বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর। দ্বাদশ শ্রেণী। চতুর্থ সেমিস্টার। Class 12 Bangalir Chitrakolar Itihas Long Question Answer । Semester 4

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর। দ্বাদশ শ্রেণী। চতুর্থ সেমিস্টার। Class 12 Bangalir Chitrakolar Itihas Long Question Answer । Semester 4

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর

Mark – 2

() পট কী ? কীভাবে অঙ্কিত হত ?

উত্তর

👉 লৌকিক সাহিত্যে লোকশিল্পের একটি অতিপ্রাচীন মাধ্যম পট। ‘পট’ কথাটির অর্থ চিত্র।

👉 কাপড়ের ওপর কাদামাটি বা গোবর মিশ্রিত প্রলেপের সঙ্গে আঠা মিশিয়ে জমিন তৈরি করে পট অঙ্কন করা হত।

() পটুয়াদের কথা কোথায় জানা যায় ? পটশিল্পের বিস্তারকাল লেখো।

উত্তর

👉 সপ্তম শতকের গোড়ার দিকে রচিত ‘হর্ষচরিত’-এ পটুয়াদের কথা আছে।

👉 দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতকে পটশিল্প বিস্তার লাভ করে। ষোড়শ শতকে চৈতন্যদেবের বাণী প্রচারের জন্যও পট ব্যবহৃত হত। এই শতকের কবি মুকুন্দরামের কাব্যে পটের উল্লেখ আছে। চিত্রকলা বিশেষজ্ঞদের অভিমতানুসারে বলা চলে পটশিল্পের বিস্তারকাল দ্বাদশ শতক থেকে ষোড়শ শতক।

() পটের গান কী ? পটের উপাদান ও বৈচিত্র্য লেখো।

উত্তর

👉 পৌরাণিক বা লোকগাথা ভিত্তিক বিভিন্ন কাহিনি ছিল পটের উপজীব্য বিষয়। আমাদের দেশে মূলত বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে গানের সুরে এইসব পটের কাহিনি বর্ণনা করতেন। এইসব গানকেই পটের গান নামে চিহ্নিত করা হয়।

👉 বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে এই গান বাংলার মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম উপাদান হয়ে ওঠে। গায়েনরা বিভিন্ন বিষয়ে বিচিত্র সুরে গান গাইতেন। তন্মধ্যে পূর্ববঙ্গের গাজীর পট বা সত্যপীরের পট ছিল অনবদ্য।

() কালীঘাটের পট সম্পর্কে লেখো।

উত্তর

👉 উনিশ শতকে বাংলায় প্রসিদ্ধি পেয়েছিল কালীঘাটের পট। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চিত্রশৈলী মিশিয়ে এই পট তৈরি হত। এই পটে হিন্দু দেবদেবীর ছবি চিত্রিত হত। সমালোচকেরা কালীঘাটের পটকে বিশেষ সামাজিক স্বীকৃতি দিয়েছে। প্যারিসে বিক্রিত কালিঘাটের পট কিনেছিলেন চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো। চিত্রকর ফার্নান্দ লেজের চিত্রশিল্পে কালীঘাটের পটের ছায়া পড়েছে। ‘মোহন্ত এলোকেশী’ এই পটশিল্পের উজ্জ্বল উদাহরণ। কালীঘাটের পট তৎকালীন সময়ে এককড়ি মূল্যে বিক্রীত হওয়ায় প্রচুর মানুষ ক্রয় করার জন্য ভিড় জমায়। কালীঘাটের পট বৈচিত্র্যগুণে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

() সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট কবে গঠিত হয় ? এই সোসাইটির কয়েকজন সদস্যের নাম লেখো।

উত্তর

👉 লন্ডনে গ্রেট এগজিবিশনে ভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনের ফলশ্রুতি হিসেবে এই দেশের মাটিতে গড়ে ওঠে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোমোশান অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’।

👉 এই সোসাইটির প্রাণপুরুষ ছিলেন-হজসন প্রাট, রাজেন্দ্রলাল মিত্র প্রমুখ।

() বাংলায় হেনরি হোভার লক স্মরণীয় কেন?

উত্তর

👉 বাংলায় আধুনিক শিল্প-শিক্ষার প্রসারে হেনরি হোভার লক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তি। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে ১৮৬৪ থেকে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট’ প্রতিষ্ঠানটি নিষ্ঠার সাথে পরিচালনা করেছেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় বহু ছাত্র পাশ্চাত্য শিল্পরীতির অনুরাগে আসক্ত হন। তাঁর সুযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন অন্নদাপ্রসাদ বাগচী, শ্যামাচরণ শ্রীমানী প্রমুখ।

() হেনরি হোভার লক আর্ট স্কুল সংলগ্ন বাড়িতে আর্ট গ্যালারি কবে প্রতিষ্ঠা করেন ? তাঁর ওই আর্ট স্কুলের কয়েকজন ছাত্রের নাম লেখো।

উত্তর

👉 ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে হেনরি হোভার লক আর্ট স্কুল সংলগ্ন বাড়িতে আর্ট গ্যালারি প্রতিষ্ঠা করেন।

👉 তাঁর পরবর্তীকালে নাম করা ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শশী কুমার হেশ, রোহিণীকান্ত নাগ ও ফণীন্দ্রনাথ বসু, গঙ্গাধর দে, প্রমথনাথ মিত্র, অন্নদাপ্রসাদ বাগচী, বামাপদ বন্দ্যোপাধায় প্রমুখ।

() জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি সম্পর্কে লেখো।

উত্তর

👉 ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে রণদাপ্রসাদ গুপ্ত প্রতিষ্ঠিত শিল্প শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্র হল জুবিলি আর্ট অ্যাকাডেমি। হ্যাভেল সমকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান মূলত ব্রিটিশদের অনুসরণে ছবিতে দৃশ্যসত্যের হুবহু অনুসরণ করে চিত্রচর্চা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানে জন্ম হয়েছে বহু প্রতিভাবান শিল্পীর। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার, অতুল বসু, বসন্ত গঙ্গোপাধ্যায়, প্রহ্লাদ কর্মকার প্রমুখ।

() দি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ আর্ট কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন ? এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম ও প্রখ্যাত ছাত্রদের নাম লেখো। ২

[অথবা],

দি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ আর্ট-সম্পর্কে লেখো। ২

উত্তর

👉 বিখ্যাত আলোক চিত্রকর মন্মথনাথ চক্রবর্তী ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘দি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ আর্ট’ স্থাপন করেন।বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সুপরিচিত ‘দি ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ড্রাফটম্যানসিপ’ নামে।

👉 এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে শিল্পচর্চায় প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন রবীন মন্ডল, সুহাস রায়, বিকাশ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

(১০) ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট-কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন ? এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য কী ছিল? ২

উত্তর

👉 ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশিষ্ট বাঙালি ও ইংরেজি শিল্পমনস্ক মানুষদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’।

👉 এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মধ্যে প্রাচ্য শিল্পকলা বিষয়ে জ্ঞান সঞ্চার ও আগ্রহ সৃষ্টি করা।

(১১) বাংলার চিত্রশিল্পকলার বিকাশে জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের গুরুত্ব লেখো। ২

উত্তর

👉 আধুনিকতা ও বাংলার চিত্রশিল্পকলার ইতিহাসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। এই বাড়ির বিচিত্র স্টুডিয়ো ও দক্ষিণের বারান্দার চিত্রচর্চা সমগ্র ভারতের দিশারী হয়ে উঠেছিল। শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ ও সুনয়নী দেবীর চিত্রচর্চা স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠেছে। ঠাকুরবাড়ির চিত্রচর্চা স্বতন্ত্র শিল্পধারার জন্ম দিয়ে অভিনবত্ব প্রতিষ্ঠা করায় চিত্রশিল্প জগতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের অবদানকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

(১২) নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনকের নাম লেখো তাঁর চিত্ররীতির বিশেষত্ব লেখো।

উত্তর

👉 শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক বলা হয়। সেই সাথে তাঁকে অনেকেই আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার পুরোধা বলেছেন।

👉 চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইউরোপীয় শিল্পরীতির পাশাপাশি ভারতীয় প্রাচ্য শিল্পরীতির চর্চা আরম্ভ করেছিলেন। বিদেশি শিল্পীদের থেকে প্যাস্টেল, তেল ও জলরঙের কাজ শিখে তিনি আইরিশ ইল্যুমিনেশন এবং মুঘল মিনিয়েচার আদর্শে বেশ কিছু নিদর্শন সৃজন করেছিলেন।

(১৩) শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি বিখ্যাত ছবির নাম লেখো। ২

উত্তর

👉 ভারতীয় চিত্রকলার পুরোধা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিখ্যাতছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘কচ ও দেবযানী’, ‘ভারতমাতা’, ‘অশোকের রানি’, ‘কাজরীনৃত্য’, ‘দেবদাসী’, ‘শ্বেতঅভিসারিকা’, ‘অন্তিম শয্যায় শাজাহান’ প্রভৃতি।

(১৪) রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ অনুসারে অবনীন্দ্রনাথ কোন বিষয়ে চিত্ররচনা করেছেন? ২

উত্তর

👉 আইরিশ ইল্যুমিনেশন এবং মুঘল মিনিয়েচার-এর প্রভাবে দিশেহারা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তাঁর কাকা রবীন্দ্রনাথ উপদেশ দিয়েছিলেন বৈঘ্নব পদাবলীকে বিষয় করে চিত্রচর্চা করতে। সেই পরামর্শ অনুসারে তিনি আঁকেন ‘শ্বেতঅভিসারিকা’, ‘কৃষ্ণলীলা’ প্রভৃতি ছবি।

(১৫) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কার কার কাছে ছবি আঁকার পাঠ নেন ? তাঁর আঁকা একটি বিখ্যাত অ্যালবামের নাম লেখো।

উত্তর

👉 ঠাকুর পরিবারের অন্যতম একজন শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছবি আঁকার প্রথম পাঠ নেন হরিচরণ বসুর কাছে। পরবর্তীকালে প্রখ্যাত জাপানি শিল্পী টাইকান আর হিসিদার কাছে পাঠ নেন জাপানি কালি-তুলি আর ওয়াশের কাজের।

👉 গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বারোটি কাকের ছবি নিয়ে বিখ্যাত অ্যালবামটি হল-টুয়েলভ ইংক স্কেচেস’ (১৯০১)।

(১৬) ব্যঙ্গচিত্রকর বা কার্টুনিস্ট হিসেবে একজন চিত্রশিল্পীর নাম ও তাঁর ছবির বিশেষত্ব লেখো।

উত্তর

👉 v বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ব্যঙ্গচিত্রকর কার্টুনিস্ট হিসেবে সুপরিচিত চিত্রশিল্পী হলেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

👉 ছবির বিশেষত্ব: (১) তাঁর ছবিতে কৌণিকতার ধরন লক্ষ করা যায়। (২) আলোছায়ার রহস্যঘন বিষয়টিও তাঁর ছবিতে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। (৩) তিনি ছবিতে স্পেসকে জ্যামিতিক ছকে ভেঙে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন।

(১৭) শিল্পী গগন ঠাকুরের চিত্রচর্চার বিষয় কী ছিল?

উত্তর

👉 প্রখ্যাত ব্যঙ্গচিত্রকর গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রচর্চার বিষয় ছিল-ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ, ব্যারিস্টারদের স্বদেশি আনা, চরকা বনাম পৃথিবীর সভ্যতা প্রভৃতি।

(১৭) বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবী বিখ্যাত কেন?

উত্তর

👉 ঠাকুর পরিবারের স্বশিক্ষিতা শিল্পী সুনয়নী দেবী হলেন বাংলার লৌকিক শিল্পের চিত্রকর। তাঁর ছবিতে স্বদেশিয়ানা ও স্বাজাত্যভিমানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মুখ্যত জলরঙের মাধ্যমে কৃষ্ণলীলা ও রামায়ণ মহাভারতের চরিত্র অবলম্বন করেই তাঁর চিত্র রচনা প্রসার লাভ করে। তাঁর আঁকা চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম ‘রাধা’, ‘মা যশোদা’, ‘বাউল’, ‘নেপথ্যে’ প্রভৃতি। তাঁর প্রকৃতি চিত্র দেখলে মনে হয় যেন আলোকিত উজ্জ্বল আকাশ দর্শকদের এক আশ্চর্য উদ্ভাসিত জগতের সন্ধান দিয়েছে। বাংলা চিত্রশিল্পকলার জগতে স্বশৈলীতে অপরূপ চিত্র সৃজনে চিত্রকলার ইতিহাসে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন।

(১৮) চিত্রশিল্পী যামিনী রায় সম্পর্কে লেখো।

উত্তর

👉 লোকশিল্পী যামিনী রায় চিত্র শিল্পচর্চার সূচনা করেছিলেন ব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক স্বাভাবিকতাবাদী রীতিকে আশ্রয় করে। চিত্রশিল্পী সুনয়নী দেবীর মতোই তাঁর লোক শিল্পভাবনায়ও স্বাজাত্যভিমান ফুটে উঠেছে পটচিত্রে। বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পট সংগ্রহ করে তিনি নিজস্ব চিত্রভাষা রচনা করেছেন। তাঁর ছবির বিষয় রামায়ণ ও মহাভারতের নারী ও পুরুষ, যীশুখ্রিস্ট, আদিবাসী সমাজ, পশুপাখি ইত্যাদি। তাঁর সৃজনে সমতল রঙে চিত্রিত মানুষজন, পশুপাখিবিস্তীর্ণ পট জুড়ে অবস্থান করেছে। নিজস্ব ঘরানায় যশস্বী পটচিত্রকর হিসেবে বাংলার চিত্রকলায় স্বনামধন্য শিল্পী যামিনী রায়।

(১৯) নন্দলাল বসুর চিত্রকলার বিশেষত্ব কী?

উত্তর

👉 শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর চিত্রকলার বিশেষত্ব হল-বহমান জীবনকে আশ্রয় করে তাঁর ছবিগুলি প্রাণময়তায় চঞ্চল হয়ে উঠেছে। কলাভবনের আচার্য তথা শিল্পগুরু হিসেবে মৌলিক রচনা, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও পরম্পরার অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। স্বচ্ছ জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির ছবির পাশাপাশি ঘন জলরঙের টেম্পোরার কাজ তাঁর ছবিকে অন্যতর মাত্রা দান করেছে। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণমূলক ছবিতে তাঁর অসামান্য দক্ষতা ও বিচক্ষণতা তাঁকে বিশেষত্ব দিয়েছে।

(২০) রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠ গ্রন্থের অলংকরণ শিল্পীর নাম লেখো এবং সেই শিল্পীর কয়েকটি ছবির নাম উল্লেখ করো। ২

উত্তর

👉 রবীন্দ্রনাথের ‘সহজপাঠ’ গ্রন্থের অলংকরণ শিল্পী হলেন শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু।

👉 তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলি হল-‘সতী’, ‘পার্থসারথি’, ‘হলকর্ষণ’, ‘রাঙামাটির পথ’ প্রভৃতি।

(২১) শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ সম্পর্কে লেখো।

উত্তর

👉 বাংলার চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজ শুধু ভাস্কর্যে নয়, চিত্রশিল্পেও তাঁর সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ছবিগুলি প্রধানত প্রকৃতিকেন্দ্রিক ও গ্রামীণ জীবন। সিমেন্ট আর বোলপুরের কাঁকর-মাটি মিশিয়ে শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত প্রান্তরে নির্মাণ করেছেন বহু বিশালাকার ভাস্কর্য। তাঁর ভাস্কর্যের প্রকৃতি ও গ্রামীণ সমাজচিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর ভাস্কর্যগুলির মধ্যে অন্যতম দৃষ্টান্ত হল-‘সাঁওতাল দম্পতি, ‘সুজাতা’, ‘কচ ও দেবযানী’, ‘হাটের পথে’, ‘যক্ষ ও যক্ষীর মূর্তি’ প্রভৃতি।

(২২) শিল্পী চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্যের চিত্র সম্পর্কে লেখো।

উত্তর

👉 বাংলার চিত্রকলা সংস্কৃতির ইতিহাসে অন্যতম একজন বাস্তববাদী ব লিষ্ঠ শিল্পী হলেন চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য। কালো কালির ব্যবহার ও প্রয়োগে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর ছবির আলোছায়ার দ্বন্দুে দুর্যোগের মর্মান্তিক মুহূর্তগুলি প্রাণবন্তভাবে ফুটে উঠেছে। দুর্ভিক্ষের পরবর্তী বছরগুলিতে শ্রমিক ধর্মঘট, হ্যাংরিবেঙ্গল ও ছাত্র আন্দোলনের ছবিতে প্রায়শই কেন্দ্রীয়ভাবে অবস্থান করতে দেখা যায় এক জোরালো প্রতিবাদের আবহ।

Mark – 3

() পটের প্রকার ও বিষয়বৈচিত্র্য লেখো।৩

উত্তর

👉 ‘পট’ বাংলা লোকশিল্পের মূল্যবান সম্পদ। ‘পট’ শব্দের অর্থ চিত্র। সপ্তম শতকের গোড়ায় রচিত বাণভট্টের ‘হর্ষচরিত’ গ্রন্থে পটুয়াদের কথা আছে। ষোড়শ শতকের মঙ্গল কাব্যধারার খ্যাতিমান কবি মুকুন্দরামের কাব্যে পটের উল্লেখ আছে। বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা পট পরিবেশন করত। পূর্ববঙ্গে গাজীর পট ছিল অনবদ্য। উনিশ শতকে বাংলায় প্রসিদ্ধি পেয়েছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্রশৈলীতে সমৃদ্ধ কালীঘাটের পট।

বিষয়বৈচিত্র্য অনুসারে সংগৃহীত পটগুলিকে ভাগ করা হয়ে থাকে যমপট, গাজীপট, সত্যপীরের পট, চকসূদন পট, পাবুজী পট, কালীঘাট পট, সাহেব পট, হিন্দুপ্রাণ পট ইত্যাদি। এ ছাড়াও লোকসংস্কৃতি বিশারদরা পটকে ছয় ভাগে ভাগ করেছেন। সেগুলি হল-(ক) রাজনৈতিক পট, (খ) বিষয় নিরপেক্ষ পট, (গ) ধর্মীয় পট, (ঘ) সামাজিক পট, (ঙ) ঐতিহাসিক পট এবং (চ) পৌরাণিক পট।

(ক) রাজনৈতিক পট: রাজনৈতিক বিষয়কে আশ্রয় করে এই ধরনের পট গড়ে উঠেছে। এই পটে দেশ ও কালচেতনার প্রবাহ লক্ষ করা যায়।

(খ) বিষয় নিরপেক্ষ পট: নর ও নারীর ছবি ও শিল্পচিত্র দেখা যায় এই শ্রেণির পটে। বিভিন্ন বিষয় আশ্রয় করে এই ধরনের পট গড়ে উঠেছে।

(গ) ধর্মীয় পট: বিভিন্ন ধর্মের মাহাত্ম্য, অলৌকিক ঘটনা, ধর্মগুরুদের বীরত্বের কথা এই পটে প্রকাশ পেয়েছে। গাজীপট এই শ্রেণির পটের উজ্জ্বল উদাহরণ।

(ঘ) সামাজিক পট: সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই ধরনেরপট চিত্রিত হয়েছে। পোলিও টীকাকরণ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, বৃক্ষরোপণ সম্পর্কিত বিষয় হল এই ধরনের পট।

(ঙ) ঐতিহাসিক পট: ঐতিহাসিক ঘটনাবলি এই ধরনের পটের উপজীব্যবিষয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আজাদ-হিন্দ-বাহিনি ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক পট।

(চ) পৌরাণিক পট: পৌরাণিক গল্প ও গাথা এই শ্রেণির পটের বিষয়। রাবণ বধ, রাজা হরিশচন্দ্র, সাবিত্রী ও সত্যবান, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল প্রভৃতি পট পৌরাণিক পট হিসেবে পরিচিত।

(২) কালীঘাটের পট সম্পর্কে লেখো। ৩

উত্তর

👉 উনিশ শতকে বাংলার চিত্রকলা জগতে কালীঘাটের পট নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্রশৈলীর মিশ্রণে এই চিত্রকলা সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো প্যারিসে বিক্রিত কালীঘাটের পট সংগ্রহ করেছিলেন। শিল্পী ফার্নান্দ লেজের চিত্র চিত্রণে কালীঘাটের পটের ছায়া ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।

বিকাশ: কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে কালী মন্দিরের সন্নিকটে এই শিল্পের চর্চা শুরু হয় এবং প্রসার লাভ করে। সময়ের বিবর্তনে এই চিত্রকলা ভারতীয় চিত্রকলার একটি স্বতন্ত্র ঘরানায় পরিণত হয়।

বৈশিষ্ট্য: হিন্দুধর্মের ইষ্ট দেবদেবী, অন্যান্য পৌরাণিক ও সমসাময়িক ঘটনা চিত্রণ কালীঘাটের পটের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই শ্রেণির পটের আকৃতি অনেকটা চৌকোর মতো। ছোটো মাপের কাগজে এই শ্রেণির পট চিত্রিত করা হত।

মূল্যায়ন: বাংলার লোকশিল্প হিসেবে পটশিল্প ঐতিহ্যবাহী শিল্প। পটুয়ারা হিন্দুধর্মের দেবদেবীকে প্রাধান্য দিয়ে এই শ্রেণির পটের সূচনা করলেও পরবর্তীতে এই পটের রূপরেখা পরিবর্তিত হয়। সামাজিক ও সমসাময়িক বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি পরবর্তীতে কালীঘাটের পটের ক্যানভাসে প্রতিফলিত হয়েছে। ‘মোহন্ত’ ও ‘এলোকেশী’ হল কালীঘাটের পটশিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন।

() ভারতীয় তথা বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি  অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’ কী ভূমিকা পালন করেছিল?

উত্তর

👉 ভারতীয় তথা বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য চিত্র শিল্প-শিক্ষাঙ্গন। শহর কলকাতার বিদগ্ধ বাঙালি ও ইংরেজি শিল্পরসিককে সংঘবদ্ধ করে যে শিল্পসভার আয়োজন করেছিল তা পরবর্তীতে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভকরেছিল।

প্রধান মুখ: এই শিল্পাঙ্গনের প্রধান বাঙালি মুখ ছিল অবনীন্দ্রনাথঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়, বর্ধমানের রাজা বিজয়চাঁদ মেহেতাব, নাটোরের মহারাজা জগদীন্দ্রনাথ রায় প্রমুখ। পাশ্চাত্য শিল্পসংস্কৃতির বাহক লর্ড কিচেনার ও নর্ম্যান ব্রান্ট এই প্রতিষ্ঠানে মুখ্য কর্মসঞ্চালক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু, গিরিধারী মহাপাত্র, শৈলেন্দ্র দে, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের চিত্রশিল্পকলা গুরু।

উদ্দেশ্য: (১) এই শিল্প-শিক্ষা সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল এ দেশীয় জনগণের মধ্যে প্রাচ্য শিল্পকলা বিষয়ে জ্ঞান সঞ্চার ও আগ্রহ সৃষ্টি করা। (২) শিল্পভাবনাকে সমন্বয় করে আধুনিক শৈলী সৃজনে অনুপ্রাণিত করতে উৎসাহিত করেছিল এই শিল্পাঙ্গন।

মূল্যায়ন: বাঙালির চিত্রকলার বিকাশ ও সমৃদ্ধি পর্বের তাৎপর্যবহ শিল্প-শিক্ষাঙ্গন ছিল ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিল্প আঙ্গিকে স্বতন্ত্র ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেন মূল্যবোধ ও দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে। ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী এই শিক্ষাঙ্গনের পড়ুয়া হিসেবে প্রথিতযশা হয়ে উঠেছিলেন পরবর্তীতে।

() বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে কলাভবনের গুরুত্ব লেখো। ৩

উত্তর

👉 বিশ্ববন্দিত সাহিত্যিক ও শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত মুক্ত শিক্ষাঙ্গন বিশ্বভারতীর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ‘কলাভবন’। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা ও শিল্পগুরু রবীন্দ্রনাথের হাতে এর সূচনা ঘটলেও পূর্ণতা পায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে। বাংলা শিল্পসংস্কৃতির ইতিহাসে এই প্রতিষ্ঠানটি ছিল মুক্ত ভাবচেতনায় সমৃদ্ধ শিল্পাঙ্গন। শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর পরিচালনায় ‘কলাভবন’ এ দেশের ঔপনিবেশিক শিল্প-শিক্ষার পদ্ধতিকে অতিক্রম করে সৃজনশীল ও মৌলিক শিল্প-শিক্ষাঙ্গন হয়ে উঠেছিল।

বৈশিষ্ট্য: শান্তিনিকেতনের ‘কলাভবন’ বাংলা তথা ভারতের চারুকলা ও দৃশ্যকলা চর্চার অন্যতম পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। প্রতিষ্ঠানের গুণী শিক্ষক ও কৃতী ছাত্রদের ভাবনায় আধুনিক চিত্রশিল্প বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে নবদিগন্ত উন্মোচন করেছে।কলাভবনের উজ্জ্বল তারকারা কলাভবনে প্রথমার্ধে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দথেকে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শিল্প শিক্ষক হিসেবে কর্মনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন অসিত কুমার হালদার। পরবর্তীতে নন্দলাল বসুর তৎপরতায় ও সৃজনাত্মক ভাবনায় প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে এবং অন্যতর মাত্রা পায়। এই প্রতিষ্ঠানের শিল্পগুরু হিসেবে পরবর্তীতে যোগ দিয়েছিলেন-লালুপ্রসাদ সাউ, সোমনাথ হোড়, যোগেন চৌধুরী, শর্বরী রায়চৌধুরী, অজিত চক্রবর্তী প্রমুখ ব্যক্তিত্ব। কলাভবনের প্রখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে স্বনামধন্য হয়ে উঠেছিলেনবিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজ, কে জি সুব্রহ্ম্যনিয়ম, সত্যজিৎ রায় প্রমুখ।

মূল্যায়ন: বাংলার শিক্ষাঙ্গন কলাভবন গুণী শিক্ষক ও ছাত্রদেরসম্মেলনে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছিল। চিত্রকলা জগতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি ভাস্কর্য, ম্যুরাল পেইন্টিং, প্রিন্টিং মেকিং, ডিজাইন (টেক্সটাইল/সিরামিক) ও শিল্প ইতিহাসে শংসাপত্র প্রদান করে। বাংলা ও বাঙালির মননে এই প্রতিষ্ঠান চিত্রশিল্পকলায় বিপ্লব ঘটিয়েছিল। আধুনিক শিল্প-শিক্ষার বিকাশে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি এই প্রতিষ্ঠান সেইজন্যই বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে।

() প্রতিকৃতি শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের শিল্পপ্রতিভার পরিচয় দাও। ৩

উত্তর

👉 ভারতীয় চিত্রকলা জগতে বাঙালি প্রতিকৃতি শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার তেল, জল, প্যাস্টেল ও চারকোলে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলে বাঁধাধরা দিনলিপিতে মন অতৃপ্ত হয়ে ওঠায় অধুনালিপ্ত জুবিলি আর্ট স্কুলে ভরতি হন ও বেশ কয়েক বছর চিত্রচর্চা করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বোম্বে আর্ট প্রদর্শনীতে প্রেরিত কয়েকটি ছবির মধ্যে ‘স্মৃতি’ ছবির জন্য তিনি প্রথম পুরস্কার স্বরূপ স্বর্ণপদক লাভ করেন।

ছবির বিষয় ও বিশেষত্ব: তাঁর চিত্র রচনার অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিলসিক্তবসনা নারীর কমনীয় দেহরূপ অঙ্কন। তাঁর অঙ্কিত বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-‘স্মৃতি’, ‘মানসকমল’, ‘পরিণাম’, ‘অনন্তের সুর’, ‘আলোকিত মহিলা’, ‘মহাত্মাগান্ধী’, ‘পল্লীপ্রাণ’, ‘কমল না কণ্টক’, ‘বর্ণঝঙ্কার’, ‘সাকী’ প্রভৃতি।

কৃতিত্ব ও সম্মাননা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর তৎকালীন বাসস্থান২৪ বিডন স্ট্রিটের বাড়িতে ‘ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ আর্ট’ নামে চারুকলা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং ‘শিল্পী’ নামক আর্ট জার্নাল প্রকাশ করেন। ১৯৩১-এ কাশ্মীরের মহারাজার আমন্ত্রণে কাশ্মীরে যান এবং পাতিয়ালার রাজশিল্পী পদে ছ-বছর আসীন ছিলেন।

মূল্যায়ন: বাংলা চিত্রকলার জগতে হেমেন্দ্রনাথ মজুমদার একজন খ্যাতিমান শিল্পী। বৈচিত্র্যপূর্ণ চিত্রচর্চার মাধ্যমে তাঁর চিত্রপ্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর ছবিগুলি অসামান্য দক্ষতার পরিচায়ক হয়ে উঠেছে।

Mark – 5

(১) বাঙালির চিত্রকলাচর্চায় যামিনী রায়ের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো ?

উত্তর – আধুনিক বাংলাচিত্রকলার ইতিহাসেএকজন স্বনামধন্যশিল্পী হলেন যামিনী রায়(১৮৮৭-১৯৭২) ।তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যোগ্যতম শিষ্যদের মধ্যেঅন্যতম ছিলেন ।মাত্র ষোলো বছর বয়সেতিনি গভর্মেন্ট কলেজ অফ আর্টস-এ ভর্তি হন ‌। সেখানে তিনি গুরু হিসেবেপেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ।

শিল্পবৈশিষ্ট্য : যামিনী রায়প্রথমদিকেব্রিটিশ অ্যাকাডেমিক স্বাভাবিকতা রীতি অনুসরণকরেন ।পরে তিনি বাংলালোকশিল্পের দ্বারস্থহন ।পট চিত্রের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিলসবচেয়ে বেশি।এইজন্য মেদিনীপুর, বেলিয়াতোড়, কালীঘাটপ্রভৃতি অঞ্চল থেকেপট সংগ্রহ করা শুরু করেন ।দীর্ঘঅনুশীলনের পর তিনি নিজস্বচিত্রশৈলী গড়ে তোলেন ।

যামিনী রায়সুদীর্ঘপঞ্চাশ বছরধরে চিত্রকলা চর্চা করেছিলেন ।তাঁর চিত্রশিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্যহল –

  • গ্রামবাংলারসহজ-সরলমানুষ, তাদের দৈনন্দিনজীবনযাত্রা,পশুপাখিপ্রভৃতিকে তিনি তাঁর ছবির বিষয় হিসেবে গ্রহন করেছিলেন।
  • ছবিগুলি যাতেসহজলভ্যহয়,সেইজন্যছবি আঁকার উপকরণ হিসেবেখড়ি মাটি,ভুসোকালি,বিভিন্নলতা পাতার রস ইত্যাদিব্যবহারকরতেন ।
  • পট চিত্র আঁকার সময় তিনি সমতলীয় বর্ণিল পট ব্যবহার করতেন ।এই চিত্রশৈলীকে তিনি ‘ফ্ল্যাট টেকনিক’নাম দিয়েছিলেন।তবে সেইসময় বাংলাচিত্রচর্চার ক্ষেত্রেবেঙ্গল স্কুলের একাধিপত্য ছিল বলে তাঁর এই টেকনিক কেউ গ্রহন করেনি ।

উল্লেখযোগ্য ছবি : তাঁর আঁকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্যছবি হল – ‘সাঁওতাল জননী ও শিশু’, ‘মাদলবাদনরত সাঁওতাল’, ‘নৃত্যরতসাঁওতালমা ও শিশু’, ‘গণেশজননী’, ‘রাধাকৃন্ষ’, ‘যীশু’ ‘কৃন্ষও নাগিনী’ইত্যাদি ।

পুরষ্কার ও সম্মাননা : শিল্পী হিসেবেযামিনী রায় জীবনে অনেক সম্মান ওপুরষ্কারপেয়েছেন,তাঁর মধ্যেউল্লেখযোগ্যহল ‘পদ্মভূষণ (১৯৫৪), ‘ললিতকলাঅ্যাকাডেমির ফেলোশিপ (১৯৫৫) ।১৯৭৬সালে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ যামিনী রায়েরশিল্পকর্মগুলিকে ভারতের নবরত্নের (Nine Masters) একটি বলে ঘোষণাকরেছেন।

() চিত্রকলাচর্চায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর অবদান আলোচনা করো   ৫ [সংসদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্ন]

উত্তর

নন্দলাল বসু: বাংলার চিত্রকলার ক্ষেত্রে নন্দলাল বসু একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ‘সহজ পাঠ’-এর অলংকরণকারী বিরল প্রতিভার চিত্রশিল্পী হলেন নন্দলাল বসু। ১৯২২ থেকে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিশ্বভারতীর কলাভবনের তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ছিলেন মূলত অবনীন্দ্রনাথেরই শিষ্য।  

প্রশংসিত চিত্রকলা: ‘অজন্তার গুহাচিত্র’ ও ‘বাগগুহাচিত্রের প্রতিলিপি’ অঙ্কন, বসু বিজ্ঞান মন্দিরের ‘অলংকরণ’, ‘শিল্পচর্চা’ ও ‘রূপাবলি’ নামক শিল্প-বিষয়ক গ্রন্থ রচনা তাঁর স্থায়ী কীর্তি। নন্দলালই একমাত্র শিল্পী, যিনি ভারতীয় শিল্পকলায় আউটডোর স্টাডি বা নেচার স্টাডির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর ছবিতে প্রাধান্য পায় শান্তিনিকেতনের খোলা মাঠ, মাঠে বিচরণরত মোষ, সাঁওতাল নারী-পুরুষ, তালগাছের সারি, গোরুর গাড়ি প্রভৃতি। তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবিগুলি হল ‘শিবসতী’, ‘শোকার্ত সিদ্ধার্থ’, ‘উমার তপস্যা’, ‘শিবের বিষপান’, ‘সতী’, ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’ ইত্যাদি। এ ছাড়াও তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হল ‘পার্থসারথি’, ‘হলকর্ষণ’, ‘রাঙামাটির পথ’।

পুরস্কার ও সম্মাননা: নন্দলাল বসু ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে সম্মানিত হন ‘পদ্মবিভূষণ’ উপাধিতে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান সাম্মানিক ‘ডিলিট’ উপাধি। ‘দেশিকোত্তম’ পান বিশ্বভারতী থেকে। বাংলা তথা ভারতীয় চিত্রকলাচর্চার ইতিহাসে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু তাই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

() বাংলা চিত্রকলাচর্চায় রামকিঙ্কর বেইজের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

[অথবা],

বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজের অবদান ও স্বকীয়তা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। ৫

উত্তর

সূচনা: বাংলার খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ আদিবাসী দরিদ্র পরিবার সন্তান। ছোটোবেলা থেকেই দেবদেবীর ছবি আঁকা, পুতুল গড়া, কামার ও ছুতোরের কাজে সহজাত দক্ষতার পরিচয় রাখেন। তাঁর দেশজ শিল্পকলায় মিশে ছিল প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিল্পকলার বিশেষত্ব।

চিত্রকলায় আত্মপ্রকাশ: রামকিঙ্করকে পাদপ্রদীপের আলোয় আনেন প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। তিনিই তাঁর শিল্পপ্রতিভার পরিচয় পেয়ে তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর ছবি দেখে নন্দলাল তাঁকে যোগ্য শিষ্য বলে মনে করেছিলেন।

শিল্পসম্ভার: তাঁর শিল্পসৃষ্টির মূলে আছে দলিত এবং আদিবাসীদের জীবনাচরণ। এই উপাদান তাঁর শান্তিনিকেতনে কর্মক্ষেত্রের আশপাশ থেকেই গৃহীত হয়েছিল। তিনি ছিলেন মূলত ভাস্কর এবং চিত্রকর। তাঁর কাজের মধ্যে উল্লেখ্য হল ‘লেডি উইথ ডগ’, ‘সুজাতা’, ‘সাঁওতাল পরিবার’, ‘সাঁওতাল রমণী’, ‘মিলকল’, ‘যক্ষ-যক্ষী’, ‘শিলং সিরিজ’, ‘নতুন শস্য’, ‘গ্রীষ্মের দুপুর’। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, আলাউদ্দিন খাঁ প্রমুখের প্রতিকৃতি নির্মাণ ইত্যাদিও বিশেষ উল্লেখ্য। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই প্রভৃতি স্থানে প্রদর্শিত হয় তাঁর ছবি। এ ছাড়া প্যারিস বা জাপানের প্রদর্শনীতেও গিয়েছে তাঁর ছবি। এ দেশের প্রধান-প্রধান শিল্প-সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে তাঁর নানা শিল্পকর্ম।

মূল্যায়ন: নানান সম্মানে ভূষিত হয়েছেন রামকিঙ্কর বেইজ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এমেরিটাস’ প্রফেসর হন। রামকিঙ্কর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দেশিকোত্তম’, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ডি-লিট’, ভারত সরকারের ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৭০) প্রভৃতি সম্মান অর্জন করেন। তাঁকে নিয়ে ‘সমরেশ বসুর লেখা ‘দেখি নাই ফিরে’ উপন্যাসটি অসমাপ্ত হলেও বাংলা সাহিত্যের দিগ্দর্শন হয়ে আছে। আজও সবার মনে মাটির মানুষ শিল্পী রামকিঙ্কর বাংলার মাটির অলংকার ও অহংকার হয়ে রয়েছেন।

() ‘পট’ শব্দটির অর্থ কী ? পটশিল্প সম্পর্কে আলোচনা করো। ৫

উত্তর

পটশিল্প: সংস্কৃত ‘পট্ট’ (কাপড়) থেকে ‘পট’ কথাটির উৎপত্তি হয়েছে। পট হচ্ছে একধরনের ফালি কাপড়ের ওপর খড়িমাটির জমি তৈরি করে আঁকা ছবি। অবশ্য পরবর্তীকালে খড়িমাটির বদলে কাগজ ব্যবহার করেও জমি তৈরি করা হত।

পটশিল্পীদের পরিচয়: পটশিল্পীরা বিভিন্ন জেলায় নানা নামে খ্যাত। যেমন-পটিদার (উত্তর-পশ্চিম বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া), চিত্রকর (বীরভূম, মেদিনীপুর), পটুয়া (দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলা) ইত্যাদি।

পটশিল্পের পরিচয়: আকার-আয়তনের ক্ষেত্রে এই পটের দুটি ভাগ-(ক) আয়তাকার চৌকশ পট এবং (খ) দু-হাত চওড়া ও বারো থেকে পঁচিশ হাত লম্বা জড়ানো পট। বিষয় বিচারে বাংলার পট চার ভাগে বিভক্ত-(১) সাঁওতাল উপজাতির জন্মকথা ও তাদের মধ্যে প্রচলিত চক্ষুদান পট, (২) যমপট (৩) গাজিপট এবং (৪) হিন্দু পুরাণ-রামায়ণ-মহাভারত, মঙ্গলকাব্য, কৃষ্ণলীলা ও চৈতন্যলীলা-বিষয়ক পট। প্রথম ভাগের পট পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রচলিত। দ্বিতীয় ভাগের পটের বিষয় স্বর্গ-নরক, পাপ-পুণ্য ইত্যাদি। এর রচনাশৈলী অমার্জিত। তৃতীয় ভাগের পট হল মুসলমানি পট। এই পটে বর্ণিত হয়েছে মুসলিম ধর্মযোদ্ধা গাজি ও মহাত্মা পিরদের বীরত্ব ও অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ। চতুর্থ ভাগের পট বিষয়বৈচিত্র্যে ও রচনাগুণে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। বাংলার বিভিন্ন জেলায় এই পটের বিষয় বিভিন্ন রকম। যেমন-মেদিনীপুরে কৃষ্ণলীলা ও মঙ্গলকাব্য; বর্ধমান, নদিয়ায় চৈতন্যলীলা এবং বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার শাক্ত ও বৈয়বের সঙ্গে মঙ্গলকাব্য।

() বাঙালির চিত্রকলাচর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।

উত্তর

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর-চিত্রশিল্পে অবদান: বাঙালির চিত্রকলাচর্চার ধারায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্থান সমকালীন শিল্পীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ড্রয়িং, প্যাস্টেল, অয়েল পেন্টিং ও জলরঙের কাজ শেখেন উনিশ শতকের শেষ দশকে। তাঁর শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিকে ছিলেন গিলার্ডি ও পরে ব্রিটিশ চিত্রকর চার্লস পামার।

প্রশংসিত চিত্রকলা: তাঁর প্রথম দিকের শিল্পকলা ‘ঋতুসংহার’, ‘সুজাতা’, ‘বুদ্ধ’, ‘বজ্রমুকুট’, ‘কৃষ্ণলীলা’ প্রভৃতি বিষয়ের ছবিতে ভারতীয় রীতি ও আঙ্গিকের অনুসরণের চেষ্টা লক্ষ করা যায়। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও বুদ্ধিদীপ্ত কাজ হল ‘নির্বাসিত যক্ষ’, ‘ভারতমাতা’, ‘শাজাহানের মৃত্যু’, ‘কবিকঙ্কণ চন্ডী’, ‘সাহাজাদপুরের দৃশ্যাবলি’, ‘আরব্যোপন্যাসের গল্প’, ‘ওমর খৈয়াম চিত্রাবলি’, ‘শ্বেত অভিসারিকা’ ইত্যাদি। তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় লন্ডন, প্যারিস এবং জাপানে। তিনি আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ হন ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন বাগীশ্বরী অধ্যাপক হিসেবে, শেষজীবনে হন বিশ্বভারতীর আচার্য।

গ্রন্থ রচনা: তাঁর ‘বাগীশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’ এবং ছোটো ও বড়োদের জন্য বহু গ্রন্থ অত্যন্ত আদৃত হয়েছে। অবনীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করেই ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’ প্রতিষ্ঠিত হয়। হ্যাভেলের সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি আধুনিক ভারতীয় রূপকলার চর্চাকে পাশ্চাত্যের বন্ধন থেকে মুক্ত করে প্রাচ্যধারায় সমৃদ্ধ করেন।

() বাঙালির চিত্রকলায় জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির চিত্রকলা: বাঙালির চিত্রকলায় ঠাকুরবাড়ির চিত্রকলা এক বিশিষ্ট আসন দাবি করে। এই পরিবারের অন্তত তিনজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব-গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে চিরস্থায়ী কীর্তি রেখেছেন।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর: তাঁর ‘কৃষ্ণলীলা’, ‘ঋতুসংহার’, ‘বুথ’, ‘সুজাতা’ প্রভৃতি সিরিজের ছবিতে ভারতীয় আঙ্গিক দেখা যায়। জাপানি শিল্পী টাইকানের প্রভাবে তিনি ‘ওমর খৈয়াম’ চিত্রাবলি আঁকেন। শেষজীবনে ‘কাটম-কুটুম’ নামে বিখ্যাত অঙ্কনরূপ সৃষ্টি করেন।

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর: গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে গগনেন্দ্রনাথ জাপানি চিত্রকর টাইকান ও হিসিদার কাছে জাপানি চিত্রপদ্ধতি শেখেন। ফরাসি চিত্রধর্মিতা প্রয়োগ তাঁর বিশেষ কীর্তি। প্রবাসী ও মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় তিনি প্রচুর কার্টুন ও ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন। বারোটি কাকের ছবি নিয়ে ‘Twelve Ink Sketches’ তাঁর জীবনের স্মরণীয় কীর্তি। এ ছাড়াও তিনি কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কন করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: রবীন্দ্রনাথের আঁকা আড়াই হাজারের। অধিক চিত্র ভারতীয় তথা বাঙালির চিত্রকলার সম্পদ। প্যাস্টেল, রঙিন খড়ি, জলরং, ফুল-লতাপাতা-গাছের রস থেকে তিনি রং সংগ্রহ করতেন। তাঁর অনেক ছবির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল ‘সে’, ‘খাপছাড়া’ বইয়ের ছবি, ‘অহল্যা হল পাষাণী’, আবু হোসেন’ প্রভৃতি। প্রাত্যহিক জীবন তার রেখায় বারবার জীবন্ত হয়েছে।

তাই বলা যায়, বাঙালির চিত্রকলায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির প্রভাব তাই অনস্বীকার্য।

() বাংলায় চিত্রকলাচর্চার প্রসারে ‘দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর ভূমিকা আলোচনা করো। ৫

উত্তর

দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’: বিংশ শতকে ইউরোপিয়ানদের শিল্পচর্চা দেখে উৎসাহিত হয়ে ভারতীয় পদ্ধতিতে শিল্পশিক্ষার জন্য একটি মহতী উদ্যোগ দেখা যায়। এর ফলস্বরূপ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘প্রাচ্যসভা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে এটিই ‘দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

দি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর ভূমিকা: এই সোসাইটির প্রথম সভাপতি ছিলেন লর্ড কিচেনার এবং যুগ্মসচিব ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সোসাইটির বার্ষিক প্রদর্শনীতে গগনেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ প্রমুখের আঁকা ছবি ও দেশজ শিল্পসম্ভার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হত। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে এটি সরকারের অধীনে আসে এবং সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে সোসাইটির একটি আর্ট স্কুল খোলা হয়। সেই স্কুলে নন্দলাল বসু, শৈলেন্দ্রনাথ দে, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখ প্রথিতযশা শিল্পী ছবি আঁকা ও মূর্তি বানানোর শিক্ষাদান করতে থাকেন। জেমস কাজিনস, উডরক, ভগিনী নিবেদিতা, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সোসাইটি ভারতীয় চিত্ররচনা পদ্ধতির প্রকাশ ও বিকাশ ঘটায়। বাংলার চিত্রকলাচর্চার প্রসারে ‘দ্য ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর ভূমিকা যে অত্যন্ত ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী হয়েছিল তা নিঃসন্দেহে বলা চলে।

() বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো। ৫

উত্তর

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর: বেঙ্গল আর্ট স্কুলের বিখ্যাত চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট হিসেবে গগনেন্দ্রনাথের পরিচিতি সর্বাধিক। তিনি বাঙালি শৈলীতে ছবি আঁকার ইতিহাসে কিউবিজমের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনে প্রথিতযশা শিল্পী। গগনেন্দ্রনাথ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য।

চিত্রকলায় স্বাতন্ত্র্য: গগনেন্দ্রনাথ হরিচরণ বসু, জাপানি শিল্পী টাইকান এবং হিসিদার কাছে ছবি আঁকার পাঠ নেন। এঁদের কাছ থেকে তিনি ইউরোপীয় পদ্ধতিতে জলরং, জাপানি তুলি-কালি ও ওয়াশ পেইন্টিং শিখেছিলেন। ছবিগুলি ছিল অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি, কালো রঙের পটভূমে সোনার জলের রেখায় হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি, নানা টেকনিকের মিশ্রণে ব্যবহৃত নানা ছবি আর অসংখ্য কার্টুন। তাঁর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রের সংকলন তিনটি। তার মধ্যে দুটি তাঁর নিজের উদ্যোগে নিজের লিথোপ্রেস থেকে মুদ্রিত (১৯১৭)। সেগুলি হল ‘বিরূপ বজ্র’ ও ‘অদ্ভুত লোক’। পরে আর-একটি সংকলন ‘নব হুল্লোড়’ বেরোয় থ্যাকার স্পিঙ্ক থেকে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর সম্পাদক হন। এ ছাড়াও বাংলার কারুশিল্প প্রসারের উদ্দেশ্যে স্থাপিত ‘বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিস্ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হন তিনি।

() রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

[অথবা],

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশিষ্টতা নির্ণয় করো। ৫

উত্তর

সূচনা: বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর হয়ে-ওঠা বিচিত্র হলেও, বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আড়াই হাজার ছবির স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্যে বা যৌবনে ছবি এঁকেছেন অনেকটা নেশার বশেই। সেই আঁকার মধ্যে ধারাবাহিকতা, সৃজনের বেগ কিংবা প্রকাশের জন্য কোনো আকুলতা ছিল না।

চিত্রকলায় বিশিষ্টতা: ১৯২০-১৯২১ খ্রিস্টাব্দ প্যারিসে ডাডাপন্থী, স্যুররিয়ালিস্টিক এবং আরও নানা ধরনের ছবির প্রদর্শনী দেখেছেন তিনি। এমনকি এর পরের বছর কলকাতায় পাউল ক্লে, ক্যান্ডিনস্কি, ফাইনিঙ্গার প্রমুখ পাশ্চাত্য আধুনিক শিল্পীদের ছবির প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পল ভালেরি ও আঁদ্রে জিদ-এর ভাষায় আর্ট আন্দোলনের ভিতরে নতুনকে পাওয়ার যে চেষ্টা, তাকে সহজেই উদ্‌ঘাটন করেছেন রবীন্দ্রনাথ। নানা ধরনের ছবি এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথ-নরনারী, জীবজন্তু, সরীসৃপ আর দ্বিতীয়টিতে পাখির ঠোঁট, ডানা, জন্তুর থাবা ইত্যাদি। পেনসিল, প্যাস্টেল বা রঙিন খড়ি, ব্লটিং পেপার, জলের ভেষজ রং, তেলরং, ড্রাই পেস্ট, এইচিং ইত্যাদির কাজে তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। শুধুমাত্র কলম দিয়েও তিনি নিপুণতার সঙ্গে ছবি এঁকেছেন।

প্রশংসিত চিত্রকর্ম: তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলির মধ্যে ‘আত্মপ্রকৃতি, ‘কচ ও দেবযানী’, ‘বৌদ্ধভিক্ষু’, ‘অহল্যা হল পাষাণী’, ‘শেষ নিশ্বাস’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলা কবিতা, গান, নাটক ইত্যাদি বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারার মতোই বাংলা চিত্রকলাতেও তিনি নবতম মাত্রা যোগ করেছেন।

(১০) চিত্রশিল্পী বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের চিত্রকলাচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। ৫

উত্তর

সূচনা: বিখ্যাত ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের শান্তিনিকেতনের সহপাঠী ছিলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। জন্ম কলকাতার বেহালায়, ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে। শৈশবে তিনি যেমন রুগ্ধ ছিলেন, তেমনই তাঁর দৃষ্টিশক্তিতেও প্রতিবন্ধকতা ছিল। চিত্রকলায় তাঁর অবদান হল-

অনুপ্রেরণা: শিল্পসৃষ্টিতে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন শিল্প ইতিহাস সম্পর্কিত তাঁর গভীর প্রজ্ঞাকে। তাঁর প্রিয় শিল্পী ছিলেন জিয়োতো, ম্যাসাচিও প্রমুখ। এ ছাড়া তাঁর পছন্দ ছিল চিন-জাপানের চিত্রকলাও। তিনি অবনীন্দ্রনাথ-নন্দলালের প্রিয় শিষ্য ছিলেন।

প্রশংসিত চিত্রশিল্প: তাঁর ছবির উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ‘নির্জনতা’, যা ছড়িয়ে আছে তাঁর অসংখ্য ছবিতে। তাঁর ‘হাসি’, ‘বীরভূমের গ্রীষ্ম দৃশ্য’, ‘Artist In Studio’, ‘নারী’, ‘The Tree Lover’। এ ছাড়া তাঁর শ্রেষ্ঠ ভিত্তিচিত্রটি (মুরাল) হল বিশ্বভারতীর হিন্দি ভবনের দেয়ালে আঁকা ৭৭ ফুট বিস্তৃত, ৮ ফুট দীর্ঘ বিরাট ছবিটি। ছবিটি ‘মধ্যযুগের সন্তগণ’ নামে পরিচিত।

সাহিত্যসৃষ্টি: বিনোদবিহারীর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘ চিত্রকর’, ‘কর্তাবাবা’ (আত্মজীবনীমূলক)।

মূল্যায়ন: তাঁর ছবির বিষয়বৈচিত্র্য, অঙ্কন পদ্ধতি, মাধ্যম সকলের থেকে আলাদা। বাংলার চিত্রকলাচর্চার ইতিহাসে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় তাঁর অসামান্য কাজের নিরিখেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় তাঁর গুরু বিনোদবিহারীকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘The Inner Eye’ নামে একটি তথ্যচিত্র।

(১১) ‘কালীঘাট পট’ বলতে কী বোঝ ? এগুলির বিষয় ও শৈলী সম্পর্কে পরিচয় দাও। ২+৩

[অথবা],

বাংলা পটচিত্রের ইতিহাসে ‘কালীঘাট-এর পট’-এর গুরুত্ব ও অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর

ভূমিকা: কলকাতার কালীঘাট মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে। এই উপলক্ষ্যে সেখানে শুরু হয় ভক্তবৃন্দের যাতায়াত। ক্রমে ক্রমে সেখানে আগমন ঘটে নিম্নবর্গের কিছু হিন্দু আর মিশ্রজীবী মানুষের, যাঁরা পটুয়ারূপে গণ্য হন। তাঁদের শিল্পচর্চায় মুখাবয়ব, মূর্তির স্থানে প্রাধান্য পায় অঙ্কন। এভাবেই জন্ম নেয় কালীঘাটের পট।

কালীঘাটের পটশৈলী: কালীঘাটের পট একসময়ে নিকৃষ্ট চিত্রকর্ম বলে বিবেচিত হত, পরে অবশ্য এই দৃষ্টিভঙ্গি পালটায়। কালক্রমে কালীঘাটের পটচিত্রে বদলে যায় বিষয়; তাতে চিত্রিত হতে থাকে সমকালীন জীবনও। কালীঘাট পটে কোনো কোনো বিদেশি চিত্রসমালোচক ব্রিটিশ চিত্ররীতির বহুল প্রভাব লক্ষ করেছেন। তবে ভিন্ন মত অনুসারে, অনেকেই ভারতীয় চিত্রকলার প্রাচীনত্ব উল্লেখ করে কালীঘাট পটকে মৌলিক বলেই মনে করেন।

পটের বিষয়: এই পটের বিষয় মূলত ধর্মকেন্দ্রিক, যেমন কালী ছাড়াও দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গণেশজননী, শিব, পার্বতী, গণেশ প্রভৃতি দেবদেবীর ছবি এতে দেখা যায়। এ ছাড়া ছিল বাবু কালচারের নানা নমুনা, যার উল্লেখ পাওয়া যায় টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ কিংবা কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’-তে। আর ‘বারবণিতা’, ‘গোলাপসুন্দরী’ প্রভৃতির উজ্জ্বল ছবিও লক্ষ করা যায়। কালীঘাটের পটচিত্রের শিল্পীদের মধ্যে ইন্দ্রমোহন ঘোষ, বলরাম দাস, কার্তিক চিত্রকরের নাম উল্লেখযোগ্য। এঁরাই কালীঘাটের পটচিত্রের তিনটি ধারার জন্মদাতা।

(২) বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবী স্মরণীয় কেন? তাঁর কয়েকটি চিত্রের নাম লেখো। ৩+২=৫

উত্তর: বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে সুনয়নী দেবীর প্রভাব: স্বশিক্ষিতা স্বশৈলীতে অনবদ্য চিত্রভাষার রূপকার হলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের গগন ঠাকুর ও অবন ঠাকুরের বোন সুনয়নী দেবী। প্রথম ভারতীয় মহিলা চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি স্বনামধন্যা শিল্পী। তাঁর চিত্রচর্চার অনুপ্রেরণা ছিল দাদা গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতিতে দাদার অনুসারী না হয়ে নিজস্ব ঘরানায় লোকশিল্পকে আশ্রয় করে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর শিল্পশৈলী। তাঁর শিল্পে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে স্বদেশিয়ানা ও স্বাজাত্যভিমান।প্রধানত জলরঙের মাধ্যমে অপূর্ব ভঙ্গিমায় কৃষ্ণলীলা ও রামায়ণ মহাভারতের চরিত্র অবলম্বন করেই তিনি অনবদ্য চিত্রভাষা রচনা করেছেন। প্রথাগত ছকের বাঁধ ভেঙে শিল্পকলায় অভিনবত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চিত্রকলা জগতে বিপ্লব ঘটানোর জন্যই তিনি আজও স্মরণীয়। তাঁর চিত্র-চিত্রণের বিশেষত্বের মধ্যে প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়ে উঠেছে রং, তুলি ও রেখার অপূর্ব বন্ধন। মূলত জলরঙে তাঁর শিল্পভাবনার বৈচিত্র্যকে তিনি প্রকাশ করেছেন।

সুনয়নী দেবীর আঁকা উল্লেখযোগ্য চিত্র: তাঁর আঁকা উল্লেখযোগ্য চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল-‘মা-যশোদা’, ‘বাউল’, ‘নেপথ্যে’, ‘রাধা’, ‘অর্ধনারীশ্বর’, ‘দান’, ‘ভগবতী’ প্রভৃতি।

আরও পড়ুন

হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর

তিমির হননের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর

কেন এল না কবিতার প্রশ্ন উত্তর

নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর

ডাকঘর প্রশ্ন উত্তর

বাঙালির চিত্রকলার ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর

বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস – সংক্ষিপ্ত রূপরেখা প্রশ্ন উত্তর

YouTube – Samim Sir

Leave a Comment