স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বক্তব্য (১৫ই আগস্ট বক্তৃতা বা ভাষন) । Independence Day Speech in Bengali 2025 । Independence Day Lecture
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বক্তব্য
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বক্তব্য (১৫ই আগস্ট বক্তৃতা বা ভাষন)
স্বাধীনতা দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা
(১) ভূমিকা ও শুভেচ্ছা –
মাননীয় প্রধান অতিথি, সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রিয় সহপাঠী ও উপস্থিত সকল শ্রোতা,
আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার/আদাব।
আজকের এই পবিত্র, গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিনে — আমাদের স্বাধীনতা দিবসে — এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সুযোগ পাওয়া আমার জীবনের এক বিশেষ সম্মান।
এই দিনটি কেবল একটি ক্যালেন্ডারের তারিখ নয়, এটি আমাদের জাতির আত্মার প্রতিচ্ছবি। এ দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্বাধীনতার জন্য কত ত্যাগ, কত রক্ত, কত সংগ্রাম, কত চোখের জল ঝরেছে।
(২) ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট –
আমাদের স্বাধীনতা রাতারাতি আসেনি। এটি এসেছে শত শত বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।
বিদেশি শাসকদের শোষণ, অবিচার, অত্যাচারের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, নেতা— সকলে একসঙ্গে লড়াই করেছে।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে অসহযোগ আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন— প্রতিটি আন্দোলনই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের পাথেয়।
(৩) সংগ্রামের নায়করা –
স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্ব তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ, ভগৎ সিং, খুদিরাম বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন, মাতঙ্গিনী হাজরার মতো অসংখ্য বীর-বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগ আমাদের আজকের স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
(৪) স্বাধীনতার ইতিহাস:
(ক) সংগ্রামের দীর্ঘ পথ –
আমাদের দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস একটি দীর্ঘ ও বেদনাময় সংগ্রামের ইতিহাস। বৃটিশ শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে আমাদের পূর্বপুরুষরা শত শত বছর ধরে আন্দোলন, বিপ্লব, ও আত্মত্যাগ করেছেন।
(খ) প্রাথমিক বিদ্রোহ –
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর ভারতবর্ষ ধীরে ধীরে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে চলে যায়। কিন্তু আমাদের জাতীয় চেতনা কখনো নিস্তেজ হয়নি।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ ছিল প্রথম বৃহৎ স্বাধীনতা সংগ্রাম, যা ব্রিটিশদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
(গ) রাজনৈতিক আন্দোলনের উত্থান –
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে কংগ্রেস, মুসলিম লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
বাল গঙ্গাধর তিলক বলেছিলেন—“স্বাধীনতা আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা নিয়ে থাকব।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলমে ও গানে স্বাধীনতার স্বপ্ন জেগে উঠেছিল।
(ঘ) অসহযোগ ও অহিংস আন্দোলন –
মহাত্মা গান্ধী অহিংস ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রামকে এক নতুন রূপ দেন। লবণ সত্যাগ্রহ, ভারত ছাড়ো আন্দোলন—এসবই ছিল জাতীয় ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
(ঘ) সশস্ত্র বিপ্লব –
অন্যদিকে সশস্ত্র বিপ্লবীরাও তাদের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু “আজাদ হিন্দ ফৌজ” গঠন করে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি, ভগৎ সিং, চন্দ্রশেখর আজাদ—এরা ছিলেন জাতির অনুপ্রেরণা।
(৫) স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য –
আমরা যেন ভুলে না যাই—স্বাধীনতা আমাদের হাতে হঠাৎ করে আসে নি। এটি এসেছে রক্তের বিনিময়ে, সংগ্রামের বিনিময়ে, ত্যাগের বিনিময়ে।
আমাদের স্বাধীনতা দিবস আমাদের শেখায়—
- অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে
- ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে
- দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে
- জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে
স্বাধীনতা দিবস কেবল রাজনৈতিক অর্জনের দিন নয়; এটি সাংস্কৃতিক জাগরণের দিনও বটে। আমাদের গান, কবিতা, নাটক, নৃত্য—সবকিছুতেই স্বাধীনতার স্পন্দন আছে।
রবীন্দ্রনাথের “জন গণ মন” ও ব্যাংকিমচন্দ্রের “বন্দে মাতরম” আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গানের মর্যাদা পেয়েছে।
দেশাত্মবোধক গান যেমন—“আমার সোনার বাংলা”—আমাদের হৃদয়ে দেশপ্রেমের সুর তোলে।
(৬) সাংস্কৃতিক দিক –
স্বাধীনতা শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি সাংস্কৃতিক মুক্তিরও প্রতীক।আমাদের কবিতা, গান, নাটক, চিত্রকলা— সবই স্বাধীনতার চেতনা বহন করেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমার সোনার বাংলা” গানটি কেবল একটি সঙ্গীত নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মার প্রতীক।
কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা আমাদের বুকের ভেতরে বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়েছে।
দেশাত্মবোধক গান যেমন “ধনধান্যে পুষ্পে ভরা”, “একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি” — মানুষের মনে স্বাধীনতার ডাক জাগিয়েছে।
(৭) তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা –
আজকের তরুণরাই আগামী দিনের দেশ চালাবে।
তাদের কাছে স্বাধীনতা দিবস শুধু ছুটি নয়— এটি একটি প্রতিজ্ঞার দিন।প্রতিজ্ঞা করতে হবে—
দেশের উন্নতির জন্য কাজ করব
দুর্নীতি, বৈষম্য, সহিংসতা থেকে দূরে থাকব
আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে রক্ষা করব
(৮) আজকের স্বাধীনতা –
স্বাধীনতা অর্জনের পরও আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে—
দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, বেকারত্ব, বৈষম্য, দূষণ— এসব থেকে মুক্তি পেলে তবেই প্রকৃত স্বাধীনতা আসবে।
আমাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব নিতে হবে দেশের উন্নয়নের জন্য।
(৯) অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য –
আজকের এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেবল বিনোদনের জন্য নয়—
এটি স্বাধীনতার ইতিহাস জানার, দেশপ্রেম জাগানোর এবং ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি মাধ্যম।
গান, কবিতা, নাটক, আবৃত্তি— প্রতিটি পরিবেশনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে, আমরা কেমন করে স্বাধীনতা পেয়েছি এবং কেমন করে তা রক্ষা করতে হবে।
(১০) উপসংহার –
প্রিয় শ্রোতা, আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই—স্বাধীনতা পেতে যেমন কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে, তেমনি স্বাধীনতা রক্ষা করতেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
দেশের প্রতি ভালোবাসা শুধু বক্তৃতায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হবে।
“সকলের ত্যাগে গড়া এই স্বাধীনতা—আমাদের কাছে এক অমূল্য সম্পদ।”
তাই আসুন, আজকের এই স্বাধীনতা দিবসে আমরা শপথ নেই—আমাদের দেশকে আরও সুন্দর, সমৃদ্ধ, ও গৌরবময় করে তুলব।
ধন্যবাদ। জয় হিন্দ!
আরও পড়ুন :
YouTube – Samim Sir