অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর // পাবলো নেরুদা // Asukhi Ekjon Kobita Question Answer (Pablo Neruda) // class 10 // Madhyamik // WBBSE
অসুখী একজন কবিতা
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, এই পোস্টটিতে আমি তোমাদের দেখিয়েছি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদের (WBBSE) মাধ্যমিক / দশম শ্রেণীর বাংলা পাবলো নেরুদার লেখা অসুখী একজন কবিতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষায় কমন পাওয়ার মতো প্রশ্ন উত্তর ও সাজেশন । আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখবে যে প্রশ্নগুলির পাশে বেশি স্টার মার্ক (*) সেই প্রশ্নগুলির খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাজেশনের অন্তর্ভুক্ত । এতো সব প্রশ্নের উত্তর যদি তোমরা না পড়তে পারো , তবে স্টার মার্ক (*) প্রশ্ন উত্তরগুলি পড়লেই হবে । কিন্তু সবচেয়ে বেশি স্টার মার্ক (*) প্রশ্ন উত্তরগুলি আগে পড়বে ।
মার্ক – 1 ( MCQ )
১. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির রচয়িতা হলেন – (ক) গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল (খ) পাবলো ডে রোখা (গ) উইলিয়ম শেকসপিয়র (ঘ) পাবলো নেরুদা
উত্তর – (ঘ) পাবলো নেরুদা
২. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্যের যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত তার নাম – (ক) রাতের সার্কাস (খ) বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে (গ) এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না (ঘ) পুলিশ করে মানুষ শিকার
উত্তর – (খ) বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে
৩. পাবলো নেরুদা কোন দেশের কবি ? – (ক) ভারতবর্ষ (খ) আমেরিকা (গ) চিলি (ঘ) ব্রাজিল
উত্তর – (গ) চিলি
৪. পাবলো নেরুদার আসল নাম কী ? – (ক) স্যামুয়েল ল্যাঙ্গহর্ন ক্লিমেন্স (খ) নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো (গ) ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা (ঘ) মারিও বেনেদেত্তি
উত্তর – (খ) নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো
৫. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি মূল যে ভাষায় রচিত – (ক) জার্মান (খ) ইংরেজি (গ) ফরাসি (ঘ) স্প্যানিশ
উত্তর – (ঘ) স্প্যানিশ
৬. ‘অসুখী একজন’ কবিতার ইংরেজি তরজমাটি হল – (ক) The Unhappy Man (খ) The Unhappy One (গ) The Unhappy The Unhappy Women
উত্তর – (খ) The Unhappy One
৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় প্রকৃত অসুখী হলেন – (ক) দেবতা (খ) রাষ্ট্রনায়ক (গ) নান (ঘ) যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
উত্তর – (ঘ) যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
৮. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম” – কোথায় ছেড়ে দিলেন ? – (ক) যুদ্ধক্ষেত্রে (খ) দরজায় (গ) ভিড়ে (ঘ) যুদ্ধক্ষেত্রে
উত্তর – (খ) দরজায়
৯. ‘আমি চলে গেলাম’ – বক্তা কোথায় চলে গেলেন ? – (ক) দূরে (খ) শহরে (গ) নিজের বাড়িতে (ঘ) যুদ্ধক্ষেত্রে
উত্তর – (ক) দূরে
১০. “অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়” – অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল – (ক) রাস্তার ঘাস (খ) গোলাপি গাছ (গ) মৃত পাথরের মূর্তি (ঘ) মৃত্যুহীন মেয়েটি
উত্তর – (ঘ) মৃত্যুহীন মেয়েটি
১১. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কী ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ? – (ক) শহর (খ) স্বদেশ (গ) যুদ্ধক্ষেত্র (ঘ) মন্দির
উত্তর – (খ) স্বদেশ
১২. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”– এখানে ‘আমি’ হলেন – (ক) রাষ্ট্রনায়ক (খ) কবি (গ) সেনাপতি (ঘ) জনৈক সৈনিক
উত্তর – (খ) কবি

১৩. মেয়েটি দরজায় দাঁড়িয়ে কী করছিল ? – (ক) অপেক্ষা করছিল (খ) কাঁদছিল (গ) প্রকৃতি দেখছিল (ঘ) বিলাপ করছিল
উত্তর – (ক) অপেক্ষা করছিল
১৪. ‘সে জানত না’– সে কী জানত না ? – (ক) বক্তা আর কখনও ফিরে আসবেন না (খ) বস্তা একদিন ফিরে আসবেন (গ) একদিন যুদ্ধ থেমে যাবে (ঘ) পরমাণু বোমায় মারা যাবে বহু মানুষ
উত্তর – (ক) বক্তা আর কখনও ফিরে আসবেন না
১৫. ‘সে জানত না’– এখানে ‘সে’ হল – (ক) সন্ন্যাসিনী (খ) সেবিকা (গ) ছাত্রী (ঘ) মেয়েটি
উত্তর – (ঘ) মেয়েটি
১৬. যিনি হেঁটে গিয়েছিলেন, তিনি হলেন – (ক) নার্স (খ) নান (গ) ডাস্তার (ঘ) শিক্ষিকা
উত্তর – (খ) নান
১৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি ক-টি সপ্তাহ কেটে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন ? – ( ক) একটি (খ) দুটি (গ) তিনটি (ঘ) চারটি
উত্তর – ( ক) একটি
১৮. পায়ের দাগ ধুয়ে দিল – (ক) চোখের জল (খ) নদীর জল (গ) বৃষ্টি (ঘ) ঘাম
উত্তর – (গ) বৃষ্টি
১৯. বৃষ্টিতে পায়ের দাগ ধুয়ে যাওয়ার পর কী ঘটেছিল ?- (ক) কাদা হয়েছিল রাস্তায় (খ) নতুন মন্দির গজিয়ে উঠেছিল (গ) ঘাস জন্মেছিল রাস্তায় (ঘ) চারাগাছ জন্মেছিল রাস্তায়
উত্তর – (গ) ঘাস জন্মেছিল রাস্তায়
২০. “নেমে এল তার মাথার ওপর।“– কী নেমে এল ? – (ক) যুদ্ধজাহাজ (খ) কাজের বোঝা (গ) বৃষ্টি (ঘ) বছরগুলো
উত্তর – (ঘ) বছরগুলো
২১. “বছরগুলো / নেমে এল তার মাথার ওপর।”– কার মাথার ওপর ? – (ক) কবির (খ) কথকের (গ) মেয়েটির (ঘ) নানের
উত্তর – (গ) মেয়েটির
২২. “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ”– ‘আমার’ বলতে বোঝানো হয়েছে – (ক) মেয়েটিকে (খ) বক্তাকে (গ) নানকে (ঘ) পাঠককে
উত্তর – (খ) বক্তাকে
২৩. বছরগুলো নেমে এল তার মাথার ওপর – (ক) রক্তের মতো (খ) পাথরের মতো (গ) কাঁটার মতো (ঘ) হিমশৈলের মতো
উত্তর – (খ) পাথরের মতো
২৪. ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে – (ক) দাবানলকে (খ) যুদ্ধকে (গ) দাঙ্গাকে (ঘ) মৃত্যুকে
উত্তর – (খ) যুদ্ধকে
২৫. “তারপর যুদ্ধ এল”– (ক) পাহাড়ের আগুনের মতো (খ) রক্তের সমুদ্রের মতো (গ) আগ্নেয়পাহাড়ের মতো (ঘ) রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো
উত্তর – (ঘ) রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো
২৬. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় শিশু আর বাড়িরা – (ক) হারিয়ে গেল (খ) নষ্ট হল (গ) ধ্বংস হল (ঘ) খুন হল
উত্তর – (ঘ) খুন হল
২৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় সমস্ত সমতলে কোন ঘটনা ঘটেছে ? – (ক) আগুন ধরে গেছে (খ) ভূমিকম্প হয়েছে (গ) বন্যা হয়েছে (ঘ) বৃষ্টি পড়েছে
উত্তর – (ক) আগুন ধরে গেছে
২৮. দেবতারা কতদিন ধ্যানে ডুবে ছিলেন ? – (ক) কয়েক বছর (খ) হাজার বছর (গ) একশো বছর (ঘ) লক্ষ বছর
উত্তর – (খ) হাজার বছর
২৯. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।”– কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না ? – (ক) সেই মেয়েটি (খ) গির্জার নান (গ) কবিতার কথক (ঘ) শান্ত হলুদ দেবতারা
উত্তর – (ঘ) শান্ত হলুদ দেবতারা
৩০. “যারা হাজার বছর ধরে/ ডুবে ছিল ধ্যানে” – কারা ? – (ক) মুনি-ঋষিরা (খ) দেবতারা (গ) সন্ন্যাসীরা (ঘ) যোগীরা
উত্তর – (খ) দেবতারা
৩১. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বক্তার বাড়িটি কেমন ছিল ? – (ক) সুন্দর (খ) গোলাপি (গ) মিষ্টি (ঘ) ভাঙাচোরা
উত্তর – (গ) মিষ্টি
৩২. “যেখানে আমি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম,”- কোথায় ? – (ক) উঠোনে (খ) মাঠে গ) বাগানে (ঘ) বারান্দায়
উত্তর – (ঘ) বারান্দায়
৩৩. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে বাদ্যযন্ত্রের কথা আছে, সেটি হল – (ক) সেতার (খ) সরোদ (গ) বাঁশি (ঘ) জলতরঙ্গ
উত্তর – (ঘ) জলতরঙ্গ
৩৪. ‘সব চূর্ণ হয়ে জ্বলে গিয়েছিল – (ক) যুদ্ধে (খ) আগুনে (গ) শ্মশানে (ঘ) চিমনিতে
উত্তর – (খ) আগুনে
৩৫. ‘পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে’– কারা পড়েছিল ? – (ক) শান্ত হলুদ দেবতারা (খ) পূজার সামগ্রী (গ) মন্দির চূড়া (ঘ) সব ক-টিই
উত্তর – (ক) শান্ত হলুদ দেবতারা
৩৬. “যেখানে ছিল শহর / সেখানে ছড়িয়ে রইল…”– কী ছড়িয়ে রইল ? – (ক) পায়ের দাগ (খ) গোলাপি গাছ (গ) প্রাচীন জলতরঙ্গ (ঘ) কাঠকয়লা
উত্তর – (ঘ) কাঠকয়লা
৩৭. কালো দাগটি ছিল – (ক) পায়ের ছাপের (খ) রক্তের (গ) বৃষ্টির (ঘ) হতাহতের
উত্তর – (খ) রক্তের
৩৮. ‘যেখানে ছিল শহর’ সেখানে – (ক) রাস্তায় কচি ঘাস গজাল (খ) নতুন নতুন বাড়িঘর উঠল (গ) আগুন ধরে গেল (ঘ) ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা
উত্তর – (ঘ) ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা
মার্ক – 1 ( SAQ )
১. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি পাবলো নেরুদার কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি পাবলো নেরুদার ‘Extravagaria কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
২. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কে বাংলায় তরজমা করেছেন ? *****
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্য তরজমা করেন ।
৩. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি অনুবাদকের কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ? *****
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি অনুবাদক নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ।
৪. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কোন মূল ভাষায় রচিত ? ****
উত্তর – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি মূল স্প্যানিশ ভাষায় রচিত ।
৫. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কে, কাকে, কোথায় ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ? ****
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কথক তাঁর প্রিয়তমাকে বাড়ির দরজার সামনে অপেক্ষমানা রেখে চলে গিয়েছিলেন ।
৬. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম” – কাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বক্তার প্রিয়তমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে ।
৭. ‘অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে’- কে, কাকে, কোথায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন ? **
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক তাঁর প্রিয়তমাকে বাড়ির দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন ।
৮. “আমি চলে গেলাম….. দূরে।”– বক্তা কেন দূরে চলে গেলেন ?
উত্তর – সমাজবিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধের কারণে বক্তাকে দেশ ছেড়ে, প্রিয়তমাকে ছেড়ে দূরে চলে যেতে হয়েছে ।
৯. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কে কথকের আর ফিরে না আসার কথা জানত না ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বস্তার ফিরে আসার অপেক্ষায় দরজায় অপেক্ষারত নারীটি জানত না যে তার প্রিয়তম আর কখনও ফিরে আসবেন না ।
১০. ‘সে জানত না’ – কে, কী জানত না ? *****
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বক্তার প্রিয়তমা নারীটি জানত না যে বক্তা আর কখনও ফিরে আসবেন না ।
১১. ‘একটা কুকুর চলে গেল,’– কুকুরের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে কেন ?
উত্তর – কুকুরের চলে যাওয়া আসলে সময়ের প্রবহমানতার সূচক। বক্তা দেশ ছেড়ে চলে গেলেও সময় থেমে থাকেনি ।
১২. ‘হেঁটে গেল গির্জার এক নান’– এ কথা বলার কারণ কী ?
উত্তর – বক্তা তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু সময় থেমে থাকেনি। গির্জার নানের হেঁটে যাওয়া সেই সময়ের প্রবহমানতাকে সূচিত করেছে।
১৩. “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ”– এ কথার অর্থ কী ?
উত্তর – দেশ ছেড়ে বক্তার চলে যাওয়ার পর কেটে গেছে একটা বছর। বস্তার স্মৃতি মানুষের মন থেকে মুছে গেছে ধীরে ধীরে। বৃষ্টিতে পায়ের দাগ ধুয়ে দেওয়া তাকেই সূচিত করেছে।
১৪. “নেমে এল তার মাথার ওপর।”– কার মাথার উপর কী নেমে এল ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় অপেক্ষায় থাকা বস্তার প্রিয়তমার মাথার ওপর ভারী পাথরের মতো একটার পর একটা বছর নেমে এল ।
১৫. “তারপর যুদ্ধ এল”– এখানে ‘তারপর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন ?
উত্তর – বক্তা তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর। এরপর এসেছে যুদ্ধ। এই পরম্পরা ফুটিয়ে তোলার জন্য ‘তারপর’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
১৬. কাকে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ? *****
উত্তর – যুদ্ধকে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের’ সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
১৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কারা খুন হয়েছিল ? **
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধে শিশু আর বাড়িরা খুন হয়েছে। অর্থাৎ শিশুরা রেহাই পায়নি। বাড়িগুলোও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে ।
১৮. “তারপর যুদ্ধ এল”– যুদ্ধের আগমনকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ?
উত্তর – যুদ্ধের আগমনকে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ।
১৯. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”- মেয়েটির পরিচয় দাও । ***
উত্তর – যে মেয়েটিকে ছেড়ে চলে এসেছিলেন বক্তা, সেই মেয়েটির ।মেয়েটি প্রকৃতপক্ষে ছিল কবির নারীরূপী জম্মভূমি ।
২০. “তারপর যুদ্ধ এল”- যুদ্ধ কীভাবে এল ? ***
উত্তর – সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন আর লোভ-লোলুপতার পথ ধরে যুদ্ধ এল । যুদ্ধ এল রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো ।
২১. “তারপর যুদ্ধ এল”– কোন যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘যুদ্ধ এল’ বলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলা হয়েছে ।
২২. ‘শিশু আর বাড়িরা খুন হলেও কার মৃত্যু হল না ? *
উত্তর – শিশু আর বাড়িরা খুন হলেও কথকের জন্য অপেক্ষারত মেয়েটির মৃত্যু হল না ।
২৩. “শিশু আর বাড়িরা খুন হলো”– ‘শিশু আর বাড়িরা’ খুন হয়েছিল কেন ?
উত্তর – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ রেহাই দেয়নি কাউকেই। বোমার আঘাতে বাড়ির ভিতরে শুয়ে থাকা নিরীহ শিশুরাও মারা যায়, বাড়িগুলিও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
২৪. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধের ফলে সমতলের কী অবস্থা হয়েছিল ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধের ফলে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গিয়েছিল ।
২৫. শান্ত হলুদ দেবতাদের কী পরিণতি হল ? **
উত্তর – শান্ত হলুদ দেবতারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়েন মাটিতে। তাঁদের পক্ষে আর স্বপ্ন দেখা সম্ভব হয়নি ।
২৬. শান্ত হলুদ দেবতারা কত বছর ধ্যানে ডুবেছিল ? ****
উত্তর – শান্ত হলুদ দেবতারা হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবেছিল ।
২৭. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।”- তারা কারা ? ***
উত্তর – এখানে ‘তারা’ হলেন শান্ত হলুদ দেবতারা ।
২৮. “উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে”-কারা, কী কারণে উলটে পড়ল ?
উত্তর – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিঘাতে মানুষের দেববিশ্বাসে ফাটল ধরেছিল। বোমার আঘাতে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল দেবালয়। ফলে দেবতারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে লুটিয়ে পড়েছিলেন মাটিতে।
২৯. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবির স্বপ্ন বিজড়িত বাড়ির পরিবেশ কেমন ছিল ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় স্বপ্ন বিজড়িত বাড়িটি ছিল ভারি মিষ্টি। সেখানে ছিল একটি বারান্দা। কথক সেই বারান্দার ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমোতেন। এ ছাড়া গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গও ছিল সেই বাড়িতে ।
৩০. ‘সেই মিষ্টি বাড়ি’– কোন বাড়ি ? তাকে মিষ্টি বলার কারণ কী ?
উত্তর – এখানে কথকের ফেলে যাওয়া বাল্যস্মৃতি বিজরিত বাড়ির কথা বলা হয়েছে। তাকে মিষ্টি বাড়ি বলার কারণ- তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কথকের সুমধুর ছোটোবেলার স্মৃতি ।
৩১. ‘সেই মিষ্টি বাড়ি’- মিষ্টি বাড়ির কী পরিণতি হয়েছিল ? **
উত্তর – মিষ্টি বাড়িটি যুদ্ধের তাণ্ডবে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তার বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল।
৩২. মিষ্টি বাড়ির বারান্দায় কী ছিল ?
উত্তর – মিষ্টি বাড়ির বারান্দায় ছিল ঝুলন্ত বিছানা। ছোটোবেলায় কথক সেখানে শুয়ে ঘুমোতেন ।
৩৩. মিষ্টি বাড়ির আশেপাশে কী ছিল ?
উত্তর – মিষ্টি বাড়ির আশেপাশে ছিল গোলাপি গাছ। এই গাছের পাতাগুলি ছিল হাতের পাতার মতো ছড়ানো ।
৩৪. “যেখানে আমি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম,”- কোনখানে ?
উত্তর – বক্তা তাঁর বাড়ির বারান্দার ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন ।
৩৫. ‘সব চূর্ণ হয়ে গেল’- কী সব চূর্ণ হয়েছিল ? ****
উত্তর – মিষ্টি বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা, ছড়ানো করতলের মতো পাতাওয়ালা গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ-সমস্ত কিছু চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
৩৬. ‘জ্বলে গেল আগুনে’– আগুনে কী কী জ্বলে গিয়েছিল ?
উত্তর – আগুনে জ্বলে গিয়েছিল বক্তার মিষ্টি বাড়ি, তার বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি এবং পুরোনো জলতরঙ্গ।
৩৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বক্তার বাড়িটি ছাড়া আর কী ধ্বংস হয়েছিল ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বক্তার বাড়িটি ছাড়া ধ্বংস হয়েছিল শহরটিও।
৩৮. “যেখানে ছিল শহর”– যেখানে শহর ছিল যুদ্ধের পর সেখানে কী অবস্থা হয়েছিল ?
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যেখানে শহর ছিল, যুদ্ধের অভিঘাতে সেখানে ছড়িয়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা।
৩৯. “রক্তের একটা কালো দাগ।”- কোথায় রক্তের কালো দাগ দেখা গিয়েছিল ? ****
উত্তর – শহরের ধ্বংসস্তূপে রক্তের একটা কালো দাগ দেখা গিয়েছিল ।
৪০. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় শেষ পর্যন্ত কে অপেক্ষায় থেকে যায় ? **
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বক্তার ফিরে আসার আশায় দিনগোনা মেয়েটি শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থেকে যায় ।
৪১. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় অপেক্ষারত মেয়েটি আসলে কে ? **
উত্তর – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় অপেক্ষারত মেয়েটি আসলে স্বদেশ বা জন্মভূমি।
মার্ক – 3 প্রশ্ন উত্তর
১. ‘অসুখী একজন’ কবিতার কবি কে ? কবিতায় প্রকৃত অসুখী কে ? ১+২ **
উত্তর – কবির নাম : ‘অসুখী একজন’ কবিতার কবি হলেন পাবলো নেরুদা।
প্রকৃত অসুখী: সমাজবিদ্রোহ বা গৃহযুদ্ধ বক্তা বা কবিকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে। তিনি তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আর কোনোদিনই তিনি ফিরে আসেননি। সেদিক থেকে অসুখী হলেন প্রিয়তমার কাছে ফিরে আসতে ব্যর্থ কবি। আবার প্রিয়তমা বছরের পর বছর শবরীর প্রতীক্ষায় দিন গুনেছেন। কিন্তু প্রিয়তমকে কাছে পাননি। তাই অসুখী তিনিও। অন্যদিকে বৃহত্তর অর্থে যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিন্নমূল, নষ্টনীড় প্রতিটি মানুষই তো আসলে অসুখী।
২. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”- কে, কাকে ছেড়ে দিলেন? তাকে তিনি কীভাবে ছেড়ে দিলেন ? ১+২ ***
উত্তর – যে, যাকে ছেড়ে দিলেন: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বক্তা বা কবি তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে দিলেন।
যেভাবে ছেড়ে দিলেন: সমাজবিদ্রোহ বা গৃহযুদ্ধের কারণে বক্তা বা কবিকে জন্মভূমি ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে বহুদূরে। যাওয়ার সময় তাঁর প্রিয়তমা অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকেন দরজায়। প্রিয় এই নারী জানতেন না বক্তা বা কবি আর ফিরে আসবেন না। এখানে আছে বিচ্ছেদের এক করুণ মর্মস্পর্শী ছবি।
৩. ‘অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে’- কে, কাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন ? কেন দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন ? ১+২ *****
উত্তর – যে, যাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন: বক্তা বা কবি তাঁর প্রিয়তমাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।
দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ: বিদ্রোহ, বিপ্লব, সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন সফল করার তাগিদে কবি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাঁর স্বদেশভূমি। দূরে চলে গেছেন তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে। প্রিয়তমা তাঁর ফিরে আসার আশায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন প্রতীক্ষায়। কবি আর কখনও ফিরে আসেননি।
৪. “সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।”-‘সে’ কে ? ‘আমি আর কখনো ফিরে আসব না’ বলার কারণ কী ? ১+২ *****
উত্তর – ‘সে’-র স্বরূপ: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘সে’ বলতে কবি-কথকের প্রিয়তমা তথা স্বদেশভূমিকে বোঝানো হয়েছে।
‘ফিরে আসব না’ বলার কারণ: বিপ্লব বা সমাজ পরিবর্তনের পথে হাঁটা সৈনিকদের জীবন ‘দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার’-এর মতোই ভয়ংকর। দেশ ছাড়তে হয়। দেশে ফেরার নিশ্চয়তাও হারিয়ে যায়। ফিদেল কাস্ত্রো, চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলাদের জীবনই তার প্রমাণ। তাই কবি-কথক ওই কথা বলেছেন।
৫. “ঘাস জন্মালো রাস্তায়”- কোন রাস্তায় ? উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য কী ? ১+২
উত্তর – রাস্তার স্বরূপ: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি বা বস্তা যে রাস্তা ধরে সমাজ পরিববর্তনের আশায় দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সেই রাস্তার কথা বলা হয়েছে।
উদ্ধৃতাংটির তাৎপর্য: আলোচ্য কবিতায় ঘাস জন্মেছে রাস্তায়। ঘাস এখানে বিস্মৃতির প্রতীক। সমাজবিপ্লবের তাগিদে দেশ ছাড়া কবি-কথকের চলে যাওয়ার পথে ঘাস জন্মেছে, মুছে গেছে তার স্মৃতিচিহ্ন। ফিরে আসার পথও রুদ্ধ হয়ে গেছে। কথকের স্মৃতি ভুলে যাওয়া আর তার ফিরে না আসার রূপকথা মূর্ত হয়ে উঠেছে রাস্তায় ঘাস জন্মানোর উল্লেখে।
৬. “নেমে এল তার মাথার ওপর”- কার মাথার ওপর, কী নেমে এল ? কীভাবে এবং কেন নেমে এল ? ১+২
উত্তর – যার মাথার ওপর নেমে এল: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কথকের অপেক্ষায় থাকা মেয়েটির মাথার ওপর পাথরের মতো একটার পর একটা বছর নেমে এল।
যেভাবে এবং যে কারণে নেমে এল: পাহাড়ি এলাকায় যখন ধস নামে তখন একটার পর একটা পাথর নেমে এসে রাস্তার দখল নেয়। এখানে তেমনি বছরগুলো গুরুভার পাথরের মতো নেমে এসেছে মেয়েটির মাথার ওপর। মহাকালের অঙ্গুলি হেলনে একের পর এক বছর কেটেছে। প্রিয়তমের বিচ্ছেদবেদনা মেয়েটির কাছে হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। তাই এই সময় যেন পাথরের মতো অলঙ্ঘ্য, অটল হয়ে নেমে এসেছে মেয়েটির জীবনে।
৭. “তারপর যুদ্ধ এল”- কোন যুদ্ধ ? যুদ্ধে কী ঘটল ? ১+২ ****
উত্তর – যুদ্ধের প্রকৃতি: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধ বলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বোঝানো হয়েছে।
যুদ্ধে যা ঘটল: রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এসেছে।বিপন্ন হয়েছে জনজীবন। নিরীহ নিষ্পাপ শিশুরাও মারা গেছে। ধ্বংস হয়েছে বাড়ি, পরিবার। সমতলে ধরে গেছে আগুন। শান্ত হলুদ দেবতারা ছিটকে পড়েছেন মন্দির থেকে। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থেকেছে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা আর রক্তের কালো দাগ।
৮. ‘পর পর পাথরের মতো’– পাথরের মতো কী ? তাকে পাথরের মতো বলা হয়েছে কেন ? ১+২
উত্তর – পাথরের মতো যা : পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় পাথরের মতো হল, প্রিয়তমের ফিরে আসার আশায় দিনগোনা মেয়েটির কাছে এক একটা বছর।
পাথরের মতো বলার কারণ: পাথর যেমন গুরভার, বিরহের বছরগুলোও তেমনি প্রতীক্ষারত মেয়েটির কাছে গুরুভার। পাথরের মতো নেমে আসা এই একটার পর একটা বছর মেয়েটিকে যন্ত্রণার্ত করেছে, ক্ষতবিক্ষত করেছে। তার বিচ্ছেদবেদনা পাথরের মতোই ভারী হয়ে উঠেছে। তার অন্তহীন অপেক্ষা পাথরের মতোই অটল হয়ে গেছে।
৯. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”- কোন মেয়েটির ? তার কী পরিণতি হল ? ১+২ *****
উত্তর – মেয়েটির পরিচয়: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি-কথকের বাড়ি ফিরে আসার আশায় দিনগোনা মেয়েটির কথা এখানে বলা হয়েছে। তবে সে শুধুমাত্র কোনো নারী নয়, সে কবি বা বক্তার স্বদেশভূমি। তাকে ঘিরে তাঁর ভালোবাসা, মূর্ত মানবতাই নারীমূর্তিতে প্রকটিত।
মেয়েটির পরিণতি: যুদ্ধে শিশু ও বাড়িরা খুন হলেও মেয়েটির মৃত্যু হয়নি। সে কথকের প্রত্যাবর্তনের আশায় একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকে দরজায়, শবরীর প্রতীক্ষায়। তখনও তার হৃদয়ের আকৃতি- “শূন্য এ-বুকে পাখি মোর আয়, ফিরে আয় ফিরে আয়।“
১০. “সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন”- কী কারণে সমতলে আগুন ধরে গেল ? আগুন ধরে যাওয়ার ফলে কী হয়েছিল ? [ অথবা] “সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন”-কখন সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গিয়েছিল ? সেই আগুনের প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল ? ১+২ *****
উত্তর – সমতলে আগুন ধরার কারণ বা সময়: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো বিশ্বযুদ্ধ এসেছিল। তার ফলেই সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গিয়েছিল। গোলাবারুদের আগুন পুড়িয়ে দেয় ঘরবাড়ি, শস্যগোলা। অমানবতার আগুন ধ্বংস করে মানুষের মূল্যবোধ। যুদ্ধ এভাবেই আগুন ধরায় মানবসভ্যতায়।
আগুনের ফল বা প্রতিক্রিয়া: যুদ্ধের আগুন আনে ধ্বংসের ফাগুন। সেই ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়ায় ভেঙে যায় মন্দির। টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়ে শান্ত হলুদ দেবতাদের পাথরের প্রতিকৃতি। পুড়ে যায় মিষ্টি বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ। যেখানে শহর ছিল, সেখানে পড়ে থাকে শুধু কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর ভাঙা পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা।
১১. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।”- ‘তারা’ কারা ? তারা কেন স্বপ্ন দেখতে পারল না ? ১+২ *****
উত্তর – ‘তারা’ বলতে যাদের কথা বলা হয়েছে: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘তারা’ বলতে শান্ত হলুদ দেবতাদের বোঝানো হয়েছে।
স্বপ্ন দেখতে না পারার কারণ: মানুষের অন্তরের বিশ্বাসই পাথরকে দেবতায় পরিণত করে। দেবতাকে ঘিরে মানুষের ভক্তি, বিশ্বাস আর দিনবদলের স্বপ্ন ডানা মেলে। কিন্তু যুদ্ধের অভিঘাতে দেবতারা ছিটকে পড়েছেন মন্দির থেকে। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে তাঁদের শরীর। দেবতাদের ঘিরে মানুষের বিশ্বাসও ভেঙে খানখান হয়ে গেছে। দেববিশ্বাস হয়ে পড়েছে অস্তিত্বহীন। তাই তাঁরা আর স্বপ্ন দেখতে পারেননি।
১২. ‘সেই মিষ্টি বাড়ি’– বাড়িকে মিষ্টি বলা হয়েছে কেন? এই বাড়ির স্মৃতিচারণ করার কারণ কী ? ২+১
উত্তর – বাড়িকে ‘মিষ্টি’ বলার কারণ: শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি সবসময়েই মধুর, মিষ্টি। সত্যিই তো “আমার আমি হারিয়ে খোঁজে আমার ছেলেবেলা”। কবি-কথকের শৈশব-কৈশোর কেটেছে যে বাড়িতে, যাকে ছেড়ে তিনি বহুদুরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাকে দূর থেকে তাই তাঁর ‘মিষ্টি বাড়ি’ মনে হয়েছে।
স্মৃতিচারণের কারণ: ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন বছর পনেরো-ষোলো বিদেশে কাটিয়েও ভিটেমাটির টান উপেক্ষা করতে পারেনি। কবি-কথকও পারেননি তাঁর অতীত স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটির ভাবনা মন থেকে মুখে ফেলতে। তাই স্মৃতিকাতরতায় (Nostalgia) আক্রান্ত হয়েছেন।
১৩. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”– কোন কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে ? এই পরিণতির কারণ কী ? ২+১
উত্তর – যা যা চূর্ণ হয়ে গেল: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যা যা চূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-কথকের মিষ্টি বাড়ি, তার বারান্দা আর তাতে ঝুলন্ত বিছানা, ছড়ানো করতলের মতো পাতাযুক্ত গোলাপি গাছ, চিমনি আর পুরোনো জলতরঙ্গ।
পরিণতির কারণ: যুদ্ধের আগুন তো আরও মারাত্মক। সে গ্রাস করেছে কবি-কথকের স্মৃতি বিজড়িত সমস্ত কিছুকে। কবি-কথকের দেহ-মন নিঃস্ব করে দিয়েছে। আসলে যুদ্ধ এভাবেই সবার সবকিছুকে গ্রাস করে নেয়।
১৪. “যেখানে ছিল শহর”– সেখানে কী দেখা গেল ? এই পরিবর্তনের কারণ কী ? ২+১
উত্তর – শহরের জায়গায় যা দেখা গিয়েছিল: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যেখানে শহর ছিল, যুদ্ধের অভিঘাতে সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা। এদিকে-ওদিকে ছড়িয়ে ছিল পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। রক্তের একটা কালো দাগ রয়ে গেল যুদ্ধের বীভৎস স্মৃতির সাক্ষী হিসেবে।
পরিবর্তনের কারণ: একদা যা ছিল শহর, বর্তমানে তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে যুদ্ধের করাল গ্রাসে। তাই যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব হিসেবেই শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
১৫. “রক্তের একটা কালো দাগ।”– রক্তের দাগকে কালো বলার কারণ কী ? উদ্ধৃতাংশে কোন বীভৎসতার আভাস আছে ? ২+১
উত্তর – রক্তের দাগকে কালো বলার কারণ: রক্তের রং লাল। আর তা শুকিয়ে গেলে হয়ে যায় কালচে। পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধ যে ভয়াবহ ধ্বংস ডেকে এনেছে তার স্মৃতি রয়ে গেছে রক্তের কালো দাগে। অন্যদিকে যুদ্ধ মানে তো মানবতার কলঙ্ক। তারও স্মৃতি বহন করে রক্তের দাগ হয়ে উঠেছে কালো।
বীভৎসতার আভাস: রক্তের কালো দাগ সাম্রাজ্যবাদী শাসক শক্তির আগ্রাসন, পররাষ্ট্রলোলুপতা, মানবতার অবক্ষয়ের বীভৎস ইঙ্গিত বহন করে। যুদ্ধ মানেই হিংসা, রক্তপাত। মনুষ্যত্বের শ্মশানযাত্রা। রক্তের কালো দাগে আছে তারই আভাস।
১৬. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”- কোন মেয়েটি ? বক্তার জন্য তার অপেক্ষার কারণ কী বা সে কেন অপেক্ষা করে ? ১+২ ***
উত্তর – মেয়েটির পরিচয়: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি-কথক যাকে দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গিয়েছিলেন, সেই মেয়েটি প্রিয়তমের ফিরে আসার প্রতীক্ষায় তখনও দিন গুনছিল।
অপেক্ষার কারণ: যুদ্ধ-দাঙ্গা ক্ষণিকের। একদিন শেষ হয়ে যাবেই। কিন্তু মানুষের ভালোবাসার গল্প কোনোদিন ফুরিয়ে যায় না। স্বদেশভূমির প্রতীক নারী সেই ভালোবাসা, মানবতার অপেক্ষায় দিন গুনছে। তার অপেক্ষা মনুষ্যত্বের জাগরণের, শুভবোধের উদ্বোধনের।
মার্ক – 5 প্রশ্ন উত্তর
১. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”- কে, কাকে ছেড়ে দিলেন? তাকে কোন অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল ? ছেড়ে যাওয়ার কারণ কী ? ১+২+২ ***
উত্তর – যে, যাকে ছেড়ে দিলেন: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি-কথক তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে দিলেন।
যে অবস্থায় ছেড়ে যাওয়া হয়েছিল: কবি-কথক যখন ঘর ছেড়ে, দেশ ছেড়ে চলে যান তখন তাঁর প্রিয়তমা দরজায় দাঁড়িয়েছিলেন। দরজায় কবি বা বস্তার ফিরে আসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয়তমাকে শেষ বিদায় জানিয়ে কবি-কথক চলে গিয়েছিলেন দূরে, বহুদুরে।
ছেড়ে যাওয়ার কারণ: সমাজ বিপ্লবের তাগিদে কবি-কথককে প্রিয়তমার স্নেহাঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে দূরে। বিপ্লব কিংবা সমাজ-পরিবর্তন তো আর ঘরে বসে হয় না। কবি-কথকও তো আর দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নন্দলাল নন। তাই তিনি তাঁর প্রিয়তমা তথা স্বদেশভূমিকে ছেড়ে দূরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
(৩) “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”– ‘আমি’ কে? ‘তাকে বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কবিতায় ‘আমি’-র বেদনা কীভাবে ফুটে উঠেছে ?১+১+৩
উত্তর – ‘আমি’-র স্বরূপ: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘আমি’ হলেন কবি বা বক্তা বা কথক।
‘তাকে’-র স্বরূপ: ‘তাকে’ বলতে কবি-কথকের প্রিয়তমাকে বোঝানো হয়েছে। তবে বৃহত্তর অর্থে এই ‘তাকে’ হল কথকের মাতৃভূমি বা স্বদেশ।
‘আমি’-র বেদনা: কবি বা বক্তাকে সমাজ পরিবর্তনের বৃহত্তর আদর্শের টানে ঘর ছাড়তে হয়েছে, দূরে চলে যেতে হয়েছে প্রিয়তমারূপী স্বদেশভূমির থেকে।
চিলির সমাজবিপ্লবের সম্ভাবনাকে সফল করার জন্য স্বদেশভূমি ত্যাগ করেছেন কবি-কথক। স্বদেশবিচ্ছিন্ন সমস্ত মানুষের প্রতিভূ হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রিয়তমা দেশমাতৃকাকে ছেড়ে দূরে চলে যেতে গিয়ে তিনি বেদনার্ত হয়েছেন। কারণ তিনি আর কখনোই মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবেন না। দূর থেকেই তিনি অনুভব করেন তার অধরা মাধুরী। সময়ের নিয়মে বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় তাঁর পায়ের দাগ। ঘাস জন্মায় রাস্তায়। যুদ্ধ আসে। কবি-কথকের স্মৃতি বিজরিত মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, তাতে ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, পুরোনো জলতরঙ্গ-সবকিছুই পুড়ে খাক হয়ে যায় আগুনে। তিনি অসহায়। শহর পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। শুধু জেগে – থাকেন কবির প্রিয়তমা আর তাঁর অন্তহীন অপেক্ষা। স্বদেশভূমিরূপী প্রিয় নারীর সঙ্গে মিলিত হতে না পারার যন্ত্রণা শুধু কবি-কথকের হৃদয়ে নীরবে রক্ত ঝরায় ।
(৪) “তারপর যুদ্ধ এল”- ‘তারপর’ কথাটির দ্বারা কবি কোন সময়ের কথা বলেছেন ? যুদ্ধের কোন প্রভাব কবি প্রত্যক্ষ করেছিলেন ? ২+৩ *****
উত্তর – ‘তারপর’ কথাটির দ্বারা যে সময়ের উল্লেখ আছে: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন সফল করার তাগিদে কবি-কথক দেশ ছাড়েন। সময়ের প্রবহমানতার সঙ্গে সঙ্গে মুছে যায় বক্তার পায়ের দাগ। ঘাস জন্মায় রাস্তায়। গুরুভার পাথরের মতো একটা বছর নেমে আসে প্রিয়জনের ফিরে আসার আশায় অপেক্ষারত মেয়েটির মাথার ওপর। এরপর যুদ্ধ শুরু হয়। ‘তারপর’ শব্দটির মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরুর এই মাহেন্দ্রক্ষণকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
যুদ্ধের প্রভাব: যুদ্ধ তো দেয় না কিছুই, বরং কেড়ে নেয় সবকিছু। রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এসেছে। শিশুরাও রেহাই পায়নি তার মারণ কামড় থেকে। ধ্বংস হয়েছে পরিবার। আগুন লেগেছে সমতলে। শান্ত হলুদ দেবতারা ছিটকে পড়েছেন মন্দির থেকে। কবি-কথকের ফেলে আসা মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, তাতে ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, পুরোনো জলতরঙ্গ সবকিছু চূর্ণ হয়েছে যুদ্ধের অভিঘাতে। শহর পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর ভাঙা পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ছড়িয়ে থেকেছে যত্রতত্র। রক্তের কালো দাগ বীভৎস হত্যালীলার স্বাক্ষর বহন করেছে। এভাবেই যুদ্ধের সর্বনাশা ধ্বংসের ছবি প্রত্যক্ষ করেছেন কবি।
(৫) “সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”– কোন মেয়েটির ? কীসে তার মৃত্যু হল না ? মৃত্যু কেন হল না ? ১+১+৩
উত্তর – মেয়েটির পরিচয়: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে মেয়েটি তার প্রিয়তমের অর্থাৎ কবিতার কথকের ফিরে আসার আশায় দরজায় দাঁড়িয়েছিল, তার কথা বলা হয়েছে।
মৃত্যু হয়নি যাতে: রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো কালান্তক যুদ্ধ এলেও মেয়েটির মৃত্যু হয়নি।
মৃত্যু না হওয়ার কারণ: অপেক্ষারত মেয়েটি তো নিছক শরীরী কোনো নারী নয়, সে স্বদেশভূমির প্রতীক; চিরন্তন ভালোবাসা, মানবতা, শুভবোধের প্রতীক। যুদ্ধ, দাঙ্গা-সবকিছুই একদিন শেষ হয়ে যায়। ধ্বংসস্তূপে মাথা উঁচিয়ে থাকে মানুষের সুকুমার বৃত্তি- “শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ পরে/ ওরা কাজ করে।” প্রতিটি ঘরছাড়া মানুষের স্বদেশ-জন্মভূমির প্রতি টান তো চিরস্ত্র সন। এই টান, এই আকর্ষণই স্বদেশভূমির প্রতীক মেয়েটিকে জীবন্ত রাখে। যুদ্ধের হিংসা, পাশবতার মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দেয় সৌহার্দ্যের লাল সূর্য, সম্প্রীতির শ্বেত কপোত। ভালোবাসার প্রতীক মেয়েটি অমর হয়ে যায়। মনুষ্যত্ব, মানবতার বিজয় বৈজয়ন্তী উড়তে থাকে।
(৬) “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”- আগুন কেন জ্বলেছিল ? কী কী চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল ? ৩+২ ****
উত্তর – আগুন জ্বলার কারণ: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এসেছে, গ্রাস করেছে মানবসভ্যতাকে। গোলা-বারুদ-বোমার মুহুর্মুহু বর্ষণে জ্বলে উঠেছে আগুন। তা গিলে খেয়েছে মানুষের কৃতি আর কীর্তিকে।
যা যা চূর্ণ হয়েছিল: যুদ্ধের অভিঘাতে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেছে। হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে থাকা শান্ত হলুদ দেবতারা ছিটকে পড়েছেন মন্দির থেকে। তাঁরা স্বপ্ন দেখতে এবং দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কবি-কথকের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত মিষ্টি বাড়িটিও রেহাই পায়নি যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে। বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, ছড়ানো করতলের মতো পাতাযুক্ত গোলাপি গাছ, চিমনি, পুরোনো জলতরঙ্গ সমস্ত কিছুই চূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে গেল আগুনে। আগুনের সর্বগ্রাসী তাণ্ডবের চিহ্ন হিসেবে ঝাঁ-চকচকে শহরের জায়গায় পড়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর ভাঙা পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা।
৭. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”- মেয়েটির অপেক্ষার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো । [অথবা], “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”- অপেক্ষমাণ এই নারীর মধ্য দিয়ে কবি মানবীয় ভালোবাসার যে অনির্বাণ রূপটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো। ৫ ***
উত্তর – দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের সহজাত। ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি পাবলো নেরুদার সেই স্বদেশপ্রেম তথা মানবপ্রেমেরই শাশ্বত বাণী বহন করেছে।
বিচ্ছেদ ও প্রতীক্ষা: বিভিন্ন কারণে মানুষ তার স্বদেশ, তার শিকড়ের টান ছিঁড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। ফেরার তীব্র ইচ্ছা থাকলেও তা আর সম্ভব হয় না। ফেরেননি এ কবিতার কথকও। প্রিয়তমাকে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে কবি-কথক সমাজ পরিবর্তনের আদর্শ সফল করার জন্য চলে গেছেন বহুদুরে। এই প্রিয়তমা তো আসলে কবি-কথকের স্বদেশভূমি।
প্রাণঘাতী যুদ্ধ: বহু বছর কেটে গেছে। যুদ্ধ এসেছে রস্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো। শিশুরাও রেহাই পায়নি যুদ্ধের করাল গ্রাস থেকে। পরিবার হয়েছে বিধ্বস্ত। মাথার ওপর থেকে চলে গেছে ছাদের নিশ্চিত নিরাপত্তা। কিন্তু সেসময়েও অপেক্ষারত মানবতা, ভালোবাসার শ্রীময়ী প্রতীক মাতৃভূমি মৃত্যুহীন প্রতীক্ষায় প্রহর গোনেন।
অনির্বাণ ভালোবাসা: কবি-কথকের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, তাতে ঝুলন্ত বিছানা, বাগানের গোলাপি গাছ, চিমনি, পুরোনো জলতরঙ্গ-সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। বেঁচে থাকে শুধু প্রিয়তমা, জ্বলে থাকে ভালোবাসার অনির্বাণ দীপশিখা। যুদ্ধ যতই প্রাণঘাতী হোক, সে মানুষের অন্তরের স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রেমকে নষ্ট করতে পারে না।
ভালোবাসাই স্বদেশ: দেশের প্রতি, জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসাই তো নির্জীব ভূখণ্ডকে সজীব করে, শরীরী মূর্তি দেয়। সে হয়ে ওঠে অন্তহীন অপেক্ষায় থাকা এক নারী। তার অপেক্ষা শুভবোধের জাগরণের, মানবতা, মনুষ্যত্বের উজ্জীবনের। ভয়াবহ যুদ্ধের আবহে এ কবিতা তাই নিটোল প্রেমের কবিতা।
৮. ‘অসুখী একজন’ কবিতার মূল বক্তব্য বিষয় সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তর – দেশের প্রতি মানুষের ভালোবাসাও অন্তহীন। পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটিও ভয়াবহ যুদ্ধের পটভূমিকায় শাশ্বত স্বদেশপ্রেমের কবিতা।
বিচ্ছেদ: সমাজ বিপ্লবের স্বপ্ন সফল করার আশায় কবি-কথক তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেছেন দূরে, বহুদূরে। তিনি জানতেন না, কথক আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না।
সময় বহমান: সময় বয়ে চলে নদীর মতো। কুকুর চলে যায়। হেঁটে যায় গির্জার নান। সময়ের সরণি বেয়ে সপ্তাহ-মাস-বছর কেটে যায়।
বিস্মৃতির যন্ত্রণা: বৃষ্টি ধুয়ে দেয় কবি-কথকের পায়ের দাগ। এই বৃষ্টি তো আসলে বিস্মৃতির প্রতীক। ঘাস জন্মায় রাস্তায়। এই ঘাস কবি-কথকের ফিরে আসার পথকেই যেন রুদ্ধ করে দেয়। গুরুভার পাথরের মতো বছরগুলো নেমে আসে অপেক্ষারত প্রিয়তমার মাথার ওপর।
যুদ্ধের বীভৎস রূপ: রক্তের আগ্নেয়পাহাড়ের মতো যুদ্ধ এসেছে। খুন হয়েছে নিরীহ, নিষ্পাপ শিশুরা। পরিবার বিধ্বস্ত হয়েছে। তবু শাশ্বত ভালোবাসার প্রতীক মেয়েটি রয়ে গেছে অমর।
ধ্বংসের তাণ্ডব: সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেছে যুদ্ধের অভিঘাতে। শান্ত হলুদ দেবতারা ছিটকে পড়েছেন মন্দির থেকে। তাঁদের ঘিরে মানুষের বিশ্বাস, আস্থা, স্বপ্নও টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কবি-কথকের স্মৃতি বিজড়িত মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, বাগানের গোলাপি গাছ, চিমনি, পুরোনো জলতরঙ্গ-সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। যুদ্ধ নষ্ট করেছে নস্টালজিক ভাবনাকেও।
শহরের রূপ: একদা ঝাঁ-চকচকে শহর পরিণত হয়েছে কাঠকয়লা, -দোমড়ানো লোহা আর ভাঙা পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথার স্তূপে। রক্তের ‘একটা কালো দাগ রেখে গেছে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর স্মৃতি।
ভালোবাসা অনির্বাণ: যুদ্ধ-ধ্বংসের মাঝখানেও জেগে থাকে ভালোবাসার অনির্বাণ দীপশিখা। কারণ প্রেম চিরন্তন, ভালোবাসা মৃত্যুঞ্জয়। দেশের মানুষের দেশে ফিরে আসার অপেক্ষায় তাই প্রহর গোনেন স্বদেশভূমি, শুভবোধের প্রতীক প্রিয়তমা।