিত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি পদার্থকে বহন করে আনে ও পর্বতের পাদদেশের হ্রদে সঞ্চয় করে বদ্বীপের মতো ত্রিকোণাকার ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, তাকে কেম বলে। হিমবাহ উপত্যকার দুই পাশে যখন কেম সৃষ্টি হয়, তখন তাকে কেমমঞ্চ বা কেমসোপান বলে।
বৈশিষ্ট্য (i) কেম 10-12 মিটার উচ্চতাযুক্ত ঢিবির মতো অবস্থান করে। (ii) এটি ত্রিকোণাকার ভূমিরূপ। (iii) হ্রদ অঞ্চলে কেম সঞ্চিত হলে তার ত্রিপার্শ্বে জল অবস্থান করে।
উদাহরণ: ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের নরফেকের গ্লাভেন উপত্যকায় কেম ও কেমমঞ্চ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও স্কটল্যান্ডের ল্যামারমুয়ার উপত্যকায় কেমসোপান দেখা যায়।
(ঙ) কেটল ও কেটল হ্রদ : অনেকসময় বহিঃবিধৌত সমভূমির ওপর কোনো ফাটলের মধ্যে গতিহীন বরফের চাঁই অবক্ষেপ দ্বারা চাপা পড়ে যায়। পরে এই বরফ গলে গেলে ভূপৃষ্ঠে যে গর্তের বা অবনমিত স্থানের সৃষ্টি হয়, তাকে কেটল বলে। এই কেটলে জল সঞ্চিত হলে কেটল হ্রদ গঠিত হয়।
উদাহরণ: স্কটল্যান্ডের অর্কনি দ্বীপে কেটল হ্রদ দেখা যায়।
(চ) ড্রামলিন : ‘ড্রামলিন’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘ঢিবি’। হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে পর্বতের পাদদেশে বোল্ডার-ক্লে দ্বারা গঠিত দীর্ঘায়ত অর্ধাকার ডিমের মতো (Elongated Oval shaped) বা উলটানো নৌকার মতো একরকম ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, একে বলে ড্রামলিন। ড্রামলিন সর্বদা ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যায়। আকাশ থেকে বা অনেক উঁচু স্থান থেকে ড্রামলিনগুলিকে ‘ঝুড়ি ভরতি ডিম’-এর মতো দেখায়। তাই ড্রামলিনবহুল অঞ্চলকে ‘Basket of Egg Topography’ বলা হয়।
উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার অন্টারিও হ্রদের দক্ষিণে মধ্য নিউইয়র্ক প্রদেশে 15,000 বর্গকিমি এলাকার মধ্যে প্রায় 10,000 টি ড্রামলিন অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন –
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ শর্ট প্রশ্ন উত্তর
ভারতের প্রাকৃতিক বিভাগ (ভারত – পঞ্চম অধ্যায়)
YouTube – Samim Sir