Class 12 Education Chapter 2 Long Question Answer Suggestion // Semester 4 // শিখন কৌশল বড় প্রশ্ন উত্তর // দ্বাদশ শ্রেণী এডুকেশন চতুর্থ সেমিস্টার // দ্বিতীয় অধ্যায় (10 মার্ক)
Class 12 Education
দ্বিতীয় অধ্যায় – শিখন কৌশল
Mark – 10
(১) প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে ? প্রাচীন অনুবর্তনের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো। প্রাচীন অনুবর্তন সংক্রান্ত প্যাভলভের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো। [ WBCHSE, 25, ’10, ’07 ]
উত্তর – প্রাচীন অনুবর্তন: রাশিয়ান শারীরতত্ত্ববিদ আইভান প্যাভলভের (Ivan Pavlov) মতানুযায়ী, প্রাণীর স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে বা কৃত্রিম উদ্দীপকের দ্বারা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে প্রাচীন অনুবর্তন বলে।
প্যাভলভের পরীক্ষা: প্রাচীন অনুবর্তনের পরীক্ষাটি করার আগে প্যাভলভ একটি কুকুরকে কয়েক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ দেন। পরীক্ষাটি করার সময় ওই ক্ষুধার্ত কুকুরটির সামনে কিছু খাবার রেখে প্যাভলভ দেখেন কুকুরটির লালাক্ষরণ হচ্ছে। এখানে খাদ্যবস্তু হল স্বাভাবিক উদ্দীপক আর লালাক্ষরণ হল স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। এরপর প্রতিদিন প্যাভলভ খাদ্যবস্তু উপস্থাপনের পূর্বে কিছু সময় ধরে ঘণ্টাধ্বনি করেন এবং ঘণ্টাধ্বনি শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে খাদ্যবস্তু উপস্থাপন করেন। এখানে ঘণ্টাধ্বনি কৃত্রিম উদ্দীপক।
আইভান প্যাভলভের পরীক্ষা :
প্রথম দিকে দেখা যায়, ঘণ্টাধ্বনি কুকুরটিকে সজাগ করছে। এই সজাগভাবটি হল ঘণ্টাধ্বনির প্রতি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। প্যাভলভ আরও দেখেন ঘণ্টাধ্বনি শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে খাদ্যবস্তু দেওয়ার ফলে কুকুরের লালাক্ষরণ হচ্ছে। এই লালাক্ষরণের পরিমাণটি প্যাভলভ কাইমোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করেন। এই ঘটনাটির পুনরাবৃত্তির ফলে খাদ্যবস্তু উপস্থাপনের পূর্বে ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটির লালাক্ষরণ হতে দেখা যায়।
সিদ্ধান্ত: এ থেকে প্যাভলভ সিদ্ধান্ত নেন যে, স্বাভাবিক উদ্দীপক (S₁) খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে ঘণ্টাধ্বনিরূপ কৃত্রিম উদ্দীপকের (S₂) দ্বারা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ লালাক্ষরণ ঘটেছে। এই কৃত্রিম উদ্দীপকের দ্বারা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির প্রক্রিয়াটিকেই প্যাভলভ অনুবর্তন বলেছেন এবং ঘণ্টাধ্বনিকে অনুবর্তিত উদ্দীপক ও লালাক্ষরণকে অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া বলেছেন। অন্যদিকে, খাদ্যবস্তু হল অনাবর্তিত উদ্দীপক আর সজাগভাব হল অনাবর্তিত প্রতিক্রিয়া।
(২) শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তনের গুরুত্ব লেখো। অপানুবর্তন কাকে বলে ? [ অথবা], শিশুর শিখনে যে-কোনো একটি অনুবর্তনমূলক শিখন কৌশলের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর – শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তনের প্রয়োগ/গুরুত্ব: শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তনের প্রয়োগ/গুরুত্বগুলি হল –
(১) ভাষা বিকাশ: শিশুর ভাষা শেখার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বস্তুর সঙ্গে বিশেষ শব্দকে যোগ করা হয়। যেমন- কোনো বিশেষ মহিলাকে দেখিয়ে মুখে ‘মা’ কথাটি বারবার বললে শিশু ‘মা’ শব্দটি অনুবর্তনের মাধ্যমে শিখে ফেলে।
(২) আদর্শ অভ্যাস গঠন : আদর্শ অভ্যাস গঠনে শিশুর সু-অভ্যাস গঠনে অনুবর্তন প্রক্রিয়া ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- সকালে ঘুম থেকে ওঠা, দাঁত মাজা ইত্যাদি।
(৩) খারাপ অভ্যাস দূর করা : বানান ভুল, গালাগালি প্রভৃতি কু-অভ্যাস দূর করতে অনুবর্তন পদ্ধতি খুবই কার্যকরী।
(৪) শিখন দক্ষতায় : লেখা, পড়া, অঙ্ক কষা প্রভৃতিতে শিশুর শিখন দক্ষতা বাড়াতে অনুবর্তন পদ্ধতি খুবই কার্যকরী।
(৫) শিক্ষক-শিক্ষিকার আচরণের প্রভাব: শিক্ষক-শিক্ষিকার আচার-আচরণ, বিভিন্ন অভ্যাস, কথা বলা এগুলি সব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুবর্তিত হয়।
(৬) গ্রাঙ্কোভিক বিকাশে: শিশুর জীবনে প্রক্ষোভমূলক বিকাশ ঘটাতে অনুবর্তন প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ।
(৭) আগ্রহ বা অনাগ্রহ সৃষ্টি করা : অনুবর্তনের মাধ্যমে শিশুর মধ্যে আগ্রহ বা অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি ভালোবাসা- তিনি যে বিষয় পড়ান, তাতে অনুবর্তিত হয়।
(৮) পুনরাবৃত্তিমূলক শিখনের ক্ষোত: ছোটো শিশুদের নতুন ছড়া শেখানো, নামতা মুখস্থ করানো, বানান শেখানো ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তনের প্রভাব রয়েছে।
(৯) ইতিবাচক মানসিকতার সৃষ্টি ও মানসিক রোগের উপশাম: কোনো বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তুলতে ও মানসিক রোগের চিকিৎসায় এই কৌশল সাহায্য করে।
অপানুবর্তন: অনুবর্তনের পর অনুবর্তিত উদ্দীপকের (ঘণ্টাধ্বনি) সঙ্গে সঙ্গে যদি স্বাভাবিক উদ্দীপক (খাদ্য) উপস্থাপন না করা হয়, তাহলে অনুবর্তন প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। একেই অপানুবর্তন বলে। যেমন- প্যাভলভ তাঁর পরীক্ষায় দেখেছেন কুকুরটির ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে লালাক্ষরণ হয়, পরবর্তী সময় প্যাভলভ ঘণ্টার ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য দেওয়া বন্ধ করে দিলে, ঘণ্টাধ্বনি শুনে খাদ্য না পাওয়ায় ধীরে ধীরে কুকুরটির লালাক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেল। এটি হল অপানুবর্তন। তবে প্যাভলভদেখলেন অপানুবর্তনের পর পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে প্রতিক্রিয়াকে সজীব করা যাচ্ছে, একে বলে পুনঃসংযোজন।
(৩) সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন কাকে বলে ? সংক্ষেপে স্কিনার বক্সের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো । [ WBCHSE 22, ’17, ’06, ’05, ’02 ]
উত্তর – অপারেন্ট অনুবর্তন: বিখ্যাত আমেরিকান মনোবিদ বি এফ স্কিনার (BF Skinner) অপারেন্ট অনুবর্তনের স্রষ্টা। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে 1930 সালে একটি পত্রিকার একটি প্রবন্ধে অপারেন্ট অনুবর্তনের ধারণা দেন।
Operant কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘ফলোৎপাদনের জন্য প্রতিক্রিয়া।‘ স্কিনারের মতে, প্রতিক্রিয়া করার ক্ষেত্রে সবসময় উদ্দীপকের প্রয়োজন নেই। তাঁর মতে, যে অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় কোনো উদ্দীপক ছাড়া প্রতিক্রিয়া সম্ভব এবং প্রাণীর সক্রিয়তা যেখানে আবশ্যক, তাকে বলে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন। যেমন- চাহিদা, আগ্রহ, তৃপ্তিদায়ক ও বেদনাদায়ক অনুভূতি প্রভৃতি প্রাণীর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ সৃষ্টি করে। এই আচরণই হল সক্রিয় অনুবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট আচরণ।
অপারেন্ট অনুবর্তন সংক্রান্ত স্কিনারের পরীক্ষা: মনোবিদ স্কিনার সক্রিয় অনুবর্তন বা Operant Conditioning সংক্রান্ত পরীক্ষাটির জন্য উপকরণ হিসেবে স্কিনার বক্স, ক্ষুধার্ত ইঁদুর, খাদ্যবস্তু ব্যবহার করেন।
পরীক্ষা: স্কিনারের সক্রিয় অনুবর্তনের পরীক্ষার পর্যায়গুলি হল-
প্রথম পর্যায়: স্কিনার পরীক্ষার জন্য প্রথমে একটি ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে তাঁর তৈরি স্কিনার বক্স-এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। ওই বক্সের মধ্যে থাকা ট্রে-তে আগে থেকেই খাবার রাখা ছিল। ইঁদুরটি খাদ্যগ্রহণ করে এবং এইভাবে পরীক্ষামূলক পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়: অন্য একদিন ইঁদুরটিকে স্কিনার বক্সে ঢোকানোর পর স্কিনার নিজেই লিভারে চাপ দিয়ে যান্ত্রিক কৌশলের সাহায্যে ট্রে-তে খাদ্যবস্তু নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে ইঁদুরের কোনো প্রচেষ্টা ছিল না। বক্সের পরিস্থিতি সম্পর্কে ইঁদুরকে পরিচয় করানো হল।
তৃতীয় পর্যায়: আবার আর একদিন ক্ষুধার্ত ইঁদুরটিকে বক্সে ঢোকানো মাত্র স্কিনার দেখলেন ইঁদুরটি খাবার খাওয়ার জন্য ট্রে-র দিকে দৌড়ে যায় কিন্তু ট্রে-তে খাদ্যবস্তু না থাকায় ইঁদুর তা সংগ্রহ করতে পারল না। খাদ্য পাওয়ার জন্য ইঁদুরটি বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ করতে থাকে। এইভাবে একসময় যখন তার লিভারে পা পড়ে যায়, তখন ট্রে-তে খাদ্যবস্তু এসে পড়ে এবং ইঁদুরটি সেই খাদ্যগ্রহণ করে।
চতুর্থ পর্যায়: এই পর্যায়ে স্কিনার ইঁদুরটি নিয়ে পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন এবং পর্যবেক্ষণ করলেন পুনরাবৃত্তির ক্রম অনুযায়ী লিভারে চাপ দিয়ে ট্রে-তে খাদ্যবস্তু আনতে ক্রমশ সময় কম লাগছে। এইভাবে একসময় এল যখন ইঁদুরটিকে বক্সে ঢোকানোমাত্র সে লিভারে চাপ দিয়ে খাদ্যবস্তুকে ট্রে-তে আনল এবং খাদ্যবস্তু খেলো। এইভাবে ইঁদুরটি খাদ্য পাওয়ার কৌশলটি আয়ত্ত করল।
সিদ্ধান্ত: উপরোক্ত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে স্কিনার সিদ্ধান্তে আসলেন প্রাণীর আচরণ দুধরনের- রেসপনডেন্ট, অপারেন্ট।
রেসপনডেন্ট: যে আচরণসমূহ ইঁদুর সম্পাদন করে, সেগুলিকে বিশেষ বস্তুধর্মী উদ্দীপক (খাদ্য) দ্বারা সৃষ্টি করা হয়, তাকে বলে রেসপনডেন্ট আচরণ কারণ খাদ্যবস্তু সম্পর্কে ইঁদুরের পূর্ব জ্ঞান রয়েছে।
অপারেন্ট: ইঁদুরটির এমন আচরণ লক্ষ করা যায় যেগুলি বস্তুধর্মী উদ্দীপকের সাহায্যে ঘটে না কারণ পরীক্ষা চলাকালীন ইঁদুরটি কোনো খাবার দেখতে পাচ্ছে না। এই আচরণ ঘটে প্রত্যাশামূলক উদ্দীপকের দরুন। একেই স্কিনার বলেছেন অপারেন্ট আচরণ।
(৪) সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো । [ WBCHSE ’19, ’12, ’09 ]
উত্তর – সক্রিয় অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য বা নীতি: অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
(১) প্রস্তুতি : সক্রিয় অনুবর্তনের জন্য প্রাণীর প্রস্তুতির প্রয়োজন। তাই স্কিনারের পরীক্ষায় প্রথম দু-দিন ইঁদুরটিকে বাক্সের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষামূলক পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানো হয়।
(২) সক্রিয়তা : সক্রিয় অনুবর্তনে প্রাণীর আত্মসক্রিয়তা প্রয়োজন। তা না হলে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শৃঙ্খলা তৈরি হয় না।
(৩) শক্তিদায়ক উদ্দীপক : সক্রিয় অনুবর্তনে শক্তিদায়ক উদ্দীপক বিশেষভাবে প্রয়োজন। এগুলি ও ভাগে বিভক্ত, যথা –
(ক) ধনাত্মক : ক্ষুধার্ত ইঁদুরের কাছে খাদ্যটি ধনাত্মক শক্তিদায়ী উদ্দীপক।
(খ) ঋণাত্মক : পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া এই ধরনের উদ্দীপক।
(৪) শাস্তিদায়ক : কাউকে দৈহিক শাস্তিদান করা।
(৫) আচরণের শক্তি হ্রাস বা বিলোপসাধন : ধনাত্মক উদ্দীপকের পরিবর্তে ঋণাত্মক উদ্দীপক উপস্থাপন করলে আচরণের শক্তি হ্রাস পায় বা বিলোপ ঘটে। লিভারে চাপ দেওয়ার পর খাদ্যবস্তুর প্রাপ্তি না ঘটলে ইঁদুরটির আচরণ সম্পাদন বন্ধ হয়ে যেত।
(৬) আচরণের স্বতঃস্ফূর্ততা : সক্রিয় অনুবর্তনে প্রাণীর স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ প্রয়োজন যা প্রাণী নিজের চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে।
(৭) স্বতঃস্ফূর্ত পুনরাবির্ভাব : সক্রিয় অনুবর্তনে আচরণ সম্পাদনের শক্তি অবলুপ্ত হলে, প্রাণীটির উপর কিছুদিন আচরণ সম্পাদন বন্ধ রেখে পুনরায় একই পরিস্থিতিতে নিয়ে এসে দু-একবার শক্তিদায়ক উদ্দীপক উপস্থাপন করা হলে প্রাণীটির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই আচরণের পুনরাবির্ভাব ঘটে।
(৮) বিন্যাসকরণ বা আকৃতিদান : যে পরিস্থিতিতে প্রাণী কাঙ্ক্ষিত আচরণগুলি সম্পাদনের জন্য পর্যায়ক্রমে আচরণের শৃঙ্খল তৈরি করে, তখনই প্রাণীর মধ্যে সমস্ত আচরণের একটি আকৃতিদান ঘটে।এক্ষেত্রে ও টি নীতি হল- সামান্যীকরণ, খন্ডাংশের ধারাবাহিক শৃঙ্খল গঠন ও প্রতিযোগী স্বভাব।
(৯) স্থায়ী প্রক্রিয়া: সক্রিয় অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রাণী সক্রিয় থাকে এবং স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ সম্পাদন করে। তাই সক্রিয় অনুবর্তনের দ্বারা প্রাণীর যে শিখন, তা স্থায়ী হয়।
(১০) স্থায়িত্ব : শক্তিদায়ী উদ্দীপকের উপস্থিতির ভিত্তিতে স্কিনার তিন ধরনের শক্তিদায়ী উদ্দীপক বা সিডিউল -এর কথা বলেছেন
(৫) শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় অনুবর্তনের ভূমিকার মূল্যায়ন করো । [ WBCHSE ’19, ’06 ]
[ অথবা], শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় অনুবর্তন তত্ত্বের উপযোগিতা আলোচনা করো। অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন তত্ত্বের প্রয়োগ লেখো ।
উত্তর – শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন তত্ত্বের প্রয়োগ:
প্রস্তুতি: শিশুর যে-কোনো শিখনের জন্য প্রয়োজন প্রস্তুতির। শিক্ষক শিক্ষার্থীর কাঙ্ক্ষিত আচরণের জন্য শ্রেণিকক্ষে এমন পরিবেশ তৈরি করবেন, যাতে শিক্ষার্থীরা বহুমুখী প্রতিক্রিয়া করতে পারে।
বিশ্লেষণ: শিক্ষক শিখনের উপাদানগুলিকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করবেন যাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
সহজ থেকে জটিল: শিখনের বিষয়গুলিকে সবসময় সহজ থেকে জটিল এই অনুযায়ী সাজানো দরকার অপারেন্ট অনুবর্তনকে কার্যকরী করার জন্য।
গণিত, বানান, শব্দ, সমস্যাসমাধান: গণিত, বানান, শব্দ, সমস্যাসমাধান ইত্যাদি শিখনের ক্ষেত্রে অপারেন্ট অনুবর্তন তত্ত্ব প্রয়োগ করা হয়।
শক্তিদায়ক উদ্দীপাকর ব্যবহার: শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষক শক্তিদায়ক উদ্দীপক ব্যবহার করবেন।
ধারাবাহিকতা: শক্তিদায়ক উদ্দীপকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন, যাতে শিক্ষার্থী প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াগুলি দূর করতে পারে।
শিক্ষার্থীর সক্রিয়তা: অপারেন্ট অনুবর্তনে শিক্ষার্থীর স্বতঃস্ফূর্ততা প্রয়োজন। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের এমন পরিবেশ তৈরি করবেন, যাতে শিক্ষার্থীরা সক্রিয় থাকে। শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা শিখন প্রক্রিয়াকে সহজ ও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
সু-অভ্যাস গঠন: শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সু-অভ্যাস গঠন গুরুত্বপূর্ণ। সু-অভ্যাস গঠনে অপারেন্ট অনুবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যক্তিত্বের বিকাশ: শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি বিকাশের জন্য অনুবর্তন তত্ত্বের প্রয়োগ করা দরকার।
গতি বৃদ্ধি: শিখনের গতি বৃদ্ধির জন্য অপারেন্ট অনুবর্তন তত্ত্বের প্রয়োগের প্রয়োজন।
সুতরাং বি এফ স্কিনারের অপারেন্ট অনুবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে শিশুর তথা শিক্ষার্থীর শিখন প্রক্রিয়া অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত করে তোলা সম্ভব।
(৬) প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন তত্ত্ব সম্পর্কিত থর্নডাইকের পরীক্ষাটি লেখো। [ WBCHSE ‘05]
[অথবা], সমস্যাসমাধানমূলক শিখন কৌশলের একটি পরীক্ষা বর্ণনা করো। [ WBCHSE ’03 ]
[অথবা], সমস্যাসমাধানমূলক শিখন কৌশলের একটি পরীক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।[WBCHSE ‘04]
উত্তর – থর্নডাইকের প্রচেষ্টা ও ভুলের পরীক্ষা: প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলের প্রবক্তা হলেন আমেরিকার মনোবিদ এডওয়ার্ড লি থর্নডাইক (EL Thorndike)। তাঁর মতে, প্রাণী যখন সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সমাধানের জন্য বারবার প্রচেষ্টা করে এবং ভুল করে। একসময় উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সঠিক সংযোগসাধনের মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান করে ও শিখন সম্ভব হয়। থর্নডাইক তাঁর শিখনের এই কৌশলকে নির্বাচন ও সংযোজন বলেছেন। থর্নডাইক তাঁর এই তত্ত্বের পরীক্ষায় বিড়াল, মুরগি, কুকুর, মানুষ প্রভৃতি প্রাণী নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। এক্ষেত্রে বিড়ালের পরীক্ষাটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। থর্নডাইক ও টি প্রধান সূত্রের মাধ্যমে তাঁর পরীক্ষাটি ব্যাখ্যা করেছেন। যথা-প্রস্তুতির সূত্র, অনুশীলনের সূত্র । পরীক্ষাটি নিম্নরূপ-
পরীক্ষার উপকরণ: এই পরীক্ষার জন্য একটি বিড়াল, বিশেষভাবে প্রস্তুত পাল বক্স, কিছু মাছ এবং আনুষঙ্গিক উপকরণ নেওয়া হয়েছিল।
পরীক্ষা:
(i) প্রথমে থর্নডাইক একটি ক্ষুধার্ত বিড়ালকে পা বক্সের মধ্যে ভরে ছিটকিনি দিয়ে দেন ও বাইরে খাদ্যবস্তু হিসেবে কিছু মাছ রেখে পর্যবেক্ষণ করেন। তাতে দেখেন, বিড়ালটি বাইরে বেরিয়ে মাছটি খাওয়ার জন্য বক্সের ভিতরে এলোপাতাড়ি আচরণ করছে। এক্ষেত্রে চাহিদা ও লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে বাধা হল বক্সের দরজা। কিন্তু বিড়ালটির ক্রমাগত এলোপাতাড়ি ছোটাছুটিতে হঠাৎই শরীরের কোনো অংশের দ্বারা বোতামে চাপ পড়ে বক্সের দরজা খুলে যায় ও বিড়ালটি বাইরে এসে মাছটি খেয়ে নেয়।
(ii) পরে থর্নডাইক পুনরাবৃত্তিমূলক পরীক্ষার জন্য ক্ষুধার্ত বিড়ালটিকে আবার পাল বক্সের মধ্যে প্রবেশ করান। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বিড়ালটি বিক্ষিপ্তভাবে দৌড়াদৌড়ি না করে উদ্দেশ্যমুখী হয়ে বাইরে আসার গলিপথটি খুঁজছে। এ ছাড়া দেখা যায় যে, বিড়ালটি পূর্বের ভুল আচরণগুলির পুনরাবৃত্তি না করে পূর্বের থেকে অনেক কম সময়ে বক্স থেকে বেরিয়ে আসছে। এভাবে বার বার পুনরাবৃত্তিতে দেখা যায়, বিড়ালটি ক্রমশ ভুল প্রচেষ্টাগুলিকে পরিত্যাগ করে নির্ভুল প্রচেষ্টাগুলিকে সমস্যাসমাধানের ক্ষেত্রে আচরণের স্থায়ীরূপে গ্রহণ করছে।
(iii) পরবর্তী পর্যায়ে দেখা যায়, পুনরাবৃত্তির সংখ্যা যত বেড়েছে, সময়ের পরিমাণ তত কমেছে। এটিকে থর্নডাইক টাইম কার্ড নামক লেখচিত্রের মাধ্যমেও দেখিয়েছেন।
সিদ্ধান্ত: থর্নডাইক পরীক্ষাটি থেকে ৩ টি সিদ্ধান্তে আসেন-
(i) প্রাণী সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে প্রত্যক্ষভাবে সমস্যাসমাধানের মাধ্যমে শেখে।
(ii) পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিখনের স্থায়ীকরণ হয়।
(iii) আত্মসক্রিয়তা শিখনের মূলভিত্তি।
(৭) প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। [ WBCHSE ’14, ’09 ]
উত্তর – প্রচেষ্টা ও ভুলের মাধ্যমে শিখনের বৈশিষ্ট্য:
(ক) পুনরাবৃত্তি : থর্নডাইকের মতে, সমস্যামূলক পরিস্থিতিতে একটি উদ্দীপক ও তার সমাধান-উপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগসাধনের ফলে প্রাণীর শিখন হয়। এক্ষেত্রে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে গড়ে ওঠে।
(খ) উদ্দেশ্য সম্পার্ক সচেতন : প্রচেষ্টা ও ভুলের শিখন কৌশলে প্রাণী বা শিক্ষার্থী কেন আত্মসক্রিয়তার মাধ্যমে বারবার সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালাবে, সে সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেমন-বিড়ালটির = উদ্দেশ্য ছিল পাজল বক্স থেকে বেরোতে পারলেই খাদ্যবস্তু হিসেবে মাছ খেতে পারবে। এক্ষেত্রে বিড়ালটি উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন ছিল।
(গ) বহুমুখী প্রতিক্রিয়া : থর্নডাইকের শিখন তত্ত্বে একটিমাত্র উদ্দীপক থাকলেও প্রাণী বা শিক্ষার্থীদের বহু প্রতিক্রিয়া করার সুযোগ থাকে। পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে ভুল প্রতিক্রিয়াগুলিকে তারা বর্জন করে এবং সঠিক প্রতিক্রিয়া নির্বাচন করে। যেমন- বিড়ালটির সামনে একটিমাত্র উদ্দীপক হিসেবে রাখা ছিল মাছ, কিন্তু পাট্ল বক্স থেকে বেরোনোর জন্য বিড়ালটিকে বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করতে হয়েছে।
(ঘ) আংশিক প্রতিক্রিয়া : থর্নডাইকের মতে, প্রাণী যখন সমস্যামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন অংশভিত্তিক প্রতিক্রিয়া করে, সামগ্রিকভাবে নয়। অংশগুলির প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সর্ব অংশ শিক্ষার্থীর আয়ত্তে আসে ও সমস্যাটির সমাধান হয়। সুতরাং এই শিখনে আংশিক প্রতিক্রিয়া হল অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
(ঙ) জৈব-মানসিক প্রস্তুতি : থর্নডাইক-এর মতে, শিক্ষার্থী যদি দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে শিখন সম্ভব নয়। যদি দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে প্রস্তুতি না থাকে, তাহলে উদ্দীপক থাকলেও শিক্ষার্থী কোনোভাবে তার প্রতি প্রতিক্রিয়া করবে না।
(চ) ফললাভ : থর্নডাইকের মতে, যে শিখন আনন্দদায়ক অনুভূতি দেয়, সেই শিখন স্থায়ী হয় এবং যে শিখন বেদনাদায়ক অনুভূতি দেয়, সেই শিখন শিক্ষার্থী পরিত্যাগ করে। যেমন- পাল বক্সের বাইরে যদি কোনো ফল থাকত, তাহলে বিড়ালটি সঠিক প্রতিক্রিয়াটি দ্বিতীয়বার করত না। তাই ফলপ্রাপ্তি এই শিখন কৌশলের একটি বৈশিষ্ট্য।
(ছ) আত্মসক্রিয়তা : শিক্ষার্থী নিজে থেকে সক্রিয় হয়ে সমস্যার সমাধানে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সঠিক সংযোগসাধনের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালাবে এবং ভুল প্রচেষ্টাগুলি ত্যাগ করবে। একসময় সঠিক প্রচেষ্টা করে সমস্যার সমাধান করবে। সুতরাং চাহিদার নিবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থী নিজে থেকে সক্রিয় হলে শিখন কৌশল সংগঠিত হবে। থর্নডাইকের পরীক্ষায় বিড়ালটির মধ্যে খাদ্যের চাহিদা তৈরির ফলে সে বাইরে আসতে সক্রিয় হয়েছিল।
(জ) সাদৃশ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া : এই বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, প্রাণী যখন সমস্যামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন সে পূর্বের জ্ঞাত প্রতিক্রিয়ার দ্বারা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে। থর্নডাইক তাঁর তত্ত্বে ‘সাদৃশ্যের সূত্রে’ সাদৃশ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরেছেন।
(ঝ) জানা থেকে অজানা বিষয়ের দিকে যাওয়া :: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয়ের দিকে পড়ানোর পদ্ধতিকে অনুসরণ করেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণে আগ্রহী হয়। ফলে পড়ানো ও পড়া বোঝা উভয়ই সহজ হয়।
(৮) থর্নডাইকের শিখনের সূত্রগুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ? থর্নডাইকের শিখনের মুখ্য সূত্রগুলি লেখো ।[ WBCHSE ’16, ’12,’08 ]
উত্তর – আমেরিকান মনোবিদ এডওয়ার্ড লি থর্নডাইক (Edward Lee Thorndike) তাঁর শিখনের সূত্রগুলিকে 3 টি মুখ্য সূত্র ও 5 টি গৌণ সূত্রে ভাগ করেছেন। সূত্রগুলি হল-
(ক) মুখ্য সূত্র : মুখ্য সূত্রগুলি হল –
(১) প্রস্তুতির সূত্র (২) অনুশীলনের সূত্র (৩) ফললাভের সূত্র
(খ) গৌণ সূত্র : গৌণ সূত্রগুলি হল –
(১) মানসিক প্রস্তুতির সূত্র
(২) বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্র
(৩) আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্র
(৪) উপমানের সূত্র
(৫) অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালনের সূত্র
থর্নডাইকের শিখনের মুখ্য সূত্র:
(ক) প্রস্তুতির সূত্র : থর্নডাইক শিখনের মুখ্য সূত্রে দৈহিক প্রস্তুতির কথা বলেছেন। তাঁর মতে, উদ্দীপক ও তার উপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে প্রয়োজন। সংযোগস্থাপনের জন্য যদি ব্যক্তি প্রস্তুত থাকে তাহলে সংযোগ স্থাপন করতে দিলে সে তৃপ্তিবোধ করবে। ব্যক্তির যদি প্রস্তুতি না থাকে, সেক্ষেত্রে জোর করে সংযোগস্থাপন করতে দিলে সে বিরক্তিবোধ করবে।
(খ) অনুশীলনের সূত্র : থর্নডাইক উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগস্থাপনের জন্য বারবার অনুশীলন বা চর্চার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অনুশীলনের সূত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় – ব্যবহারের সূত্র, অব্যবহারের সূত্র।
(১) ব্যবহারের সূত্র (Law of use): ব্যবহারের সূত্রে বলা হয়েছে, যখন সবকিছুই ঠিক থাকে, উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার সংযোগস্থাপনের পর যদি বারবার অনুশীলন করা হয়, তখন সংযোগের শক্তি বাড়বে এবং শিখন শক্তিশালী হবে।
(২) অব্যবহারের সূত্র (Law of Disuse): অব্যবহারের সূত্রে বলা হয়েছে, যখন উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে সংযোগস্থাপনের পর যদি দীর্ঘদিন অনুশীলন না করা হয়, তখন সেই সংযোগের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।
(গ) ফললাভের সূত্র : উদ্দীপক (S) ও প্রতিক্রিয়া -এর সংশোধনযোগ্য সংযোগের ফল যদি শিক্ষার্থীর কাছে সুখকর বা আনন্দদায়ক হয়, তবে সংযোগটি শক্তিশালী হয় অর্থাৎ S-R বন্ধন দৃঢ় হয়। অপরপক্ষে সংযোগের ফল যদি অতৃপ্তিকর বা বিরক্তিকর হয়, তবে সংযোগটি (S-R বন্ধন) দুর্বল হয়।
(৯) থর্নডাইকের শিখনতত্ত্বে মুখ্য সূত্রগুলির শিক্ষাগত তাৎপর্য লেখো । [ WBCHSE ’16, ’10, ’09 ]
[অথবা], শিক্ষাক্ষেত্রে থর্নভাইকের শিখনতত্ত্বের মুখ্য সূত্রগুলির প্রয়োগ লেখো।
উত্তর – মুখ্য সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য বা প্রয়োগ:
(ক) শ্রেণিকক্ষে অনুশীলন ও একাধিকবার উপস্থাপন: শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নতুন ও জটিল অংশগুলি একাধিকবার উপস্থাপন করবেন ও শিক্ষার্থীদের বারবার অনুশীলনের উপর জোর দেবেন।
(খ) অব্যবহারের সচেতনতা ও জানা থেকে অজানা বিষয়ে পাঠদান: অনেকসময় শিক্ষার্থীরা পূর্বে শেখা বিষয়বস্তু দীর্ঘদিন চর্চার অভাবে ভুলে যায়। সেক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মাঝে মাঝেই বিষয়গুলি অনুশীলনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেবেন। এ ছাড়া পাঠদানের সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানা থেকে অজানা বিষয়ের দিকে যাওয়ার নীতি অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হবে।
(গ) শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়ার প্রাধান্য ও ভুল পরিত্যাগ: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রাধান্য দিলে তারা ভুল প্রতিক্রিয়া করতে করতে একসময় সঠিক প্রতিক্রিয়াটি করে।
(ঘ) পুনরালোচনা: নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে গঠিত বিষয়কে, শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের কাছে পুনরালোচনা করবেন।
প্রস্তুতি সূতের তাৎপর্য :
(ক) পাঠদানে সফলতা: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণে দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত না হলে পাঠদানের উদ্দেশ্য বিফল হয়।
(খ) অমনোযোগী: প্রস্তুতির অভাবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা অনেকসময় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে মনোযোগী করতে পারেন।
(গ) আদর্শের দ্বারা শিক্ষা: প্রয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধের দ্বারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে প্রস্তুত করে তুলতে পারেন।
ফললাভের সূত্রের তাৎপর্য:
(ক) বিষয়বস্তু আয়ত্তকরণ: শিক্ষক মহাশয় পাঠ্য বিষয়টি যেন শিক্ষার্থীদের দৈহিক ও মানসিক ক্ষমতার আয়ত্তের মধ্যে থাকে সেদিকে নজর দেবেন।
(খ) সহজ থেকে কঠিন বিষয়ে পাঠদান: শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাঠক্রমকে সহজ থেকে কঠিন এই ক্রমানুসারে বিন্যস্ত করবেন।
(গ) আংশিক থেকে সমগ্র বিষয়ে পাঠদান: দীর্ঘ পাঠকে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করে উপস্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীদের কোনো বিষয় পড়াবেন।
(ঘ) পুরষ্কৃত করা: মাঝে মাঝে প্রশংসা, পুরস্কার ও তিরস্কারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেবেন।
(ঙ) শিক্ষাসহায়ক উপকরণ ব্যবহার: বিভিন্ন রকম শিক্ষাসহায়ক উপকরণ ও আকর্ষণীয় শিক্ষাপদ্ধতি সহযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকা পাঠ প্রদান করবেন।
(চ) বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য: শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুটি বৈচিত্র্যময় হতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমি দূর হয়।
(ছ) তৃপ্তিদায়ক: শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষণীয় বিষয়কে শিক্ষার্থীদের কাছে বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করবেন যাতে বিষয় ও শিখনের ফল শিক্ষার্থীদের কাছে তৃপ্তিকর হয়।
(১০) থর্নডাইক কর্তৃক বর্ণিত শিখন কৌশলের মুখ্য সূত্রগুলি উল্লেখ করো । শিক্ষাক্ষেত্রে যে-কোনো দুটি মুখ্য সূত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো ।[ WBCHSE ’23, ’10 ]
উত্তর – থর্নডাইকের শিখনের মুখ্য সূত্র :
প্রস্তুতির সূত্র : থর্নডাইক শিখনের মুখ্য সূত্রে দৈহিক প্রস্তুতির কথা বলেছেন। তাঁর মতে, উদ্দীপক ও তার উপযোগী প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগস্থাপনের জন্য ব্যক্তির দৈহিক প্রস্তুতি থাকা VIDEO প্রয়োজন। সংযোগস্থাপনের জন্য যদি ব্যক্তি প্রস্তুত থাকে তাহলে সংযোগ স্থাপন করতে দিলে সে তৃপ্তিবোধ করবে। ব্যক্তির যদি প্রস্তুতি না থাকে, সেক্ষেত্রে জোর করে সংযোগস্থাপন করতে দিলে সে বিরক্তিবোধ করবে।
ফললাভের সূত্র : উদ্দীপক (S) ও প্রতিক্রিয়া-এর সংশোধনযোগ্য সংযোগের ফল যদি শিক্ষার্থীর কাছে সুখকর বা আনন্দদায়ক হয়, তবে সংযোগটি শক্তিশালী হয় অর্থাৎ S-R বন্ধন দৃঢ় হয়। অপরপক্ষে সংযোগের ফল যদি অতৃপ্তিকর বা বিরক্তিকর হয়, তবে সংযোগটি (S-R বন্ধন) দুর্বল হয়।
থর্নডাইকের শিখনের মুখ্য সূত্রের শিক্ষাগত তাৎপর্য:
উত্তর – ৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তরটি দেখো ।
(১১) অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন সম্পর্কিত কোহলার-এর শিম্পাঞ্জির পরীক্ষাটি বর্ণনা করো ।
উত্তর – কোহলারের পরীক্ষা: গেস্টাল্ট মনোবিজ্ঞানী কোহলার শিম্পাঞ্জি নিয়ে পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন যে, প্রাণীর সামনে সমস্যামূলক পরিস্থিতি এলে, প্রথমে কিছুক্ষণ ধরে প্রচেষ্টা ও ভুলের পথে সে এগিয়ে গেলেও একটু পরে ওই পথ ছেড়ে পরিস্থিতিকে সামগ্রিকভাবে প্রত্যক্ষণ করে সমস্যাটির সমাধান করে। নীচে পরীক্ষাটি আলোচনা করা হল-
পরীক্ষার উপকরণ: কোহলার পরীক্ষাটির জন্য নিয়েছিলেন সুলতান নামে শিম্পাঞ্জি, একটি খাঁচা, দুটি বাঁশের লাঠি যা একটির মধ্যে অন্যটি প্রবেশ করিয়ে জোড়া লাগানো যায়, কয়েকটি কলা।
পরীক্ষা: কোহলার তাঁর পরীক্ষার জন্য শিম্পাঞ্জিটিকে কিছু খেতে না দিয়ে খাঁচার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। খাঁচার বাইরে খাদ্যবস্তু হিসেবে কলাগুলিকে এমন দূরত্বে রাখলেন, যাতে একটি লাঠি কলা পর্যন্ত না যায়। লাঠি দুটিকে খাঁচার মধ্যে রাখলেন।
কোহলারের শিম্পাঞ্জির পরীক্ষা :
পর্যবেক্ষণ: এরপর কোহলার দেখলেন –
(ক) প্রথমে শিম্পাঞ্জিটি এক-একটি লাঠি দিয়ে খাদ্যবস্তু হিসেবে কলার ছড়াকে টেনে আনার চেষ্টা করলেও প্রত্যেকটি লাঠি কলার দূরত্ব থেকে ছোটো হওয়ায় তা সম্ভব হল না।
(খ) এরপর শিম্পাঞ্জিটি একটি লাঠিকে আর-একটি লাঠির দ্বারা ঠ্যালা দিয়ে কলার ছড়া পর্যন্ত নিয়ে গেল। কিন্তু এক্ষেত্রেও সম্ভব হল না, কারণ সে লাঠি দুটিকে জোড়া লাগাতে পারেনি। সাফা সাদীপ
(গ) এই পর্যায়ে শিম্পাঞ্জিটি নিরাশ হয়ে বসে লাঠি দুটিকে নিয়ে খেলা করতে লাগল। এই সময় কোহলার লাঠি দুটি জোড়ার জন্য দুটি আঙুলকে বার করে জোড়া করে মুখোমুখি দেখিয়ে একটি ইঙ্গিত দিলেন। কিন্তু শিম্পাঞ্জিটি ইঙ্গিত বুঝল না।
(ঘ) পরবর্তী পর্যায়ে শিম্পাঞ্জিটি লাঠি নিয়ে খেলতে খেলতে একসময় হঠাৎ একটি লাঠিকে আর-একটি লাঠির সঙ্গে জুড়ে দিল এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই যুক্ত লাঠি দিয়ে কলার ছড়াকে কাছে টেনে নিল। এইভাবে সে সমস্যাটির সমাধান করল।
সিদ্ধান্ত: এ থেকে কোহলার সিদ্ধান্তে আসেন এখানে পরিস্থিতির সামগ্রিক সত্তা প্রত্যক্ষণের ভিতর দিয়ে শিম্পাঞ্জিটি পরিস্থিতির সামগ্রিক রূপের মধ্যেকার সম্পর্কগুলি উপলব্ধি করে অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে সমস্যাসমাধানের পথ শিখে নিল। অর্থাৎ কলার ছড়ার অবস্থান, লাঠির দৈর্ঘ্য, নিজের অবস্থান ইত্যাদির মধ্যেকার সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে শিম্পাঞ্ঝিটি বুঝতে পেরেছিল বলে, তার পক্ষে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছিল। তাই গেস্টাল্টবাদীরা মনে করেন, শিখন অংশভিত্তিক নয়, সামগ্রিক রূপের ভিত্তিতে হয়।
(১২) অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখনের শিক্ষাগত গুরুত্ব লেখো ।
উত্তর – অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখনের শিক্ষাগত গুরুত্ব: গেস্টাল্টবাদীদের মতে, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘটে অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে। এই কৌশলকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গেলে নিম্নলিখিত উপায়গুলি অবলম্বন করতে হবে-
সামগ্রিক উপস্থাপন: শ্রেণিতে পাঠদানকালীন শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুকে ছোটো ছোটো অংশে উপস্থাপন না করে সামগ্রিকভাবে উপস্থাপন করা দরকার।
(ক) সমগ্র থেকে বিশেষের দিকে: সমগ্র বিষয়টি উপস্থাপনের VIDEO পর সেগুলিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার।
(খ) মূর্ত থেকে বিমূর্তের দিকে যাওয়া: শ্রেণিকক্ষে কোনো বিষয় পাঠদানকালে মূর্ত থেকে বিমূর্তের দিকে যাওয়া দরকার।সহজ থেকে জটিল শিক্ষক পড়ানোর সময় সহজ উদাহরণ দিয়ে শুরু করে জটিলের দিকে যাবেন।
(গ) সক্রিয়তা: শিক্ষার্থীদের সমস্যাসমাধানে সক্রিয় করে তোলার জন্য জীবন পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত করে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করবেন।
(ঘ) যান্ত্রিক প্রাচষ্টা নিরসন: শিক্ষার্থীরা সমস্যাসমাধানের ক্ষেত্রে যাতে অন্ধ বা যান্ত্রিক প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকে, শিক্ষক সেদিকে লক্ষ রাখবেন।
(ঙ) সামান্যীকরণ ও পৃথকীকরণ: গেস্টাল্টবাদীরা অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখনের ক্ষেত্রে সামান্যীকরণ ও পৃথকীকরণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা যাতে শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর অন্তর্গত অংশগুলি বাদ দিয়ে প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় সাধারণধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলি আলাদা করে নিয়ে সর্বজনীন সূত্র গঠনে সমর্থ হয়, সেদিকের প্রতি শিক্ষক নজর রাখবেন।
(চ) সম্পর্কস্থাপন: সমস্যামূলক পরিস্থিতির বিভিন্ন অংশগুলির মধ্যে যথার্থ সম্পর্কস্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষক বিষয়টি উপস্থাপন করবেন।
(ছ) শিখালর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীরা কোনো বিষয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী সে বিষয়ে যাতে যথাযথভাবে অবহিত হতে পারে সে ব্যাপারে শিক্ষকদের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
(জ) সামঞ্জস্যবিধান: কোনো বিষয়ে পাঠদান করতে গেলে বিষয়বস্তুর বিভিন্ন অংশের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা শিক্ষকের কাজ।
সুতরাং অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন কৌশল শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিতে শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অতীত অভিজ্ঞতার সঙ্গে বর্তমান অভিজ্ঞতার সংযোগ করতে পারে। এই কৌশলে পাঠদান গ্রহণ করলে আত্মসক্রিয়তা বাড়ে, শিখনমুখী আগ্রহ ও প্রেষণা জাগ্রত হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এইসমস্ত কারণে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্দৃষ্টিমূলক শিখন কৌশলে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন –
এডুকেশন – দ্বিতীয় অধ্যায় – প্রশ্ন উত্তর ( 2 Mark)
এডুকেশন – প্রথম অধ্যায় – প্রশ্ন উত্তর (2 mark)
এডুকেশন – প্রথম অধ্যায় – প্রশ্ন উত্তর ( 10 Mark )
YouTube – Samim Sir