Madhyamik 2026 Bengali Question Answer & Suggestion / মাধ্যমিক 2026 বাংলা প্রশ্ন উত্তর / WBBSE
Madhyamik 2026 Bengali Question Answer & Suggestion
প্রশ্ন : ১ ‘ আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন ‘ – কার কথা বলা হয়েছে ? সে কিভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে ? ( ১ + ৪ )
অথবা
‘ তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই , তার থেকে অপমানের ‘ – ‘ কার সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে ? সে কিভাবে তা অনুভব করেছিল ? ( ১ + ৪ )
উত্তর :
পরিচয় :
আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘ জ্ঞানচক্ষু ‘ গল্পে লেখিকা তপনের সম্পর্কে একথা বলেছেন ।
প্রসঙ্গ :
নতুন মেসোমশাইযকে দেখে তপনের মনে লেখক হওয়ার স্বপ্ন জাগে । ফলে তপন ‘ প্রথম দিন ‘ নামে একটি গল্প লিখে সন্ধ্যাতারা ‘ পত্রিকায় ছাপানোর জন্য নতুন মেসোমশাইকে দেয় । কিন্তু এদিকে মেসোমশাই ‘ কারেকশান ‘ করার নামে সম্পূর্ণ গল্পটাই নতুন করে লিখে দিয়েছেন । ফলে তপন মনে খুব দুঃখ পায় । তখন লেখিকা তপনের সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন ।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ :
তপনের প্রথম লেখা গল্পটি তার নতুন মেসোমশাই ‘ সন্ধ্যাতারা ‘ পত্রিকায় ছাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন । মেসোমশাইয়ের কথায় তপন খুব খুশি হয়েছিল । তবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হলেও তপন তার গল্প ছাপানোর খোঁজ না পেলে সে প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছিল । এমন সময় একদিন তার নতুন মেসোমশাই ও ছোটোমাসি হাতে একটি সংখ্যা ‘ সন্ধ্যাতারা ‘ পত্রিকা নিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছান । সারা বাড়ির লোক শুধু তপনের কথা ও তার মেসোমশাইয়ের মহত্ত্বের কথা বলতে থাকে । এমন সময় তপনের মা তার লেখা গল্পটা পড়ে শোনাতে বলেন । কিন্তু তপন গল্পটা পড়তে গিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে । কারণ নতুন মেসোমশাই গল্পটা ‘ কারেকশন ‘ করতে গিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটাই নতুন করে লিখে দিয়েছেন । তাই তপনের কাছে গল্পটা আনকোরা ও অপরিচিত লাগছিল । সে মনের দিক থেকে এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে , গল্পটা পড়তেই পারছিল না , বোবা হয়ে গিয়েছিল । তাই লেখিকা তপনের সম্পর্কে বলেছেন ——-’ আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন ‘।
প্রশ্ন : ২ গিরীশ মহাপাত্রের বেশ – ভূষার পরিচয় দিয়ে তার চরিত্রটি আলোচনা কর ।
উত্তর :
গিরীশ মহাপাত্রের বেশ–ভুজার পরিচয় :
গিরীশ মহাপাত্রের মাথার সামনের দিকের চুল ছিল বড়ো বড়ো ; ঘাড় ও কানের দিকে এত ছোটো করে ছাঁটা ছিল যেন নেই বললেই চলে । মাথার চুলে দেওয়া ছিল অপর্যাপ্ত তেল ; তাতে ছিল আবার লেবুর তেলের গন্ধ । গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের চুড়িদার পাঞ্জাবি , বুক – পকেট থেকে বাঘ – আঁকা একটা রুমালের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছিল । তার পরনে ছিল বিলেতি মিলের কালো মকমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি , পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা , হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা , বার্নিশ করা পাম্পশু , হাতে হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি ।
গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্র :
গিরীশ মহাপাত্রের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে পাওয়া যায় সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল ——-
১. রুগ্ন ও দুর্বল রূপে প্রকাশ : গিরীশ মহাপাত্র নিমাইবাবুর কাছে উপস্থিত হয় কাশতে কাশতে । সে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে , সে কত রুগ্ন ও দুর্বল । সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল।
২. পরোপকারী ভাব প্রকাশ : গিরীশ মহাপাত্রকে তল্লাশি করে প্রাপ্ত জিনিসের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল গাঁজার কলকে । সে আবার গাঁজা খায় না । সেটা সে অন্যের প্রয়োজনে কাছে রেখেছিল । পরোপকারী ভঙ্গিটি সে প্রকাশ করতে চেয়েছিল ।
৩. শান্ত ভাব প্রকাশ : গিরীশ ছিল খুব শান্ত প্রকৃতির লোক । পুলিশ কর্মচারী জগদীশবাবু রেগে গিয়ে ‘ মিথ্যাবাদী ‘ বললে বা ব্যঙ্গ করে ‘ দয়ার সাগর ‘ বললেও সে কিন্তু নীরব থেকেছে , কোনো প্রতিবাদ করেনি ।
৪. বিদায় গ্রহণ অভিনব : ছদ্মবেশে সব্যসাচী যেভাবে গিরীশের অভিনয় করেছিল তা ছিল প্রশংসার যোগ্য । ভাঙা টিনের তোরঙ্গ , চাটাই জড়ানো বিছানার বান্ডিল বগলে চেপে ধীর পায়ে বেরিয়ে যাওয়া দেখলে কেউ তাকে সন্দেহ করবে না যে , সে একজন বিপ্লবী।
উপসংহারে বলা যায় যে , গিরীশ মহাপাত্রের দেশপ্রেম , পরোপকারী , শান্ত মেজাজি , সাহস ও প্রতিবাদী স্বভাব ইত্যাদি তাকে ‘ পথের দাবী ‘ গল্পে প্রধান চরিত্রের দিকে নিয়ে যায় ।
Madhyamik 2026 Bengali Question Answer & Suggestion / মাধ্যমিক 2026 বাংলা প্রশ্ন উত্তর / WBBSE
প্রশ্ন : ৩ ‘ ইহা যে কতবড়ো ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল ‘ – ভ্রমটি কি ? কে , কিভাবে তা অনুভব করেছিল ? ( ১ + ৪ )
উত্তর :
ভ্রমটি :
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ পথের দাবী ‘ গল্পে উল্লেখিত অপূর্ব প্রথম শ্রেণির ট্রেনের কামরায় একাই ছিল । রাত্রের খাওয়া সেরে শুয়ে পড়ার পর ভেবেছিল যে , সকাল পর্যন্ত তার ঘুম কেউ ভাঙাবে না। এটাই ছিল অপূর্বর ভ্রম বা ভুল ধারনা ।
প্রসঙ্গ :
অপূর্বর অফিসের বড়োসাহেব একসময় অপূর্বকে ভালো নগরের অফিসে যাওয়ার কথা বলেছিল । তারপরের দিনই ট্রেনে চেপে বসে ভামো যাওয়ার জন্য । সে ভেবেছিল সকাল পর্যন্ত তার ঘুম কেউ ভাঙাবে না । তখন লেখক আলোচ্য মন্তব্যটি করেন ।
ভ্রম অনুভবের কৌশল :
ভামো নগরে যাওয়ার জন্য অপূর্ব অপরাহ্নে ট্রেনে চেপে বসে । কামরায় অন্য কোনো যাত্রী ছিল না । সন্ধ্যা হলে জামার মধ্য থেকে পৈতা বের করে জল ছাড়াই সে সন্ধ্যাহ্নিক সেরে ফেলে । দেরি না করে রাতের খাবার যে সমস্ত এনেছিল তা খেয়ে নিয়ে খাওয়া দাওয়ার কাজ শেষ করে । অপূর্ব বেশ পরিতৃপ্ত হয়ে জল পান করে রাতের মতো শুয়ে পড়ল । অপূর্ব নিশ্চিত ছিল যে রাতে কেউই তার ঘুম ভাঙাবে না কিন্তু অপূর্বর ধারণাটাই ছিল ভূল। কারণ সেই রাতে পুলিশ এসে অপূর্বর তিনবার ঘুম ভাঙায় এবং নাম , ধাম , ও ঠিকানা লিখে নিয়ে গিয়েছে । একবার সে বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদও করেছে । তাতে তাকে বর্মা সাব – ইনস্পেক্টর সাহেবের কটু কন্ঠের জবাব শুনতে হয়েছে , ‘ তুমি তো ইউরোপিয়ান নও ‘ । এইভাবে কয়েকটা স্টেশন পরেই অপূর্ব তার ভ্রমটি অনুভব করেছিল ।
প্রশ্ন : ৪ ‘ আদর – বদল ‘ গল্পে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিচয় দাও ।
উত্তর :
কাহিনীর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা :
পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘ অদল – বদল ‘ গল্পে অমৃত ও ইসাব ছিল পরষ্পরের বন্ধু । তারা একদিন হোলির দিনে বিকেলে বাড়ির বাইরে খেলতে যায় । কালিয়া নামে ছেলেটি জোর করে অমৃতাকে মাঠে টেনে নিয়ে তার সাথে কুস্তি লড়তে বাধ্য করলে ইসাব নিজে কালিয়ার সাথে কুস্তি লড়ে । কুস্তি লড়তে গিয়ে হঠাৎ ইসাবের নতুন জামার পকেটটি ছিঁড়ে যায় । ঘটনাক্রমে অমৃত তার বন্ধু ইসাবকে বাঁচানোর জন্য সে তার নিজের ভালো জামাটি ইসাবকে দিয়ে দেয় । পরষ্পর জামা অদল – বদল করে তারা পরিস্থিতি সামাল দেয় । গল্পটার মধ্যে জামা অদল বদলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শেষে গ্রামের প্রধান অমৃত আর ইসাবের নাম বদল করে দেয় ।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিচয় :
অমৃত ও ইসাব ছিল ভিন্ন সম্প্রদায়ের দুটি ছেলে অর্থাৎ অমৃত জাতিতে ছিল হিন্দু আর ইসাব ছিল মুসলিম । লেখক দেখলেন মানুষ ধর্ম নিয়ে বড়াই করে , সম্প্রদায়কে ধর্ম মনে করে ; আসলে ধর্ম একটাই সেটা হল মানবধর্ম , সম্প্রদায় কোনো ধর্ম নয় । অমৃত ও ইসাব দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ হতে পারে , কিন্তু তাদের চিন্তায় , কর্মে , ভাবনায় কোনো পার্থক্য ছিল না। লেখক তাদের চিন্তার মধ্য দিয়ে মানবধর্মের জয়গান ঘোষণা করেছেন । মানুষ সম্প্রদায়কে সামনে রেখে কঠিন লড়াইয়ে সামিল হয় ; হিংসা , বিদ্বেষ , হানাহানিতে নিজেদের যুক্ত করে সমাজকে অস্থিরতায় ফেলে দেয় । সেটাতো কখনোই করা ঠিক নয় । লেখক আলোচ্য গল্পে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদহীন মানবধর্মের প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিয়ে গভীর সমাজ সচেতনতার পরিচয় দিয়েছেন ।
প্রশ্ন : ৫ ‘ অমৃত ও ইসাবের পরষ্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে তাঁদেরও বুক ভরে গেল ‘ — গল্পটি কি ? তা শুনে কাদের , কেন বুক ভরে গিয়েছিল ? ( ২ + ১ + ২ )
উত্তর :
গল্পটি :
পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘ অদল বদল ‘ গল্পে অমৃত ও ইসাব ছিল অন্তরঙ্গ বন্ধু । হোলির দিনে তাদের একই রকম পোশাক দেখে একজন বলে যে , তারা যদি কুস্তি লড়ে তাহলে তাদের শক্তি বোঝা যাবে । অমৃতের কুস্তি লড়ার ইচ্ছা ছিল না । কিন্তু কালিয়া অমৃতের গলা ধরে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে ইসাবও বন্ধুর জন্য কালিয়ার সাথে কুস্তি লড়াই করে । তারপর অমৃত হঠাৎ দেখে যে , ইসাবের জামার পকেটটি ছিঁড়ে গেছে । অমৃত তখন ইসাবকে বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজের ভালো জামাটি ইসাবকে দেয় আর ইসাবের ছেঁড়া জামাটি নিজে পরে । ইসাব যখন অমৃতকে বলেছিল যে , তাকেও তার বাবা মারতে পারে ; তখন অমৃত বলেছিল যে , তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছে । এখানে এই গল্পটির কথা বলা হয়েছে ।
পরিচয় :
পাড়া – পড়শি মায়ের দল ইসাবের বাবা পাঠানের কাছ থেকে এই গল্পটি শুনেছিল । এই গল্পটি শুনে পাড়া – পড়শি মায়েদের বুকের ভরে গিয়েছিল ।
বুক ভরে যাওয়ার কারণ :
পাড়া – পড়শি মায়ের দল জানত যে , অমৃত জাতিতে ছিল হিন্দু , আর ইসাব ছিল মুসলিম । তারা এইটাও শুনেছিল যে , অমৃত তার গায়ের নতুন জামাটি ইসাবকে দিয়ে দেয় , আর অমৃতের গায়ে থাকা ছেঁড়া জামাটি নিজের গায়ে পরে । কারণ অমৃত চেয়েছিল ইসাব যেন তার বাবার কাছ থেকে মার না খায় । শুধু তাই নয় , অমৃত ইসাব কে বলেছিল যে তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছে । ইসাবের তো বাবা নেই । অর্থাৎ পাড়া – পড়শি মায়ের দল বুঝতে পারলো যে , আলাদা সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের মানবিক অনুভূতি ও বন্ধুত্বকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে । তাই গল্প শুনে তাদের বুক ভরে গিয়েছিল ।
প্রশ্ন : ৬ ‘ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ‘ – কবিতায় ‘ বেঁধে বেঁধে থাকি ‘ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? কবি এমন কথা বলেছেন কেন ? ( ২ + ৩ )
উত্তর :
বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থ :
শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ‘ কবিতায় কবি ‘ আমাদের ‘ বলতে কবি সমাজের সাধারণ ও অসহায় মানুষদের কথা বলেছেন । কবি তাদের উদ্দেশ্যে এই ডাক দিয়েছেন । তিনি দেখেছেন পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া তাদের নানান দুঃসহ চিত্র । তার ফলে সাধারণ ও অসহায় মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । তিনি তাদের এমন অবস্থায় দেখতে চান না । তিনি চান তারা অসহায় ও বিচ্ছিন্নভাবে না থেকে একজায়গায় বসবাস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকুক । ‘ বেঁধে বেঁধে ‘ থাকা বলতে কবি একত্রে চলা বা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার কথা বলেছেন ।
একথা বলার কারণ :
কবি শঙ্খ ঘোষ আলোচ্য কবিতায় বলেছেন যে সমাজে যারা সাধারণ ও অসহায় মানুষ , তারা চলার পথে ধস , গিরিখাত , বোমারু , হিমানীর বাঁধ ইত্যাদির দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় । শুধু তাই নয় — তাদের পথ না থাকা , ঘর – বাড়ি উড়ে যাওয়া , দোরে দোরে ফেরা , শিশুদের শব কাছে দূরে পড়ে থাকা ইত্যাদির মতো তাদের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন । অর্থাৎ তারা পৃথিবীর বুকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসনে জর্জরিত , অবহেলিত , এমনকি মৃত্যুর পথে পতিত । তাই কবি বলেছেন — ‘ আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে ‘
সমাজে মানুষ একা বাঁচতে পারে না , প্রয়োজন আর পাঁচ জনের সহযোগিতা । কবি সেই সত্যটিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন । পৃথিবীর বুকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনে বিপন্নতার সৃষ্টি হয় । কবি সেই বিপন্নতার পথ থেকে বেরিয়ে আসার পথ নির্দেশ করেছেন । সাধারণ মানুষের একমাত্র শক্তি হল মানুষের ঐক্য , মৈত্রী ও সহাবস্থান । সাধারণ মানুষই সমাজের শক্তি , তাদের চিরদিন দুর্বল করে রাখা যায় না । কবি সেই সাধারণ মানুষকে সাহস দিতে ও পথের দিশা দেখাবার জন্য হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকার কথা বলেছেন । তাই কবি বলেছেন —-
‘ আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ‘ ।
প্রশ্ন : ৭ সমুদ্রনৃপতি সুতা কে ? ‘ সিন্ধুতীরে’ কবিতা অবলম্বনে সমুদ্রনৃপতি সুতার চরিত্র আলোচনা করো ? ( অথবা ) ‘ সিন্ধুতীরে ‘ কবিতা অবলম্বনে পদ্মার চরিত্রটি লেখো ( ১ + ৪ )
উত্তর :
পরিচয় :
সৈয়দ আলাওল রচিত ‘ পদ্মাবতী ‘ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ সিন্ধুতীরে ‘ কবিতায় সমুদ্রনৃপতি সুতা হলেন পদ্মা ।
পদ্মাবতীর চরিত্র :
‘ সিন্ধুতীরে ‘ পদ্যাংশে প্রধান চরিত্র তথা সমুদ্রের রাজার কন্যা ছিলেন পদ্মা । তার যে চরিত্রগুলি ফুটে উঠেছে সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল ————
১ . সৌন্দর্যপিয়াসী : পদ্মা ছিলেন সৌন্দর্যপিয়াসী । তাই প্রকৃতির সৌন্দর্য প্রথমেই তাঁর চোখে ধরা পড়ে । প্রকৃতির বুকে সিন্ধতীরের স্থানটি দেখে পদ্মা মুগ্ধ হয়েছিলেন । তাকে দিব্যস্থান বলে চিহ্নিত করেছেন । সেখানে গড়ে তুলেছেন নানা ফুল – ফল গাছের সমাহার ও নির্মাণ করেছেন রত্নখচিত প্রাসাদ ।
২ . হাসি – খুশি মনের মানুষ : পদ্মা ছিলেন হাসি – খুশি মনের মানুষ । সখীদের নিয়ে তাঁর দিন হাসি – খুশিতে চলে যায় । তাছাড়া পদ্মা ছিলেন কৌতূহলী ও চঞ্চলা । যখনই ব্যতিক্রমী কিছু তাঁর সামনে এসেছে , তখনই পদ্মা তাঁর কৌতূহলের অবসান ঘটিয়েছে । তাই তো সিন্ধুতীরে মান্দাস দেখামাত্র সে সখীদের নিয়ে তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছেছিলেন ।
৩ . মানবিক গুণ সম্পন্না : পদ্মা ছিলেন মানবিক গুণ সম্পন্না এক নারী । অজানা – অপরিচিত হলেও অচেতন কন্যা পদ্মাবতীর কিছুটা শ্বাস পড়ছে দেখে তাঁকে সেবা করতে তৎপর হয়েছিলেন ।
৪ . সেবাপরায়ণা : পদ্মার এক বিশেষ গুণ ছিল সেবাপরায়ণতা । পদ্মা চেয়েছিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পঞ্চকন্যার জ্ঞান ফেরানো যায় , ততই ভালো হয় । তাই সে সেই কাজে ব্যস্ত ছিলেন । দেহকে তপ্ত করা , তন্ত্র – মন্ত্র মহৌষধি প্রয়োগ করা , ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানানো —কোনো কিছুই করতে পদ্মা বাদ রাখেননি ।
৫ . পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীলা : পদ্মা ছিলেন পিতার প্রতি শ্রদ্ধাশীলা । তাই তিনি পিতৃগৃহে হাসি – খুশিতে রাত্রিযাপন করেন , অচৈতন্য পদ্মাবতীর চেতনা ফেরাতে পিতার পুণ্যের কথা বলেন । পদ্মা সেদিক থেকেও ছিলেন অনন্যা ।
Madhyamik 2026 Bengali Question Answer & Suggestion / মাধ্যমিক 2026 বাংলা প্রশ্ন উত্তর / WBBSE
প্রশ্ন : ৮ ‘ শোনামাত্র প্রণবেন্দু দপ্ করে জ্বলে উঠেছিল ‘ — প্রণবেন্দু কে ? সে দপ্ করে জ্বলে উঠেছিল কেন ? ( ১ + ৪ ) ( অথবা )
কোনির জীবনে প্রণবেন্দুর অবদান কতটা ছিল তা সংক্ষেপে লেখো । ৫
উত্তর :
প্রণবেন্দু :
মতি নন্দী রচিত ‘ কোনি ‘ উপন্যাসে প্রণবেন্দুর আসল নাম ছিল প্রণবেন্দু বিশ্বাস । তিনি ছিলেন বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের ট্রেনার এবং হিয়া মিত্রের কোচ ।
প্রসঙ্গ :
মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার প্রতিযোগিতায় হিয়া মিত্রের নামার কথা ছিল । কিন্তু প্রণবেন্দু শেষ মুহূর্তে হিয়ার নাম তুলে নিলে হরিচরণ রেগে যায় । হরিচরণের যুক্তি এই যে , হিয়ার দুটি ব্রোঞ্জ পাওয়া তো নিশ্চিত ছিল । সে বলে ওঠে প্রণবেন্দু কেবল হিয়ার কথাই ভাবল – বাংলার নয় । তখন আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয় ।
দপ্ করে জ্বলে ওঠার কারণ :
মাদ্রাজের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে হিয়ার ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটারে নামার কথা ছিল । কিন্তু যে ইভেন্টগুলিতে হিয়ার সোনা পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে সেগুলিতে যাতে ক্ষতি না হয় , তার জন্য প্রণবেন্দু ওই ইভেন্টগুলি থেকে হিয়ার নাম তুলে নেয় । হলে হরিচরণ প্রণবেন্দুর সঙ্গে তর্ক শুরু করে এবং তাতে উদ্দেশ্য করে বলে যে , হিয়া নামলে দুটি ব্রোঞ্জ আসত । বাংলা দু – পয়েন্ট পেত এবং চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার সুযোগ ছিল । কিন্তু প্রণবেন্দু কেবল হিয়ার কথা ভেবেছে , বাংলার কথা ভাবছে না । আর তাতেই প্রচন্ড রাগে প্রণবেন্দু দপ্ করে ওঠে । হরিচরণের কথা প্রণবেন্দুর আত্মসম্মানে আঘাত আনে । তাই হরিচরণের কথা শোনামাত্র প্রণবেন্দু দপ্ করে জ্বলে উঠেছিল ।
প্রশ্ন : ৯ ‘ কোনি তুমি আনস্পোর্টিং ‘ —বক্তা কে ? কোন প্রসঙ্গে একথা বলেছেন ? তিনি কোনিকে আনস্পোর্টিং বলেছেন কেন ? ( ১ + ২ + ২ )
উত্তর :
পরিচয় :
মতি নন্দী রচিত ‘ কোনি ‘ উপন্যাসে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সুদক্ষ সাঁতারু হিয়া ।
প্রসঙ্গ :
প্রণবেন্দু বিশ্বাসের চেষ্টায় কোনি বাংলার জাতীয় দলের সদস্য হয়ে মাদ্রাজে যান । কিন্তু ধীরেন ঘোষ ও হরিচরণের চক্রান্তে কোনিকে সেখানে গ্যালারির দর্শক হতে হয় । মনে তীব্র জ্বালা নিয়ে সে চুপ করে বসে থাকে । অবশেষে প্রতিযোগিতার শেষ ইভেন্টে অমিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে । ফলে সুযোগ পায় কোনি । হিয়া তখন কোনির কাছে ছুটে এসে তাকে কস্টিউম পরে নেওয়ার কথা বলে । কিন্তু এতদিনের বঞ্চনা আর অভিমান নিয়ে কোনি তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় । তখন হিয়া কোনিকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেন।
আনস্পোর্টিং বলার কারণ :
কোনো খেলোয়াড়ের মনোভাবের মধ্যে ব্যক্তিগত আবেগ , ক্ষোভ , হতাশা রাখতে নেই । হিয়া এই বিষয়টি বুঝলেও কোনির পক্ষে তা বোঝা সহজ ছিল না । এতদিন পর্যন্ত যে – আচরণ কোনি পেয়েছে , তাতে ইভেন্ট রিলেতে নামতে না – চাওয়ার পেছনে তার যুক্তিসংগত কারণও ছিল । তাছাড়া হিয়ার কাছে ব্যক্তিগত সাফল্যের চেয়ে বাংলার স্বার্থই বড়ো হয়ে উঠেছে । তাই কোনির হাতে চড় খাওয়ার পরেও সমস্ত অভিমান ভুলে হিয়া তার কাছে ছুটে এসেছে । কারণ হিয়া জানত বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য এই মুহূর্তে কোনিকেই একমাত্র প্রয়োজন । সে জাতীয় ভাবাবেগে কোনিকে উপলব্ধি করতে চায় । ফলে কোনির মধ্যে এক আবেগ সঞ্চিত হয় । তাই হিয়া কোনিকে ‘ আনস্পোর্টিং ‘ বলেছিল।
Madhyamik 2026 Bengali Question Answer & Suggestion / মাধ্যমিক 2026 বাংলা প্রশ্ন উত্তর / WBBSE
প্রশ্ন : ১০ প্রশ্ন :- ‘ আয় আরো বেঁধে বেধেঁ থাকি ‘ কবিতায় কবির সমাজভাবনার যে প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় লেখো ? ( অথবা ) ‘ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ‘ কবিতায় কবি বেঁধে বেঁধে থাকার কথা বলেছেন কেন ? ( অথবা ) “ আমাদের শিশুদের শব / ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে “ – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কবির মানবধর্মের পরিচয় দাও ?
উত্তর :- শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘ জলই পাষাণ হয়ে আছে ‘ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ‘ কবিতায় কবি সমাজব্যবস্থার এক সংকটপূর্ণ মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন । এই কবিতায় কবি বিপন্ন মানুষদের কথা বলেছেন , যারা সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপন্ন । এইসব মানুষদের ডানদিকের পথ ধ্বসে রুদ্ধ আর বামদিক গভীর গিরিখাতের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত । আশ্রয়হারা এইসব মানুষদের মাথার উপরের আকাশও নিরাপদ নয় , সেখানে রয়েছে বোমারু বিমানের আনাগোনা । এগিয়ে যাওয় র জন্য যে পদক্ষেপ ফেলতে হয় সে স্থানটুকুও নিরাপদ নয় । এমনি দুর্দশাগ্রস্থ মানুষেরা আজ গৃহহারা । তাদের শিশুদের শব চারিদিকে ছড়ানো রয়েছে । তাই কবি বলেছেন —”
“ আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে “
সাধারন মানুষ যখন এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের টিকে থাকার সংশয় প্রকাশ করেছে তখন কবি তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য ডাক দিয়েছেন —-
“ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি “
কিন্তু কেবল সমাজের বাহ্যিক অবক্ষয় নয় , বিপন্ন মানুষ আজ মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে হয়ে পড়েছে । কারন , তাদের নিজেদের কোনো ইতিহাস নেই , যদিও -বা থাকে সেই ইতিহাসে প্রকৃত সত্যের উম্নোচন ঘটেনি । তাই কবি বলেছেন —–
“ আমাদের ইতিহাস নেই
অথবা এমনই ইতিহাস
আমাদের চোখমুখ ঢাকা “
এই সকল মানুষেরা সহানুভূতির কাঙাল । তাদের কথা পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ মনে রাখে না কবি চান সমাজে এখনও কিছু মানুষ রয়েছে যারা বিবেকবান , মনুষ্যত্ব নিয়ে চলতে চায় । তাই তিনি তাদেরকে উজ্জীবিত করে মনে শক্তি – সাহস – উদ্দীপনা দিয়ে নতুন করে বাঁচার পথ দেখিয়েছেন । যে বাঁচার পথ হল ঐক্য – মৈত্রী ও সংবদ্ধ জীবন । তিনি জগৎ জুড়ে বিদ্যমান থাকা বিপন্নতাকে কাটিয়ে চলতে মানুষকে দিশা দেখিয়েছেন । তাই কবি বলেছেন —–
“ আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি “ ।
প্রশ্ন : ১১ ‘ হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে ‘ – হরিদা কে ? তার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ? ( ১ + ৪ )
উত্তর :
পরিচয় :
সুবোধ ঘোষ রচিত ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে হরিদা হলেন গল্পের প্রধান চরিত্র তথা গল্পকারের প্রিয় এক বন্ধু , যার জীবনের পেশা ছিল বহুরূপী সাজা ।
নাটকীয় বৈচিত্র্য :
আলোচ্য গল্পে লেখক আমাদের জানিয়েছেন যে হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে । হরিদার জীবনের যে নাটকীয় বৈচিত্র্যের পরিচয় পাওয়া যায় সেগুলি হল —–
( ১ ) উম্দাদ পাগল :
একদিন চকের বাস স্ট্যান্ডের কাছে দুপুরবেলা হঠাৎ হল্লা বেজে ওঠে । একটা উম্দাদ পাগল , মুখ থেকে লালা ঝরছে , চোখ দুটো কটকটে লাল । কোমরে ছেঁড়া কম্বল জড়ানো , গলায় টিনের কৌটার একটা মালা । পাগলটা একটা থান ইট হাতে তুলে নিয়ে বাসের ওপরে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল । যাত্রীরাও পাগলকে বহুরূপী জেনে কেউ হাসে , কেউ বা বিরক্ত হয় ।
( ২ ) রূপসি বাইজি :
কোনোদিন হরিদা ঘুঙুর পরে রূপসি বাইজি সেজে পথে বের হন । সন্ধ্যার আলোয় দোকানে দোকানে যখন লোকজনের ব্যস্ততা থাকে তখন হরিদা রাস্তায় নাচতে নাচতে চলে যায় । দোকানদাররা জানে যে , এই হরির কান্ড । বাইজির ছদ্মবেশে ফরিদা সেদিন আট টাকা দশ আনা পেয়েছিলেন ।
( ৩ ) নকল পুলিশ :
একবার হরিদা নকল পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচুবাগানে দাঁড়িয়েছিলেন । এমনকি স্কুলের চারটি ছেলেকেও ধরেছিলেন । শেষপর্যন্ত হরিদা আট – আনা ঘুষ নিয়ে মাস্টারমশাইয়ের অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন ।
( ৪ ) সন্ন্যাসী রূপে আগন্তুক :
সর্বশেষে হরিদা সন্ন্যাসীর রুপে আগন্তুক হিসেবে এক সন্ধ্যায় জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন । তার উদ্দেশ্য ছিল জগদীশবাবুর সমস্ত ধন সম্পদ লুট করা । কিন্তু তা সফল হয় নি । পরে অবশ্য হরিদা জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে তার বকশিশটা নিয়ে আসে ।
এছাড়াও হরিদা কখনো বাউল , কাপালিক , কাবুলিওয়ালা , ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব ইত্যাদি সেজে তার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন ।