বাংলা গদ্য প্রবন্ধের ধারা প্রশ্ন উত্তর / class 11 / 2nd semester / একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার / bangla sahityer itihas question answer

বাংলা গদ্য প্রবন্ধের ধারা প্রশ্ন উত্তর / class 11 / 2nd semester / একাদশ শ্রেণী বাংলা দ্বিতীয় সেমিস্টার / bangla sahityer itihas question answer

বাংলা গদ্য প্রবন্ধের ধারা প্রশ্ন উত্তর
বাংলা গদ্য প্রবন্ধের ধারা প্রশ্ন উত্তর

বাংলা গদ্য প্রবন্ধের ধারা প্রশ্ন উত্তর

(১) বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো। (  সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন  ) ৫

উত্তর – সাহিত্য সম্ভার: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলার নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। প্রথম জীবনে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি ও হিন্দি থেকে বেশ কিছু গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন। ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ (১৮৪৭) হিন্দি ‘বৈতাল পচ্চীসী’-র অনুবাদ। কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানম্ শকুন্তলম্’ নাটকের ভাব অবলম্বনে ‘শকুন্তলা’ (১৮৫৪), ভবভূতির ‘উত্তরচরিত’ ও বাল্মিকী রামায়ণের ‘উত্তরাকান্ড’ অবলম্বনে ‘সীতার বনবাস’ (১৮৬০) এবং শেকসপিয়র-এর ‘Comedy of Errors’-এর অবলম্বনে তিনি লিখেছিলেন ‘ভ্রান্তিবিলাস’।

কিছু পাঠ্যগ্রন্থও অনুবাদ করেছিলেন বিদ্যাসাগর, যেমন-‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ (১৮৪৮), ‘জীবনচরিত’ (১৮৪৯), ‘বোধোদয়’ (১৮৫১) আর ‘ঈশপস্ ফেবলস্’-এর বাংলারূপ ‘কথামালা’ (১৮৫৬)।

বিদ্যাসাগরের মৌলিক গ্রন্থের মধ্যে আছে বাঙালি রচিত প্রথম সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস-‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫৩)। এ ছাড়া ‘বিধবাবিবাহ চলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ (১ম খণ্ড ও ২য় খন্ড, ১৮৫৫), ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার’ (১ম ১৮৭১, ২য় ১৮৭৩) প্রভৃতি উদ্দেশ্যমূলক রচনা। অনুভব-নিবিড় রচনাতেও বিদ্যাসাগর ছিলেন সমকুশলী। তাঁর স্নেহভাজন বন্ধুকন্যা প্রভাবতীর মৃত্যুতে লেখা ক্ষুদ্র নিবন্ধ ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’ (আনুমানিক ১৮৬৩) আর অসমাপ্ত আত্ম জীবনী ‘বিদ্যাসাগরচরিত’ (১৮৯১) নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শে হয়ে উঠেছে হৃদয়-সংবেদী।

গদ্যরচনায় কৃতিত্ব: বিদ্যাসাগরের অন্যতম কৃতিত্ব বাংলা গদ্যভাষায় যতি সন্নিবেশ, পদবন্ধ এবং শব্দলালিত্য যোজনা। যতিবিন্যাসের প্রণালী নির্দিষ্ট করে বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে দিয়েছিলেন সুষমা ও সম্পদ। ফলে বাংলা গদ্য হয়ে উঠেছিল ভাষাশিল্পের যথাযথ মাধ্যম। বাংলা গদ্যসাহিত্যে তাঁর কৃতিত্বের কথা স্মরণ করেই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- “বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী।“

(২) বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান সম্পর্কে লেখো

ত্তর – জন্ম: ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপিত হয়। এই বিভাগের অধ্যক্ষ উইলিয়াম কেরি সিভিলিয়ানদের বাংলা পড়াতে গিয়ে বাংলা গদ্যগ্রন্থের অভাব দেখে তাঁর কলেজের পণ্ডিত ও সহকারীদের পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে প্ররোচিত করেন।

বিভিন্ন লেখক ও তাঁদের লেখা: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সফল গদ্যরচয়িতাদের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার (১৭৬২-১৮১৯) নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয়। বাংলা গদ্যের যে-আদর্শ রূপ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের লেখনীতে ধরা পড়েছিল, তার উন্মেষ হয়েছিল মৃতুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের হাতে। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল-‘বত্রিশ সিংহাসন’ (১৮০২), ‘রাজাবলি’ (১৮০৮), ‘হিতোপদেশ’ (১৮০৮), ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’ এবং ‘বেদান্তচন্দ্রিকা’ (১৮১৩)।

এ ছাড়া কলেজের যাঁরা বাংলা গদ্যের বিকাশে অংশ নিয়েছিলেন রামরাম বসু (১৭৫৭-১৮১৩) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ (১৮০১) বাঙালির লেখা প্রথম মুদ্রিত গদ্যগ্রন্থ। রচনাটিতে আরবি-ফারসি শব্দের বাহুল্য দেখা গেলেও, তার প্রয়োগ সুষ্ঠু ও সংগত। গ্রন্থটির ভাষা সাধু বাংলা। পূর্বাপর প্রচলিত বর্ণনাত্মক পদ্ধতিতে কথকতা ধরনের গ্রন্থ এটি। তাঁর অপর রচনা ‘লিপিমালা’ (১৮০২) প্রবন্ধ পুস্তক।

এই কলেজ থেকেই প্রকাশিত হয়, উইলিয়াম কেরির ‘কথোপকথন’ (১৮০১), যা তাঁর চলিতভাষার প্রতি আকর্ষণের দৃষ্টান্ত। গোলোকনাথ শর্মা অনূদিত ‘হিতোপদেশ’ (১৮০২)-এ কথ্যভাষার অনুসরণ ঘটেছে। রাজীবলোচন মুখোপাধ্যায় রচিত ‘মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়স্য চরিত্রম্’ (১৮০৫) অনেকটা রামরাম বসুর ‘রাজা প্রতাপাদিত্য চরিত্র’-র আদর্শে রচিত। এ ছাড়া চণ্ডীচরণ মুনশির ‘তোতা ইতিহাস’, হরপ্রসাদ রায়ের ‘পুরুষ পরীক্ষা’, তারিণীচরণ মিত্র অনূদিত ‘ঈশপের গল্প’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এই কলেজের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে বাঙালির যোগ ছিল না, কিন্তু পরোক্ষভাবে বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশে সহায়তা করেছিল এই শিক্ষাকেন্দ্র।

(৩) বাংলা গদ্যসাহিত্যে প্যারীচাঁদ মিত্রের কৃতিত্ব আলোচনা করো । ৫

উত্তর – আবির্ভাব: বাংলা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাসে রামমোহন, বিদ্যাসাগরের পরে যিনি সর্বপ্রথম উপন্যাসের প্রাণলক্ষণকে সূচিত করে, বাংলা গদ্য-প্রবন্ধে চলিত ভাষা ও অভিনব লঘুভঙ্গির প্রবর্তন করেছিলেন, তিনি হলেন প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩)। টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে বাংলা প্রবন্ধের ধারাকে ব্যাকরণসম্মত সুশৃঙ্খলায়িত রচনার দ্বারা তিনি এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তিনি প্রধানত বাংলা গদ্যে ব্যাঙ্গাত্মক প্রবণতা ও সরসতার পথিকৃৎ ছিলেন।

গদ্যসাহিত্যিক প্যারীচাঁদ মিত্রের কৃতিত্বের নানা মাত্রা: বহুদিন ধরে চলে আসা সংস্কৃতবহুল গুরুগম্ভীর সাধুভাষার বিরুদ্ধে প্যারীচাঁদ মিত্র সর্বপ্রথম গদ্যভাষাকে কথ্যভাষা রূপে নমনীয় করে প্রকাশ করলেন। প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ একখানি সার্থক সামাজিক নকশা হওয়ার পাশাপাশি বাংলা উপন্যাসের প্রাণলক্ষণটিকে সর্বপ্রথম চিহ্নিত করেছিল। ছোটো-ছোটো সরলবাক্য দিয়ে যেহেতু প্যারীচাঁদ মিত্র বক্তব্য বিন্যাস করতেন, সেহেতু তাঁর রচনা ছিল সহজপাঠ্য। প্যারীচাঁদ প্রযুক্ত ভাষা মূলত সংকর ভাষা হিসেবে পরিচিত। মৌখিক ভাষা, সাধুভাষা, কথ্যভাষা ইত্যাদির সংমিশ্রণে তাঁর গদ্যভাষা ‘আলালী ভাষা’ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে।

প্যারীচাঁদ মিত্রের সৃষ্টিসম্ভার: প্যারীচাঁদ মিত্রের সৃষ্টিসম্ভার গুলি হল –  ‘মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কি উপায়’, ‘যৎকিঞ্চিৎ’, ‘ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত’, ‘রামারঞ্জিকা’, ‘অভেদী’, চ ‘আধ্যাত্মিকা’, ছ ‘বামাতোষিণী’। এসব ছাড়া তাঁর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল ‘আলালের ঘরের দুলাল’। এই গ্রন্থটির হয়তো সাহিত্যিক উৎকৃষ্টতা নেই, কিন্তু প্রথম উপন্যাসের প্রাণলক্ষণ সূচিত করে, এটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে বিদ্যমান।

(৪) কালীপ্রসন্ন সিংহের পরিচয় দিয়ে তাঁর লেখা ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর – কালীপ্রসন্ন সিংহের পরিচয়: কলকাতার অভিজাত পরিবারের সন্তান কালীপ্রসন্ন সিংহ ছিলেন উনিশ শতকের প্রগতিশীল এবং সমাজসচেতন ব্যক্তিত্ব।

কালীপ্রসন্নের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে। পরে দুটি খন্ড একত্রে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। ‘হুতোম প্যাঁচা’ ছদ্মনামে এই গ্রন্থে কলকাতার চলতি বুলিকে আশ্রয় করে তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক গ্রন্থ রচনা করেন কালীপ্রসন্ন, যা তৎকালীন সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে বিস্ময়কর।

গদ্যরচনার বিষয়বস্তু: ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-তে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গের আঘাতে কলকাতার ধনীসমাজের কদাচারকে আক্রমণ করা হয়েছে। রচনায় অশ্লীলতা এবং শব্দব্যবহারে রুচির অভাব আছে। হুতোমের দ্বিতীয় বিশেষত্ব হল-ধর্মকেন্দ্রিক কুৎসিত প্রমোদ। এ ক্ষেত্রে তিনি বৈয়বসমাজ, ব্রাহ্মসমাজ আর পুরাতনপন্থী সমাজ-সকলকেই সমভাবে আঘাত করেছেন। সে-যুগে কলকাতার ধনী মধ্যবিত্ত ও সাধারণ সমাজ কী পরিমাণ হুজুগপ্রিয় ছিল, তার প্রতিটা বর্ণনা যেন এই গ্রন্থে ছবির মতো ফুটে উঠেছে। শুধুমাত্র হাসিঠাট্টা নয়, গুরুগম্ভীর অনেক কথা এই ‘হুতোমী’ ভাষাতেই বর্ণিত হয়েছে। এই ভাষার প্রধান গুণ সরসতা।

গুরুত্ব: ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-ই প্রথম চলিতবাংলায় লেখা গদ্যগ্রন্থ। এই চলিতভাষা হল-উত্তর ও মধ্য কলকাতার মানুষ ইতর-ভদ্র নির্বিশেষে যে-ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষা। ভাষার স্বাভাবিকতা রক্ষার জন্য তিনি উচ্চারণ অনুযায়ী বানান ব্যবহার করেছেন। ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’-র বর্ণনা সজীব ও শক্তিমান, তার কারণ এই ভাষার প্রাণশক্তি। বাংলা সাহিত্যে এই গ্রন্থ তাই স্বমহিমায় উজ্জ্বল।

(৫) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধসাহিত্যের পরিচয় দাও

উত্তর – সূচনা: বাংলা গদ্য ও প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম শিল্পী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের গদ্যসাহিত্যকে দুটি মূল ভাগে বিন্যস্ত করা যায়-বিষয়নিষ্ঠ এবং আত্মনিষ্ঠ। প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সাহিত্যে যথাযথ পান্ডিত্য, বিচিত্র নির্মাণক্ষম প্রজ্ঞার সহায়তায় তিনি বাংলা গদ্যকে বাঙালির মননচর্চার বাহক ও রসতৃয়ার নিবৃত্তির উপায় করে তুলেছেন। ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব, বিজ্ঞান, দেশপ্রীতি, জীবনদৃষ্টি, ব্যঙ্গ প্রবন্ধ, স্নিগ্ধ কৌতুক- তাঁর গদ্যরচনায় এসবেরই দেখা মেলে। ‘বিজ্ঞান রহস্য’ (১৮৭৫) বঙ্গদর্শন-এ মুদ্রিত বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের সংকলন। ‘বিবিধ সমালোচনা’ (১৮৭৬) ও ‘প্রবন্ধ পুস্তক’ (১৮৭৯) পরে একত্রে ‘বিবিধ প্রবন্ধ প্রথম ভাগ’ নামে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

বঙ্কিমচন্দ্র বাংলায় সমালোচনার ভিত্তি স্থাপন করেছেন বলা যায়। বিজ্ঞান বিষয়ক রচনায় তিনি অনুসন্ধিৎসু মনের এবং তথ্যের সরস যুক্তিনিষ্ঠ মনের পরিচয় দিয়েছেন। ‘ধর্মতত্ত্ব’ আলোচনায় তিনি ফলকামনাহীন নিষ্কাম কর্মের এবং ভারতীয় আদর্শের দিকে জোর দিয়েছেন।

‘লোকরহস্য’ ও ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’ (১৮৮৪) বইদুটি তাঁর মানবচরিত্রজ্ঞান ও তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গরস সৃষ্টির পরিচায়ক।

ইতিহাস বিষয়ে রচিত প্রবন্ধগুলিতে বঙ্কিমচন্দ্রের গভীর দেশপ্রীতির আন্তরিক প্রকাশ লক্ষিত হয়। বঙ্কিমচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ (১৮৭৫)। এটি আত্মনিষ্ঠ গদ্যচর্চার চমৎকার উদাহরণ। অনুভূতির গাঢ়তা, কল্পনার সুশৃঙ্খল, সুনির্মিত প্রকাশ ও জীবনবোধের গভীরতা এ-গ্রন্থের আপাত যুক্তিবন্ধনহীনতার মাধ্যমে রূপ লাভ করেছে। এখানেই গদ্যশিল্পী হিসেবে বঙ্কিমের কৃতিত্ব সর্বাধিক।

(৬) প্রবন্ধসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

উত্তর – প্রতিতা: প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্রের যথার্থ উত্তরাধিকার রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষায় যে-বিপুল গদ্যগ্রন্থ রচনা করেন, বিষয়বৈচিত্র্যে তা যেমন অভিনব, মননশীল ও গুরুগম্ভীর-তেমনই সেগুলি মৌলিকতার উপাদানে স্বতন্ত্র। তাঁর রচিত প্রবন্ধগুলিতে মননশীলতার সঙ্গে কবিধর্মের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে।

প্রবন্ধ সাহিত্যে তাঁর আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, সাহিত্যতত্ত্ব, গ্রন্থ সমালোচনা, ছন্দ, অলংকার, ভাষা, জীবনচরিত, আত্ম জীবনী, রাজনীতি, ধর্ম ও দর্শন, সমাজনীতি, লোকসাহিত্য, বিজ্ঞান, ভ্রমণকাহিনি, শিক্ষামূলক ও ব্যক্তিগত প্রবন্ধ, পত্রসাহিত্য প্রভৃতি।

প্রবন্ধ: মাত্র পনেরো বছর বয়সেই তিনটি গীতিকাব্যের সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি প্রবন্ধ আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। তাঁর ‘ভুবনমোহিনী প্রতিভা’, ‘দুখসঙ্গিনী’ ও ‘অবসর সরোজিনী’ এই তিনটি প্রবন্ধ জ্ঞানাঙ্কুর ও প্রতিবিম্ব পত্রিকায় প্রকাশিত হয় (কার্তিক, ১২৮৩ বঙ্গাব্দ)। তাঁর প্রবন্ধ-নিবন্ধ শ্রেণির রচনাগুলিকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-ক সাহিত্য সমালোচনা ও ভাষা সংক্রান্ত, খ শিক্ষা, সমাজনীতি ও রাজনীতি বিষয়ক, গ) ধর্ম-দর্শন-অধ্যাত্ম বিষয়ক, ঘ ব্যক্তিগত প্রবন্ধ, ও জীবনী, ভ্রমণকথা ও পত্রসাহিত্য, চ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ।

রবীন্দ্রনাথের কতগুলি বিশিষ্ট প্রবন্ধ হল-‘পঞ্চভূত’, ‘সাহিত্য’, ‘মানুষের ধর্ম’, ‘শান্তিনিকেতন’, ‘সভ্যতার সংকট’, ‘লোকসাহিত্য’ প্রভৃতি। প্রবন্ধগুলি বালক, সাধনা, ভারতী ও প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। বক্তব্যের স্পষ্টতা, উপমা ও উপমানের অজস্রতা, ভাষার প্রসাদগুণ ও কাব্যধর্মিতা রবীন্দ্রপ্রবন্ধের কালজয়িতার স্মারক। তাঁর প্রতিটি কথায় অনুভব করা যায় অন্তর্নিহিত রসসত্তার ধ্বনিময় প্রস্ফুটন। তাই শুধু কবি রবীন্দ্রনাথ নন, প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথও বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল।

(৭) বাংলা গদ্যসাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান আলোচনা করো । ৫

উত্তর – বীরবল: বিশিষ্ট অভিজাত বংশের সন্তান, উচ্চশিক্ষিত, বিদগ্ধ পণ্ডিত, কবি-প্রাবন্ধিক-পত্রিকা সম্পাদক-সাহিত্য সমালোচক ও গল্পকার ‘বীরবল’ ছদ্মনামের আড়ালে প্রমথ চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্র-সমসাময়িক সাহিত্যজগতের এক বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলা গদ্যচর্চায় এক নব্যধারার সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন, যা ‘বীরবলী ঢং’ নামে বিখ্যাত।

প্রবন্ধ পরিচয়: প্রমথ চৌধুরীর প্রথম প্রবন্ধ ‘জয়দেব’ ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য প্রবন্ধগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘তেল-নুন-লকড়ী’ (১৯০৬), ‘বীরবলের হালখাতা’ (১৯১৭), ‘নানা কথা’ (১৯১৯), ‘রায়তের কথা’ (১৯২৬), ‘নানা চর্চা’ (১৯৩২) ইত্যাদি।

প্রতিতা: তাঁর প্রবন্ধ গঠনের দিক থেকে শিথিল হলেও বলিষ্ঠ জীবনদর্শনের প্রতিফলন এতে দেখা যায়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি প্রবন্ধ রচনা করেছেন। যেমন-দেশীয় ও পাশ্চাত্য সাহিত্য, সৌন্দর্যতত্ত্ব, সংগীততত্ত্ব, ইতিহাস, সমাজনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা প্রভৃতি। তাঁর ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ গ্রন্থটি বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধের একটি সংকলন।

রবীন্দ্রনাথ প্রমথ চৌধুরীর কবিতা প্রসঙ্গে একটি বিশেষণ ব্যবহার করেছিলেন ‘ইস্পাতের ছুরি’। তাঁর গদ্যের মধ্যেও সেই শাণিত আভা লক্ষ করা যায়। প্রতিটি রচনায় তিনি বিতর্কের উত্তাপে আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রবন্ধের গঠনকৌশলের মধ্যে আছে নাগরিক বৈদগ্ধ্য, মননের তীক্ষ্ণ চমক, কখনও-বা রঙ্গব্যঙ্গ। বৈঠকি মেজাজে লঘু রীতিতে লেখা হলেও, প্রবন্ধের বিষয় লঘু নয়। ফরাসি সাহিত্যপাঠের অভিজ্ঞতা তাঁর মনীষাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে।

(৮) বাংলার নবজাগরণে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো

উত্তর – ব্রাহ্মসমাজের পরিচয়: ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই ব্রাহ্মসমাজকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল ব্রাহ্মধর্ম। রামমোহনের পরে ব্রাহ্মসমাজের প্রাণপুরুষ হন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ছিলেন ভক্তিবাদী। ব্রাহ্মণ না-হলেও কেশবচন্দ্রকে তিনি ব্রাহ্মসমাজের আচার্য নিযুক্ত করেন এবং ‘ব্রহ্মানন্দ’ উপাধি দান করেন। কিন্তু শীঘ্র উভয়ের মধ্যে মতবাদগত বিরোধ দেখা দেয়। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন সংযত আর কেশবচন্দ্র ছিলেন আবেগ-উদ্দামতার পক্ষপাতী। তিনি এবং তাঁর অনুগামীরা অধ্যাত্মচেতনার পরিবর্তে সমাজসংস্কারের দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দিতেন, ফলে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর কেশবচন্দ্র ও তাঁর অনুগামীরা গঠন করেন ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’। দেবেন্দ্রনাথের অনুগামী দল পরিচিত হয় ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’ নামে।

নবজাগরণে ভূমিকা: ক্রমে কেশবচন্দ্রের ভক্তগণের কেউ কেউ তাঁকে ঈশ্বর জ্ঞানে উপাসনা করতে আরম্ভ করেন। এ নিয়ে ব্রাহ্মসমাজে বিতর্কের সূত্রপাত হয়। মূলত কেশবচন্দ্রের উদ্যোগে যে ‘বিবাহ আইন’ চালু হয়, সেই অনুসারে, পাত্রপাত্রীর বয়স নির্দিষ্ট করা হয়। কিন্তু এই নিয়ম লঙ্ঘন করে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কেশবচন্দ্র নিজেই কোচবিহারের নাবালক যুবরাজের সঙ্গে নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যার বিবাহ দেন। ফলে আবার ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হয়। প্রগতিশীল ব্রাহ্ম যুবকগণ (শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী) ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ ত্যাগ করে গঠন করেন ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’, আর কেশবচন্দ্রের দলের নাম হয় ‘নববিধান ব্রাহ্মসমাজ’। ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ ধর্ম অপেক্ষা সমাজের উন্নতির দিকেই বেশি জোর দেয়।

বিভেদের এই প্রবলতা সত্ত্বেও স্ত্রীশিক্ষা, রাজনৈতিক চেতনার বিস্তার, সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্যে জরুরি কর্মধারা গ্রহণ করেছিল ব্রাহ্মসমাজ। তাই বাংলার নবজাগরণের ইতিহাসে ব্রাহ্মসমাজের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

আরও পড়ুন

তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্প প্রশ্ন উত্তর

ভাব সম্মিলন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

ছুটি গল্পের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

লালন শাহ ফকিরের গান প্রশ্ন উত্তর

নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর

আগুন নাটকের প্রশ্ন উত্তর

বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

আজব শহর কলকেতা প্রশ্ন উত্তর

আড্ডা প্রশ্ন উত্তর

পঁচিশে বৈশাখ প্রশ্ন উত্তর

YouTube – Samim Sir

Leave a Comment