আফ্রিকা কবিতা প্রশ্ন উত্তর // রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর // দশম শ্রেণী বাংলা // Africa Kobita Class 10 Question Answer
আফ্রিকা কবিতা
প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, এই পোস্টটিতে আমি তোমাদের দেখিয়েছি পশ্চিমবঙ্গ মধ্য শিক্ষা পর্ষদের (WBBSE) মাধ্যমিক / দশম শ্রেণীর বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আয় আফ্রিকা কবিতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং পরীক্ষায় কমন পাওয়ার মতো প্রশ্ন উত্তর ও সাজেশন । আর হ্যাঁ, একটা কথা মনে রাখবে যে প্রশ্নগুলির পাশে বেশি স্টার মার্ক (*) সেই প্রশ্নগুলির খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সাজেশনের অন্তর্ভুক্ত । এতো সব প্রশ্নের উত্তর যদি তোমরা না পড়তে পারো , তবে স্টার মার্ক (*) প্রশ্ন উত্তরগুলি পড়লেই হবে । কিন্তু সবচেয়ে বেশি স্টার মার্ক (*) প্রশ্ন উত্তরগুলি আগে পড়বে ।
মার্ক – 1 ( MCQ )
১. ‘আফ্রিকা’ কবিতার রচয়িতা- (ক) নেলসন ম্যান্ডেলা (খ) শঙ্খ ঘোষ (গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ঘ) জয় গোস্বামী
উত্তর – (খ) শঙ্খ ঘোষ
২. ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি কো কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ? – (ক) পুনশ্চ (খ) পত্রপুট (গ) বলাকা (ঘ) প্রান্তিক
উত্তর – (খ) পত্রপুট
৩. ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় কোন পত্রিকায় ? – (ক) ভারতী (খ) বালক (গ) প্রবাসী (ঘ) দেশ
উত্তর – (গ) প্রবাসী
৪. ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আদিমযুগ ছিল – (ক) অন্ধকার (খ) উদ্ভ্রান্ত (গ) সহজ (ঘ) আন্তরিক
উত্তর – (খ) উদ্ভ্রান্ত
৫. ‘আফ্রিকা’ কবিতায় বর্ণিত ‘স্রষ্টা’ হলেন – (ক) কবি স্বয়ং (খ) জগতনির্মাতা (গ) ঔপনিবেশিক শক্তি (ঘ) ক্রীতদাস
উত্তর – (খ) জগতনির্মাতা
৬. “…. নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন…“-কী করছিলেন ? (ক) ধ্বংস (খ) বিধ্বস্ত (গ) বিচ্ছিন্ন (ঘ) বিদ্রুপ
উত্তর – (খ) বিধ্বস্ত
৭. আদিম যুগে স্রষ্টার কার প্রতি অসন্তোষ ছিল ? – (ক) দয়াময় দেবতার প্রতি (খ) কবির সংগীতের প্রতি (গ) নিজের প্রতি (ঘ) ধরিত্রীর প্রতি
উত্তর – (গ) নিজের প্রতি
৮. ‘প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে”–‘প্রাচী’ কথার অর্থ কী ? – (ক) প্রাচীন (খ) প্রাচীর (গ) পূর্ব দিক (ঘ) পচনশীল
উত্তর – (গ) পূর্ব দিক
৯. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে,’ – কাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ? – (ক) ইংল্যান্ডকে (খ) আমেরিকাকে (গ) আফ্রিকাকে (ঘ) ভারতকে
উত্তর – (গ) আফ্রিকাকে
১০. স্রষ্টা আফ্রিকাকে নিবিড় পাহারায় বেঁধেছিলেন – (ক) সমুদ্রের (খ) হিংস্র জন্তুর (গ) সাম্রাজ্যবাদী শক্তির (ঘ) বনস্পতির
উত্তর – (ঘ) বনস্পতির
১১. আফ্রিকাকে বাঁধা হয়েছিল – (ক) বালুকাময় মরুভূমিতে (খ) কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে (গ) আলোকোজ্জ্বল প্রাসাদে (ঘ) রুদ্র সমুদ্রে
উত্তর – (খ) কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে
১২. ‘তুমি সংগ্রহ করছিলে’ – (ক) প্রাকৃতিক সম্পদ (খ) দুর্বোধ সংকেত (গ) দুর্গমের রহস্য (ঘ) গুপ্ত রহস্য
উত্তর – (গ) দুর্গমের রহস্য
১৩. আফ্রিকা কখন দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ করছিল ? – (ক) গ্রীষ্মাকালে (খ) ছুটির অবসরে (গ) নিভৃত অবকাশে (ঘ) মরু অভিযানে
উত্তর – (গ) নিভৃত অবকাশে

১৪. “চিনছিলে ___________ দুর্বোধ সংকেত,”– শূন্যস্থানের সঠিক শব্দগুচ্ছটি হবে – (ক) মাঠ-ঘাট-বাতাসের (খ) জলস্থল-আকাশের (গ) গ্রহ-তারা-রবির (ঘ) গিরি-গুহা-পারাবারের
উত্তর – (খ) জলস্থল-আকাশের
১৫. “প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু” – কী কাজে রত ছিল ? –(ক) মন্ত্র জাগাচ্ছিল (খ) সম্মোহিত করছিল (গ) ধ্বংস করছিল (ঘ) সৃষ্টি করছিল
উত্তর – (ক) মন্ত্র জাগাচ্ছিল
১৬. কোথায় প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু ক্রিয়াশীল ছিল ? – (ক) চেতনার জগতে (খ) অবচেতন মনে (গ) চেতনাতীত মনে (ঘ) নিভৃত মনে
উত্তর – (গ) চেতনাতীত মনে
১৭. “বিরূপ করছিলে ভীষণকে” কীভাবে ? –(ক) বিরূপের ছদ্মবেশে (খ) তান্ডবের দুন্দুভিনিনাদে (গ) অশ্রুতে মিশে (ঘ) দুর্গমের রহস্যে
উত্তর – (ক) বিরূপের ছদ্মবেশে
১৮. ‘বিদ্রুপ করছিলে…’– কাকে বিদ্রুপ করছিল ? – (ক) সমুদ্রকে (খ) বনস্পতিতে (গ) ভীষণকে (ঘ) বিধাতাকে
উত্তর – (গ) ভীষণকে
১৯. ‘আফ্রিকা’ কবিতায় কে বিদ্রুপ করছিল ? – (ক) আফ্রিকা (খ) বিধাতা (গ) প্রকৃতি (ঘ) রুদ্র
উত্তর – (ক) আফ্রিকা
২০. “শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে” কীভাবে ? – (ক) অতীত জাদুতে (খ) দুর্গমের রহস্যে (গ) বিরূপের ছদ্মবেশে (ঘ) তান্ডবের দুন্দুভিনিনাদে
উত্তর – (ঘ) তান্ডবের দুন্দুভিনিনাদে
২১. “হায় ছায়াবৃতা,”– ছায়াবৃতা কে ? – (ক) ভারতমাতা (খ) আফ্রিকা (গ) ভিক্টোরিয়া (ঘ) এশিয়া
উত্তর – (খ) আফ্রিকা
২২. “কালো ঘোমটার নীচে”– ‘কালো ঘোমটা’ বলা হয়েছে – (ক) ছায়ানিবিড়তাকে (খ) গভীর অন্ধকারকে (গ) আফ্রিকার মানবরূপ (ঘ) আফ্রিকার হিংস্র রূপ
উত্তর – (ক) ছায়ানিবিড়তাকে
২৩. ‘কালো ঘোমটার নীচে’ কী অপরিচিত ছিল ? – (ক) ঔপনিবেশিকদের মানবরূপ (খ) বুদ্রসমুদ্রের রূপ (গ) আফ্রিকার মানবরূপ (ঘ) আফ্রিকার হিংস্র রূপ
উত্তর – (গ) আফ্রিকার মানবরূপ
২৪. “উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।”– ‘আবিল’ শব্দের অর্থ হল –(ক) কলুষিত (খ) পবিত্র (গ) অপবিত্র (ঘ) করুণ
উত্তর – (ক) কলুষিত
২৫. এল ওরা’ – ওরা কারা ? (ক) ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদীরা (খ) কৃষকরা (গ) শ্রমিকরা (ঘ) আদিবাসীরা
উত্তর – (ক) ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদীরা
২৬. ‘এল ওরা’ – ওরা কী নিয়ে এসেছিল ? – (ক) লোহার বলয় (খ) লোহার সিন্দুক (গ) লোহার হাতকড়ি (ঘ) বন্দুক
উত্তর – (গ) লোহার হাতকড়ি
২৭. ‘নখ যাদের তীক্ষ্ণ’– কাদের নখ তীক্ষ্ণ ছিল ? (ক) ঔপনিবেশিক শাসকদের (খ) আফ্রিকার আদিবাসীদের (গ) আমেরিকার আদিবাসীদের (ঘ) শিকারীদের
উত্তর – (ক) ঔপনিবেশিক শাসকদের
২৮. “নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার __________ চেয়ে,”–শূন্যস্থান পূরণ করো – (ক) সূর্যহারা অরণ্যের (খ) নেকড়ের (গ) পশুর (ঘ) হিংস্রতার
উত্তর – (খ) নেকড়ের
২৯ ‘গর্বে যারা অন্ধ তোমার……।” কাদের চেয়েও অন্ধ ? – (ক) অমানিশার চেয়ে (খ) হিংস্র অমানবতার চেয়ে (গ) সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে (ঘ) দৃষ্টিহীন মানুষের চেয়ে
উত্তর – (গ) সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে
৩০. ‘আফ্রিকার ক্রন্দন কীরূপ ? -(ক) উগ্র (খ) ভাষাহীন (গ) আবেগবিহ্বল (ঘ) নিনাদহীন
উত্তর – (খ) ভাষাহীন
৩১. আফ্রিকার অরণ্য পথ ছিল – (ক) পিচ্ছিল (খ) কর্দমাক্ত (গ) সিক্ত (ঘ) বাষ্পাকুল
উত্তর – (ঘ) বাষ্পাকুল
৩২. ‘বাষ্পাকুল অরণ্য পথে’ – অরণ্যপথ বাষ্পাকুল কেন ?- (ক) বষার মেঘে (খ) অত্যাচারীর ক্রন্দনে (গ) আফ্রিকার ভাষাহীন ক্রন্দনে (ঘ) আবহাওয়ার জন্য
উত্তর – (গ) আফ্রিকার ভাষাহীন ক্রন্দনে
৩৩. ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ধুলো পাঁকে পরিণত হয়েছিল – (ক) জল মিশে (খ) রক্তে মিশে (গ) চোখের জল মিশে (ঘ) চোখের জল রক্তে মিশে
উত্তর – (ঘ) চোখের জল রক্তে মিশে
৩৪. দস্যু-পায়ের জুতো কেমন ছিল ? –(ক) তালিমারা (খ) নতুন (গ) কাঁটা-মারা (ঘ) ছেঁড়া
উত্তর – (গ) কাঁটা-মারা
৩৫. কোথাকার মন্দিরে ‘পুজার ঘণ্টা’ বাজছিল ? (ক) সমুদ্রপারের (খ) সূর্যহারা অরণ্যের (গ) মানহারা মানবীর দ্বারের (ঘ) প্রাচী ধরিত্রীর বুকের
উত্তর – (ক) সমুদ্রপারের
৩৬. ‘মন্দিরে বাজছিল’-মন্দিরে কী বাজছিল ? (ক) ঢাক (খ) ঢোল (গ) কাঁসি (ঘ) পূজার ঘণ্টা
উত্তর – (ঘ) পূজার ঘণ্টা
৩৭. কখন পুজার ঘণ্টা বাজছিল ? (ক) মধ্যরাতে (খ) দুপুরে (গ) সকালে (ঘ) সকালে-সন্ধ্যায়
উত্তর – (ঘ) সকালে-সন্ধ্যায়
৩৮. কার নামে মন্দিরে ‘পূজার ঘণ্টা’ বাজছিল ? (ক) শিশুদের (খ) দয়াময় দেবতার (গ) যুগান্তের কবির (ঘ) মায়েদের
উত্তর – (খ) দয়াময় দেবতার
৩৯. ‘শিশুরা খেলছিল’ – শিশুরা কোথায় খেলছিল ? (ক) মানহারা মানবীর দ্বারে (খ) মন্দিরে (গ) মায়ের কোলে (ঘ) সমুদ্রপারে
উত্তর – (গ) মায়ের কোলে
৪০. “কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল” – কী বেজে উঠেছিল ? – (ক) সংগীতের মূর্ছনা (খ) সুন্দরের আরাধনা (গ) সুরের ঝংকার (ঘ) রাগরাগিণী
উত্তর – (খ) সুন্দরের আরাধনা
[অথবা], কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল – (ক) প্রকৃতির অর্চনা (খ) সুন্দরের আরাধনা (গ) সত্যের বন্দনা (ঘ) জনগণের প্রতিবাদ
উত্তর – (খ) সুন্দরের আরাধনা
৪১. “আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে”– ‘পশ্চিম দিগন্ত’ বলতে কবি কী চিহ্নিত করতে চেয়েছেন ? (ক) ইউরোপকে (খ) আমেরিকাকে (গ) অস্ট্রেলিয়াকে (ঘ) এশিয়াকে
উত্তর – (ক) ইউরোপকে
৪২. “প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস,” – ‘প্রদোষ’ শব্দের অর্থ – (ক) সন্ধ্যা (খ) ভোর (গ) রাত্রি (ঘ) দুপুর
উত্তর – (ক) সন্ধ্যা
৪৩. গুপ্ত গহ্বর থেকে যারা বেরিয়ে এল, তারা হল – (ক) ছায়াবৃতা (খ) দস্যু (গ) পশু (ঘ) নেকড়ে
উত্তর – (গ) পশু
৪৪. ‘ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল’ – দিনের অন্তিমকাল কীভাবে ঘোষিত হল ? – (ক) ঘণ্টাধ্বনিতে (খ) উলুধ্বনিতে (গ) শঙ্খধ্বনিতে (ঘ) অশুভ ধ্বনিতে
উত্তর – (ঘ) অশুভ ধ্বনিতে
৪৫. ‘আফ্রিকা’ কবিতার শেষ পর্যায়ে কবি কাকে আহ্বান করলেন ? (ক) শুভ সময়কে (খ) যুগান্তরকে (গ) যুগান্তের কবিকে (ঘ) আফ্রিকাকে
উত্তর – (গ) যুগান্তের কবিকে
৪৬. “দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;” – উদ্ধৃতাংশে মানহারা মানবী বলতে বোঝানো হয়েছে – (ক) আফ্রিকা মহাদেশকে (খ) বসুধাকে (গ) ভারতবর্ষকে (ঘ) পশ্চিম দুনিয়াকে
উত্তর – (ক) আফ্রিকা মহাদেশকে
৪৭. ‘যুগান্তের কবি’ কী বলবেন ? – (ক) সুন্দরের আরাধনা করো (খ) ক্ষমা করো (গ) হিংসা করো (ঘ) যুদ্ধ করো
উত্তর – (খ) ক্ষমা করো
৪৮. “সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী” – ‘বাণী’ শব্দের অর্থ – (ক) কথা (খ) বীণা (গ) মজুরি (ঘ) শ্লোক
উত্তর – (ক) কথা
৪৯. “সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী” –‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’-টি হল – (ক) ভালোবাসো (খ) মঙ্গল করো (গ) ক্ষমা করো (ঘ) বিদ্বেষ ত্যাগ করো
উত্তর – (গ) ক্ষমা করো
[অথবা], “সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।।”– ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ – (ক) বিদ্বেষ ত্যাগ করো (খ) ক্ষমা করো (গ) ভালোবাসো (ঘ) মঙ্গল করো
উত্তর – (খ) ক্ষমা করো
মার্ক – 1 ( SAQ )
১. “নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন…”– নতুন সৃষ্টিকে কে, কী করছিলেন ?
উত্তর – বিশ্বস্রষ্টা তাঁর নতুন সৃষ্টিকে বারবার ধ্বংস করে তাকে পুনরায় সুন্দর করে সাজাতে চাইছিলেন।
২. ‘অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা নাড়ার দিনে’ – কে, কেন অধৈর্যে মাথা নাড়ছিল ?
উত্তর – বিশ্ব তথা আফ্রিকার সৃষ্টি মুহূর্তে নিজের সৃষ্টিতে অসন্তুষ্ট মহান স্রষ্টা অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন আর ঘন-ঘন মাথা নেড়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন।
৩. “প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে”– ‘প্রাচী ধরিত্রী’ বলতে কী বোঝো ?
উত্তর – ‘প্রাচী’ শব্দের অর্থ পূর্ব দিক আর ‘ধরিত্রী’ শব্দের অর্থ পৃথিবী। সুতরাং ‘প্রাচী ধরিত্রী’ বলতে পৃথিবীর পূর্বাংশ অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশকেই বোঝানো হয়েছে।
৪. ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে’ – কে, কাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ?
[অথবা], ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে’ – কে, কাকে, কোথা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ?
উত্তর – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুযায়ী বুদ্র সমুদ্রের বাহু আফ্রিকাকে প্রাচী ধরিত্রীর বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
৫. ‘বাঁধলে তোমাকে’ – কাকে, কোথায় বেঁধে ফেলা হল ?
উত্তর – ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য অংশে আফ্রিকাকে বেঁধে ফেলার কথা বলা হয়েছে। সৃষ্টির আদিলগ্নে পৃথিবীর পূর্ব ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বনস্পতির নিবিড় পাহারায় আফ্রিকা বাঁধা পড়ে।
৬. রুদ্র সমুদ্রের বাহু আফ্রিকাকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে কোথায় আবৃত করে রেখেছিল ?
উত্তর – রুদ্র সমুদ্রের বাহু সৃষ্টির আদিকালে পৃথিবীর পূর্ব ভূখণ্ড থেকে আফ্রিকাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর তাকে বনস্পতির নিবিড় পাহাড়ায় সূর্যালোকের স্পর্শ তিরোহিত ‘কৃপণ আলোর’ আচ্ছাদনে অর্থাৎ অন্ধকারে আবৃত করে রেখেছিল।
৭. “কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।” – আলোকে ‘কৃপণ’ বলা হয়েছে কেন ?
উত্তর – আফ্রিকায় নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য অবস্থিত। এখানে বড়ো বড়ো গাছের উপরের অংশ একটি অপরটির সঙ্গে জড়িয়ে চাঁদোয়া সৃষ্টি করে সূর্যের আলোকে আটকে দেয় এবং এভাবেই তারা তাকে ‘কৃপণ’ সাব্যস্ত করে।
৮. ‘নিভৃত অবকাশে তুমি’ – অবকাশে কে, কী করছিল ? [অথবা], “সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি” – নিভৃত অবকাশে কী করছিল ?
উত্তর – পৃথিবীর অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আফ্রিকার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল খুব কম । এই অবকাশে আফ্রিকা দুর্গমের রহস্য সংগ্রহ করে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত চিনছিল ।
(৯) “চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত,” – সংকেতকে ‘দুর্বোধ’ বলা হয়েছে কেন ?
উত্তর – জন্মলগ্নে আফ্রিকা ছিল গোটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এক দুর্গম অঞ্চল। প্রকৃতির অনেক রহস্যই তার কাছে ছিল একটা সংকেত যা দুর্বোধ বা দুর্বোধ্য।
১০. “বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে”– কীভাবে ‘বিদ্রূপ’ করছিল ?
উত্তর – আফ্রিকা বিরূপের ছদ্মবেশে ভীষণকে বিদ্রুপ করছিল। প্রকৃতপক্ষে আফ্রিকার ভয়াল ভীষণতা এতটাই ছিল যে তা দিয়ে যে-কোনো ভীষণতাকে বিদ্রুপ করা যেত।
১১. “হায় ছায়াবৃতা,” – কাকে ‘ছায়াবৃতা’ বলা হয়েছে ?
উত্তর – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় সভ্যতার স্পর্শহীন বনস্পতির নিবিড় ছায়ায় ঘেরা আফ্রিকা মহাদেশকে ‘ছায়াবৃতা’ বলা হয়েছে।
১২. “হায় ছায়াবৃতা”– আফ্রিকাকে ‘ছায়াবৃতা’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর – ঘন নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য সূর্যের আলোকেও প্রবেশ করতে বাধা দেয়। অন্য দিকে সভ্যতার আলো তখনও আফ্রিকায় প্রবেশ করেনি। এজন্যই অরণ্যসংকুল আফ্রিকাকে ‘ছায়াবৃতা’ বলা হয়েছে।
১৩. “কালো ঘোমটার নীচে”– ‘কালো ঘোমটা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তর – ‘ঘোমটা’ বা ‘অবগুণ্ঠন’ মুখাবয়বকে আড়াল করে রাখে। অরণ্যে ঢাকা আফ্রিকাও সভ্য জগৎ থেকে যেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল ঘন অরণ্যের কালো ঘোমটার নীচে।
১৪. ‘অপরিচিত ছিল’– কী অপরিচিত ছিল ?
উত্তর – সভ্যতার মদমত্ততা থেকে আফ্রিকা ছিল মুক্ত। বিচ্ছিন্ন ও যোগাযোগহীন হওয়ায় তার নিষ্পাপ মানবিক রূপটি পৃথিবীর বাকি অংশের কাছে অপরিচিত ছিল।
১৫. “উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে”– কার দৃষ্টি আবিল এবং কে উপেক্ষিত ?
উত্তর – সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দৃষ্টি ছিল আবিল বা কলুষিত। এক্ষেত্রে আফ্রিকা উপেক্ষিত ছিল এমনই এক সভ্যতাদর্পী শক্তি সভ্য ইউরোপীয়দের কাছে কারণ তখনও সেখানে সভ্যতার আলো পৌঁছোয়নি।
১৬. “এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে,”– ওরা কারা ?
উত্তরে – ‘ওরা’ হল সাম্রাজ্যবাদী বা ঔপনিবেশিক শক্তি। দুর্বল জাতির ওপর আধিপত্য বিস্তারে জন্য তারা সদা-সচেষ্ট ছিল।
১৭. আফ্রিকার ক্রন্দনকে কবি ভাষাহীন বলেছেন কেন ?
উত্তর – আফ্রিকার ক্রন্দন ভাষাহীন। আফ্রিকার ওপর যে সীমাহীন অত্যাচার চালানো হয় সেই যন্ত্রণাকে ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন, তাই তার ক্রন্দন ভাষাহীন।
১৮. “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে” – ইতিহাসকে চিরস্থায়ী অপমানে জর্জরিত করা হয়েছে কীভাবে ?
উত্তর – সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তি আফ্রিকার ওপর যে পাশবিক অত্যাচার চালায় তা মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। তাদের কৃতকর্মই আফ্রিকার ইতিহাসকে চিরস্থায়ী অপমানে জর্জরিত করেছে।
১৯. ‘সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই’ – সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তে কী ঘটেছিল ?
উত্তর – আফ্রিকা যখন সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত ও অত্যাচারিত তখন সেই সাম্রাজ্যবাদীদের মন্দিরেই পূজার ঘণ্টা বাজছিল আর দয়াময় ঈশ্বরের আরাধনা চলছিল।
২০. “কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল”– কী বেজে উঠেছিল ?
উত্তর – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুযায়ী কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল সুন্দরের আরাধনা।
২১. “কবির সংগীতে বেজে উঠেছিল/সুন্দরের আরাধনা।।” – ‘সুন্দরের আরাধনা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তর – ‘সুন্দরের আরাধনা’ বলতে কবি রবীন্দ্রনাথ চিরায়ত সত্য-শিব-সুন্দরের আরাধনা বুঝিয়েছেন। যখন আফ্রিকা নিপীড়িত ও লাঞ্ছিত তখন সমুদ্রপারের কবিরা এই প্রতিবাদহীনভাবে সুন্দরের আরাধনায় ব্যাপৃত থেকেছে।
২২. “প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস” – ‘প্রদোষকাল’ শব্দের অর্থ এখানে কীভাবে প্রযুক্ত হয়েছে ?
উত্তর – ‘প্রদোষকাল’ শব্দের অর্থ সন্ধ্যাবেলা। তবে এখানে শব্দটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অনাচারের সমাপ্তি-ক্ষণ হিসেবে ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
২৩. ‘পশুরা বেরিয়ে এল’– বেরিয়ে এসে পশুরা কী করেছিল ?
উত্তর – ‘পশুরা’ অর্থাৎ মানব হৃদয়ের চোরাকুঠুরি থেকে জান্তব প্রবৃত্তি অর্থাৎ আদিম রিপু হিংসা, লোভ, নিষ্ঠুরতা বেরিয়ে এসে সভ্যতা তথা মানবতার অপমৃত্যু ঘটায়।
২৪. “এসো যুগান্তরের কবি,”– কবির ভূমিকাটি কী হবে ?
উত্তর – যুগান্তরের কবি সভ্য দুনিয়ার প্রতিনিধি রূপে অপমানিত মানহারা মানবীরূপী আফ্রিকার পাশে এসে দাঁড়াবেন এবং তার প্রতি ঘটা অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন।
২৫. ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ – পুণ্যবাণী-টি কী ?[ অথবা], “সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।।” – ‘পুণ্যবাণী’-টি কী ?
উত্তর – ‘সভ্যতার শেষ পূ্যবাণী’-টি হল ‘ক্ষমা করো’।
২৬. “সমুদ্রপারে সেই মুহুতেই…”– ‘সেই মুহূর্তেই’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?
উত্তর – সাম্রাজ্যবাদীদের আক্রামক মানুষের দল যে মুহূর্তে আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে স্থায়ী ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়ে গেল সেই মুহূর্তের কথাই এখানে অভিব্যক্ত হয়ে উঠেছে ।
মার্ক – 3 প্রশ্ন উত্তর
১. “উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে” – উদ্ভ্রান্ত আদিম যুগে কী ঘটনা ঘটেছিল ?
উত্তর – সেই যুগের পরিবেশ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতা অনুযায়ী উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে পৃথিবী আজকের মতো সুস্থিত ছিল না। অস্থির সেই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত চলছিল ভাঙা-গড়ার খেলা। সৃষ্টিকর্তা নিজেই নিজের সৃষ্টি নিয়ে বিভ্রান্ত ছিলেন। নিজের সৃষ্টিকে নিখুঁত রূপদান করতে বারেবারেই তিনি গড়ে তোলা জিনিসকে ভেঙে চুরমার করেছেন, আবার পরে অতি যত্নে নতুন করে তা নির্মাণ করতে মগ্ন হয়ে পড়েছেন।
২. “স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে” – স্রষ্টার নিজের প্রতি অসন্তোষের কারণ কী ? এর ফলে তিনি কী করেছিলেন ? ২+১
উত্তর – অসন্তোষের কারণ: বিশ্বস্রষ্টা সৃষ্টির আদিলগ্নে নিজের সৃষ্টি নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। সুতরাং বলা যায়, স্রষ্টার নিজের প্রতি অসন্তোষের কারণ তাঁর নিজস্ব এই সৃষ্টিকর্ম।
উত্তরণের প্রচেষ্টা: এই অসন্তোষের ফলে নিজের সৃষ্টিকেই স্রষ্টা বারবার ধ্বংস করে তা নতুন করে গড়ে তুলতে চাইছিলেন নিখুঁত করে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটা তাঁর দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে উঠল ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সেই ভাঙা-গড়ার খেলায় নিমগ্ন রইলেন।
৩. ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে,’ – কে, কাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ? কীভাবে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ? ১+২
[অথবা], ‘ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে,’ – ‘তোমাকে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? এই উক্তির মাধ্যমে কবি কী বুঝিয়েছেন ? ১+২
উত্তর – উৎস: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় বর্ণিত আছে যে, ‘বুদ্র সমুদ্রের বাহু’ ছিনিয়ে নিয়ে গেল ‘আফ্রিকা’-কে।
গঠনতত্ত্ব: সৃষ্টিলগ্নে সমুদ্র ছিল উত্তাল, গর্জনমুখর, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। ‘প্রাচী ধরিত্রী’ অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশের বুক থেকে সমুদ্র আফ্রিকার ভূখণ্ডকে বিচ্ছিন্ন করেছিল ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’। প্রকৃতপক্ষে এই ঘটনাকে আধুনিক ভূ-তাত্ত্বিকেরা ‘মহাদেশীয় চলন তত্ত্ব’ বা পাতসংস্থান তত্ত্ব বা ‘Plate Tectonic Theory’ দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।
৪. “বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়” – কে, কাকে বাঁধে ? উদ্ধৃতাংশটি তাৎপর্য লেখো । ১+২
উত্তর – বাঁধনদাতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংরচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় প্রভৃতি আফ্রিকাকে বেঁধেছিল ‘বনস্পতির নিবিড় পাহারায়’।
অরণ্যছায়িত আফ্রিকা: পৃথিবীর প্রাচ্য ভূখণ্ড অর্থাৎ এশিয়া মহাদেশ থেকে সমুদ্র কর্তৃক বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা এক পৃথক সত্তা নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। আফ্রিকার বুকে সৃষ্টি হয় নিরক্ষীয় চিরহরিৎ গহন অরণ্য। এই গভীর অরণ্যের ছত্রছায়া ভেদ করে সূর্যের আলোও প্রবেশ করতে অক্ষম। এই প্রাকৃতিক ঘটনাকেই কবি অপূর্ব কাব্যিক মহিমায় প্রকাশ করেছেন।
৫. “শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে” – কে, শঙ্কাকে হার মানাতে চাইছিল ? কীভাবে হার মানাতে চাইছিল ? ১+২
উত্তর – শঙ্কাকে হার মানানোর চেষ্টা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় শঙ্কাকে আফ্রিকা হার মানাতে চেয়েছে।
শঙ্কাকে হার মানানোর প্রক্রিয়া: প্রাচ্য ভূখণ্ড বা এশিয়া মহাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা মহাদেশ লাভ করে এক নতুন অবয়ব, ভিন্ন সত্তা। অরণ্যের ঘেরাটোপে বন্দি আফ্রিকা সভ্য জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে আপন কৌশলে দুর্গমের রহস্যভেদ করে, দুর্বোধ সংকেত উদ্ধার করে, নিজেকে উগ্র ও বিভীষিকাময় করে তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে আফ্রিকা প্রকৃতির যাবতীয় শঙ্কাকে হার মানাতে চেয়েছিল।
৬. “হায় ছায়াবৃতা,” – ছায়াবৃতা কে ? তাকে ছায়াবৃতা বলার কারণ কী ? ১+২
উত্তর – ছায়াবৃতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘আফ্রিকা’-য় আফ্রিকাকেই ‘ছায়াবৃতা’ বলে কবি সম্বোধন করেছেন।
‘ছায়াবৃতা’ সম্বোধনের কারণ: আফ্রিকাতে নিরক্ষীয় চিরহরিৎ বিশাল অরণ্যক্ষেত্র রয়েছে। বনস্পতির নিবিড় পাহারায় আফ্রিকা বন্দি। সুবিশাল বনস্পতি ডালপালা বিস্তার করে এমন এক ক্যানোপি বা চাঁদোয়ার সৃষ্টি করেছে যে তা সূর্যের আলোর কাছেও দুর্ভেদ্য। আফ্রিকা তাই এই বনস্পতির ছায়ায় মোড়া। আবার অন্য অর্থে, আফ্রিকাতে প্রবেশ করেনি সভ্য জগতের আলো। এ কারণেই রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকাকে ‘ছায়াবৃতা’ সম্বোধন করেছেন।
৭. “অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ” – ‘তোমার’ বলতে এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? তার মানবরূপ অপরিচিত ছিল কেন ? ১+২
উত্তর – অপরিচিতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আফ্রিকা’ কবিতায় উল্লিখিত হয়েছে যে সভ্য জগৎ তথা বিশ্ববাসীর কাছে আফ্রিকার মানবরূপ অপরিচিত ছিল।
অপরিচিতা থাকার কারণ: সভ্য জগতের কাছে উপক্ষিত ছিল আফ্রিকা। সভ্যতার আলো সেখানে দীর্ঘকাল পৌঁছোয়নি। দুর্গম ও ভয়াল পরিবেশের জন্য সে ছিল দীর্ঘদিন সভ্য মানুষের কাছে অনাবিষ্কৃত। সভ্যতার আলোকমুক্ত কালো ঘোমটার নীচে তার মানবরূপ অর্থাৎ ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি, করার চেষ্টাও করেনি। এজন্যই সে ছিল অপরিচিতা।
৮. “এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে, ”– লোহার হাতকড়ি নিয়ে কারা, কেন এসেছিল ?
উত্তর – যারা এসেছিল: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় লোহার হাতকড়ি নিয়ে এসেছিল ঔপনিবেশিক বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি।
আসার কারণ: বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও শিল্পক্ষেত্রে ইউরোপীয় একটা সময় সারা বিশ্ব থেকে অনকেটা এগিয়ে যাওয়ায় তারা বেশি মুনাফা লাভের আশায় এশিয়া আফ্রিকার নানা দেশে উপনিবেশ গড়ে তোলে। কালক্রমে বণিকের মানদণ্ড তাদের রাজদণ্ডে পরিণত হয়। তারা বিভিন্ন দেশের উপর নিজেদের আধিপত্য কায়েম করে। মানুষকে ধরে ক্রীতদাস বানায়, লোহার হাতকড়ি পরায়।
৯. ‘তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে’ – ‘তোমার’ বলতে উদ্ধৃতাংশে কাকে বোঝানো হয়েছে ? তার ক্রন্দন কেন ভাষাহীন ? ২+১
উত্তর – ‘তোমার’ পরিচয়: ‘আফ্রিকা’ কবিতার আলোচ্য অংশে ‘তোমার’ বলতে আফ্রিকাকে বোঝানো হয়েছে।
ক্রন্দনের কারণ: আফ্রিকা ছিল সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তি দ্বারা শোষিত, নিপীড়িত এবং অত্যাচারিত। ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ হিসেবে আফ্রিকা বহুদিন যাবৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও উনিশ শতকে আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ তথা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের ওপর ঔপনিবেশিক শক্তির লোলুপ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। আফ্রিকার মানুষদের সরল-স্বাভাবিক জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়, কেটে যায় তাদের জীবনের সুর-তাল-ছন্দ। তাদের যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তাই কবি তাদের ক্রন্দনকে ‘ভাষাহীন’ বলেছেন। আফ্রিকা এখানে সকল নিপীড়িত আফ্রিকাবাসীর প্রতীক হয়ে উঠেছে। যারা আফ্রিকার ঐতিহ্য-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক তাদের ওপরই তথাকথিত সভ্য ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বর্বর অত্যাচার চালাত। এ কারণেই রবীন্দ্রনাথের কাছে তারা ‘দস্যু’। তাদের ‘কাঁটা-মারা জুতোর তলায়’ পিষ্ট হয়ে ‘বীভৎস কাদার পিন্ড’-তে পরিণত হয়েছিল আফ্রিকার প্রাণোচ্ছল কৃষ্ণাঙ্গ মানুষগুলো।
১০. “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।।”– কারা, কীভাবে চিরচিহ্ন দিয়ে গেল ?
উত্তর – তাৎপর্য বিশ্লেষণ: পরিণত, প্রাজ্ঞ, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ জীবনের প্রান্তঃসীমায় দাঁড়িয়ে দেখেছেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বর্বর অত্যাচার। তাঁর চোখে ধরা পড়েছে ঐশ্বর্য ও ক্ষমতায় অহংকারী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্মম-নিষ্ঠুর রূপ। তিনি দেখেছেন এই ‘সভ্য’ শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের হাতে কীভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে আফ্রিকার সরল আফ্রিকার সরল-নিষ্পাপ কৃষ্ণাঙ্গ উপজাতিদের। আর দেখেছেন কীভাবে মানবতার অবমাননা ঘটেছে আফ্রিকার ভূখণ্ডে। ঔপনিবেশিক শক্তির এই অত্যাচার আফ্রিকা তথা বিশ্ব ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক কালিমালিপ্ত অধ্যায় যা দুরপনেয়। তাই কবি ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
১১. “মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা” – কোন মন্দিরে, কেন পূজার ঘণ্টা বাজছিল ?
উত্তর – উৎস: আলোচ্য অংশটি বিশ্ববন্দিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতার অন্তর্গত।
মন্দিরের অবস্থান ও ঘণ্টাধ্বনির কারণ: সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে মন্দিরে মন্দিরে দয়াময় দেবতার নামে সকাল-সন্ধ্যায় পূজার্চনার সময় ঘণ্টা বাজছিল। মানুষের কল্যাণে কিংবা মানসিক তৃপ্তিলাভের জন্য চলে ঈশ্বরের আরাধনা। ইউরোপের দেশে তখন নিশ্চিন্ত নিরুপদ্রব জীবন। তাদের কবিদের সাহিত্যে সুন্দরের আরাধনার মাধ্যমে সুস্থ সংস্কৃতি ও রুচিবোধের পরিচয় মেলে। তবে আফ্রিকায় ঘটছিল ঠিক এর বিপরীত ঘটনা। সেখানে তাদের বর্বরোচিত আচরণে চলছিল মানবতার অপমান।
১২. “আজ যখন পশ্চিম দিগন্তে” – ‘পশ্চিম দিগন্তে’ বলতে কবি কী নির্দেশ করেছেন ? সেখানে তখন কী ঘটেছিল ? ১+২
উত্তর – পশ্চিম দিগন্ত: পশ্চিম দিগন্ত বলতে ইউরোপ মহাদেশকে বোঝানো হয়েছে।
সমকালীন ঘটনা: রবীন্দ্র-উল্লিখিত সময়ে ইউরোপে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির ক্ষমতা প্রদর্শনের বহর চলছিল পুরোদমে। এশিয়া ও আফ্রিকার দুর্বল ও অনুন্নত দেশগুলির ওপর তারা নির্বিচারে শাসন-শোষণ ও অত্যাচার চালিয়েছিল। কিন্তু তারপরেই তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাঁধার উপক্রম হয়। তখনই কবি ঘোষণা করলেন তাদের যুগের সমাপ্তির দিন আসন্ন।
১৩. “এসো যুগান্তরের কবি,” – কবি কাকে ‘যুগান্তরের কবি’ বলেছেন ? তাঁকে কবির আহ্বান জানানোর কারণ কী ? [অথবা], “এসো যুগান্তরের কবি,” – ‘যুগান্তরের কবি’ -কে কেন আহ্বান করা হয়েছে ? ২+১
উত্তর – যুগান্তরের কবি : ‘যুগান্তরের কবি’ কথাটির অর্থ হল যুগাবসানের কবি। এখানে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যুগের অবসানের দিকে করি ইঙ্গিত করেছেন। কবিরা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, সত্যদ্রষ্টা। কবি চেয়েছেন যুগাবসানে এমন একজন কবি আসুন যিনি আফ্রিকার নতুন যুগের পথপ্রদর্শক হবেন। তিনিই সেই নতুন পথের দিশারি ‘যুগান্তের কবি’ বলে বিশ্বকবির দ্বারা সম্বোধিত।
আহ্বান জানানোর কারণ: যুগান্তরের কবি আফ্রিকাকে প্রতিশোধ ভাবনা থেকে বিরত হয়ে ক্ষমা করতে আহ্বান জানাবেন এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করবেন। এজন্যই তাঁকে আহ্বান জানাবেন কবি।
১৪. “দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;” – উদ্ধৃতাংশে কে, কাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন ? ‘মানহারা মানবী’ কে ? ২+১
উত্তর – নির্দেশকারী ও উদ্দিষ্ট: বিশ্ববন্দিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে বিশ্বকবি স্বয়ং বিশ্বমানবতার প্রতিভূ হিসেবে ‘যুগান্তরের কবি’-কে ‘মানহারা মানবীর দ্বারে’ গিয়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মানহারা মানবী: উদ্ধৃতাংশে বর্ণিত ‘মানহারা মানবী’ হল তথাকথিত সভ্য শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের অত্যাচারে অপমানিত লাঞ্ছিত আফ্রিকা মহাদেশ।
১৫. “দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;” – ‘মানহারা মানবী’ কে ? কেন সে মানহারা মানবীর দ্বারে দাঁড়াবে ?১+২
উত্তর – মানহারা মানবী: বিশ্ববন্দিত কবি রবীন্দ্রনাথ ‘আফ্রিকা’ কবিতার আলোচ্য পঙ্ক্তিতে আফ্রিকা মহাদেশকে ‘মানহারা মানবী’ বলেছেন।
তাঁর দ্বারে দাঁড়ানোর কারণ : তথাকথিত সভ্য শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়দের অত্যাচার ও শোষণে আফ্রিকায় মানবতা লাঞ্ছিত হয়। রবীন্দ্রনাথ তা দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হন। কাব্যে, প্রবন্ধে তিনি এর প্রতিবাদও করেন। মানসচক্ষে তিনি প্রত্যক্ষ করেন সাম্রাজ্যবাদীদের পতন। সাম্রাজ্যবাদীদের যুগাবসানে তিনি ‘যুগান্তরের কবি’-কে আহ্বান করেন আর তাঁকে তাঁর দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ‘যুগান্তের কবি’ আফ্রিকার দ্বারে দাঁড়িয়ে সভ্য মানুষের প্রতিনিধি হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করবেন এবং আফ্রিকার দৃষ্টান্ত দিয়ে বিশ্বমাঝে অহিংসা ও শান্তির বাণী প্রচার করবেন।
মার্ক – 5 প্রশ্ন উত্তর
১. “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।।”-কাকে এ কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে তার অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন মুদ্রিত হল ? [অথবা], “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।।” – ‘তোমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? তার ‘অপমানিত ইতিহাস’-এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।১+৪
উত্তর – বক্তব্যের উদ্দেশ: মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকাকে এ কথা বলা হয়েছে। আফ্রিকার ওপর কবি জীবিত সত্তা আরোপ করে তাকে ‘মানহারা মানবী’ অভিধায় অভিহিত করেছেন।
অপমানিত ইতিহাসের চিরচিহ্ন মুদ্রণ: রবীন্দ্রনাথ চিরকালই প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন তথা নিরীহ-নিষ্পাপ মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে। বিশ শতকে এশিয়া-আফ্রিকার মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ওপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও উপনিবেশ স্থাপন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। তথাকথিত সভ্য মানুষের প্রতিনিধিরা তাদের ঔপনিবেশিকতার জাল বিস্তার করে নিষ্পেষিত করতে থাকে সরল-নিরীহ মানুষগুলোকে। আফ্রিকার কালো মানুষগুলোকে পদানত করে, তাদের দাস বানিয়ে রচনা করে ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। নির্লজ্জ ঔপনিবেশিক শাসনে আফ্রিকায় মানবতার চরম অবমাননা ঘটে। সভ্য জগতের মানুষের এমন বর্বর আচরণ সচেতন, মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধযুক্ত মানুষের মাথাকে লজ্জায় অবনত করে। এরা লুণ্ঠন করে আফ্রিকার সম্পদ, মানুষকে বন্দি বানিয়ে ক্রীতদাসে পরিণত করে আর বিনষ্ট করে তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতি তথা সহজ-সরল জীবনচর্যাকে।
রবীন্দ্রনাথ মনে করেন আফ্রিকার এই অপমান আসলে মানবতার অপমান-বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে সমস্ত সভ্যতার অপমান। যে মানুষ নিজের হুঁশ বিসর্জন দিয়ে অন্যের মান ও জীবন ধ্বংস করে সে মানুষ নামের কলঙ্ক। আর এই কলঙ্কই আফ্রিকা তথা বিশ্ব ইতিহাসে চিরচিহ্ন সৃষ্টি করেছে যা দুরপনেয়।
২. “হায় ছায়াবৃতা,” – ‘ছায়াবৃতা’ বলার কারণ কী ? তার সম্পর্কে কবি কী বলেছেন সংক্ষেপে লেখো । ৩+২
উত্তর – ছায়াবৃতা বলার কারণ: ‘আফ্রিকা’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকা মহাদেশকে ‘ছায়াবৃতা’ বলে সম্বোধন করেছেন। প্রাকৃতিক কারণে আফ্রিকা মহাদেশ ছিল বনস্পতিতে আচ্ছাদিত, তাই কবি তাকে ‘ছায়াবৃতা’ বলে সম্বোধন করেছেন।
এই কবিতায় কবি আফ্রিকা মহাদেশের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির লিখে দেওয়া কলঙ্কিত ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেছেন। সভ্যতার গর্বে গর্বিত পশ্চিম দুনিয়া নিজেদের সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য আফ্রিকাকে শৃঙ্খলিত করেছিল লোহার শিকলে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সরল পরিশ্রমী মানুষদের পরিশ্রমকে পুঁজি করে নিজেদের শক্তি ও প্রতিপত্তি বিস্তার করার জন্য- “নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।“ ‘কালো ঘোমটার নীচে’ থাকা আফ্রিকাবাসীর সভ্যতা-সংস্কৃতি এমনকি মানবিক রূপকে এরা ভুলে গিয়েছিল। অশিক্ষা আর দারিদ্র্যের লালিত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে অতি সামান্য ও নগণ্য মনে করে আফ্রিকার প্রতি তাকিয়েছিল- ‘উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে’।
তার সম্পর্কে কবির বক্তব্য: এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আফ্রিকাকে নেকড়ের হিংস্রতা নিয়ে গ্রাস করতে চেয়েছিল, সভ্যজগতের নগ্ন-লোভআফ্রিকাবাসীকে নির্মম আঘাতে আহত করে; তাদের ‘ভাষাহীন ক্রন্দনে’ বাষ্পাকুল হয়েছে অরণ্যপথ। দস্যুরূপী সাম্রাজ্যলোভীদের কাঁটা-মারা জুতোর তলায় চিরতরে নিভে যায় আফ্রিকার সৌভাগ্য সূর্য; স্বপ্ন-সাধ-সাধনা। আফ্রিকার বুকে নরপিশাচদের রচিত এই কলঙ্কিত ইতিহাসের দিকে লক্ষ করে কবি সভ্য মানুষের প্রতিনিধি রূপে বেদনাহত হয়েছেন।
৩. “এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে,” – ‘ওরা’ কারা ? ওদের যে পরিচয় কবি দিয়েছেন তা আলোচনা করো । ১+৪
উত্তর – ‘ওরা’: সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে ‘ওরা’ বলতে সাম্রাজ্যবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির কথা বলা হয়েছে, যারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।
ওদের পরিচয়: ফ্যাসিবাদী শক্তির স্তম্ভ ইতালি আবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া আক্রমণ করে। এই ঘটনাই ছিল ‘আফ্রিকা’ কবিতা রচনার প্রেক্ষাপট। আফ্রিকা ছিল বিপুল প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদে ভরপুর। তারই লোভে ইউরোপীয় শক্তি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা হরণ করে গড়ে তোলে উপনিবেশ। ‘সভ্যের বর্বর লোভ’-এ চলে শোষণ, অত্যাচার ও লুণ্ঠন। যে আফ্রিকা একদিন ছিল সভ্য সমাজের কাছে উপেক্ষিত সেই আফ্রিকাই ঔপনিবেশিকদের কাছে হয়ে ওঠে সম্পদ আহরণের লীলাভূমি। সাম্রাজ্যবাদীরা গ্রাস করতে থাকে আফ্রিকার কালো মানুষদের জীবনের-উচ্ছ্বলতা ও সারল্য। লোহার হাতকড়িতে বন্দি হয়ে তারা পরিণত হয় ক্রীতদাসে। তাদের পরিশ্রম নিংড়ে বেড়েই চলতে থাকে ঔপনিবেশিকদের প্রতিপত্তি। নিজের অমানবিকতার উলঙ্গ প্রকাশ ঘটিয়েছিল তথাকথিত সভ্য ইউরোপীয়রা। অত্যাচারী ফ্যাসিস্ট শক্তি আফ্রিকার প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুণ্ঠনের পাশাপাশি দিনের পর দিন তার নিজস্ব সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে। তারা রচনা করে সভ্যতার ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। অর্থাৎ, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের প্রবেশ চিত্রই কবি আলোচ্য পঙ্ক্তিতে অঙ্কন করেছেন।
৪. “এল মানুষ ধরার দল”- ‘মানুষ-ধরার দল’ বলতে কবি কাদের বুঝিয়েছেন ? কবিতা অনুসরণে তাদের পরিচয় দাও । ১+৪
উত্তর – ‘মানুষ-ধরার দল’ : উদ্ধৃতাংশটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আফ্রিকা’ কবিতার অন্তর্গত। ‘মানুষ-ধরার দল’ বলতে কবি এখানে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক ফ্যাসিস্ট শক্তিকে বুঝিয়েছেন। এরা ছিল ক্রীতদাস-ব্যবসায়ী বা দাস-মালিক।
মানুষ-ধরার দলের পরিচয়: ‘আফ্রিকা’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক ও ফ্যাসিবাদী শক্তির নগ্ন নির্লজ্জ রূপটিকে চিত্রিত করেছেন তাঁর নিপুণ তুলির আঁচড়ে। তথাকথিত সুসভ্য, সংস্কৃতি-পরায়ণ ইউরোপীয় শক্তির হাতে আফ্রিকার নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বকবি মর্মাহত হন। এক্ষেত্রে মানবিকতার এ হেন অপমান মুখ বুজে সহ্য করা কোনো সচেতন শিল্পী-সাহিত্যিকের পক্ষে সম্ভব নয়। অথচ আফ্রিকায় সভ্যের যে বর্বর রূপের প্রকাশ ঘটল তা দেখে, জেনে বা শুনেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক সমাজই বিস্ময়করভাবে নিশ্চুপ থাকে। এই প্রতিবাদহীনতা কবিকে ক্ষুব্ধ করে, যার বাত্ময় প্রকাশ ঘটে ‘আফ্রিকা’ কবিতায়। সভ্যতার মুখোশধারী এই নির্লজ্জ নরপিশাচেরা আফ্রিকার ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ আদিবাসীদের এরা বন্দি করে ক্রীতদাসে পরিণত করে এবং ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে মোটা অর্থে বিক্রি করে চাহিদা অনুযায়ী। তাদের নেকড়ের মতো নির্লজ্জ লোভে, কাঁটা-মারা বুটের তলায় নিষ্পেষিত হতে থাকে আফ্রিকার সরল নিষ্পাপ মানুষগুলো। তাদের চোখের জলে, ঘামে আর রক্তে ভিজে যায় আফ্রিকার জঙ্গলাকীর্ণ পথঘাট, তা পরিণত হয় বীভৎস কাদার পিন্ডে।
৫. “এসো যুগান্তরের কবি” – ‘যুগান্তের কবি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? এ আহ্বানের তাৎপর্য কোথায় ? ১+৪
উত্তর– ‘যুগান্তরের কবি’-র স্বরূপ: ‘যুগান্ত’ শব্দের অর্থ যুগাবসান-অর্থাৎ ‘যুগান্তরের কবি’ হলেন যুগ-অবসানে আবির্ভূত কবি। সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতার যুগের অবসানে যে সাম্যবাদী শোষণহীন যুগের সূচনা ঘটবে এই কবি সেই যুগে আবির্ভূত হবেন।
আহ্বানের তাৎপর্য: ক্রান্তদর্শী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনাগত ভবিষ্যৎকে তাঁর মানবচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। সাম্রাজ্যবাদীদের যুগ যে শেষের পথে তা রবীন্দ্রনাথের দূরদৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল। তাই প্রাজ্ঞ কবি যুগাবসানের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। শিল্পী-সাহিত্যিকরা সত্যদ্রষ্টা, অনুভূতিপ্রবণ বা সংবেদনশীল হন। তাঁরা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, তাই সাহিত্যকে বলা হয় সমাজদর্পণ। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছেন যুগাবসানে এমন কবির আবির্ভাব ঘটুক যিনি সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করবেন, শোষণহীন, সাম্যবাদী সমাজ গঠনে সহায়তা করবেন; আফ্রিকার নতুন যুগের পথপ্রদর্শক বা অগ্রদূতের ভূমিকা নেবেন। যুদ্ধ, হিংসা কখনও মুক্তির পথ হতে পারে না। তাই যুগান্তরের কবি আফ্রিকার পাশে দাঁড়িয়ে আফ্রিকাকে ক্ষমাশীল হতে বলবেন। আফ্রিকার ওপর হওয়া অমানবিক অত্যাচারের প্রতিশোধ না নিয়ে আফ্রিকা যেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ক্ষমা করে দিয়ে বিশ্বে শান্তিস্থাপনের এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করে-এ দায়িত্ব যুগান্তরের কবিকেই নিতে হবে। ‘মা হিংসী’ বাণী ও ক্ষমাশীলতার মন্ত্রই হবে রণোন্মত্ত পৃথিবীর জিয়নকাঠি।
৬. “দাঁড়াও ওই মানহাবা মানবীর দ্বারে; বলো ‘ক্ষমা করো” – ‘মানহারা মানবী’ কথাটি বলার কারণ কী ? কেন তার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে ? ৩+২
উত্তর – ‘মানহারা মানবী’ বলার কারণ: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘আফ্রিকা’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত। দেশকে আমরা যেমন দেশমাতা জ্ঞান করি তেমনি সচেতনভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আফ্রিকার ওপর জীবন্ত সত্তা আরোপ করে তাকে মানবী রূপে দেখেছেন। সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে আফ্রিকার চরম অবমাননা হয়। সভ্যের বর্বর লোভ, আবিল দৃষ্টি আফ্রিকাকে কলুষিত করে। আফ্রিকার কালো মানুষেরা ক্রীতদাসে পরিণত হয়। এ অপমান শুধু আফ্রিকার নয়, এ অপমান বৃহত্তর অর্থে সভ্যতার এবং এ লজ্জা মানবতার। তাই অপমানিতা মানভ্রষ্টা আফ্রিকাকে ‘মানহারা মানবী’ বলা হয়েছে।
মানহারা মানবীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কারণ: আফ্রিকার ওপর ঘটে যাওয়া শাসন, শোষণ ও অত্যাচার বিশ্ব ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায় হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। প্রত্যেক শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন, বিবেকবান মানুষই ‘সভ্য’ মানুষের নির্লজ্জ লোভ আর বর্বর আচরণে নতমস্তক হয় আফ্রিকার সামনে। এ কারণেই কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ আহ্বান করেছেন ‘যুগান্তের কবি’-কে। তিনিই হবেন আধুনিক বিশ্বসভ্যতার প্রতিনিধি স্বরূপ। তিনিই সমকালীন পরিস্থিতিতে আফ্রিকার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সবার হয়ে আফ্রিকার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন। পৃথিবীর ঘোর সংকটে এই ক্ষমাশীলতার বাণীই আফ্রিকাকে মহান করে তুলবে আর পৃথিবীর পরিশুদ্ধি ঘটবে নতুন চলার পথে। এ কারণেই আফ্রিকার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৭. ‘আফ্রিকা’ কবিতার প্রথমাংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘আফ্রিকা মহাদেশের জন্মবৃত্তান্ত কীভাবে প্রকাশ করেছেন তা লেখো । [অথবা], ‘আফ্রিকা’র জন্মরহস্য কবি কীভাবে প্রকাশ করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো ।
উত্তর – ভূমিকা: উপনিষদের মন্ত্রে দীক্ষিত রবীন্দ্রনাথ মনে করেন এই জগৎসংসারের স্রষ্টা পরম ব্রহ্ম বা পরম পিতা। ‘আফ্রিকা’ কবিতার প্রথমাংশে তিনি তাঁকেই ‘স্রষ্টা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সৃষ্টি সূত্র: “খেলিছ এ বিশ্বলয়ে বিরাট শিশু আনমনে।”-জগৎস্রষ্টা বিশ্বসংসার নির্মাণ করেছেন। তিনি সুমহান কারিগর, জগৎপ্রভু ও বিশ্বনিয়ন্তা বিশ্বকর্মা। প্রকৃত শিল্পীর বৈশিষ্ট্য হল তিনি নিজ সৃষ্টি নিয়ে কখনই তৃপ্ত হতে পারেন না। সৃষ্টির সূচনালগ্নে বিধাতাও তাই নিজ সৃষ্টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সৃষ্টি-ধ্বংস আর পুনর্নির্মাণে তিনি মগ্ন ছিলেন বহুদিন, চাইছিলেন সবকিছু নিখুঁত আর মনের মতো করে গড়ে তুলতে।
গঠন প্রক্রিয়া: আফ্রিকা মহাদেশের গঠন প্রক্রিয়াও ছিল এইরূপ। ‘উদ্ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে’ ‘প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে’ বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকার জন্ম। রবীন্দ্রনাথ এই ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়ার অপূর্ব কাব্যিক প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আফ্রিকার জন্ম রহস্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে গেলে দেখা যায়, পাত সংস্থান তত্ত্ব ও মহাদেশীয় চলন তত্ত্বই এই নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের মূলে। আলফ্রেড ওমেগনামূর প্রচারিত এই তত্ত্ব অনুসারে টেকটনিক প্লেট বা পাতগুলির সঞ্চরণে এক সময় আফ্রিকান প্লেট বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকা মহাদেশ সৃষ্টি করে। তারপর নিরক্ষীয় চিরহরিত অরণ্য আফ্রিকাকে বন্দি করে ‘কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে’।
৮. “সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়” -কবিতায় কাদের পাড়ার কথা বলা হয়েছে ? কোন মুহূর্তের কথা বলা হয়েছে ? তাদের পাড়ায় পাড়ায় কী ঘটছে ? ১+১+৩
উত্তর – পাড়ার কথা : বিশ্বসেরা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পত্রপুট’ কাব্যগ্রন্থের ‘আফ্রিকা’ কবিতায় সভ্যতার মুখোশধারী বর্বর শয়তানদের পাড়ার কথা বলা হয়ছে।
মুহূর্ত: সাম্রাজ্যবাদী, ঔপনিবেশিক শক্তি আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তুলে সেখানকার মানুষদের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছিল। সেই মুহূর্তের কথাই কবিতার আলোচ্য পঙ্ক্তিতে বলা হয়েছে।
ঘটনা: ‘তাদের’ অর্থাৎ সেইসব মুখোশধারী শয়তানের দলের পাড়ায় পাড়ায় দেখা মিলবে এক শান্ত, নিরুদ্বিগ্ন, মসৃণ জীবনপ্রণালী। সেখানে ভক্তি ভরে সকাল-সন্ধ্যায় চলে দয়াময় দেবতার আরাধনা-বাজে মাঙ্গলিক ঘণ্টা। কবিরা তাঁদের কাব্যের মধ্যে করেন সুন্দরের আরাধনা। শিশুরা নিরাপদে থাকে মায়ের স্নেহক্রোড়ে। এই পরিবেশে হেসে-খেলে তারা বড়ো হতে থাকে। কবি বলতে চেয়েছেন তাদের এই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে শোষণ করেই গড়ে উঠেছে। তবে কবি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সতর্কিত করেছেন যে এই অবস্থার পরিবর্তন আসন্ন। ঔপনিবেশিক শক্তিশালী দেশগুলির অন্তিমকাল এসে গিয়েছে। অপরকে শোষণ করে, অত্যাচার-অনাচার চালিয়ে তারা বেশিদিন সুখের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে শান্তির নিরুপদ্রব জীবনযাপন করতে পারবে না। লোভ ও আগ্রাসনে তারা নিজেদেরই ধ্বংস করে ফেলবে, নিজেদের পাপের আগুনে তারা নিজেরাই জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন –
অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি প্রশ্ন উত্তর